Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
KMC

কলকাতায় জল জমার অভিযোগ নিয়ে ক্ষোভ মেয়র ফিরহাদের, ইস্তফা দিতে চান মেয়র পারিষদ

কলকাতা পুরসভার অভ্যন্তরীণ সমীকরণে মেয়রের অত্যন্ত আস্থাভাজন বলে পরিচিত তারক। তাই এমন সংঘাতের আবহ কিছুটা হলেও, বেমানান ঠেকেছে অনেকের।

Firhad Hakim

ফিরহাদ হাকিম। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:০৪
Share: Save:

কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জল জমার অভিযোগ পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আর সেই ক্ষোভের জেরেই ইস্তফা দেবেন বলে জানালেন মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ। শুক্রবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে কলকাতার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের থেকে জল জমে থাকার অভিযোগ পান মেয়র।

জল জমার একঝাঁক অভিযোগ পেয়েই উপস্থিত আধিকারিকদের উদ্দেশে ক্ষোভ উগরে দেন ফিরহাদ। প্রকাশ্যেই তিনি বলেন, ‘‘আধিকারিকরা কোনও কাজ করেন না। ঘরে বসে থাকেন। আর এলাকায় এলাকায় জল জমে থাকে। আমাদের মিথ্যে রিপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।’’ ক্ষোভের সুরে তিনি আরও বলেন, ‘‘অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এলাকা না ঘুরে এসেই বলেন কাজ হয়ে গিয়েছে। আমাকে তারকদা (মেয়র পারিষদ তারক সিংহকে এই নামেই সম্বোধন করেন মেয়র) হোয়াটস অ্যাপ করে কোথাও জল জমে নেই জানান। কিন্তু আমি অভিযোগ পাচ্ছি, জল জমে রয়েছে। আধিকারিকরা কি করছেন?’’

এরপরেই সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে জমা জল প্রসঙ্গে মেয়রের ক্ষোভ প্রকাশের পর তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলে তারক বলেন, ‘‘ওর (মেয়র) কথায় আমি অসম্মানিত হয়েছি। মেয়রের আমার উপর আস্থা নেই। তাই আমি পদত্যাগ করব।’’ প্রসঙ্গত কলকাতা পুরসভার অভ্যন্তরীণ সমীকরণে মেয়রের অত্যন্ত আস্থাভাজন বলে পরিচিত তারক। তাই এমন সংঘাতের আবহ কিছুটা হলেও, বেমানান ঠেকেছে অনেকের। মেয়রের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ফিরহাদ কখনওই মেয়র পারিষদের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর মূলত ক্ষোভ রয়েছে পুরসভার আধিকারিকদের প্রতি। তাঁরা যেমন জমা জল নিয়ে মেয়রকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। তেমনই ভুল তথ্য দিয়েছেন মেয়র পারিষদ তারককেও। এ ক্ষেত্রে নিকাশি বিভাগের দায়িত্বে থাকা বেশ কিছু আধিকারিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে। আর তারকের ইস্তফার বিষয়টিও মিটিয়ে নেওয়া যেতেই পারে।

মেয়রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে মেয়র পারিষদ পদত্যাগ করেছেন এমন নজির কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে নেই। যদি শনিবার তারক পদত্যাগ করেন তবে তা হবে কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। উল্লেখ্য, মেয়র ফিরহাদ কাউন্সিলর হওয়ার অনেক আগেই তারক কলকাতার কাউন্সিলর হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে ১১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের প্রতীকে প্রথমবার কাউন্সিলর হন তারক। আর ফিরহাদ ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হন ২০০০ সালে তৃণমূল গঠনের পর। যদিও, ২০০০ সালে সংরক্ষণের কারণে ১১৬ নম্বর ওয়ার্ডটি নিজের মেয়ে কৃষ্ণা সিংহকে ছেড়ে দেন তারক। ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০০ ও ২০০৫ সালে ভোটে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলর শৈলেন দাশগুপ্তর কাছে পরাজিত হন। ২০১০ সালে ১১৮ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে সিপিএম কাউন্সিলর অজয় অধিকারীকে হারিয়ে কলকাতা পুরসভায় প্রত্যাবর্তন হয় তারকের।

২০১০ সালে তৃণমূল দ্বিতীয়বার কলকাতা পুরসভা দখল করলেও, সেই সময় মেয়র পারিষদ হননি তারক। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারে পতন ঘটিয়ে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় কলকাতা বন্দর থেকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রী হন ফিরহাদ। ইস্তফা দেন মেয়র পারিষদের পদ থেকে। এরপর নতুন করে মেয়র পারিষদ নিয়োগ হলে তাতে জায়গা পান তারক। শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর কলকাতা পুরসভায় ফিরহাদ জমানা আসে। তবে স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছেন তারক। কলকাতা পুরসভার অন্দরে খবর, মেয়র ফিরহাদের অন্যতম প্রিয় মেয়র পারিষদ তারক। তাই তাঁর সঙ্গে সংঘাতের জেরে যে তারক ইস্তফা দিতে পারেন সে কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না পুর আধিকারিকরাও। সকলেই তাকিয়ে শনিবার কলকাতা পুরসভাতে কী হয় সে দিকে। তারককে পদত্যাগ করতে হলে পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়ের কাছে এসে নিজের ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে যেতে হবে। সেই ইস্তফাপত্র মালা গ্রহণ করলে তবেই তারক তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন।

উল্লেখ্য, তারক মেয়র পারিষদ হওয়ার পাশাপাশি তাঁর কন্যা কৃষ্ণা যেমন ১১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, তেমনই ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেন তাঁর পুত্র অমিত সিংহ।

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Firhad Hakim Tarak Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy