এ ভাবেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করেন বৃহন্নলারা। বুধবার সন্ধ্যায়, চাঁদনি চকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
শুধু পানের পিক ফেলা বন্ধ করা নয়! কলকাতার মোড়ে মোড়ে ভিক্ষাপ্রার্থী বৃহন্নলাদের রমরমাও শহরের সৌন্দর্যায়নের পক্ষে বাধা সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ বার এই বৃহন্নলাদের সামলানোর দিকটিও উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য নানা বৈষম্যের শিকার বৃহন্নলাদের চাকরি দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দিচ্ছেন। তবে এই সুযোগ শুধু
প্রকৃত বৃহন্নলাদের জন্যই। যাঁরা বৃহন্নলার ভেক ধরে ভিক্ষা করেন, তাঁদের জন্য নয় বলে বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। প্রকৃত বৃহন্নলাদের চিহ্নিত করার ভার দেওয়া
হয়েছে পুলিশকে।
রাজ্যের প্রথম সারির মন্ত্রী, পুলিশ ও পুর আধিকারিকদের ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বৃহন্নলারা রাস্তার মোড়ে
মোড়ে যে ভাবে ভিক্ষা করেন, তা দেখতে খারাপ লাগে। শহরের সৌন্দর্য এবং ওই ভিক্ষুকদের মর্যাদার পক্ষে তা ভাল নয়। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিচ্ছেন, এই কাজ ছাড়লে
প্রকৃত বৃহন্নলাদের গ্রিন পুলিশ কিংবা সমাজকল্যাণের কাজে অন্তর্ভুক্ত
করা হবে।
এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আপত্তি তুলেছেন জঞ্জালকুড়ানির একাংশ, ফুটপাতবাসী পরিবার
এবং রাস্তায় ভিক্ষা করা ছোট বাচ্চাদের নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর
বক্তব্য, এঁদের অধিকাংশই ভিন্ রাজ্য থেকে আসা। তাঁদের এই ভাবে রাস্তায় ঘোরাফেরা শহরের পরিবেশের পক্ষে ভাল নয়। ফলে ভবঘুরেদের জন্য তৈরি নৈশাবাস বা অন্য কোনও জায়গায় তাঁদের বসবাসের ব্যবস্থা করার কথা ভাবছেন মমতা।
তবে প্রকৃত বৃহন্নলাদের চিহ্নিত করার কাজে পুলিশের যোগ্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে আইনজ্ঞ ও সমাজকর্মীদের একাংশের। মুখ্যমন্ত্রীর আরও কিছু বক্তব্য
নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। মমতা বলেছেন, বৃহন্নলা পরিচয়ে যাঁরা ভিক্ষা চাইছেন,
তাঁরা সত্যিই তৃতীয় লিঙ্গের কি না,
তা দেখা হবে। পুলিশকে বিষয়টি যাচাই করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন বলেই নবান্ন সূত্রের খবর। এই যাচাই করার বিষয়টিতে আপত্তি রয়েছে কোনও কোনও আইনজ্ঞের। হাইকোর্টের আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত বলছেন, ‘‘২০১৪-এ নালসা রায়ের সময়েই সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, যে কোনও ব্যক্তির নিজের লিঙ্গ স্বনির্ধারণের অধিকার
রয়েছে। তিনি শরীরে পুরুষ বা নারী যা-ই হোন, মনের দিক দিয়ে নিজেকে কী মনে করেন, সেটাই বিবেচ্য।’’ কৌশিকবাবুর বক্তব্য, ‘‘তা ছাড়া ভিক্ষা তো পুরুষ, মহিলা বা তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত যে কেউ
করেন, শুধু তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের ধরার কী যুক্তি!’’ তাঁর বক্তব্য, কেউ সাধ করে ভিক্ষা করে না বলে সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টও একটি রায়ে ভিক্ষাকে অপরাধ বলে ধরতে
নিষেধ করেছে।
বৃহন্নলা পরিচয় নিয়ে ভিক্ষা করা মানুষদের মধ্যে কারা আসল, কারা নকল, তা যাচাই করা হবে কী ভাবে? রাজ্যের তৃতীয়
লিঙ্গভুক্ত সমাজের ভিতরেই তা নিয়ে মতান্তর রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তা পুরোপুরি সমর্থন করছেন সমাজকর্মী তথা রাজ্যের একটি কলেজের অধ্যক্ষ রূপান্তরিত মহিলা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন, তা নিজে না-শুনলেও তাঁকে সমর্থন করি। আমার ব্যক্তি জীবনে ট্রান্সপার্সন হিসেবে স্বীকৃতি থেকে নানা বিষয়ে তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি তাঁর সংবেদনশীলতার পরিচয় পেয়েছি।’’ কিন্তু রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহের কথায়, ‘‘ডাইনি শিকারের ঢঙে তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের আসল-নকল বিচার করাটা কী পদ্ধতিতে হবে, বুঝতে পারছি না। পুলিশের হাতে তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের যৌন হেনস্থাও হতে পারে।’’ একই দুশ্চিন্তা কৌশিকবাবু বা রূপান্তরকামী পুরুষ তথা আইনজীবী অঙ্কন বিশ্বাসের। কয়েক বছর আগে ক্রীড়াবিদ পিঙ্কি প্রামাণিক নিজেকে নারী বলে পরিচয় দিলেও তাঁর লিঙ্গপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুলিশি হেফাজতে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। কৌশিকবাবুর কথায়, ‘‘কে সত্যি তৃতীয় লিঙ্গ, তা পুলিশ কী ভাবে নির্ধারণ করবে, মাথায় ঢুকছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy