শুরু: কুমোরটুলিতে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বৃষ্টি এখনও সে ভাবে শুরু হয়নি। তাই পুজোর আগে আগে বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তো থাকছেই। তার সঙ্গে রয়েছে দক্ষ শ্রমিকের অভাব। এই জোড়া ফলায় আগামী অক্টোবরের আগে প্রতিমা তৈরির কাজ কী ভাবে শেষ করবেন, সেই ভাবনাই মাথায় ঘুরছে কুমোরটুলির শিল্পীদের।
কুমোরটুলিতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। ভাল বেতনের কারণে ভিন্ রাজ্যে প্রতিমা তৈরি করতে বা অন্য কোনও কাজ নিয়ে চলে যাচ্ছেন দক্ষ শ্রমিকেরা। ফলে অদক্ষ শ্রমিককেও দৈনিক প্রায় ৬০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি মজুরি দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে শিল্পীদের। কিন্তু এ বার এই শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়েও কি সময়মতো কাজ শেষ করতে পারবেন শিল্পীরা? বৃহস্পতিবার রথের দিন, প্রতিমা বায়নার টাকা নেওয়ার সময়ে এই চিন্তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে কুমোরটুলির শিল্পীদের।
মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, অন্য বারের মতো এ বারেও রথের দিনে দুর্গাপ্রতিমার বায়না করতে এসেছেন অনেকেই। তবে এ কথাও শিল্পীরা মাথায় রাখছেন যে, এক সঙ্গে অনেক প্রতিমার বায়না নিলেই হবে না। সময়ের মধ্যে অতগুলি প্রতিমা তৈরির কাজ শেষও করতে হবে।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে প্রতিমা বানাচ্ছেন কুমোরটুলির শিল্পী মন্টু পাল। তিনি বলেন, ‘‘এখানে কাজ করতে সহকারীদের মাসে নয় থেকে দশ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু এই টাকায় এখন দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আগে সহকারী না থাকলে ছেলেমেয়েদের বলতাম কাজে হাত লাগাতে। কিন্তু তারাও এখন এই কাজে উৎসাহ হারাচ্ছে। তাই তাদের সাহায্যও পাওয়া যাচ্ছে না সে ভাবে।’’
মন্টুবাবু জানাচ্ছেন, তাঁর দুই ছেলের মধ্যে এক জন প্রতিমা তৈরির এই পেশায় এসেছেন। কিন্তু অন্য জন একেবারেই উৎসাহী নন। মন্টুবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কুমোরটুলির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শিল্পীদের সার্বিক মানোন্নয়নও হল না। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন আসবে এই পেশায়? আমরাই ওদের আসতে বারণ করেছি।’’
কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘‘জানি দক্ষ সহকারী পাওয়া যাবে না। বাড়ির লোকেদের সাহায্য পাওয়ার ভরসাও কম। তাই এ বারে মাঘ-ফাল্গুন থেকেই প্রতিমা বানাতে শুরু করেছি। বেশি দামে অদক্ষ কর্মীদের নিয়ে কাজ করলে কাজের ক্ষতি হয়। আমাদের সুনাম নষ্ট হয়। তবু একা একা তো সব কাজ করা যায় না। তবে এ বার অনেক কম শ্রমিক নিয়েই কাজ করব।’’
মাঘ-ফাল্গুনে প্রতিমা তৈরির কাজে হাত দিলেও বর্ষার মতিগতি চিন্তায় রেখেছে কুমোরটুলিকে। শিল্পীদের একাংশের আশঙ্কা, জুলাইয়ের শুরুতেও যে হেতু বৃষ্টি সে ভাবে শুরু হয়নি, তাই অগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। তেমন হলে পুজোর মুখে সমস্ত প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। বাবু বলেন, ‘‘এ বার পুজো অক্টোবরের গোড়ায়। অগস্ট, সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হলে কী ভাবে কাজ শেষ করব, সেটাই ভাবছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy