নবান্নে বৈঠকে রাজি থাকলেও, চার দফা শর্ত দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। —নিজস্ব চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারেরা চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই বৈঠক হোক নবান্নে। মুখ্যসচিবকে পাঠানো ইমেলে যে চারটি শর্ত তাঁরা দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম এটি। সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে নবান্নেই রয়েছেন।
২৭ ঘণ্টা অতিক্রান্ত, এখনও জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না চলছে স্বাস্থ্যভবনের সামনে। দফায় দফায় ইমেল, পাল্টা ইমেল চালাচালি হলেও, বৈঠক নিয়ে সমাধানসূত্র এখনও মেলেনি। বিকেলেই আন্দোলনকারী ডাক্তারেরা একটি ইমেল পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিবকে। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতে অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদলকে নিয়ে বৈঠক-সহ চার দফা শর্ত দিয়েছেন তাঁরা। আপাতত, সেই ইমেলের জবাবের জন্য অপেক্ষায় জুনিয়র ডাক্তারেরা।
নবান্নকে নিজেদের শর্ত জানানোর পর ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের তরফে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অভিনেতা-চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ। তিনি জানান, যে হেতু আন্দোলনটি সব মেডিক্যাল কলেজকে নিয়ে শুরু হয়েছিল। সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। তাই, এই জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের ৩০ জন প্রতিনিধি বৈঠকে যাবে। উল্লেখ্য, রাজ্যে বর্তমানে ২৬টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। কিঞ্জল জানান, তাঁদের দাবি না মানা হলে, সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে কিঞ্জল বলেন, “যে বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে, সেই বৈঠকে গেলে আমরা কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হব না। আমরা আবার অবস্থান বিক্ষোভ মঞ্চে ফিরব। যাঁরা এখানে অপেক্ষা করে আছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আমাদের কর্মবিরতি এবং অবস্থান বিক্ষোভ প্রসঙ্গে মতামত পরবর্তী সময়ে জানাব।”
২৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ধর্না চলছে। সরকার পক্ষের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনা নিয়ে জটিলতা এখনও কাটল না। ইমেল, পাল্টা ইমেল চলছেই। প্রথমে সরকার পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের ১০ জনের প্রতিনিধিদলকে ডাকা হয়েছিল আলোচনার জন্য। পরে, ১২-১৫ জনকে ডাকা হয়। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের অবস্থানে অনড়। তাঁদের দাবি অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদলকে ডাকতে হবে আলোচনায়।
নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর জুনিয়র ডাক্তারেরা পাল্টা ইমেল পাঠালেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। আন্দোলনরত ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি। তবে বৈঠকের জন্য চারটি শর্ত দিয়েছেন তাঁরা।
প্রথম শর্ত— অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদল থাকবে বৈঠকে।
দ্বিতীয় শর্ত— নবান্নে যে বৈঠক হবে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তার লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে।
তৃতীয় শর্ত— আন্দোলনকারীরা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন আগে, সেই দাবিগুলির উপরেই বৈঠকে আলোচনা হতে হবে।
চতুর্থ শর্ত— নবান্নে যে বৈঠক হবে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে।
২৫ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে এখনও ধর্নায় বসে রয়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। নবান্ন থেকে সন্ধ্যা ৬টার সময় তাঁদের আলোচনার জন্য পুনরায় ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে কি যোগ দিতে যাবেন তাঁরা? আপাতত সেই নিয়েই আলোচনা করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
নবান্ন থেকে ইমেল পাওয়ার পর স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসক পড়ুয়ারা। সরকারের তরফে নতুন করে আলোচনার জন্য আহ্বান পাওয়ার পর, কী হবে তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ, সেই নিয়ে আলোচনায় বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সন্ধ্যায় নবান্নের বৈঠকে যাবেন তাঁরা? আপাতত সেই উত্তরের অপেক্ষা। বুধবার সকাল থেকেই বেশ কয়েকজন সিনিয়র ডাক্তারকে দেখা গিয়েছিল আন্দোলনকারীদের সমর্থনে পাশে দাঁড়াতে। বিকেলে সেই সিনিয়র ডাক্তারদের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
মুখ্যসচিবের পাঠানো ওই ইমেলে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩২ দিন ধরে সাধারণ মানুষ ঠিকঠাক পরিষেবা পাচ্ছেন না। সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যসচিব পন্থ।
জুনিয়র ডাক্তারদের সাংবাদিক বৈঠকের পরই নবান্ন থেকে ফের ইমেল আন্দোলনরত ডাক্তারদের। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ তাঁদের ইমেল পাঠিয়ে পুনরায় আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনার জন্য তাঁদের ডাকা হয়েছে নবান্নে। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, ৩০ জনের প্রতিনিধিদলকে বৈঠকে থাকার অনুমতি দিতে হবে। কিন্তু, মুখ্যসচিবের পাঠানো ইমেলে বলা হয়েছে ১২-১৫ জন যেতে পারেন নবান্নে। মঙ্গলবারের ইমেলে ১০ জনের প্রতিনিধিদলকে ডেকেছিল নবান্ন।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, সরকারের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদলকে আলোচনায় ডাকতে হবে। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে রাজ্য সরকার যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক লাইভ টেলিকাস্ট করে, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা চাইছেন, এ বারের আলোচনাও যাতে একই ভাবে হয়।
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো ইমেলে মোট পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথম দাবি, নির্যাতিতার দ্রুত বিচার। যদিও এটির সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও যোগ নেই, সে কথাও উল্লেখ করেছেন তাঁরা ইমেলে। দ্বিতীয় দাবি, প্রমাণ নষ্টে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ থাকার অভিযোগে সন্দীপ ঘোষকে নিলম্বিত করে, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য অধিকর্তার অপসারণ। তৃতীয় দাবি, বিনীত গোয়েলকে পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরানো। ডিসি নর্থ এবং ডিসি সেন্ট্রালের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ। চতুর্থ দাবি, হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। পঞ্চম দাবি, হাসপাতালের বিভিন্ন কমিটিতে পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার ও অন্য ডাক্তারদের গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিনিধিত্ব।
মঙ্গলবার দুপুর প্রায় সাড়ে ৩টে থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মাঝে নবান্ন থেকে আলোচনায় আহ্বান জানিয়ে ইমেল পাঠানো হয়েছিল আন্দোলনরত ডাক্তারদের। কিন্তু, সেই ইমেলের ভাষা ‘অপমানকর’ দাবি করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা যাননি আলোচনায়। সারা রাত বসে থেকেছেন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে। এখনও চলছে সেই ধর্না। বুধবার ভোরে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানান, নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা ইমেলও পাঠিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সেই ইমেলের কোনও জবাব এখনও আসেনি বলেই দাবি তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy