অভিষেক পাণ্ডে
অবশেষে তিন দিনের মাথায় গ্রেফতার হল আনন্দপুরে যৌন হেনস্থা এবং খুনের চেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত অভিষেককুমার পাণ্ডে। মঙ্গলবার রাতে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা অভিষেকের গ্রেফতারির কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদমের একটি গেস্ট হাউস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিষেককে।
শনিবার রাতের ওই ঘটনার পরে অভিষেককে ধরতে এত সময় কেন লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, সোমবার যখন পুলিশ তাকে খুঁজে চলেছে, অভিষেক তখন পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকার একটি হোটেলে লুকিয়ে ছিল! সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিজের আসল পরিচয়েই সেখানে ছিল সে। অথচ, পুলিশ তখনও পর্যন্ত অভিযুক্তের আসল নামই জানত না। নিগৃহীতা পুলিশকে যে নাম বলেছিলেন, সেই নাম ধরেই অভিযুক্তকে খুঁজছিল তারা।
অনেকেরই বক্তব্য, শনিবার রাত থেকে পুলিশ যদি গাড়ির নম্বর ধরে খোঁজ শুরু করত, তা হলে অনেক আগেই অভিযুক্তের আসল নাম জানা যেত। তখন সে সহজে গা-ঢাকা দিতে পারত না।
প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটি গুরুতর ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশের যতটা সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল, ততটা কি তারা হয়েছিল? অন্যায়ের প্রতিবাদ করা বা অন্যকে বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা যেখানে ক্রমশ কমছে, সেখানে পুলিশের এই আচরণ সাধারণ মানুষকে আরও খানিকটা দমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
তবে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইস্ট) গৌরবলাল শর্মা পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, প্রথম দিন থেকেই অভিযুক্তকে ধরার জোর চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ দিন অভিষেক ধরা পড়ার আগে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেছিলেন, ‘‘অভিযুক্তকে আমরা খুব তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করব।’’
পুলিশের একটি সূত্রেরও দাবি, ঘটনার রাত থেকেই অভিযুক্তের খোঁজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু পরে পুলিশ জানতে পারে, ওই নামটাই ভুয়ো। এর পরে আসল নাম জানতে পারেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্র ধরে অভিষেকের গাড়ি ও বাড়ির সন্ধানও মেলে। ওই সূত্রের দাবি, পুলিশের দিক থেকে দেরির প্রশ্নই ওঠে না। বরং নির্যাতিতাই অভিযুক্তের আসল নাম এবং গাড়ির নম্বর জানা সত্ত্বেও পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছিলেন। পরে তদন্তে নেমে জানা যায়, অভিযুক্ত যুবকই তাঁর প্রেমিক। আর তার নাম অমিতাভ বসু নয়, অভিষেককুমার পাণ্ডে।
এ দিন ঘটনাস্থল এবং অভিষেকের গাড়ি পরীক্ষা করে দেখেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। সূত্রের খবর, গাড়ির দরজায়, ড্যাশবোর্ডে এবং পিছনের আসনে রক্তের দাগ মিলেছে। তরুণীকে মারধর করার ফলেই রক্তক্ষরণ থেকে ওই দাগ লেগেছে বলে পুলিশের অনুমান। ধস্তাধস্তিরও কিছু চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
এ দিন সকালে আনন্দপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয় অভিষেকের মা ও জামাইবাবুকে। থানা থেকে বেরিয়ে অভিযুক্তের মা বলেন, ‘‘আমার ছেলে ভুল করেছে।’’ এ দিন আনন্দপুর থানার পাশাপাশি এই ঘটনার তদন্তে নামানো হয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগকেও।
থানায় অভিষেকের মা দাবি করেছেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অভিযোগকারিণীর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। দু’জনের বিয়ে হওয়ারও কথা ছিল। অভিষেকের পাড়া সূত্রে পুলিশ জেনেছে, বছর পাঁচেক আগে ওই যুবকের এক বার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু আট মাস পরেই বিয়ে ভেঙে যায়। অভিযোগ, স্ত্রীকে মারধর করত অভিষেক।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, অভিযোগকারিণী আদতে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা। বছরখানেক আগে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় অভিষেকের। অভিযুক্তের বাড়িতে ওই তরুণীর এবং তরুণীর নয়াবাদের ফ্ল্যাটে অভিযুক্তের নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, সেই রাতে ওই তরুণীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসা নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্বামী দীপ শতপথীর সঙ্গে এ দিন ফোনে কথা বলেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। পরে দীপ জানান, পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের জানিয়েছেন, নীলাঞ্জনার চিকিৎসার সব খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy