শুক্রবার মাঝেরহাট সেতুর কাজ পরিদর্শন করেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।
মাঝেরহাট ব্রিজ বিপর্যয়ের পর রেল এবং রাজ্যের মধ্যে নানা কারণে সঙ্ঘাত বেধেছে। ভেঙে যাওয়ার দায় কার? তা নিয়ে যেমন দোষারোপ পর্ব চলেছিল, তেমনই রেল লাইনের উপর সেতুর ‘সুপার স্ট্রাকচার’ তৈরি নিয়েও চলেছে টালবাহানা। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে চিঠি লিখে নিজেই ময়দানে নামেন।
দেরিতে হলেও রেল এবং রাজ্যের মধ্যে সঙ্ঘাত মিটেছে। নবান্ন সূত্রে খবর, ‘সুপার স্ট্রাকচার’-সহ বিভিন্ন বিষয়ে রেলের তরফে আর কোনও আপত্তি নেই। ফলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাঝেরহাট সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ২০২০ সালের মার্চের মধ্যেই খুলে যাবে মাঝেরহাট সেতু।
শুক্রবার মাঝেরহাট সেতুর কাজ পরিদর্শন করেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে এ বিষয়ে কিছুক্ষণ আলোচনাও করেন। তাঁর কথায়: “নকশা অনুমোদন নিয়ে রেলের সঙ্গে আর কোনও সমস্যা নেই। কাজ দ্রুতগতিতে চলেছে। মার্চের মধ্যেই নতুন ব্রিজ চালু হয়ে যাবে।”
অন্য দিকে, পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, রাজ্য এবং রেলের মধ্যে সমন্বয় রয়েছে। মাঝেরহাট সেতু নির্মাণে রেল সর রকম সাহায্য করছে রাজ্যকে। কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি (সিআরএস) মাঝেরহাট সেতু পরিদর্শ ন করবে।”
পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলছেন কাজ দ্রুতগতিতে চলেছে। নিজস্ব চিত্র
২০১৮-র ৪ সেপ্টেম্বর আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে মাঝেরহাট সেতু। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। আহত হন অনেকে। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, এক বছরের মধ্যেই নতুন করে চালু হবে মাঝেরহাট সেতু। যেহেতু রেল লাইনের উপরে সেতু নির্মাণের কাজ চলছে, তাই বিভিন্ন বিষয়ে রেল বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। নবান্ন সূত্রে খবর, ‘সুপার স্ট্রাকচার’ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে রেল বোর্ডের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছিল না। সে কারণেই নির্দিষ্ট সময়ে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। আবার রেলের তরফেও অভিযোগ করা হয়, রাজ্যের কাছে বিভিন্ন নথি এবং জরুরি বিষয় জানতে চাওয়া হলেও, তা-ও সঠিক সময়ে দেওয়া হয়নি। তাই অনুমোদন দিতে প্রাথমিক ভাবে সমস্যা হচ্ছিল।
আরও পড়ুন-বান্ধবীকে গেস্ট হাউসে আটকে রেখে শ্লীলতাহানি, অভিযোগ পেয়ে উদ্ধারে পুলিশ
মাঝেরহাট সেতুর পাশ দিয়েই মেট্রো রেলের কাজ চলছে। রাজ্যের তরফে প্রথমে অভিযোগ করা হয়, পাইলিংয়ের কারণে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেয় রেল। সেতুর রক্ষনাবেক্ষণ নিয়েও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পর্ব চলেছে দীর্ঘ দিন।
আগামী মার্চের মধ্যেই কাজ শেষ করতে চায় রাজ্য। নিজস্ব চিত্র
অন্য দিকে, রেল এবং রাজ্যের মধ্যে দায় চাপানোর ঠেলাঠেলিতে ফল ভুগতে হচ্ছে দক্ষিণ কলকাতার মানুষকে। বাম-বিজেপি-কংগ্রেস এক যোগে রাজ্য সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে শুরু করে। তবে, দেরিতে হলেও, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কাটতে চলেছে।এ বার মার্চ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করে সেতু চালু করতে চায় রাজ্য।
আরও পড়ুন: হিংসার আশঙ্কায় উত্তরপ্রদেশের ৭৫ জেলার মধ্যে ২১টিতে স্তব্ধ ইন্টারনেট
মাঝেরহাট সেতুটি পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-বজবজ শাখার উপর দিয়ে গিয়েছে। এই সেতুর মাঝের অংশটি ‘রেলওয়ে ওভারব্রিজ’ (আরওবি) হিসেবেই চিহ্নিত করা আছে। পাশাপাশি সেতু লাগোয়া এলাকায় চলছে জোকা-বিবাদি বাগ মেট্রো প্রকল্পের কাজ। দুর্ঘটনার পর ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই সেতু নতুন করে তৈরির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল রাজ্য। পরে তা পিছিয়ে ডিসেম্বর করা হয়। এ বার নবান্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী মার্চেই খুলবে মাঝেরহাট সেতু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy