অসহায়: হাসপাতালে জয়ন্ত রাজবংশী। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
সরকারি হাসপাতালে রোগী প্রত্যাখ্যান নতুন নয়। কিন্তু শত প্রচারেও যে সেই ‘সংস্কৃতি’ বদলায় না, তা-ই যেন দেখিয়ে দিল দিনমজুর জয়ন্ত রাজবংশীর ঘটনা। ট্রেন দুর্ঘটনায় ডান পা কাটা যাওয়া যুবক সাত দিন ধরে ঘুরলেন শহরের চারটি মেডিক্যাল কলেজে। প্রতিটি হাসপাতালে ভিন্ন কারণে জুটল প্রত্যাখ্যান। শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে আপাতত আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডানকুনির বাসিন্দা।
গত ১৮ ডিসেম্বর বাড়ি ফেরার পথে রেললাইন পার হওয়ার সময়ে মালগাড়ির ধাক্কায় ডান পা কাটা যায় জয়ন্তের। তাঁকে প্রথমে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের জন্য তারা রোগীকে রেফার করে কলকাতা মেডিক্যালে। জয়ন্তের সহকর্মী হুমায়ুন কবীর বুধবার জানান, প্রাথমিক চিকিৎসার পরে কলকাতা মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সেখানকার ট্রমা কেয়ারে শয্যা না থাকার যুক্তি দেখিয়ে জয়ন্তকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর জি করে। হুমায়ুন জানান, ১৯ ডিসেম্বর চিকিৎসা শুরু করেও আচমকা ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, রোগীকে কলকাতা মেডিক্যালেই নিতে হবে! হুমায়ুনের বক্তব্য, যেহেতু উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ‘রেফারে’র কাগজে কলকাতা মেডিক্যাল লেখা ছিল, তাই এমন ‘পরামর্শ’।
গত বৃহস্পতিবার সকালে জয়ন্তকে সিএমসি-তে নিয়ে গেলে ভর্তি নেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু চার দিন ভর্তির পরে জানানো হয়, তাঁর অস্ত্রোপচার সেখানে হবে না। রোগীকে নিতে হবে এন আর এসে। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের কথায় ভরসা করে সোমবার স্বামীকে নিয়ে এন আর এসে যান স্ত্রী রীতা রাজবংশী। চিকিৎসকেরা জানান, সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু সন্ধ্যায় জানানো হয়, যন্ত্র খারাপ। সেই সঙ্গে ফের এসএসকেএমে স্থানান্তরের পরামর্শ। শয্যার অভাবে সেখানে আবার অসহায় পরিস্থিতির মুখোমুখি হন জয়ন্তের পরিজনেরা।
তিতিবিরক্ত হুমায়ুন এ বার ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করেন। সেখানকার কার্যালয় থেকে রোগীকে আর জি করে নিয়ে যেতে বলা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আর জি করের ডেপুটি সুপার আশ্বাস দেন, তিনি ফোন পেয়েছেন। চিকিৎসা পেতে অসুবিধা হবে না।
কিন্তু এর পরে যে আরও তিক্ত অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে, ভাবতে পারেননি রীতা। তাঁর কথায়, ‘‘আর জি করে ট্রমা কেয়ারের এক চিকিৎসক জানান, বহির্বিভাগে দেখিয়ে রোগীকে ভর্তি করতে হবে। ট্রমা কেয়ার থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের ধাক্কা মেরে বার করে দেন।’’ সারা রাত খোলা আকাশের নীচে থাকার পরে বিষয়টি নিয়ে হইচই হলে বুধবার জয়ন্তকে ট্রমা কেয়ারে ভর্তি নেওয়া হয়। ততক্ষণে তাঁর ক্ষতস্থানে পচন ধরেছে।
প্রশাসনিক স্তরে আশ্বাস পাওয়ার পরেও রোগীর পরিজনেদের সঙ্গে এমন আচরণ কেন? আর জি করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘হাসপাতালের গ্রিভান্স সেলে ওই রোগীর পরিবার ঘটনাটি জানাতে পারতেন। যা হচ্ছে সবই তো মৌখিক। কোনও কাগজ তো নেই যে বুঝতে পারব কারা এ কাজ করেছে। আমরা বলি, খোঁজ করে দেখছি। কিন্তু নথির অভাবে তদন্ত করেও কিছু পাওয়া যায় না।’’
জয়ন্তের স্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘আমার স্বামী তো মারাই যেতেন। সাত দিন ধরে চিকিৎসা না হওয়ার জন্য যে ক্ষতি হল, তার দায় কে নেবে?’’
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে বুধবার স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমারকে এসএমএসে পুরো ঘটনা জানানো হয়েছিল। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমি বিষয়টি দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy