Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Madhyamik Exam 2020

পরীক্ষার্থীদের পাশে পুলিশ

পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা নিজে ভবানীপুর, বালিগঞ্জ এবং কসবার তিন পরীক্ষা কেন্দ্রে ঘুরে পরীক্ষার্থীদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে আসেন।

পরীক্ষার্থীদের হাতে গোলাপ তুলে দিচ্ছেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার। —নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষার্থীদের হাতে গোলাপ তুলে দিচ্ছেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৮
Share: Save:

জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা! আর সেই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই পড়েছিল নানা রকম সমস্যায়। কেউ বিপাকে পড়েছিল পারিবারিক গোলমালের জেরে, কেউ বা ট্যাক্সিচালকের ভুলে চলে গিয়েছিল অন্য স্কুলে। কেউ অ্যাডমিট কার্ড না নিয়েই চলে গিয়েছিল পরীক্ষা কেন্দ্রে। কেউ আবার পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছনোর আগেই রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে শেষমেশ কেউই বিপদে পড়েনি। সৌজন্যে, কলকাতা পুলিশ। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া থেকে সময় মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা— সবই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে লালবাজার। পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা নিজে ভবানীপুর, বালিগঞ্জ এবং কসবার তিন পরীক্ষা কেন্দ্রে ঘুরে পরীক্ষার্থীদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে আসেন। তাদের হাতে গোলাপ তুলে দেন সিপি।

পারিবারিক অশান্তির জেরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে খানাকুলে নিজের মা-বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন দমদমের বাসিন্দা এক মহিলা। মেয়েকে পরীক্ষা দেওয়াতে হলে কলকাতায় থাকতে হবে। অথচ, শ্বশুরবাড়িতেও ফিরতে চান না তিনি। সোমবার মেয়েকে নিয়ে মা চলে গিয়েছিলেন তার স্কুলে। প্রধান শিক্ষককে বিস্তারিত জানান তিনি। প্রধান শিক্ষক সিঁথি থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ পরীক্ষার্থীকে স্কুলের কাছে একটি আশ্রমে রাখে। এ দিন সকালে ওই ছাত্রীকে বি টি রোডের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেয় পুলিশ। হাঁফ ছেড়ে মা বললেন, ‘‘পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষ পাশে দাঁড়ালেন বলেই মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারল।’’

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে রিজেন্ট পার্ক ট্র্যাফিক গার্ডের সিভিক ভলান্টিয়ার প্রদীপ সর্দার আশোকনগর পার্কের কাছে খানপুর হাইস্কুলের ছাত্র প্রদীপ ভাণ্ডারীকে রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখেন। ওসি আশিস রায়কে ওয়াকিটকিতে ঘটনাটি জানিয়ে ছাত্র ও তার বাবাকে অটোরিকশায় তুলে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান ভলান্টিয়ার। আধ ঘণ্টার চিকিৎসায় সে সুস্থ বোধ করলে ওসি-র গাড়িতেই তাকে অশোকনগরের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়।

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুরজ শাহকে বি টি রোডের রাজা মণীন্দ্র স্কুলে নামিয়ে চলে যান ট্যাক্সিচালক। কিন্তু সুরজের পরীক্ষা কেন্দ্র চার কিলোমিটার দূরের আদর্শ হিন্দি স্কুলে। চিৎপুর থানার কনস্টেবল অরবিন্দ মণ্ডল তাকে মোটরবাইকে চাপিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে দিয়ে আসেন।

বেলেঘাটা থানার ওসি প্রদীপ ঘোষাল এবং দুই অফিসার প্রতাপ কুণ্ডু ও সুমন সাহা পরীক্ষা শুরুর আগে বাণী বিদ্যামন্দির স্কুলের সামনে এক ছাত্রীকে কাঁদতে দেখে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সে বাড়িতে অ্যাডমিট কার্ড ফেলে এসেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ওসি ওই ছাত্রীকে স্কুলের ভিতরে নিয়ে যান। থানার অফিসারদের তার বাড়িতে পাঠিয়ে অ্যাডমিট কার্ড আনিয়ে পরীক্ষায় বসা নিশ্চিত করেন ওসি। তুফান হালদার নামে মুকুন্দপুরের এক ছাত্রও বাড়িতে অ্যাডমিট কার্ড ফেলে এসেছিল। গরফা থানার ওসি তার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে অ্যাডমিট কার্ড আনিয়ে দেন।

পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার গাড়ি না পেয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে পরীক্ষার্থী মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মহিলা। শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি রাজকুমার সিংহ তা জানতে পেরে নিজের গাড়িতে তাঁদের বিডন স্ট্রিটের হোলি চাইল্ড স্কুলে পৌঁছে দেন।

পরীক্ষা শেষে শ্যামবাজার এভি স্কুলের সামনে এক ছাত্রকে কান্নাকাটি করতে দেখে শ্যামপুকুর থানার কর্মীরা জানতে পারেন, সে অ্যাডমিট কার্ড ও অন্য কয়েকটি নথি হারিয়ে ফেলেছে। পুলিশ নথি খুঁজে বার করে তার হাতে তুলে দেয়।

টালা সেতু বন্ধ থাকলেও ওই এলাকায় এ দিন যানজট কার্যত হয়নি বললেই চলে। তবে অভিভাবকেরা পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই পরীক্ষার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে যান। বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে এক অভিভাবক বললেন, ‘‘আমার বাড়ি আগরপাড়ায়। যানজটের ভয়ে পরীক্ষা শুরুর প্রায় দু’ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অ্যাপ-ক্যাব ধরে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছি।’’

স্কুল থেকে অ্যাডমিট নিয়ে না আসায় পরীক্ষা কেন্দ্রে কান্না জুড়ে দেয় অর্পিতা হালদার নামে এক পরীক্ষার্থী। এ দিন সকালে গড়িয়া হরিমতি বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে পাহারায় থাকা পুলিশকর্মীরা তৎপর হয়ে অর্পিতার স্কুল নফরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় থেকে অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে আসেন। এর পরে পরীক্ষায় বসে অর্পিতা। নফরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রী অ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহই করেনি। বাড়ি থেকে সোজা পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে গিয়েছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Exam 2020 Kolkata Police Anuj Kumar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy