বাম যুব সংগঠনের ব্রিগেড সমাবেশে উড়ছে জাতীয় পতাকা। ছবি— পিনাকপাণি ঘোষ।
দীর্ঘ ‘ইনসাফ যাত্রা’র শেষে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ব্রিগেড সমাবেশ করল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। ভিড়ের বহর থেকে শুরু করে বাম কর্মী-সমর্থকদের উন্মাদনা, সবেতেই ছিল অতীতে বামেদের তাবড় ব্রিগেড সমাবেশের ঝলমলে স্মৃতির প্রতিধ্বনি। কিন্তু মিনাক্ষীদের ব্রিগেডে এ বার দেখা মিলল অনেক নতুনের। সেই নতুনত্ব জুড়ে রইল সভার শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত।
ব্রিগেডে রবিবার কর্মসূচির সূচনা হয় রবীন্দ্রনাথের ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটিকে দিয়ে। বাম মনোভাবাপন্ন একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন মঞ্চে রবীন্দ্রগানটি ধরে। তার পর তা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় গোটা মাঠে। বামপন্থীদের ব্রিগেড সমাবেশের সূচনা গণসঙ্গীতেই দেখতে অভ্যস্ত চোখ-কান প্রাথমিক ভাবেই হোঁচট খেল এখানে। ঘটনাচক্রে, এই গানটিকেই সম্প্রতি রাজ্য সঙ্গীতের তকমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা হলে কি মমতার দেখানো পথেই হাঁটল সিপিএমের যুবরা? ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের অবশ্য ভিন্ন যুক্তি তৈরি। তাঁদের মতে, মমতা রবীন্দ্রনাথের গানের কথা বদলে বিকৃত করেছেন। তাই অবিকৃত ভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীতটি পরিবেশন করে বাম যুবরা আসলে সেই বিকৃতিরই প্রতিবাদ তুলে ধরলেন। তবে ঘটনা হল, রবীন্দ্রসঙ্গীতটির কোনও বদল ছাড়াই তাকে রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করে নেওয়া হয়েছে। তবে চিরাচরিত গণসঙ্গীতের বদলে রবীন্দ্রসঙ্গীতে বামপন্থীদের অনুষ্ঠান শুরুর তাৎপর্যে নতুনত্ব আছে। গোটা সময় ধরেই কিন্তু এই নতুনত্ব টের পাওয়া গিয়েছে। একটা সময় সিপিএমের কর্মসূচি মাত্রই নিয়ম করে বাজত হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরীদের অমর সৃষ্টি। কিন্তু এ বার তার পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও জায়গা করে নিয়েছে সমসাময়িকদের লেখা প্রতিবাদের গান। ছিল এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য বা নাট্যকর্মী জয়রাজ ভট্টাচার্যের লেখা গানও। তবে, চোখ টেনেছে লোকসঙ্গীতের ব্যবহারের বিষয়টিও। বাউল বা লোকগীতির সুরে প্রতিরোধের ভাষা বসানো গানও ভরপুর বেজেছে ব্রিগেড জুড়ে।
সবচেয়ে বড় চমক ছিল সভার একেবারে শেষে। যেখানে অনুষ্ঠান শেষ করা হল ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠের মধ্যে দিয়ে। যা সিপিএম তথা ভারতের সংসদীয় বাম ইতিহাসে নতুন তো বটেই, নজরকাড়াও বটে। এখানেই শেষ নয়, রবিবাসরীয় ব্রিগেডের মঞ্চে আগাগোড়া উড়তে দেখা গেল ভারতের জাতীয় পতাকা। সিপিএম তথা বামফ্রন্টের ডাকে বহু ব্রিগেড সমাবেশ দেখেছে কলকাতা। এমনকি দেড় দশক আগে সিপিএমের যুব সংগঠনও এক বার ব্রিগেডে সভা করেছিল। কিন্তু কোনও বারই তেরঙ্গা পতাকা উড়তে দেখা যায়নি লাল ঝান্ডার মঞ্চে। প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। এ বার সেই পতাকা উড়ল ব্রিগেডের মঞ্চেও। শুধু কি তাই, গোটা ইনসাফ যাত্রার পর্বেও মিছিলের একেবারে সামনে এক জন জাতীয় পতাকা বহন করে নিয়ে এসেছিলেন কোচবিহার থেকে কলকাতা পর্যন্ত।
এই নতুনত্বগুলির সঙ্গে খানিকটা তাল মিলিয়ে ছিল আসন বিন্যাসও। এ বারই প্রথম বাম ব্রিগেডের মঞ্চ আলো করে রইলেন যুব নেতৃত্ব। আর বর্ষীয়ান নেতারা দর্শকাসনের প্রথম সারিগুলিতে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু থেকে পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র কি নিজেরাও মনে করতে পারবেন, শেষ কবে তাঁরা ব্রিগেড সমাবেশে হাজির হয়ে দর্শকাসনে বসেছেন? যা দেখে ব্রিগেডে সভা শুনতে আসা জনতার একটি অংশ নিজেদের মধ্যেই জোর আলোচনায় মেতে গেলেন, তা হলে কি রবিবারের ব্রিগেড বাম নেতৃত্বের ব্যাটন বদলেরও সাক্ষী হল? এ-ও তো নতুনত্ব!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy