স্পিৎজ় প্রজাতির সেই কুকুর। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ হাজার টাকার দেনা মেটাতে পোষ্য কুকুরের চার পা বেঁধে তাকে বস্তায় ভরে ময়লার স্তূপে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গত রবিবার বিমল সর্দার নামে ওই অভিযুক্তকে ক্যানিং থেকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে কালীঘাট থানার পুলিশ। একটি পশুপ্রেমী সংস্থা কুকুরটিকে উদ্ধার করলেও পাঁচ দিনের মাথায় সে মারা যায়।
বছর চুরাশির প্রণব রায় ও তাঁর স্ত্রী, বছর পঁয়ষট্টির মিঠুর বাড়ি কালীঘাটের ধর্মদাস রোয়ে। বড় মেয়ে রাজ্যের বাইরে থাকেন। ছোট মেয়ে বেশ কয়েক দিন ভিন্ রাজ্যে থাকার পরে এখন নরেন্দ্রপুরের শ্বশুরবাড়িতে আছেন। স্পিৎজ় প্রজাতির একটি কুকুরকে ২০০৫ সালে বাড়িতে আনেন প্রণববাবুরা। নাম রেখেছিলেন দুষ্টু। সন্তানেরা দূরে থাকায় দুষ্টুই ছিল বুড়ো-বুড়ির সর্বক্ষণের সঙ্গী। তবে এর মধ্যেই গায়ে পোকা হওয়ায় ভুগছিল দুষ্টু। নানা ভাবে পোকা ছাড়ানোর চেষ্টা করেও সুরাহা হয়নি। শেষে প্রণববাবুদের পরিচিত বিমল নামের ওই যুবক বলে, তার পরিচিত এক ব্যক্তি রয়েছেন। পোষ্যের গায়ের পোকা ছাড়াতে তিনি পাঁচ হাজার টাকা নেবেন। দুষ্টুর যন্ত্রণা-মুক্তির কথা ভেবেই এর পরে সেই টাকা দিয়ে দেন প্রণববাবু। গত ৪ জুলাই টাকা এবং দুষ্টুকে নিয়ে বেরিয়ে আর ফেরেনি বিমল। পরে মেয়েদের খবর দেন বৃদ্ধ।
প্রণববাবুর ছোট মেয়ে মৌ রায় জানান, কয়েক দিন আগে তাঁদের বাড়ির একাংশে নির্মাণকাজ করানোর প্রয়োজন হয়। একটি সংস্থার সূত্রে কাজ করতে আসে বিমল। তবে কাজ শেষ হয়ে গেলেও বিমলের যাতায়াত বন্ধ হয়নি। মৌয়ের কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যেই বাড়িতে যেত বিমল। ও নাকি বাবা-মাকে খুব ভালবাসত। দুষ্টুকেও খাওয়াত। বাবার ধারণা হয়, ও দুষ্টুকে ভালবাসে! বাবা ওর উপরে ভরসা করেছিলেন।’’
দুষ্টুকে নিয়ে বিমল বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পরে প্রথমে সে যে সংস্থার হয়ে কাজে এসেছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেই সূত্রে পাওয়া ঠিকানা ধরেই ক্যানিংয়ে বিমলের বাড়িতে যান মৌয়েরা। সঙ্গে ছিল ক্যানিং থানার পুলিশ। মৌয়ের কথায়, ‘‘দেখি, খাটের তলায় লুকিয়ে রয়েছে। পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে যেতে বলল, ৫০০ টাকা দিয়ে ও দুষ্টুকে বিক্রি করে দিয়েছে।’’ এর পরে কালীঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মৌয়েরা। ক্যানিং থেকে কলকাতায় নিয়ে এসে আদালতে তুলে বিমলকে হেফাজতে নেয় কালীঘাট থানার পুলিশ। আজ, শুক্রবার ফের তাকে আদালতে তোলার কথা। পুলিশের দাবি, বিমল জানিয়েছে, এক ব্যক্তি তার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পেতেন। সেই জন্যই সে এই কাজ করেছে। টাকা নিয়ে হাত-পা বেঁধে কুকুরটিকে বস্তায় ঢুকিয়ে কালীঘাটের ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন মৌ। সেই সূত্রেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। ওই সংস্থার তরফে প্রান্তিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জঞ্জালের মধ্যে পা বাঁধা অবস্থায় ওকে পাই আমরা। চিকিৎসা করাই। কিন্তু পাঁচ দিনের মাথায় ও মারা যায়। দোষীর কড়া শাস্তি চাই। বারবার আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেলে কোনও দিনই ওই অবোলা প্রাণীরা বিচার পাবে না।’’ মৌ বললেন, ‘‘আমার বাবা অসুস্থ। দুষ্টু ওঁর কাছে ছেলের মতো। এই ঘটনা তিনি নিতে পারছেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy