Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

পরিবেশ বাঁচাও, এ বার বার্তা স্বয়ং জগজ্জননীর

অমৃত নিয়ে লড়াইয়ের সময় নেই, চাই বিশুদ্ধ পানীয় জল। করুণাময়ী মাতৃমূর্তির হাতে তাই কলসি।

চিরন্তন রায়চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৫০
Share: Save:

পুরাণের মহিষাসুর এখন যেন দূষণ-রাক্ষস। জল-স্থল-পাতালে তার তাণ্ডব রুখতে যুদ্ধে নেমেছেন প্রকৃতি-রূপী দুর্গা।

মহানগরীর শারদোৎসবে ছড়াবে এমন বার্তা।

অমৃত নিয়ে লড়াইয়ের সময় নেই, চাই বিশুদ্ধ পানীয় জল। করুণাময়ী মাতৃমূর্তির হাতে তাই কলসি। আলতো ছোঁয়ায় ধরা ত্রিশূলে পরিবেশ বাঁচানোর আশ্বাস। হাত পেতে জল প্রার্থনা অসুর-রাজের। বাঘা যতীন বিবেকানন্দ মিলন সঙ্ঘের পুজোকর্তা অপু সাহা জানান, বাটি, গ্লাস, কলসিতে এ ভাবেই গড়ে উঠবে তাঁদের মণ্ডপ। সবই মাটি, পিতল, স্টিল বা প্লাস্টিকের। ছোট ছোট সামগ্রী জুড়ে হবে বড় আদল। অপুবাবুর কথায়, ‘‘জলের অপচয় করব না, মণ্ডপ থেকে ফিরে এক জনের মনে সে কথা গেঁথে থাকলেই এ সব সার্থক।’’

কলকাতায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর নামছে দ্রুত। মিশছে আর্সেনিক-বিষ, হরেক রাসায়নিক। অত্যধিক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারই দূষণের মূল কারণ। হরিদেবপুর নিউ স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর সাজে তা-ই জানাতে চান শিল্পী সুবোধ রায়। তিনি বলছেন, ‘‘এ ভাবে চললে ২৫-৩০ বছর পরে তো এই শহরেও জলের হাহাকার পড়বে। তা কি কেউ বুঝছেন না!’’ আবহমান কাল ধরে দু’হাত ভরে মানবসভ্যতাকে জল দিয়ে চলেছে প্রকৃতি। নদী, নালা, ঝর্নার সেই জলে নজর নেই অনেকেরই। নজর ঘোরাতে সেই পুজোমণ্ডপ ঢাকা থাকবে প্রকৃতি মায়ের হাতে। আলো, অন্য সরঞ্জামের কারিকুরিতে হাত থেকে নেমে আসবে ঝর্না। অন্দরমহলেও ঝরবে বৃষ্টি। সপ্তনাগের নীচে মাতৃমূর্তি। দেবীর আদল বিশ্বপ্রকৃতির। অস্ত্রে রুখবেন দূষণ-অসুরকে। আবহসঙ্গীতেও জল বাঁচানোর আর্তি।

জল-জঙ্গলে মিশে প্রকৃতির মুখ। ‘বৃদ্ধ’ মহীরুহের শাখা-প্রশাখায় ঢাকা আকাশ, গোটা মণ্ডপ। সপরিবার দুর্গা সবুজ প্রকৃতিরই অন্য রূপ। শহরের দক্ষিণের পূর্ব বড়িশা শীতলাতলা কিশোর সঙ্ঘের শিল্পী রবিউল ইসলাম বলছেন, ‘‘প্রকৃতিকে আমরা কোণঠাসা করে ফেলেছি। তাকে বাঁচাতে এগিয়েছেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর।’’ মাটি, খড়, গাছের পাতায় ঘেরা মণ্ডপে অসুরের অবয়ব শুধু প্লাস্টিকের। তাকেই দমন করবেন দুর্গা। শ্যাওলা ঢাকা মণ্ডপ-পথে ঘুরে সে সব দেখবেন পুজোপ্রেমীরা।

সভ্যতা এমন গতিতেই এগোলে ৫০ বছর পরে দুর্গাপুজোয় ‘ভোগ’ জোগাতেও হিমশিম খাবে বাঙালি। জলসঙ্কটে তত দিনে শস্য উৎপাদন কমবে। জ্বালানির অভাবে সহজলভ্য হবে না বিদ্যুৎ। দূষণ কাড়বে শ্বাসের অক্সিজেন— এই মন্তব্য টালা বারোয়ারির উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্যের। তাঁদের মণ্ডপে সে কারণে সব কিছুই যেন যান্ত্রিক, ঘূর্ণায়মান। বাতাস-কল থেকে গাড়ির ইঞ্জিন— ছাপ থাকবে দেওয়ালে দেওয়ালে। পুরাণে বর্ণিত রথে অবতীর্ণ হবেন জগজ্জননী। বার্তা একটাই— সভ্যতা যতই এগোক, প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হলেই বিপদ!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy