Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Manhole

Manhole: ম্যানহোল সংক্রান্ত সুপারিশ কার্যকর হয়নি ন’মাসেও

ম্যানহোলে মানুষ নামিয়ে কাজ করাতে গিয়ে চার শ্রমিকের মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে ন’মাস।

ম্যানহোলে মানুষ নামিয়ে কাজ করাতে গিয়ে চার শ্রমিকের মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে ন’মাস।

ম্যানহোলে মানুষ নামিয়ে কাজ করাতে গিয়ে চার শ্রমিকের মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে ন’মাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:১৮
Share: Save:

ম্যানহোলে মানুষ নামিয়ে কাজ করাতে গিয়ে চার শ্রমিকের মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে ন’মাস। কিন্তু তার পরেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে পুরসভার তালিকা থেকে ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। শেষ হয়নি মৃতদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ টাকা তুলে দেওয়ার কাজও! অভিযোগ, নামমাত্র এফআইআর দায়ের হলেও নেওয়া হয়নি কোনও রকম কড়া আইনি ব্যবস্থা। আপাতত সবটাই পুর-প্রশাসনের দুই দফতরের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলির পর্যায়েই আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ।
যেমন, দায় ঠেলাঠেলির ছবি শনিবার দেখা গিয়েছে দমদম রোডের সেভেন ট্যাঙ্কসের কাছে একটি খোলা ম্যানহোলে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাতেও। পুরসভা দায় চাপিয়েছে পূর্ত দফতরের উপরে। তাদের যুক্তি, ম্যানহোলটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। পাল্টা পূর্ত দফতর জানিয়েছে, ম্যানহোলের ঢাকনা কেন খোলা, তা তো স্থানীয় পুর প্রতিনিধিরই খেয়াল করার কথা!

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ম্যানহোলে নেমে শ্রমিক-মৃত্যুর ঘটনাতেও একই ভাবে দায় ঠেলাঠেলি চলেছিল কলকাতা পুরসভা এবং কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (কেইআইআইপি) মধ্যে। ওই দিন কুঁদঘাটের ইটখোলা এলাকায় সদ্য নির্মিত ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনের কাছে ম্যানহোলে কাজ করতে নেমে তলিয়ে যান সাত শ্রমিক। পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চার জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জানা যায়, কেইআইআইপি-র অধীনে ওই কাজ চলছিল। ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনটির নতুন তৈরি জলাধারের সঙ্গে পুরনো পাইপের সংযোগ করাতেই ম্যানহোলে নামানো হয়েছিল ওই সাত জনকে। মাটির অন্তত ৩০ মিটার গভীরে রয়েছে ওই জলাধারটি। অত নীচে মানুষ নামিয়ে কাজ করানোই নিষিদ্ধ। এ নিয়ে কড়া নির্দেশিকা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টেরও। নিয়ম অনুযায়ী, কাউকে ম্যানহোলে নামাতে হলে আগে যন্ত্রের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে, সেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইড বা মিথেনের মতো প্রাণঘাতী গ্যাস আছে কি না। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরে কাউকে নামালে তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিশেষ ধরনের এপ্রনে ঢেকে রাখা প্রয়োজন। সঙ্গে থাকতে হবে পায়ে গামবুট, হাতে দস্তানা। কোমরে দড়ি বেঁধে নামাও বাধ্যতামূলক। বিশেষ ধরনের মুখোশের পাশাপাশি যেখানে কাজ চলছে, সেখানে অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখারও নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু সে দিন এ সবের কোনটিরই ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে।

সমালোচনার মুখে এর পরে তড়িঘড়ি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরসভা। কমিটির প্রধান করা হয় পুর কমিশনার বিনোদ কুমারকে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, যাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকা ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছে, তাদেরই তৈরি তদন্ত কমিটি কি আদৌ নিজেদের গাফিলতি তুলে ধরবে? ঘটনার ন’মাসের মাথায় জানা গিয়েছে, ওই তদন্ত কমিটি চার দফা সুপারিশ করেছিল। প্রথমত, ঠিকা সংস্থার গাফিলতি স্পষ্ট। দ্রুত ওই ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর দায়ের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শো-কজ করার পাশাপাশি ওই ঠিকা সংস্থাকে দ্রুত পুরসভার কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, সে দিনের কাজের কনসালটেন্টকেও শো-কজ করতে হবে। চতুর্থত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি এমন গাফিলতি এড়াতে সরকারি ভাবে পুরকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

কেইআইআইপি-র এক কর্তা জানালেন, সেই সুপারিশের অনেক কিছুই এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাঁর দাবি, ১০ লক্ষ টাকা করে পাওয়ার কথা থাকলেও মৃতদের পরিবার এখনও পর্যন্ত মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। অভিযুক্ত ঠিকা সংস্থার তরফে এখনও কোনও উত্তরই মেলেনি। এফআইআর দায়ের হলেও প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে এখনও পুরসভা কালো তালিকাভুক্ত করতে পারেনি ওই ঠিকা সংস্থাকে। এ নিয়ে পুর কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কাজ কত দূর এগিয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Manhole
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy