Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

মেডিক্যাল বর্জ্য যত্রতত্র, বাড়ছে সঙ্কট

রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, ২০১০ সালে কলকাতায় বৈদ্যুতিন বর্জ্যের পরিমাণ ছিল বছরে ১০ হাজার মেট্রিক টন। এখন তা পৌঁছে গিয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টনে।

অসতর্ক: বাছাই করার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় অন্য বর্জ্যের সঙ্গে হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের মেডিক্যাল বর্জ্যও পৌঁছে যাচ্ছে ধাপায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

অসতর্ক: বাছাই করার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় অন্য বর্জ্যের সঙ্গে হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের মেডিক্যাল বর্জ্যও পৌঁছে যাচ্ছে ধাপায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৭ ০২:১৮
Share: Save:

এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে মেডিক্যাল বর্জ্য কলকাতাবাসীর বিপদের কারণ হবে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আগে তেমনই আশঙ্কার কথা শোনালেন রাজ্যের একাধিক পরিবেশবিদ। তাঁরা বলছেন, এক দিকে হাসপাতালগুলিতে মেডিক্যাল বর্জ্য বাড়ছে, পাশাপাশি বেড়েই চলেছে বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ ব্যবহারের হিড়িক। তা থেকে ছড়ানো দূষণে ক্যানসারের আশঙ্কা প্রবল। তবে সমস্যার কথা বলেই থেমে থাকেননি তাঁরা। জানিয়েছেন সমাধানের পথও। তাঁদের কথায়, সঙ্কট কাটাতে দ্রুত ‘থ্রি আর’ পদ্ধতি চালু করার উপরে জোর দিতে হবে। ‘থ্রি আর’ অর্থাৎ, রিডিউজড্, রিইউজড্ এবং রিসাইকল। এই ব্যবস্থার ভার নিতে হবে পরিবেশ দফতরকেই।

রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, ২০১০ সালে কলকাতায় বৈদ্যুতিন বর্জ্যের পরিমাণ ছিল বছরে ১০ হাজার মেট্রিক টন। এখন তা পৌঁছে গিয়েছে ২০ হাজার মেট্রিক টনে। শহরের এক পরিবেশ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ফ্রিজ, টিভির ক্ষেত্রে যেমন রি-সেল করার ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইলের ক্ষেত্রেও তা করা হোক। মোবাইল খারাপ হলেই তা ফেলে দেওয়া হয় ব্যাটারি সমেত।’’ যা ভয়ানক ভাবে শহরকে দূষিত করছে বলে জানান তিনি। পুনর্ব্যবহারের জন্য মোবাইলের পুরনো ব্যাটারি কিনতে বাধ্য করা হোক সংস্থাগুলিকে। তা হলে যত্রতত্র তা ফেলার প্রবণতা কমবে।

মূলত পাঁচ রকমের বর্জ্য শহরকে দূষিত করে। তা হল প্লাস্টিক, নির্মাণ দ্রব্য, বাড়ির বর্জ্য, বায়ো মেডিক্যাল এবং বৈদ্যুতিন জঞ্জাল।
বর্তমানে শহরে দৈনিক ৪ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য জমে। এর মধ্যে সিংহভাগ বাসিন্দাদের ফেলা। এ ছাড়া রয়েছে দোকান-বাজারের ফেলা পচা আনাজ থেকে মাছের আঁশ, মাংসের হাড়। কলকাতা পুর প্রশাসনের দাবি, আগে রাস্তার ধারে ডাঁই হয়ে থাকত স্তূপীকৃত জঞ্জাল। এখন স্বয়ংক্রিয় কম্প্যাক্টর মেশিন-সহ স্টেশন গড়ে ওঠায় সে সব চিত্র উধাও। কিন্তু কম্প্যাক্টর থাকলেই কি বর্জ্যের সমস্যা মিটবে?

পরিবেশবিদেরা তা মনে করছেন না। তাঁদের কথায়, কম্প্যাক্টর কেবল জঞ্জালের আয়তন কমিয়ে (কম্প্যাক্ট) দিচ্ছে। কিন্তু তাতে বায়ো-ডিগ্রেডেবল বর্জ্যের সঙ্গে নন বায়ো-ডিগ্রেডেবল বর্জ্যও মিশে থাকছে। যা ভয়ানক। এ বিষয়ে শহরের এক পরিবেশ বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ‘‘জঞ্জালকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। জঞ্জাল অন্য শক্তির উৎসও।’’ উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, ব্যারাকপুরে পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে থাকা ঘোড়ার বর্জ্য বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। কিন্তু নন বায়ো ডিগ্রেডেবলের সঙ্গে বায়ো ডিগ্রেডেবল মিশে গেলে তা হবে না।

বোঝা: চাঁদনি চকে রাস্তার ধারেই রাখা আছে বৈদ্যুতিন বর্জ্য। এগুলির ভবিষ্যৎ কী, জানা নেই কারও। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

তা হলে কী করতে হবে?

বর্জ্যের পৃথকীকরণ খুব জরুরি বলে জানান ওই বিশেষজ্ঞ। হাসপাতালে যেমন তুলো, ব্যান্ডেজ, সিরিঞ্জ অথবা দেহাংশ আলাদা করে রাখতে হবে। তেমন বাড়িতেও বৈদ্যুতিন বর্জ্যের সঙ্গে আনাজ, ডিমের খোলা, মাছ-মাংসের বাতিল অংশ থাকে। সবই চলে যায় কম্প্যাক্টরে। বাছাবাছি তেমন হয় না। কিন্তু এ সব রোখার উপায় কী?

পরিবেশবিদদের কথায়, যাঁরা বর্জ্য জমাচ্ছেন, প্রথমেই তাঁদের সচেতন হতে হবে। সবটাই সরকার করবে, পুরসভার লোক এসে নিয়ে যাবে— এই ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। বর্জ্য জমানোর সময়ে নিজেদেরকেই তা আলাদা করে বেছে রাখতে হবে। না হলে বর্জ্য
জমানোর জন্য টাকা দিতে বাধ্য করতে হবে। তা হলে কিছুটা কাজ হতে পারে বলে মনে করেন পরিবেশপ্রেমীরা। তবে এ ব্যাপারে সবচেয়ে সজাগ থাকতে হবে পরিবেশ দফতরকেই, এমনই মনে করছেন তাঁরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy