সুজ়েট জর্ডন।
ভোট দেবেন। তবে ভোট দিতে যাবেন একটাই আশা নিয়ে। বাড়ির মেয়েরা রাতে বাইরে থাকলে বারবার যেন ফোন করে জিজ্ঞাসা না করতে হয়, তাঁরা ঠিক আছেন কি না, তাঁরা নিরাপদ তো?
আগামী ১৯ তারিখ কলকাতায় ভোট। জর্ডন পরিবার কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার। রাজনৈতিক ফলাফল যা-ই হোক না কেন, পরিবারের মেয়েরা নিশ্চিন্তে রাতে বাড়ি ফিরতে পারুক, এটুকুই প্রত্যাশা সুজ়েট জর্ডনের বৌদি মহুয়া জর্ডনের।
মহুয়া জানাচ্ছেন, সুজ়েটের দুই মেয়ে আছেন। দু’জনেই এখন কর্মরতা। তাঁর নিজেরও চার বছরের মেয়ে আছে। সে-ও আর কয়েক বছর পরে বড় হয়ে যাবে। কিন্তু পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার পরে জর্ডন পরিবারের সকলের মনেই একটা আতঙ্ক স্থায়ী হয়ে গিয়েছে। মহুয়ার কথায়, ‘‘মেয়ে যত বড় হচ্ছে, তত সেই আতঙ্ক বাড়ছে। শহরটা নিরাপদ তো? এই সব প্রশ্ন আসছে মনে। ভোটে যে-ই ক্ষমতায় আসুক, এই অনিশ্চয়তা, এই ভয়ের মধ্যে যেন কোনও পরিবারকেই না কাটাতে হয়। কারণ, আমরা জানি এ রকমের ঘটনা হলে কী ঝড় বয়ে যায়!’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটে সুজ়েটকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল দেশ-বিদেশে। নিজেকে লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ্যে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সুজ়েট। স্পর্ধাভরে জানিয়েছিলেন, তিনি তো কোনও অন্যায় করেননি।
তা হলে কেন তিনি মুখ লুকিয়ে থাকবেন! মুখ লুকনোর কথা তো অপরাধীদের। তার পরে সুজ়েটই হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবাদের মুখ। এমনকি, ‘পার্ক স্ট্রিট রেপ ভিকটিম’ নয়, তিনি চেয়েছিলেন মানুষ তাঁকে নিজের নামেই চিনুক। নিজে এবং তাঁর মেয়েরা ভয়মুক্ত হয়ে জীবন কাটাক, সেটাই চেয়েছিলেন সুজ়েট। কিন্তু ২০১৫ সালে এনসেফ্যালাইটিসে মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরে তিন অভিযুক্ত আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়। তখনও পলাতক ছিল মূল অভিযুক্ত কাদের খান-সহ আরও এক জন। তারাও শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে ধরা পড়ে।
সাত বছর আগের ঘটনা হলেও পারিবারিক পরিসরে এখনও সুজ়েটের প্রসঙ্গ সমান ভাবে উঠে আসে বলে জানাচ্ছেন মহুয়া। তাঁর কথায়, ‘‘দেখুন যা-ই হয়ে যাক না কেন, সুজ়েট তো আর আমাদের মধ্যে ফিরবে না। তাই এটা নিয়ে আমরা আর বাইরে আলোচনা করতে চাই না। আমরা শুধু জানি, আমরা কী হারিয়েছি! এখনও আমাদের কথাবার্তায় প্রায় প্রতিদিনই ওর প্রসঙ্গ উঠে আসে। সুজ়েটের ভাই, মানে আমার স্বামী এখনও মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি।’’
এক সময়ে অভিযুক্ত কাদের খানের সঙ্গে বাংলা সিনেমার এক নায়িকার সম্পর্ক নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল চতুর্দিকে। অভিযোগ উঠেছিল, ওই নায়িকাই নাকি কাদেরকে আত্মগোপনে সাহায্য করেছিলেন। সেই নায়িকাই এ বার শাসকদলের প্রার্থী। কিন্তু সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ জর্ডন পরিবার। পরিবারের যুক্তি, প্রিয়জনদের ভুলকে ‘ভুল’ বলার মতো মানসিক জোর সকলের থাকে না। আর সেই মানসিক দুর্বলতার কারণেই অনেকে সমর্থন না করলেও সেই ‘ভুল’ লুকনোর চেষ্টা করেন। ওই নায়িকার ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটাই হয়ে থাকবে তখন।
মহুয়া বলছেন, ‘‘ওই নায়িকার এখানে কোনও দোষই নেই। তিনি তো আর কাউকে অপরাধ করতে বলেননি। তিনি নিজে একজন নারী। ফলে নারীর সম্মানের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। তবে অনেক সময়েই প্রিয়জনদের ভুল প্রকাশ্যে স্বীকার করতে যে সাহসটা লাগে, সেটা অনেকের থাকে না।’’
জর্ডন পরিবারে সম্প্রতি আর একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ফলে পুরো পরিবার এখন বিপর্যস্ত। সুজ়েটের দুই মেয়েই বর্তমানে কাজ করছেন। কিন্তু তাঁদের এ বিষয়ে কথা বলতে দিতে নারাজ জর্ডন পরিবার। মহুয়ার কথায়, ‘‘ওদের আর এ বিষয়ে জড়াতে চাইছি না। ওরা ওদের মতো বাঁচুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy