Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Medical College and Hospital

কাউন্সেলিং থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের ফেল করানো, রহস্য আর জি করের সর্বস্তরে

হিসাবে গরমিলের অভিযোগ আর জি কর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সেই তদন্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়লেও তা জাদুবলে হিমঘরে।

RG Kar

—প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:১৩
Share: Save:

হাসপাতালের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির অভিযোগের তালিকা অন্তহীন। বহু বছর ধরেই মেডিক্যালে স্নাতক স্তরে কাউন্সেলিং চলে আর জি করে। ১৫-২০ দিন ধরে চলা এই প্রক্রিয়ায় আন্দাজ কত খরচ হতে পারে?

২০২২ সালের শেষ চার মাসে চার দফায় মোট ২০ দিন ধরে চলা এই কাউন্সেলিংয়ে খরচ হয়েছিল ১৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৪১০ টাকা! তার মধ্যে সিসি ক্যামেরার ভাড়া হিসাবে ৩ লক্ষ টাকা, ল্যাপটপ-পেন ড্রাইভ-প্রিন্টারের ভাড়া ৭ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা, ওয়াইফাইয়ের ভাড়া ৯৭ হাজার টাকা, সাউন্ড সিস্টেম ও টেবিল-চেয়ার বাবদ ভাড়া যথাক্রমে ৯৬ হাজার ও ৩০ হাজার টাকা এবং খাবারের খরচ ৯০ হাজার টাকা। ওই ক’দিন পেন ড্রাইভের ব্যাক-আপ এবং রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা! ২১ ডিসেম্বরের একটি বিলে দেখা যাচ্ছে, এক দিনের পেন ড্রাইভ ব্যাক-আপে খরচ ৯ হাজার টাকা! এক দিনে কম্পিউটার টোনার ও অন্যান্য জিনিস কেনা হয়েছে ৪৫ হাজার টাকার। এক দিনের জন্য সিসি ক্যামেরার ভাড়া ৩০ হাজার টাকা।

তদন্তকারীদের দাবি, হাসপাতালে চালু থাকা ক্যান্টিন, অতিথিশালা, কাফেটেরিয়া, চায়ের স্টলের ভাড়া নিয়ে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরের অতিথিশালার ভাড়া এবং গাড়ির পার্কিং ফি-র টাকা সরকারি খাতে ঢুকছে না। ২০২২ সালের ২৮ জুনের দু’টি চিঠিতে দেখা গিয়েছে, স্টুডেন্টস ক্যান্টিন (আপার) থেকে মাসে ১৪ হাজার টাকা ভাড়া বাবদ বছরে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ও স্টুডেন্টস ক্যান্টিন (লোয়ার) থেকে মাসে ২২ হাজার টাকা বাবদ দু’বছরের বকেয়া ৫ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা কলেজের অ্যাকাডেমিক তহবিলে জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। কিন্তু, ওই টাকা জমা পড়ার কথা রোগী কল্যাণ সমিতিতে। অ্যাকাডেমিক তহবিল সরাসরি অধ্যক্ষের নাগালে থাকে।

নথি বলছে, বছর দেড়েক আগেও ক্যান্টিন ও স্টলের বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থা ভাড়ার টাকা দিত আর জি করের ছাত্র সংগঠনকে। যেমন, ২০২১-এর ২৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগঠনের প্যাডে লেখা রয়েছে, ‘আপার স্টুডেন্টস ক্যান্টিন থেকে ২৪৬০০ টাকা মাসিক অনুদান হিসাবে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার তহবিলে গৃহীত হল।’

চলতি বছরের ১৩ মার্চ ডক্টর্স ক্যান্টিনের এক ঠিকাদার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানান, তিনি ভাড়া ও বিদ্যুতের বিল বাবদ দু’লক্ষ টাকা ছাত্র সংগঠনকে দিয়েছেন। ক্যাম্পাসে খাবারের স্টল চালানো এক ঠিকাদার ওই তারিখেই হাসপাতালে চিঠি দিয়ে জানান, তাঁর থেকে প্রতি মাসে ভাড়ার টাকা নিয়ে যান সংগঠনের জনৈক ছাত্র। যদিও ছাত্র সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, তৎকালীন রোগী কল্যাণ সমিতিই তাদের এই দায়িত্ব দিয়েছিল।

তদন্তকারীদের মতে, সন্দীপ ঘোষ আর জি করে আসার পরেই বহু অভিজ্ঞ শিক্ষক-চিকিৎসককে ব্যক্তিগত অপছন্দের কারণে এমসিআইয়ের (এখন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন) পরিদর্শনের কথা বলে পরপর বদলি করে দেওয়া হয়। একাধিক সুপারস্পেশ্যালিস্ট চিকিৎসককে এমন জায়গায় বদলি করা হয়েছে, যেখানে ওই বিভাগই নেই! অধ্যক্ষের অপছন্দের ছাত্রদের (বিশেষত যাঁরা তাঁকে সরানোর দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন) জোর করে ফেল করিয়ে দেওয়া, আর জি করে হাউসস্টাফশিপ করতে না দেওয়ার গুরুতর অভিযোগও উঠেছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি রাজ্যের ৯টি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষেরা স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করে সে সব বন্ধ করার আবেদন জানান বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

এত অভিযোগ যাঁকে ঘিরে, সেই সন্দীপ ঘোষ সম্প্রতি বদলিও হন। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে সরকারি সেই নির্দেশ বাতিল করে তাঁকে ফেরানো হয়, যা স্বাস্থ্য দফতরে নজিরবিহীন। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের মত, চিকিৎসকদের ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ ও শাসকদল ঘনিষ্ঠ এক প্রবীণ চিকিৎসকের এতে বড় ভূমিকা রয়েছে। শ্যামাপদ দাস নামে ওই চিকিৎসক কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামাপদর দাবি, ‘‘তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় থাকলেও আমি স্বাস্থ্য দফতরের কেউ নই। সন্দীপ ঘোষকে চিনি না। কোনও চিকিৎসকের বদলিতে আমার ভূমিকাও নেই।’’ তা হলে কলকাঠি কে নাড়ছে? মুখে কুলুপ স্বাস্থ্যকর্তাদের।

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Medical College and Hospital Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy