নিহত বৃদ্ধের ফ্ল্যাটে তাঁর পুত্রবধূ। শনিবার, ফিয়ার্স লেনে। নিজস্ব চিত্র
ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। বৌবাজারের বৃদ্ধ খুনের কিনারা এখনও করতে পারল না পুলিশ। শনিবার রাত পর্যন্তও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এ দিকে, ফের একাকী এক বৃদ্ধকে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে শহরে। প্রবীণদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি দেখভাল ও তাঁদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তৈরি কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্পের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বিভিন্ন এলাকার বয়স্কদের বড় অংশেরই দাবি, থানা আর যোগাযোগ রাখে কই? কোথাও এমন খারাপ ঘটনা ঘটলে শোরগোল পড়ে ঠিকই। কিন্তু কয়েক দিন পরেই ফের সব আগের মতো হয়ে যায়!
শুক্রবার বৌবাজারের ফিয়ার্স লেনের একটি বহুতলের তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে আয়ুব ফিদা আলি খান নামে বছর পঁচাত্তরের এক বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতের পুত্রবধূ ফতেমা আগা বিকেলে নিজের মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন, দরজার ছিটকিনি বাইরে থেকে আটকানো। ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায়, মেঝের উপরে পড়ে শ্বশুরের রক্তাক্ত দেহ। ফতেমার চিৎকার শুনে ছুটে আসা বৃদ্ধের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মহম্মদ আতিফ এ দিন বললেন, ‘‘ঘরের চার দিকে চাপচাপ রক্ত ছড়িয়ে ছিল। আয়ুবজির মাথায় গভীর ক্ষত দেখতে পাই। গলায় কিছু দিয়ে এত বার কোপ মারা হয়েছিল যে, তাঁর গলগণ্ড বেরিয়ে এসেছিল।’’ পুলিশ গিয়ে দেখে, ঘর লন্ডভন্ড। প্রায় দু’লক্ষ নগদ টাকা এবং মৃতের স্ত্রীর কিছু গয়না চুরি গিয়েছে বলে তদন্তে উঠে আসে। ঘরের মেঝে থেকেই মেলে রক্তমাখা একটি আনাজ কাটার ছুরি।
একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে বৌবাজার থানা। ডিসি (সেন্ট্রাল) মিরাজ খালিদ জানান, এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট এলে অনেক কিছু পরিষ্কার হবে। বৃদ্ধ যে বহুতলে থাকতেন, সেখানকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি মৃতের পরিবারের লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। তদন্তে নেমেছে লালবাজারের হোমিসাইড শাখা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, বহুতলের যে ফ্ল্যাটে বৃদ্ধ খুন হয়েছেন, সেখানে বাইরের কারও পক্ষে এক বারে চিনে পৌঁছে খুন করে বেরিয়ে যাওয়া কঠিন। ফলে খুনের সঙ্গে চেনা কেউই জড়িয়ে। মৃতদেহটি ফ্ল্যাটের শোয়ার ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরিচিত না হলে কেউ কাউকে অত দূর নিয়ে যান না। খুনে ব্যবহৃত ছুরিটি ঘরের ভিতর থেকেই উদ্ধার হয়েছে। মৃতের পুত্রবধূ জানিয়েছেন, সেটি তাঁদেরই। অর্থাৎ, আততায়ী বাইরে থেকে কিছু নিয়ে আসেননি। এই বিষয়টিও বৃদ্ধের পরিচিত কারও দিকেই ইঙ্গিত করছে।
আরও খবর: বউবাজারে বৃদ্ধ খুন, মাথায় বাড়ি প্রেসার কুকারের, গলায় ধারালো ছুরির কোপ
আরও খবর: পলাতক অভিযুক্তদের তালিকা চাইল নির্বাচন কমিশন
পুলিশের তদন্তের মধ্যেই উঠে আসছে শহরে এক বৃদ্ধের একা দিন গুজরানের বিষয়টি। বৃদ্ধের মেয়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। বাবার সঙ্গে থাকলেও প্রতিদিন তিনি সকালে কাজে বেরিয়ে যেতেন, ফিরতেন রাতে। শুক্রবার তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরেই দুপুর আড়াইটে থেকে বিকেল চারটের মধ্যে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশের অনুমান। বৃদ্ধের স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে মাস আটেক আগে। তারও বছরখানেক আগে একমাত্র ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র ভাড়ার ফ্ল্যাটে উঠে যান। স্ট্র্যান্ড রোডে মোটরের যন্ত্রাংশের পারিবারিক ব্যবসা থেকেই সংসারের খরচ আসে। শাশুড়ির মৃত্যুর পরেও দুই ফ্ল্যাটে দু’টি পৃথক হাঁড়ি আর এক হয়নি। বৃদ্ধ বর্তমানে হ্যান্ড স্ট্রেচার ছাড়া চলাফেরাও করতে পারতেন না।
এই ধরনের বয়স্কদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে জোর দেওয়ার জন্যই ‘প্রণাম’ প্রকল্প চালু করেছিল কলকাতা পুলিশ। প্রতিটি থানায় এর জন্য এক জন করে অফিসারকে নিয়োগ করা হয়েছিল। ‘প্রণাম’-এর সদস্যদের খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি থানা এলাকার বয়স্কদের অভাব-অভিযোগ সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোও তাঁর দায়িত্বের মধ্যে ছিল। কিন্তু বহু থানাতেই ‘প্রণাম’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার স্রেফ নামেই রয়ে গিয়েছেন বলে অনেকের অভিযোগ। অনেকেরই বক্তব্য, প্রথম প্রথম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করে যোগাযোগ রাখা হলেও এখন সে সব বন্ধ। গ্রুপে অভিযোগ লিখলেও সাড়া মেলে কয়েক মাস পরে। বহু ক্ষেত্রেই যে অফিসার যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন, তিনি বদলি হয়ে যান অন্য থানায়। বৌবাজারের এই খুনের ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে, ওই এলাকার বয়স্কদের সঙ্গে থানার যোগাযোগ কতটা তা নিয়ে।
‘প্রণাম’ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকেরা যদিও বলছেন, ‘‘সর্বতো ভাবে বয়স্কদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা চালানো হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, অবশ্যই দেখা হবে।’’ লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘দ্রুত খুনের কিনারা হবে। বয়স্কদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে গাফিলতি পাওয়া গেলে সেটাও শুধরে নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy