মশা তাড়াতে বিভিন্ন বসতি অঞ্চলে এ ভাবেই খোলা জায়গায় ছড়ানো হয় ধোঁয়া। নিজস্ব চিত্র
খোলা জায়গায় মশার ধোঁয়া দিয়ে যে কোনও লাভ নেই, ফের সে কথা পুর কাউন্সিলরদের জানিয়ে দিচ্ছে পুর প্রশাসন। সেই নির্দেশিকা দিয়ে শনিবার পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর থেকে চিঠি পাঠানো শুরু হল কাউন্সিলরদের কাছে। চিটিটি পাঠাচ্ছেন দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। প্রতিটি বরোর স্বাস্থ্য দফতরের এগজিকিউটিভকে বলা হয়েছে, এখনই ওই চিঠি কাউন্সিলরদের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। চিঠির মূল বক্তব্য হল, যত্রতত্র মশার ধোঁয়া দিয়ে কোনও ফল হয় না। বরং তা উল্টো কাজ করে।
পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাই মশা ঘরের থেকে বাইরেই বেশি কামড়ায়। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, ৭০-৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এডিস কামড়ায় ঘরের বাইরে।’’ আর ধোঁয়া দিলে মশা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পালিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে বাইরে খোলা জায়গায় ধোঁয়া দিলে ওই এলাকার মশা ঘরে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই রাস্তায় খোলা আকাশের নীচে মশার ধোঁয়া দেওয়ার প্রবণতা কখনওই বিজ্ঞানসম্মত নয়।
যদিও বাস্তবে তার উল্টো চিত্র দেখা গিয়েছে কলকাতা, বিধাননগর-সহ অনেক এলাকায়। দিন কয়েক আগে দক্ষিণ কলকাতার কসবায় দুপুর ১২টার সময়ে মশার ধোঁয়া ছড়াতে দেখা গিয়েছে পুরসভারই বেশ কয়েক জন কর্মীকে। সল্টলেকে শ্রাবণী আবাসনে আবার নিয়মিত একটি অটো যন্ত্রের মাধ্যমে দেদার মশার ধোঁয়া দেওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এ দিকে পুর স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব বলছে, এ সব ‘লোক দেখানো’ পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং যত্রতত্র ধোঁয়া দেওয়ার ফলে এডিস নিয়ন্ত্রণের মূল যে কাজ, মশার লার্ভা মারার কাজ ভয়ঙ্কর ভাবে বিঘ্নিত হয়। ধোঁয়া দেওয়ার জন্য কর্মীদের ব্যস্ত রাখা হয়। তাতে ডেঙ্গি সংক্রমণ বন্ধ করা তো যায়ই না, বরং আরও ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু পুরসভার মশা দমনের টিমও তো ধোঁয়া দেয়। তা হলে? এ বিষয়ে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, ‘‘যখন কোনও বাড়িতে ডেঙ্গি আক্রান্তের খবর আসে, কেবল তখনই পুরসভার টিম গিয়ে ওই বাড়ির ভিতরে মশার ধোঁয়া দেয়।’’ তিনি জানান, সে ক্ষেত্রে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে মশার ধোঁয়া দেওয়া হয়। যাতে মশা পালাতে না পেরে সেখানেই মারা যায়।
সম্প্রতি মশার আক্রমণ রুখতে নিজের ওয়ার্ডে ব্লিচিং পাউড়ার ছড়াতে দেখা গিয়েছিল খোদ কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তা নিয়ে বিতর্কও চলে প্রচুর। কারণ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতীয় পতঙ্গবাহী রোগ নিবারণী প্রকল্পের নির্দেশিকা উদ্ধৃত করে জানিয়ে দিয়েছিল, ব্লিচিং দিয়ে মশা নিধন করা যায় না। তখনই এক শ্রেণির জন প্রতিনিধিদের তরফে বলা হয়েছিল রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক সময়ে লোক দেখানো কিছু কাজ করতে হয়। ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, মশার ধোঁয়া দেওয়া তেমনই সব কাজকর্ম। যাতে এলাকার বাসিন্দাদের মনে হয় যে, কাউন্সিলরেরা কাজ করছেন।
কাউন্সিলরদের পাঠানো চিঠিতে সব জানিয়ে বলা হচ্ছে, মশা মারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে চলুন। শীত পড়লেও মশা নাশ করতে আগামীতে এ ভাবেই কাজ চালাতে তাঁদের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy