অশান্ত: বিক্ষোভকারীদের জ্বালিয়ে দেওয়া টায়ার নেভাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। বৃহস্পতিবার, গুয়াহাটিতে। ছবি: পিটিআই
ইন্টারনেট পরিষেবা আপাতত বন্ধ। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগের উপায় নেই। তাই পরিজনদের খোঁজ নিতে কেউ কেউ ঘনঘন ফোন করছেন বাড়িতে। বাড়ির লোকেরা নিরাপদেই রয়েছেন, তা জেনে আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অসম-ত্রিপুরা থেকে কর্মসূত্রে কলকাতায় আসা মানুষজন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাশ হওয়ার পরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ত্রিপুরা এবং অসমে। আগুন জ্বালিয়ে, ভাঙচুর এবং রাস্তা অবরোধ করে চলছে প্রতিবাদ। পরিস্থিতি সামলাতে জারি হয়েছে কার্ফুও। বিক্ষোভ হঠাতে পুলিশের গুলিতে গুয়াহাটিতে মারাও গিয়েছেন দু’জন। এই পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই দুই রাজ্যে কেমন রয়েছেন তাঁদের বাবা-মা, ভাই-বোনেরা, সেই দুশ্চিন্তাতেই বুধবার থেকে রাতের ঘুম উড়েছে কলকাতায় থাকা আদতে অসম-ত্রিপুরার বাসিন্দাদের অনেকেরই।
কাজের সূত্রে বহু বছর ধরে কলকাতায় থাকেন আগরতলার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘টিভিতে, সংবাদপত্রে খবর দেখে খুব টেনশন হচ্ছিল। আজ মায়ের সঙ্গে কথা বলে মনটা হালকা লাগছে।’’
বিশ্বজিৎবাবুর ভাই আগরতলায় একটি দোকানের কর্মী। কার্ফু জারি হওয়ায় আপাতত তিনি ঘরের বাইরে বেরোচ্ছেন না বলেই জানিয়েছেন দাদাকে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই অসমের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস ‘অসম সোশিয়ো লিটারারি ক্লাব, কলকাতা’র সম্পাদক চন্দন ফুকনের। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিবাদ খুব তাড়াতাড়ি মিটবে না ঠিকই। তবে আর কয়েক দিনের মধ্যে সর্বত্র যে অশান্তি চলছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে। তার পরে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু এলাকায় অবরোধ, বন্ধের মতো অশান্তি হতে পারে। তবে প্রাণহানি বা সম্পত্তি ক্ষতির মতো সমস্যা হবে না।’’ কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলি মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আছেন, যাঁরা আদতে অসমের বাসিন্দা।
সপ্তাহ তিনেক আগেই অসমের নগাঁও থেকে সাতাশি বছরের মাকে দেখে কলকাতার গাঙ্গুলিবাগানে ফিরেছেন মামনি গোস্বামী। অসমে অশান্ত পরিস্থিতির পরে যোরহাট, নগাঁও, গুয়াহাটির আত্মীয়দের খোঁজ নিতে বুধবার রাত থেকে ফোনই ভরসা তাঁর। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে সমর্থন থাকলেও এই ভাবে প্রতিবাদ করা নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাঁর। মামনিদেবীর কথায়, ‘‘এ ভাবে আগুন জ্বালিয়ে, ভাঙচুর করে প্রতিবাদ ঠিক নয়। এতে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।’’
বুধবার থেকেই বারবার ফোন করে বাবাকে আপাতত গুয়াহাটিমুখো হতে বারণ করছেন বালির গৃহবধূ বুল্টি দে। কাজের সূত্রে উজানি অসমের লামডিংয়ের বাড়ি থেকে প্রায়ই গুয়াহাটি যেতে হয় তাঁর বাবাকে। বুল্টিদেবীর কথায়, ‘‘রাস্তায় কোথায় কখন কী হবে, তা তো আগে থেকে কিছু বলা যায় না। তাই বাড়ির সকলের খবর নেওয়ার পাশাপাশি বাবাকেও বোঝাচ্ছি।’’
তবে সিএবি-প্রতিবাদের ভাষা এমন হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করছেন তিনসুকিয়ার প্রণব হাজারিকা। ছেলের পড়াশোনা ও মেয়ের চাকরির সূত্রে গত আট বছর ধরে কলকাতাতেই থাকেন তিনি। অসম পেট্রো-কেমিক্যালসের অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মীর মতে, ‘‘প্রতিবাদের ভাষা হওয়া উচিত শান্তিপূর্ণ। কিন্তু অসম জ্বলছে। তাতে তো আতঙ্ক হবেই। সেখানে আপনজনেরা রয়েছেন যে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy