অগ্নি-যোগ: শিয়ালদহ এলাকায় ফাটানো হচ্ছে শব্দবাজি। নিজস্ব চিত্র
একই শহর। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন ছবি! কোথাও শব্দই জব্দ, কোথাও আবার শব্দের দাপটে জব্দ নাগরিকেরা। কালীপুজোর রাতে এটাই ছিল শব্দদূষণের সার্বিক ছবি।
খাস কলকাতার বাসিন্দারা বলছেন, কয়েকটি এলাকা ছাড়া মোটের উপরে শব্দবাজিতে লাগাম ছিল। কিন্তু কলকাতার বাইরে কলকাতা পুলিশের যে এলাকা, সেখানে সন্ধ্যা থেকে প্রায় ভোর পর্যন্ত দফায় দফায় শব্দবাজি ফেটেছে।
লালবাজারের খবর, রবিবার রাত ১২টার পরে শহরে টহলদারিতে বেরিয়েছিলেন খোদ পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। তিনি নিজেও বিভিন্ন এলাকায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটতে শুনেছেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, শব্দবাজি নিয়ে কোন কোন এলাকা থেকে বেশি অভিযোগ মিলেছে, তার বিস্তারিত তথ্য কন্ট্রোল রুমের কাছে চেয়েছেন তিনি। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি অধস্তনদের কোনও নতুন ‘নির্দেশিকা’ দিতে পারেন।
তবে কালীপুজোর রাতে বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলছেন, ‘‘আমরা বাজি রুখতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। গত বছরের তুলনায় কালীপুজোর রাতে বাজি ফাটানোর জন্য গ্রেফতারির সংখ্যাও বেশি। সকলেই খুব খেটেছেন। বাহিনীর ভূমিকায় আমি মোটের উপরে সন্তুষ্ট।’’
লালবাজারের তথ্য বলছে, এ বছর নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোয় গ্রেফতারির সংখ্যা গত দু’বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৭ সালে ৭৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে গ্রেফতার করা হয় ৪৭২ জনকে। এ বার নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর জন্য কালীপুজোর রাতে মোট ৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, এ বার নিষিদ্ধ বাজি যে বেশি ফেটেছে, তা ধরপাকড়ের সংখ্যা থেকেও বোঝা সম্ভব।
নাগরিকদের অনেকে এবং পুলিশ সূত্রের দাবি, শব্দবাজি রোখার বিষয়টি অনেকটাই পুলিশি সক্রিয়তার উপরে নির্ভরশীল। রবিবার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার একাংশে স্থানীয় থানার পুলিশ সক্রিয় ছিল। তার ফলে সেই সব এলাকা তুলনামূলক ভাবে শান্ত ছিল। তাই সেখানকার বাসিন্দারা পুলিশের ভূমিকায় খুশি। যে যে এলাকায় বেশি শব্দবাজি ফেটেছে, সেখানে পুলিশের সক্রিয়তায় খামতি ছিল বলে অভিযোগ।
কলকাতা এবং লাগোয়া কমিশনারেট এলাকার বিভিন্ন থানায় ফোন করেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিকেরা। ইএম বাইপাস লাগোয়া দক্ষিণ শহরতলি এলাকায় যেমন সন্ধ্যা থেকেই নাগাড়ে বাজি পুড়েছে। কসবাতেও ক্রমাগত শব্দবাজির আওয়াজ মিলেছে। যোধপুর পার্ক, ঢাকুরিয়াতেও একই অভিযোগ। মুকুন্দপুর, নিউ গড়িয়া এলাকায় রাত হলেও শব্দবাজির বিরাম ছিল না। রাত সাড়ে ১১টায় বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালের পিছন থেকে ক্রমাগত বাজির শব্দ ভেসে এসেছে। হরিদেবপুরে তো কার্যত শব্দবাজি নিয়ে কোনও রাশই ছিল না। কেষ্টপুর, লেক টাউন, দমদম এলাকায় রাত দুটোতেও নাগাড়ে শব্দবাজি ফেটেছে। এমনকি, টহলদার পুলিশের গাড়ি দেখেও নাগেরবাজার মোড়ে রেয়াত করেনি বোমা-ফাটিয়েরা।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, শব্দবাজি যে নিষিদ্ধ, তা রবিবার রাতের পরিস্থিতি দেখে মালুমই হচ্ছিল না। বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের ‘ডি’ ব্লকে পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের প্রতিনিধিদের সামনেই শব্দবাজি ফাটানো হয়েছে। ওই সংগঠনের সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘কসবা, বেহালা, হরিদেবপুর ও বাইপাস লাগোয়া এলাকায় শব্দবাজি তো ছিলই, সঙ্গে মাইকের উপদ্রবও চলেছে। ওই থানার আধিকারিকেরা যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন না বলেই মনে হয়েছে।’’ সোমবার রাতেও হরিদেবপুরে শব্দতাণ্ডবের ছবিটা বদলায়নি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy