সোমবার ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে গ্যাসের সিলিন্ডার নামানো। আশপাশের লোকজন জানান, দুষ্কৃতীরা প্রথমে ঠিক করেছিল, বিস্ফোরণ ঘটাতে সিলিন্ডারে আগুন লাগিয়ে দেবে। যদিও তারা পরে তেমন কিছু করেনি। বাড়ির দোতলায় উঠে দেখা যায়, প্রতিটি জানলার কাচ ভাঙা ।
হতভম্ব: ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলার পরে তছনছ ঘর। সোমবার, নরেন্দ্রপুরের জগতিপোতায়। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির নীচে রাখা মোটরবাইকটি ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বিয়ারের ভাঙা বোতলের টুকরো। অদূরে দাঁড়ানো ছোট একটি মালবাহী গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন থান ইট দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘরের জানলার ধাতব চ্যানেল উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বাইরে। আলমারি ভেঙে লুট করা হয়েছে টাকা-গয়না। রবিবার রাতে নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার জগতিপোতায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে এ ভাবেই পর পর দু’বার দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।
ইনভার্টারের ব্যাটারিতে জল দেওয়ার যন্ত্রের প্লাস্টিকের যন্ত্রাংশ তৈরির ব্যবসা জগতিপোতার বাসিন্দা শান্তনু দত্তের। কারখানা ও গুদাম মিলিয়ে তাঁর অধীনে বেশ কয়েক জন পুরুষ ও মহিলা কাজ করেন। শান্তনুবাবুর ছেলে প্রবীরও বাবার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করেন। অভিযোগ, রবিবার বিকেলে স্থানীয় কয়েক জন যুবক মদ্যপান করার জন্য প্রবীরের কাছ থেকে টাকা চায়। প্রবীর সেই টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তার পরেই ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে ও কারখানায় চড়াও হয়ে দুষ্কৃতীরা ইচ্ছেমতো ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।
নরেন্দ্রপুর থানা ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও সোমবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করার কথা জানায়নি পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, ওই ব্যবসায়ীর পরিজনেরা এক জনকে চিনতে পেরেছিলেন। যদিও সেই যুবকের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি। শান্তনুবাবুর অভিযোগ, রবিবার রাতে ওই ঘটনার পরে নরেন্দ্রপুর থানায় একাধিক বার ফোন করা হলেও তা বেজে গিয়েছে। শেষমেশ তাঁরা নবান্নের ডিজি কন্ট্রোলে ফোন করেন। শান্তনুবাবুর দাবি, বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে দু’দফায় হামলা হলেও পুলিশ রাত ১২টার পরে তাঁদের বাড়িতে আসে। যদিও এই অভিযোগ মানতে চায়নি নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ।
প্রবীর জানান, রবিবার বিকেলে তিনি মোটরবাইকে এক কারিগরকে নিয়ে ফিরছিলেন। সে সময়ে স্থানীয় একটি ভেড়ির কাছে কয়েক জন যুবক তাঁর বাইকটি দাঁড় করায়। প্রবীরের অভিযোগ, ‘‘ওই যুবকেরা মত্ত অবস্থায় ছিল। আমার থেকে মদ কেনার জন্য ৬০০ টাকা চায় ওরা। আমি ১৫০ টাকা দেব বলেছিলাম। তা শুনে ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করে। ওই কারিগর তখন পালিয়ে যান। পরে ওরা আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়।’’
প্রবীরের মা রুনুদেবী জানান, রবিবার ২০-৩০ জন দুষ্কৃতী প্রথমে কারখানায় চড়াও হয়। তিনি বলেন, ‘‘অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে করতে ওরা বাড়ির নীচে কারখানায় ঢুকে যন্ত্রপাতি ও মালপত্র ভাঙচুর করতে শুরু করে। তার পরে ওরা চলে গেলে আমি ভয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। এর পরে সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখি, গোটা বাড়িটাই তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে।’’
সোমবার ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির বাইরে গ্যাসের সিলিন্ডার নামানো। আশপাশের লোকজন জানান, দুষ্কৃতীরা প্রথমে ঠিক করেছিল, বিস্ফোরণ ঘটাতে সিলিন্ডারে আগুন লাগিয়ে দেবে। যদিও তারা পরে তেমন কিছু করেনি। বাড়ির দোতলায় উঠে দেখা যায়, প্রতিটি জানলার কাচ ভাঙা । একটি ঘরের জানলার চ্যানেল উপড়ে ফেলা হয়েছে। আসবাবপত্র উল্টে, আলমারি ভেঙে লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে টাকা ও গয়না। এই ঘটনায় তাজ্জব ওই পাড়ার বাসিন্দারা আতঙ্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy