অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে রাখা বালতির জলে ভাসছে মশার লার্ভা। বুধবার, দমদম মেট্রো স্টেশনে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
অনেক ক্ষণ ধরেই এ দিক-ও দিক তাকাচ্ছিলেন প্রৌঢ়। সহযাত্রীরা ভাবছিলেন, তিনি বোধহয় পরিচিত কাউকে খুঁজছেন। কিছু ক্ষণ এমন চলার পরে এক তরুণ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি কিছু খুঁজছেন?’
বেশ বিরক্ত হয়েই প্রৌঢ় উত্তর দিলেন, ‘‘হ্যাঁ, একটা মশা মুখের সামনে ঘুরছে।’’ সকালের ভিড়ে ঠাসা এসি মেট্রোর ভিতরে মশাদের এমন দাপিয়ে বেড়ানোর খবর মুহূর্তেই চাউর হয়ে গেল গোটা কামরায়। শুরু হল গুঞ্জন, ‘সকালের দিকের মশা তো। নিশ্চয়ই এডিস। কামড়ালে ডেঙ্গি অবধারিত।’ কেউ মজার সুরে বললেন, ‘এত ভিড়ে কি আর মশাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। আরপিএফ-কে খবর দিন।’
কিন্তু রেলরক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ) জওয়ানেরাই বা কী করবেন? কারণ, প্ল্যাটফর্মে ডিউটি করার সময়ে তাঁরা নিজেরাই তো আতঙ্কে থাকেন। যেমন বুধবার দুপুরে দমদমের প্ল্যাটফর্মে দেখা গেল, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা হিসেবে রাখা বালতির জলে মশার লার্ভা ভাসছে। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এক আরপিএফ জওয়ান বললেন, ‘‘কী করব বলুন! এখানে বসে ডিউটি করছি। কামড়াবে তো আমাকেই!’’ যদিও পরে বিষয়টি জানতে পেরে ওই বালতির জল বদলে দেন দমদম মেট্রো স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
ডেঙ্গির মরসুমে এসি মেট্রো এবং সরকারি এসি বাসে মশার উৎপাত বেড়েছে বলেই দাবি নিত্যযাত্রীদের। তাঁদের অভিযোগ, মেট্রোর রেক কিংবা বাসের ভিতরে মশা ভনভন না করলেও অধিকাংশ সময়েই দু’-তিনটি মশা ঢুকে সকলকে নাজেহাল করে দেয়। কারণ, কোনও যাত্রীকে কামড়ানোর পরে মেট্রোর কামরা কিংবা বাসের কোন কোনায় গিয়ে ওই মশারা বসে থাকছে, তা খুঁজে পাওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
মেট্রোযাত্রীরা জানাচ্ছেন, নোয়াপাড়া ও কবি সুভাষ কারশেডের অনেক জায়গাতেই ঝোপজঙ্গল রয়েছে। এ ছাড়া, অনেক জায়গাতেই সুড়ঙ্গের নর্দমায় জল জমে থাকে। সেখানে মশার ডিম পাড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর সেই মশা কখন, কী ভাবে রেকের ভিতরে ঢুকে পড়ছে, তা-ও বোঝা সম্ভব নয়। নন-এসি মেট্রোয় জানলা খোলা থাকায় মশা ঢুকলেও পরে বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এসি মেট্রোয় সেই সুযোগ কম। এক যাত্রীর কথায়, ‘‘ধরে নিলাম, কোনও একটি স্টেশনে দরজা খোলার পরেই সেই মশা বেরিয়ে গেল। কিন্তু তা প্ল্যাটফর্মে ঘুরপাক খাচ্ছে না সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়েছে, তা কী ভাবে বোঝা যাবে?’’
বাড়বাড়ন্ত: ধর্মতলা বাস টার্মিনাসের পাশেই জমা জলে মশা। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারা বছরই মশা নিধনে মেট্রোর রেক, সুড়ঙ্গ ও কারশেডে লার্ভিসাইড এবং অ্যাডাল্টিসাইড ছড়ানো হয়।’’ তিনি জানান, রাতের শেষ মেট্রো চলে যাওয়ার পরে বিভিন্ন স্টেশনের সুড়ঙ্গের নর্দমায় ও লাইনের মাঝে জমা জলে এক সপ্তাহ অন্তর মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়। সেই সঙ্গে নোয়াপাড়া ও কবি সুভাষ কারশেডের ঝোপজঙ্গলেও এক দিন অন্তর ধোঁয়া দেওয়া হয়। এ ছাড়া, প্রতিটি রেক কারশেডে আসার পরে সেগুলিতেও বিভিন্ন রাসায়নিক স্প্রে করা হয়।
সরকারি এসি বাসেও মশার কামড় খাওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই বাসের কাচ বিজ্ঞাপনে ঢাকা থাকায় বাইরের আলো ঠিক মতো ঢোকে না। তাতেই মশার উৎপাত আরও বাড়ে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। মশার উৎপাতের বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন চালক-কন্ডাক্টরেরাও। দূরপাল্লার এক সরকারি এসি বাসের কন্ডাক্টর বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে দু’একটা মশা ঢুকে পড়ে। তখন টিকিট কাটা ছেড়ে মশা মারতে হাততালি দিতে হয়। ডেঙ্গির ভয় তো আমাদেরও আছে।’’ পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সরকারি বাসে সাফাইয়ের দায়িত্ব থাকে বেসরকারি সংস্থার উপরে। দূরপাল্লার বাস প্রতিদিন ডিপোয় ফেরার পরে তা ধুয়েমুছে সাফ করা হয়। আর শহরের মধ্যে চলা বাসগুলি নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy