দ্রুত গতিতে ছুটতে গিয়ে কোনও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারালে তার আরোহীদের বিপদের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু পরমা উড়ালপুলে কোনও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারালে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে আরও কয়েকটি গাড়ির যাত্রীরও। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় যে ভাবে এক লেনের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডার টপকে উল্টো দিকের লেনে চলে গিয়েছে তাতে এই আশঙ্কাই করছে পুলিশ। বিপদ রুখতে এ বার পরমা উড়ালপুলে ডিভাইডারের উচ্চতা বাড়ানোর কথা ভাবছে লালবাজার।
লালবাজার সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ট্র্যাফিক বিভাগ থেকে কেএমডিএ-র সঙ্গে এই নিয়ে কথা হয়েছে। কী ভাবে ওই উচ্চতা বাড়ানো যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে দু’ পক্ষের। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, ডিভাইডারের উচ্চতা আরও এক ফুট বাড়ানো হতে পারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, পরমা উড়ালপুলে কেন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টো দিকের লেনে চলে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে বোঝা যায় দুই রাস্তার মাঝের ডিভাই়ডারের উচ্চতা কম থাকায় গা়ড়ি তা টপকে যেতে পারে। সেই কারণেই ডিভাইডারের উচ্চতা বাড়ানোর কথা ভাবা হয়েছে। বিষয়টি জানার পরে অনেকে বলছেন, তবে কী উড়ালপুলের ডিভাইডারের নকশায় কোনও ত্রুটি রয়েছে?
যদিও এ বিষয়ে কোনও সদুত্তর মেলেনি। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, ডিভাইডারের উচ্চতা বা়ড়ালে নিয়ন্ত্রণ হারানো গাড়ি তা টপকে যেতে পারবে না। ট্র্যাফিক বিভাগের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘উ়ড়ালপুলের উপরে কোনও গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আচমকা উল্টো দিকের লেনে গেলে বড় বিপদ ঘটতে পারে। একের পর এক গাড়ি ধাক্কা খেলে মৃত্যু হতে পারে একাধিক মানুষের। সেই বিপদ এড়াতেই
এই ভাবনা।’’
যদিও ডিভাইডারের উচ্চতা বাড়ানো নিয়ে ধন্দ রয়েছে খোদ পুলিশের অন্দরেই। তাঁরা বলছেন, পরমা উড়ালপুলের যা নকশা তাতে ডিভাইডারের উচ্চতা বাড়াতে হলে উড়ালপুলে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যানজট তৈরি হবে। সমস্যার কথা মানছেন লালবাজারের কর্তারাও। তাঁদের মতে, কী ভাবে যানজট এড়িয়ে ডিভাই়়ডারের উচ্চতা বা়ড়ানো যায় তা দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, পরমা উড়ালপুল চালু হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলত। তার ফলেই ওই রাস্তায় স্পিডোমিটার (গাড়ির গতিতে নজরদারির যন্ত্র) বসানো হয়েছে। পরমা উড়ালপুলে সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। লালবাজারের এক কর্তার দাবি, ‘‘ওই যন্ত্র বসানোর পরে গাড়ির বেপরোয়া গতিতে অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে। কোনও গাড়ির বেশি গতিবেগ ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।’’ মামলার সংখ্যা নির্দিষ্ট ভাবে বলতে না পারলেও প্রতি দিনই একাধিক গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয় বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। তা হলে এই দুর্ঘটনা ঘটছে কী ভাবে?
লালবাজারের এক পুলিশকর্তার যুক্তি, ‘‘পরমা উড়ালপুল দিয়ে প্রতি দিন কয়েক হাজার গা়ড়ি যাতায়াত করে। তার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি গাড়ি নিয়ম না মেনে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে সেই কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটতে দেওয়া যাবে না।’’
শহরের যানজট এড়াতে পরমা উড়ালপুল অনেকটাই সাহায্য করেছে। কিন্তু ওই এলাকায় কর্তব্যরত ট্র্যাফিক সার্জেন্টদের অভিজ্ঞতা, উ়ড়ালপুলটিতে গড়ে প্রতি মিনিটে আটটি গা়ড়ি ওঠে। তাই উড়ালপুলের উপরে এক বার দুর্ঘটনা ঘটলেই পুরো যান চলাচল তালগোল পাকিয়ে যায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি সরিয়ে যানজট সরাতে কালঘাম ছুটে যায়। নাকাল হন অন্য গাড়ির আরোহীরাও। এই সমস্যার কী ভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। অনেকে বলছেন, উড়ালপুলের উপরে ‘রেকার ভ্যান’ রাখা থাকলে দ্রুত দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, উড়ালপুলে ‘রেকার ভ্যান’ রাখার জায়গা নেই। তার বদলে কোনও এলাকায় ‘কাট’ তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে। স্বাভাবিক সময়ে সেই ‘কাট’ গার্ডরেল দিয়ে বন্ধ করে রাখা হবে। শুধু দুর্ঘটনার পরে যানজট তৈরি হলে সেই ‘কাট’ খুলে উল্টো দিকের লেন দিয়ে গা়ড়িগুলিকে ঘুরিয়ে নীচে নামিয়ে দেওয়া যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy