নতুন বছরে কেনাকাটার ভিড়। রবিবার, দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ঘুরব-ফিরব, অল্প কিছু খাব।
কেনাকাটা ছাড়াই শহরের শপিং মলে সময় কাটানোর এই মানসিকতা কি বদলে দিয়েছে করোনা? শপিং মলগুলির বর্ষশেষের আয়ের হিসেব সেই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। যাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং ২০২০ সালের ১ জানুয়ারির তুলনায় ২০২০-এর ৩১ এবং ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি শপিং মলগুলির ‘কনভারশন রেট’ প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, যেখানে যত ‘ফুটফল’ (ওই নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিতির সংখ্যা) হয়েছে, তার ৯০ শতাংশই ফিরেছেন কিছু না কিছু কেনাকাটা সেরে। যার জেরে বর্ষশেষ এবং বর্ষবরণের দিনে শহরের সাতটি শপিং মল মিলিয়ে আয়ের হিসেব প্রায় একশো কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। শপিং মল ব্যবসায় যুক্তেরা জানাচ্ছেন, অন্য বার এই সময়ে শপিং মলে যে সংখ্যক লোক হয় ও সেই অনুপাতে যা আয় হয়, তার চেয়ে কম লোক হওয়া সত্ত্বেও এ বার আয় হয়েছে বহু গুণ বেশি। যা অব্যাহত রয়েছে নতুন বছরের প্রথম রবিবারেও।
এ দিন দুপুর থেকেই ভিড় প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের সাউথ সিটি মলে। একটি স্পেনীয় বিপণি ভারতের মধ্যে সেখানকার স্টোর থেকেই এ বারের শীতের মরসুমে সব চেয়ে বেশি আয় করেছে। বিক্রির নিরিখে এর পরেই রয়েছে ই-কমার্স স্টোরগুলি। ওই মলের জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘৩১ ডিসেম্বর ৮০ হাজার লোক হয়েছিল। ১ জানুয়ারি এক লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অন্য বার বছরের প্রথম দিনে অন্তত দেড় লক্ষ লোক হয়। তবে এ বার কম লোক নিয়েও আয়ের হার ২০ শতাংশ বেশি। বেশির ভাগই এখনও কিছু না কিছু কেনাকাটা করতেই শপিং মলে আসছেন।’’
রাজডাঙা মেন রোডের অ্যাক্রোপলিস মলের জেনারেল ম্যানেজার কে ভিজয়নের দাবি, ‘‘বছরের শেষ দিনে ৬০ হাজার লোক হয়েছিল। বর্ষবরণে ৮০ হাজার। বড়দিনেও ৭০ হাজারের আশপাশে। বড়দিন এবং বর্ষশেষের দিনে মূলত পানশালা এবং রেস্তরাঁর গ্রাহকদের ভিড় থাকে। ১ জানুয়ারি পানশালা-রেস্তরাঁর সঙ্গেই সমানে পাল্লা দিয়েছে কেনাকাটার স্টোরগুলি। সব মিলিয়ে কেনাকাটার হার অন্য বারের তুলনায় অনেক বেশি। স্রেফ কয়েক হাজার হয়তো শুধু ঘুরতে এসেছিলেন।’’ ওই শপিং মল থেকেই ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দামের একটি ল্যাপটপ কিনে বেরিয়ে স্কুলপড়ুয়া স্নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘করোনার পর থেকেই বাবা শপিং মলে ঘুরতে আসতে দিচ্ছে না। ল্যাপটপ কিনে দিতে হবে বলে জোর করে নিয়ে এসেছি। বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে, তখন ল্যাপটপ লাগবে।’’
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর সোমবারের বাইক র্যালিতে অনুমতি নয়, জানাল লালবাজার
আরও পড়ুন: বাংলায় কত ভোট পাবে তৃণমূল? অভ্যন্তরীণ হিসেবে স্বস্তিতে ঘাসফুল
সল্টলেক সিটি সেন্টারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তথা মল হেড সুকান্ত মুখোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের শপিং মলে বর্ষশেষ এবং বর্ষবরণের দিন যথাক্রমে ৪১ এবং ৫০ হাজার লোকের ভিড় হয়েছে। তাঁর মতে, ‘‘কেনাকাটার হার বেশি হওয়া সব সময়ই ভাল। কিন্তু কোনও শপিং মল শুধু কেনাকাটির হিসেবের উপরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। অনেকেই আসেন, যাঁরা এক দিন ঘুরে দেখেন এবং পরে এসে কেনেন। তা ছাড়া মলে প্রচুর কিয়স্ক বা স্টল থাকে। চা, ফুচকা, মোমোর সেই স্টলগুলি কিন্তু ভিড়ের উপরেই নির্ভর করে। বড় কেনাকাটা হল কি না, তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না।’’
হাওড়ার অবনি মলের ম্যানেজার সুবিমল আওন বললেন, ‘‘৩১ তারিখ আমাদের ৩৪ হাজার এবং ১ জানুয়ারি ৩১ হাজার লোক হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ হাজার করে কম। কিন্তু কেনাকাটার হার অন্য বারের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। হাওড়ার করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিল। এখনও করোনার ভয় যায়নি। ফলে কিছু না কিছু কেনাকাটা করার রয়েছে বলে শপিং মলে এসেছেন, এমন লোকের সংখ্যাই বেশি।’’
ই এম বাইপাসের মনি স্কোয়ার মলে স্রেফ বর্ষবরণের দিনেই ৭০ হাজার টাকার ব্যবসা করা একটি বার্গার চেনের স্টোর ম্যানেজার জানালেন, উৎসবের মেজাজ বছরের এই প্রথম রবিবারেও সমান ভাবে অব্যাহত রয়েছে। এ দিনই সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত তাঁদের ২৪ হাজার টাকার ব্যবসা হয়ে গিয়েছে। ওই ম্যানেজারের মন্তব্য, ‘‘স্রেফ ঘুরে-ফিরে চলে যাওয়ার ব্যাপারটাই কোথাও যেন উধাও হয়ে গিয়েছে।’’ স্টোরে লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতার ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে মন্তব্য, ‘‘নতুন করোনা স্ট্রেনের ভয়ও তো রয়েছে। শুধু ঘুরতে এসে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতিই বা কোথায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy