দিলীপ এবং স্বপ্না মুখোপাধ্যায়।
নেতাজিনগরে খুন হওয়া প্রৌঢ় দম্পতি নিঃসন্তান থাকলেও একটি উইল করে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর থেকে উধাও সেই উইল। যা থেকে ওই বাড়িটির উপরে প্রোমোটারির থাবা বসানোর তত্ত্ব ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। তবে কি উইল হাতানোই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল আততায়ীদের? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। এই খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় প্রায় ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিন জন ঠিকাদার, তিন জন শ্রমিক এবং দু’জন প্রোমোটার রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে তিন জনকে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে নেতাজিনগর থানার অশোক অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রৌঢ় দিলীপ মুখোপাধ্যায় (৭১) ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না মুখোপাধ্যায়ের (৬৫) দেহ। ওই দিন সকালে কলের মিস্ত্রি এসে স্বপ্নাদেবীর দেহ প্রথমে দেখেন। পরে দোতলার শোয়ার ঘর থেকে দিলীপবাবুর দেহ মেলে। তদন্তকারীরা একপ্রকার নিশ্চিত, আততায়ীরা ওই দম্পতির পূর্ব-পরিচিত। পুলিশ সূত্রের খবর, অসুস্থ দিলীপবাবু পায়ের সমস্যার জন্য বাড়ির বাইরে বিশেষ বেরোতেন না। এক জনের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা তুলে এনে বাড়িতে রাখতেন। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সোমবার রাত থেকে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে বাড়ির পরিচারিকাকেও। কে, কবে, কখন ওই বাড়িতে এসেছিলেন— সেই তথ্য তাঁর থেকে জেনেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, ওই পরিচারিকা জানিয়েছেন, এক প্রোমোটার মাঝেমধ্যে মুখোপাধ্যায় দম্পতিকে ফোনে হুমকি দিত। সেই প্রোমোটারের খোঁজ শুরু হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কার নামে বাড়িটির উইল করা হয়েছে, সেই উইল কোথায় থাকবে— পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কোনও লোক ছাড়া এই বিষয়গুলি কারও জানার কথা নয়। সেখানেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি শুধু উইল বার করতেই দশটি আলমারি খুলেছিল দুষ্কৃতীরা? একটি স্টিলের আলমারি থেকে পাওয়া গিয়েছে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা, ৩০ লক্ষ টাকার স্থায়ী আমানতের নথি এবং সোনার গয়না। কিন্তু দুষ্কৃতীরা ওই একটি মাত্র আলমারি না খুলে চলে এল কেন? এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
পুলিশ মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত, লুটের উদ্দেশ্যেই এই খুন। বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা ছাড়াও স্বপ্নাদেবীর গলার হার নিয়ে পালিয়েছে আততায়ীরা। পাশাপাশি নিয়ে গিয়েছে দিলীপবাবুর মোবাইল ফোন এবং বৃদ্ধার মোবাইলের শুধু সিমকার্ডটি। যা দেখে অবাক পুলিশ। তাদের অনুমান, ওই সিমকার্ডে অনেক ফোন নম্বর ছিল। সেগুলি নষ্ট করতেই দুষ্কৃতীরা সেটি নিয়ে গিয়েছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ ওই বাড়ি লাগোয়া অশোক অ্যাভিনিউয়ের দু’টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, খুন হওয়ার ঘণ্টা তিনেক আগে এক ব্যক্তি ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁর গতিবিধি সন্দেহজনক। ওই ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি, দিলীপবাবুদের বাড়ির পিছনে এক ইস্ত্রিওয়ালা ভাড়া থাকেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তিনি সোমবার রাতে ওই বাড়ি থেকে কোনও শব্দ পাননি বলেই পুলিশকে জানিয়েছেন।
এ দিকে, শহরে বারবার বৃদ্ধ দম্পতি খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নেতাজিনগরের বাসিন্দারা। বুধবার সকালে মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস দিলীপবাবুর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বেশ কিছু সূত্র মিলিছে। অবিলম্বে খুনিদের চিহ্নিত করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy