আহত: অস্ত্রোপচারের পরে সেই কুকুরটি। নিজস্ব চিত্র
একটি বাড়ি লাগোয়া সরু গলিতে পড়ে ধুঁকছে সে। আশপাশে চাপ চাপ রক্ত। পেটের নাড়ি, অন্ত্র, সব বেরিয়ে এসেছে। বোজা দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। কেউ কাছে গেলেই শুরু করছে আর্ত চিৎকার!
রবিবার দুপুরে হরিদেবপুরের বনমালী ব্যানার্জি রোড থেকে ওই অবস্থাতেই উদ্ধার করা হয় একটি পথকুকুরকে। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় খবর দেন। ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা গেলে হরিদেবপুরেই প্রাথমিক চিকিৎসা হয় কুকুরটির। পরে পশুদের জন্য ব্যবহৃত অ্যাম্বুল্যান্সে তাকে গড়িয়ায় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানেই কুকুরটির অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কুকুরটির নাম রেখেছে ডিভা।
বনমালী ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দারা জানান, রবিবার সকাল থেকেই কুকুরটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় ধুঁকতে দেখেন তাঁরা। সাগরী আচার্য নামে এক তরুণীর দাবি, তাঁর বাড়ির পাশেই কুকুরটি সকাল থেকে পড়ে ছিল। তিনিই ফোন করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় জানান। সংস্থার তরফে প্রান্তিক চক্রবর্তী বলেন, রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ কুকুরটির খবর পান তাঁরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, তার পেটে গভীর ক্ষত। তখনও রক্তপাত হয়ে চলেছে। প্রান্তিকের কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ওই জায়গাতেই শুশ্রূষা করতে হয়। অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে আসার চেষ্টা করলে কুকুরটি মারা যেত। এর পরে কিছুটা ড্রেসিং করিয়ে কুকুরটিকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসি।’’ সেখানেই রাতে অস্ত্রোপচারের পরে সংস্থার পশু চিকিৎসক জানান, কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে কুকুরটিকে।
সোমবার ফের ওই ঘটনাস্থলে যান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অনুমান, রাতে এলাকায় চোর এসেছিল। সেই চোরই কুকুরটিকে আঘাত করেছে। সাগরী বলেন, ‘‘প্রথমে মনে হয়েছিল, অন্য কুকুরের কামড়ে ওর ওই অবস্থা হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক তো বলছেন, ওটা ধারালো অস্ত্রের আঘাত। আমাদের পাড়ার অনেকেও বললেন, শনিবার বেশি রাতে তাঁরা দীর্ঘক্ষণ কুকুরের চিৎকার শুনেছেন। হয়তো চোর দেখেই তেড়ে গিয়েছিল কুকুরটা। তখনই লোহার রড জাতীয় কিছু ওর পেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ শ্যামল দত্ত নামে আর এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগেই কুকুরটির তিনটে বাচ্চা গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছে। মনমরা হয়ে থাকা কুকুরটিকে সে জন্য আমরা চোখে চোখে রাখতাম। এখানে চোরের উপদ্রব বেড়েছে। এটা চোরেরই কাজ।’’
কয়েক মাস আগেই শহরের এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি কুকুরছানার মৃতদেহ উদ্ধারের পরে মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সে কথা মনে করিয়ে প্রান্তিক বলেন, ‘‘মানুষ যে বদলে যায়নি, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট। চোরের আঘাত হোক আর যা-ই হোক, ওই এলাকার লোকজন কুকুরটিকে বাঁচানোর জন্য যা করেছেন, তা মনে রাখার মতো। ডিভাকে ওরা পাড়ায় ফিরে পেতে চান। কয়েক দিন শুশ্রূষার পরেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy