প্রতীকী ছবি
কোথাও রাত ১২টা বাজার একটু আগে সবাই বারান্দায় এসে একে অপরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন, কোথাও আবার জ়ুম মিটিংয়ের মাধ্যমে সবাই একসঙ্গে হয়ে একে অপরকে অভিবাদন জানালেন। কেউ আবার ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কেকের টুকরো পাঠিয়ে দিলেন প্রতিবেশীর ফ্ল্যাটে।
শহরের বেশির ভাগ আবাসনই আট ঘর এক উঠোনের মতো। দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজো, দোল উৎসব থেকে স্বাধীনতা দিবস, আবাসিকেরা যে কোনও উৎসবেই তাঁদের এই উঠোনে জমায়েত হন। হয় নানা ধরনের অনুষ্ঠান। ইংরেজির নতুন বছরেও তার ব্যতিক্রম হয় না। কিন্তু এ বার করোনা পরিস্থিতি সেই উৎসবেও দাঁড়ি টেনে দিল।
দক্ষিণ কলকাতার আনোয়ার শাহ রোডের এক আবাসনের বাসিন্দারা জানালেন, প্রতি বার তাঁদের আবাসনে ৩১ তারিখ রাত আটটা, ন’টা থেকে নানা ধরনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। ব্যান্ড, ডিস্ক জকির ব্যবস্থা থাকে। সময় যত গড়াতে থাকে ডিজের বাজানো গানে নাচের আসর জমে ওঠে। কিন্তু এ বার ও সব কিছুই হয়নি বলে জানালেন ওই আবাসনের যুগ্ম সচিব এম ভি বিজু। বিজু বলেন, ‘‘এ বার বাইরে থেকে ডিজে ভাড়া করা হয়নি। আবাসিকেরাই কয়েক জন মিলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছেন। ওই অনুষ্ঠান অনলাইনে দেখেছেন অন্য আবাসিকেরা। এ বার আর খাওয়াদাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।’’
উত্তর কলকাতার বি টি রোডের একটি বহুতলের আবাসিকেরা জানালেন, এমন মন খারাপের নববর্ষ তাঁদের আবাসনে আগে কখনও হয়নি। আবাসনের বেশ কয়েক জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের অধিকাংশ এখন সুস্থ হলেও দু’জন আবাসিকের মৃত্যুও হয়েছে। যে দু’জন মারা গিয়েছেন, তাঁরা খুবই জনপ্রিয় ছিলেন আবাসনে। এই পরিস্থিতিতে সব অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। ওই আবাসনের বাসিন্দারা জানান, আমাদের ইংরেজি নববর্ষের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকমের খাবারের স্টল বসে।
নানা ধরনের প্রতিয়োগিতা হয়। যেমন বাচ্চাদের ফ্যান্সি ড্রেস প্রতিযোগিতা, মহিলাদের রান্না করার প্রতিযোগিতা হয়। আবাসনের কমিউনিটি হলে রকমারি আলো লাগানো হয়। ডিজেতে গান বাজানো হয়। ঠিক রাত ১২টায় বিরাট বড় কেক কাটা হয়। ওই কেক আবাসনের বাসিন্দা থেকে শুরু করে আবাসনের বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকা সব কর্মীদের দেওয়া হয়। আবাসনের এক বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা বাগ বলেন,
‘‘এ বার কমিউনিটি হলে বাহারি আলো জ্বলেনি, ডিজের বাজানো গান শোনা যায়নি।’’
এয়ারপোর্ট দু’নম্বর গেটের কাছে একটি আবাসনের বাসিন্দারা অবশ্য জানালেন, করোনার স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখেই কিছুটা হলেও তাঁরা অনুষ্ঠান করেছেন। ওই আবাসনের বাসিন্দা সমীরবরণ সাহা বলেন, ‘‘সন্ধ্যার সময়ে বাচ্চাদের যেমন খুশি সাজো এবং মিউজ়িক্যাল চেয়ার হয়েছে। তবে আবাসনের খুব কম বাচ্চাই এই সব খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। আবাসনের বাসিন্দারা নিজেদের বারান্দা থেকে অনুষ্ঠান দেখেছেন। ঠিক রাত ১২টায় বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন আবাসিকেরা। সেখান থেকেই একে অপরকে নতুন বছরের অভিনন্দন জানিয়েছেন।’’
গড়িয়াহাটের ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের এক আবাসনের বাসিন্দা রঙ্গন কোলে জানান, এ বার কোনও অনুষ্ঠানই হয়নি। আবাসনের সবাই অনলাইনে একে অপরকে অভিবাদন জানিয়েছেন।
নিউ টাউনের এক আবাসনের এক বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় জানান, এ বার সব অনুষ্ঠান
বাতিল করা হয়েছে। তবে ইংরেজি নববর্ষের রাতে একটি নতুন প্রতিযোগিতা চালু করা হল। আবাসিকদের বলা হয়েছে তাঁদের বারান্দা সুন্দর করে সাজাতে। সেই সাজানো বারান্দার ছবি তুলে ফোটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে। আবাসিকেরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাঁদের সাজানো বাগানের গল্প বলেছেন। এ বার ডিজে ভাড়া বা কোনও অনুষ্ঠান কিছুই হয়নি।
এ রকম নিষ্প্রাণ ইংরেজি নববর্ষ আগে কখনও কাটাননি শহরের ডিজে তিষ্যা ঘোষ। তিষ্যা বলেন, ‘‘শুধু বড় বড় ক্লাব বা হোটেলেই নয়, বহু আবাসনও ডিজে ভাড়া করে। অনেকেরই এই নতুন বছরের দিনটায় ভাল কাজ করার সুযোগ মিলত। আমাদের উপার্জনও ভাল হত। এ বার শহরের প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ডিজে কাজ পাননি। আবাসন থেকে ডিজে ভাড়া প্রায় হয়নি বললেই চলে। এক দিকে স্বাস্থ্য বিধির কড়াকড়ি, তার সঙ্গে এ বার এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে ডিজের জন্য খরচও করতে চাননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy