Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kolkatar Korcha

কলকাতার কড়চা: কল্পনার ত্রিমুখী উত্তরাধিকার

পাশ্চাত্য স্বাভাবিকতাবাদ থেকে দেশি চিত্ররীতি, মুঘল আঙ্গিক থেকে জাপানি প্রকরণ, কী নেই অবনীন্দ্রনাথে!

ছবি সৌজন্য: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল  

ছবি সৌজন্য: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল  

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ০০:০৪
Share: Save:

আর্টের তিনটে মহল। একতলায় ‘ক্র্যাফ্‌ট্‌স্‌ম্যানরা’ সব তৈরি করে। দোতলায় বৈঠকখানা— ঝাড়লণ্ঠন, পর্দা, গদি তৈরি হয়ে আসে একতলা থেকে। এখানে রসিক পণ্ডিতদের মধ্যে রসের বিচার। তেতলা অন্তরমহল, শিল্পী সেখানে বিভোর, শিল্পকে আদরে সাজাচ্ছেন। ‘‘সব মহলেই জিনিয়াস তৈরি হতে পারে, জিনিয়াসের ঠাঁই হতে পারে।’’— বলেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)। এ বছর তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ। পাশ্চাত্য ও ব্রিটিশ-ঔপনিবেশিক শিল্প-আগ্রাসনের বিপ্রতীপে যে ভাবে তিনি তুলে ধরেছিলেন নব্য-ভারতীয় শিল্পঘরানা, সে কীর্তি সুখজাগানিয়া আজও। পাশ্চাত্য স্বাভাবিকতাবাদ থেকে দেশি চিত্ররীতি, মুঘল আঙ্গিক থেকে জাপানি প্রকরণ, কী নেই অবনীন্দ্রনাথে! ভারতমাতা থেকে ‘রাধাকৃষ্ণ’ ‘রুবাইয়াত’, ‘আরব্য রজনী’ থেকে ‘কৃষ্ণমঙ্গল’ চিত্রমালা, নিসর্গচিত্র— অবনীন্দ্র-সম্ভার বহুপ্রজ।

তুলনায় কম চর্চিত অবনীন্দ্র-অগ্রজ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৭-১৯৩৮)। জোড়াসাঁকোর পাঁচ নম্বর বাড়ির দোতলার টানা বারান্দা ছিল গগনেন্দ্রনাথ-সমরেন্দ্রনাথ-অবনীন্দ্রনাথের স্টুডিয়ো-কাম-বৈঠকখানা। ‘দক্ষিণের বারান্দা’য় মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন সেই স্মৃতি, গ্রীষ্মের সকালে ‘তিন দাদামশায়’ বারান্দায় বসে, সমরেন্দ্রের হাতে বই, ছবি আঁকছেন গগন আর অবন ঠাকুর। গগনেন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীলতাও বহুশাখ, এঁকেছেন নানা আঙ্গিকে। রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি বই হয়ে বেরল, সঙ্গের ছবি গগনেন্দ্রনাথের। এঁকেছেন স্কেচ, কার্টুন, মুসৌরি-দার্জিলিঙের পাহাড়, পুরীর মন্দির, জীবনচিত্র। কিউবিজ়ম নিয়ে তাঁর ভাবনাও রূপ পেয়েছে ছবিতে, গগনেন্দ্রনাথকে নিয়ে স্টেলা ক্রামরিশ লিখেছিলেন প্রবন্ধ— অ্যান ইন্ডিয়ান কিউবিস্ট।

ঠাকুরবাড়ির শিল্পচর্চায় প্রায়-অনালোচিত গগনেন্দ্র-অবনীন্দ্রের সহোদরা সুনয়নী দেবী (১৮৭৫-১৯৬২)। ভিতরমহলে থাকা বোনটি দাদাদের শিল্পকৃতির সতত সাক্ষী, কিন্তু নিজে রংতুলি হাতে নিয়েছিল অনেক পরে। তবু অপ্রকাশ্য ছিলেন না সুনয়নী। নিজের ছবিতে স্বাক্ষর করতেন। তাঁর ছবির সাহসী স্বাতন্ত্র্যের প্রশংসা করেছিল ‘দ্য ইংলিশম্যান’ পত্রিকা, ১৯২৭-এর লন্ডনে প্রদর্শনীতেও ছিল তাঁর ছবি। সুনয়নীর আঁকা মিল্কমেডস (বাঁ দিকের ছবি), বিরহ, রাধাকৃষ্ণ, টু উইমেন, অর্ধনারীশ্বর-এর মতো ছবিতে দেখা যায় বাংলা ও ভারতের চিরায়ত আখ্যান ও রূপকল্পের প্রভাব।

অবনীন্দ্রনাথ-গগনেন্দ্রনাথ-সুনয়নীর কিছু ছবি নিয়ে ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়াল ও দিল্লি আর্ট গ্যালারি (ডিএজি) মিউজ়িয়ামস-এর উদ্যোগ অনলাইন প্রদর্শনী: অ্যান ইনহেরিটেন্স অব ইম্যাজিনেশনস শুরু হয়েছে ৭ অগস্ট। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেখা যাবে ডিএজি মিউজ়িয়ামস-এর ওয়েবসাইটে, ২১ অগস্ট শুক্রবার সন্ধে ৭টায় সেখানেই অবনীন্দ্রনাথের আরব্য রজনী চিত্রমালা নিয়ে বলবেন শিল্প-ইতিহাসবিদ আর শিবকুমার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আয়োজনে গুগল আর্টস অ্যান্ড কালচার-এ চলছে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক অনলাইন প্রদর্শনীও। বিচিত্র সম্ভার— আলোকচিত্র, পাণ্ডুলিপি, ছবি। তারই একটিতে (ডান দিকে) গগনেন্দ্রনাথের তুলিতে রবীন্দ্রনাথের লন্ডন থেকে প্যারিস উড়ান।

শিশু কৃষ্ণকে আশীর্বাদ করেন রাধা

জন্মাষ্টমীর সন্ধ্যায় শোভাবাজার দেব বাড়ির ছোট তরফের গৃহদেবতা গোপীনাথজিউয়ের (ছবিতে বাঁ দিকে) বিশেষ পুজো ও হোম বাঁধা। পরিবারের নিয়ম, পুজো শুরু হবে অষ্টমীর চাঁদ দেখা যাওয়ার পর। চাঁদ দেখে পুজো শুরুর এই বিরল ও অনন্য প্রথায় মিশে আছে শাস্ত্রের বিধান, হয়তো সে কালের সম্প্রদায়-সমন্বয়ের ভাবনাও। মানবশিশুর জন্মের পর যেমন নাড়ি কাটা হয়, সেই প্রথা পালন করা হয় এখানকার জন্মাষ্টমীতে। পরের দিন পরিবারের শিশুদের সাজিয়ে হয় নন্দোৎসব। দেওয়া হয় মাখনের হাঁড়ি, হলুদ-গোলা জল ছেটানো হয় সবার গায়ে। অন্য বছর মিষ্টির কারিগররা আসতেন জন্মাষ্টমীর মিষ্টি বানাতে। এ বার করোনার জন্য সে আয়োজন হয়নি। আরও একটি বিশেষ প্রথার কথা জানালেন পরিবারের বর্ষীয়ান সদস্য অলোক কৃষ্ণ দেব। জন্মাষ্টমীর পুজো শুরুর পর গোপীনাথ ও রাধারানিকে আলাদা করে দেওয়া হয়। উৎসব শেষে ফের সিংহাসনে বসে যুগলমূর্তি।

পুরাণ মতে রাধা সম্পর্কে কৃষ্ণের মামি, বয়সে বড়। রাধাকৃষ্ণের এই সম্পর্ক ঘিরে এক বিশেষ প্রথা মানা হয় বাগবাজারের গোকুলচন্দ্র মিত্র প্রতিষ্ঠিত মদনমোহনতলার মন্দিরে (ছবিতে ডান দিকের বিগ্রহ)। এখানে জন্মাষ্টমীতে রাধারানি থাকেন না। উৎসবে তাঁর আবির্ভাব পরের দিন, নন্দোৎসবে। তখন তিনি নবজাতক কৃষ্ণকে আশীর্বাদ করতে আসেন নীচের নাটমন্দিরে। এখানেও জন্মাষ্টমীর দিন নাড়ি কাটার প্রথা আছে। কৃষ্ণ নবজাতক, তাই কোনও শক্ত খাবার দেওয়া হয় না। তালের বড়া ইত্যাদি তোলা থাকে নন্দোৎসবের জন্য। জন্মাষ্টমীতে দেবতার লৌকিক হয়ে ওঠার এহেন নানা উদাহরণ দিলেন মিত্র পরিবারের মেয়ে ঝুমুর মিত্র। এ বছর নাটমন্দিরে নন্দোৎসবের অনুষ্ঠান হয়নি।

জন্মাষ্টমী এক দেবশিশুর জন্মের আনন্দোৎসব। সেই আনন্দ প্রকাশেরও বিশেষ রীতি খড়দহের শ্যামসুন্দর মন্দিরে। শ্যামসুন্দরকে (ছবিতে মাঝখানে) নবজাতকের মতো কোলে করে ভক্তদের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। সবার দর্শনানন্দের পর, বিগ্রহকে নতুন পোশাক পরিয়ে শুরু হয় পুজো, জানালেন গবেষক কৌশিক দত্ত।

বড়বাজারের বৈষ্ণবদাস মল্লিকের ঠাকুরবাড়িতে মহাস্নান, পরিধান পরিবর্তন, ভোগারতির মধ্যে দিয়ে পালিত হয় রাধাকান্তের জন্মাষ্টমী ও নন্দোৎসব। ভোগে ছানা, ঘরে তৈরি ক্ষীর আর ‘গুটখে’ নামের এক ধরনের সন্দেশের সঙ্গে লুচি ও নুন-ছাড়া আলু-পটলের তরকারি নিবেদনের কথা জানালেন এই বাড়ির নবেন্দু মল্লিক। নুন-ছাড়া পালংশাকের ঘণ্ট দেওয়ার রেওয়াজ রামদুলাল সরকার স্ট্রিটের ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ বা বনেদি মিত্র পরিবারে রাধানাথের জন্মাষ্টমীতে। কলকাতা ও শহরতলির বহু পরিবারে গৃহদেবতা হিসাবে পূজিত শালগ্রাম শিলাকে কেন্দ্র করেও হয় জন্মাষ্টমীর উৎসব। যেমনটা হয়ে থাকে বৌবাজারে শ্রীনাথ দাস বা সিমলের তারকনাথ প্রামাণিকের বাড়িতে।

ঐতিহ্যমণ্ডিত জন্মাষ্টমীর ধারা বহমান দক্ষিণ কলকাতাতেও। চেতলা-টালিগঞ্জের বড় ও ছোট রাসবাড়িতেও জন্মাষ্টমী হয়েছে রীতি মেনে। তবে করোনার কারণে উৎসবের উল্লাস এ বছর শমিত, সামাজিকতাও নিয়ন্ত্রিত।

শতবর্ষে

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের স্নাতকোত্তর ক্লাস। বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস পড়াবেন অধ্যাপক। ক্লাসে ঢুকে সব দরজা জানালা বন্ধ করে দিতে বললেন তিনি। নিভিয়ে দিলেন আলো-পাখা। পাঞ্জাবির পকেট থেকে বার করলেন অনেকগুলো মোমবাতি। একটা জ্বাললেন, পাশেই পর পর সাজালেন অন্যগুলো। দেখা গেল, প্রজ্জ্বলিত মোমের শিখা থেকে আপনিই জ্বলে উঠেছে অন্য মোমগুলিও। অধ্যাপক দিলীপকুমার বিশ্বাস বললেন, জন্ম থেকে জন্মান্তরে এ ভাবেই প্রবাহিত হয় জীবন। এই ভাবে যিনি ছাত্রদের দীক্ষিত করেন ইতিহাসের বোধে, শিক্ষক হিসাবে তিনি যে জনপ্রিয় হবেন, তাতে আশ্চর্য কী? ব্রাহ্ম ধর্ম, ব্রাহ্ম সমাজ ও রামমোহন বিষয়ে তাঁর গবেষণা প্রামাণ্য বলে গণ্য হয়। ‘রামমোহন সমীক্ষা’-র জন্য পেয়েছিলেন রবীন্দ্র পুরস্কার। ছিলেন সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, এশিয়াটিক সোসাইটি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদেও ছিলেন দীর্ঘ দিন। জানতেন আটটি ভাষা। সত্তর বছর বয়সে শিখেছিলেন জার্মান। এসরাজ বাজাতেন, টেনিস খেলতেন যৌবনে, ভাল ছবিও আঁকতেন। প্রয়াণ ২০০৩ সালে। গত মাসে শতবর্ষ পূর্ণ হল অধ্যাপক দিলীপকুমার বিশ্বাসের।

ইতিহাসচর্চা

মুন্ডা গ্রামের কথোপকথন, ঔপনিবেশিক বাংলার কাগজ শিল্প, কলকাতার মিষ্টিমুখ, রাজনীতি ও চটকল শ্রমিক, দেশীয় বিমা শিল্পের ইতিহাস, বাংলা সংবাদপত্রের উদ্ভব ও বিকাশ, ঔপনিবেশিক বাংলায় মহিলাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা— বহুবিধ বিষয়ে ফেসবুক পেজে নিয়মিত আলোচনার আয়োজন করছে ‘ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি হিস্ট্রি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’। লকডাউনের মধ্যে যাতে বৌদ্ধিক চর্চায় ছেদ না পড়ে, সেই লক্ষ্যেই কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বর্তমান ছাত্রছাত্রী ও গবেষকদের এই প্রয়াস। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই ইতিহাসচর্চা, প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে অধিকাংশ আলোচনাই বাংলায়। আর এমন কতকগুলো বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে, যা আলাদা করে চোখে পড়বেই, বিদ্যাচর্চার পরিমণ্ডলের বাইরে যে কোনও আগ্রহী শ্রোতার মনেও কৌতূহল উসকে দেবে। বক্তারা সবাই মনোযোগী পাঠকও, বোঝা যায়।

ছবিতে স্বাধীনতা

চলে গেল ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস যাতে এই প্রজন্ম জানতে পারে, তাই ফিল্মস ডিভিশন ১৫ অগস্ট তাদের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে দেখাল দু’টি তথ্যচিত্র— ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট (১৯৪৯) ও ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম (১৯৮৫)। প্রথম তথ্যচিত্রে সিপাহি বিদ্রোহ থেকে মহাত্মা গাঁধীর মৃত্যুর মতো ঘটনার মধ্যে দিয়ে ধরা হয়েছে স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ও ঐতিহাসিক যাত্রা। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন-এর (এনএফডিসি) উদ্যোগ ‘অনলাইন পেট্রিয়টিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। ‘সিনেমাস অব ইন্ডিয়া’ ওয়েবসাইটে ৭-২১ অগস্ট গাঁধী, উদয়ের পথে, ঘরে বাইরে, পহেলা আদমি, হকিকত, গাঁধী সে মহাত্মা তক, রোজ়া, চিটাগং-এর মতো ছবি বিনামূল্যে ঘরে বসে দেখার সুযোগ। অন্য দিকে ভারতীয় তথ্যচিত্র ও ছোট ছবি-নির্মাতাদের উৎসাহ দিতে ‘ইন্ডিয়ান ডকুমেন্টারি প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে ফিল্মস ডিভিশন আয়োজন করেছে ‘ক্রাউডফান্ডিং’ নিয়ে ওয়েবিনার ও কর্মশালা। আজ গুগল মিটে, ১১টা-১টা। আলোচনা হবে ছবি তৈরির জন্য অর্থসংগ্রহ, ছবির কাহিনি ও প্রকল্প নির্মাণ, বিপণন কৌশল, ছবি তৈরিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার-সহ নানা বিষয়ে। পরিচালনায় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম ‘ক্রাউডেরা’।

সংরক্ষক

৯২ বছর বয়সে ৩০ জুলাই প্রয়াত হলেন কালিম্পঙে। ছবি: দীপঙ্কর ঘোষ

কখনও জাদুঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সুর তুলতেন তাঁর বাঁশিতে। কালিম্পঙের সংগ্রহশালার আবহটাই পাল্টে যেত সেই এই স্বাগত-সুরে। লেপচা জনজাতির সম্পদ এখানে গুছিয়ে রেখেছেন পদ্মশ্রী সোনম শেরিং লেপচা (১৯২৮-২০২০)। আছে পুথি, পোশাক, শিকারের হাতিয়ার, বাদ্যযন্ত্র, তৈজসপত্র, ঐতিহ্যবাহী কুটিরের মডেলও। লেপচা সংস্কৃতির রক্ষণ ও প্রসার ছিল তাঁর নিরন্তর অভ্যাস। কয়েকশো গান সঙ্কলন করেছেন, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সুর দিয়েছেন, রূপ দিয়েছেন লেপচা নৃত্যনাট্যের। তাঁর বৃহত্তর পারিবারিক চৌহদ্দিও লেপচা সংস্কৃতির উজ্জীবনে সক্রিয়। সম্পর্কে ভাই লিয়াঙসং তামসাং লেপচা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি-র অনুবাদক, নিয়মিত প্রকাশ করেন লেপচা সংস্কৃতির মুখপত্র। সোনমের পুত্র এন টি লেপচাও সক্রিয় সংস্কৃতি-সংগঠক। সঙ্গীত নাটক আকাদেমি সম্মানে ভূষিত সোনম কলকাতায় লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের উৎসবে সংবর্ধিতও হয়েছেন। ৯২ বছর বয়সে ৩০ জুলাই প্রয়াত হলেন কালিম্পঙে। ছবি: দীপঙ্কর ঘোষ

প্রতিবাদী

লোকে তাঁকে বেশি জানত তাঁর স্বামী বিনায়ক সেনের পরিচয়সূত্রে, পরিচিত জনেরা কিন্তু চিনতেন অন্য রূপে। ইনসাইড ছত্তীসগঢ়: আ পলিটিক্যাল মেমোয়ার একাধারে তাঁর স্মৃতিকথা, আবার ছত্তীসগড়ের জঙ্গল-পাহাড়বাসী কালো মানুষের বাঁচার লড়াইয়ের মূল্যায়নও। শহিদ হাসপাতালের চিকিৎসাকেন্দ্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে এসে শ্রমিক বনবাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানো, ওয়ার্ধায় অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হওয়া, টাটা ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এ যোগদান— কর্মময় জীবন তাঁর। ১৯৭৯-র মথুরা ধর্ষণ মামলায় দোষীদের মুক্তির প্রতিবাদে দিল্লির পথে নেমেছিলেন তিনি। ইলিনা সেন এমনই। তাঁর লেখা দ্য স্পেস উইদিন দ্য স্ট্রাগল মননে বুনে দেয় নারী আন্দোলন ও পুরুষতন্ত্র বিষয়ে সুস্পষ্ট বোধ। ২০০৭-এ বিনায়ক সেনের গ্রেফতারের পর তাঁর অসমসাহসী ভূমিকা— এক দিকে আইনি পদক্ষেপ, অন্য দিকে সংসারে অসুস্থ শাশুড়ির পরিচর্যা, দুই কন্যার প্রতি নজর, খামতি ছিল না। কর্কট রোগে আক্রান্ত অবস্থাতেও মানবাধিকারের আহ্বানে ছিলেন সতত ক্রিয়াশীল। আলোচনায় মুখ খুলতেন কম, কিন্তু মিতশব্দ মন্তব্যেই প্রমাণ পাওয়া যেত তাঁর প্রখর ভাবনাশক্তি ও যুক্তিবোধের। ৯ অগস্ট চলে গেলেন এই চিরপ্রতিবাদী।

কাছে দূরে

দূরত্বময় এই পৃথিবীতে কেমন কাটছে, প্রশ্নের উত্তরে তিনি তুলে ধরেন তাঁর ‘ডায়েরি অব সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’-এর পাতা— ‘জয় বাংলা’য় আক্রান্ত তুতো ভাইবোনরা বাড়িতে আলাদা, তাদের মাঝখানে গিয়ে হইহই করার স্মৃতি। সেই সূত্রেই মনে করিয়ে দেন উন্নত আর উন্নয়নশীল দেশের তফাত— প্রথমটিতে সমাজ মানুষের সঙ্গ ছেঁকে নেয়, আর দ্বিতীয়টির অভিজ্ঞান অপার অবাধ সান্নিধ্য। লেখক হিসেবে তাঁর জীবন সব সময় আংশিক লকডাউনেই থাকে, সৃষ্টিশীলতার জন্য তা দরকারও— বলছিলেন রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচার-এর ফেলো, সাহিত্য অকাদেমি ও রবীন্দ্র পুরস্কারজয়ী লেখক অমিত চৌধুরী। মার্গসঙ্গীতে দক্ষ অমিত ইউটিউবে কী করে মিউজ়িক আপলোড করতে হয় তা শিখেছেন লকডাউনে, আর এ দেশের হাইওয়েতে অহরহ চোখে পড়া বাণীগর্ভ পথনির্দেশিকার আদলে তৈরি করেছেন ‘লিটারারি রোড সাইন’। ঋতা ভিমানিও জানালেন লকডাউনে বইয়ের ডিজ়াইন, স্বাদু পার্সি পদ রান্না আর হোয়াটসঅ্যাপে পিয়ানো ক্লাস নিয়ে ব্যস্ততার কথা। এক সন্ধেয় দু’জনের অনলাইন আড্ডার উদ্যোগটি কলকাতা তথা দেশের অন্যতম প্রাচীন ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ক্যালকাটা ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের।

বিশ্বভরা গান

অসুখ পৃথিবীকে বিচ্ছিন্ন রাখলেই কী, আন্তর্জালেই নিয়ত সৃষ্টিসুখের রাখি বাঁধছেন শিল্পীরা। স্কটল্যান্ডের লালনপ্রেমী সুরস্রষ্টা সাইমন থ্যাকার ইউটিউবে ন’টি দেশের ১৯ শিল্পীকে একত্র করেছেন, বাংলা, উর্দু, নেপালি, পোলিশ-সহ বহু ভাষায় জাগিয়ে তুলেছেন হার না-মানার গান— ‘উই শ্যাল ওভারকাম’, ‘আমরা করব জয়’। নেপাল, রাশিয়ার গায়কের গলায় মিশেছে পাকিস্তানের জাভেদ বশির ও আকবর আলি, ইরানের ফরজ়াদ মোরাদির কণ্ঠ, বাংলাদেশের লোকশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন ও প্রকাশের সুরে হাত ধরেছে ভারতের রঘু দীক্ষিত, ঘরের কাছে বাংলার পার্বতী বাউল, পবন দাস বাউলের সুর। সাইমনের গিটারে সঙ্গত বাহরিনের চেলো বাদক জিহাদ অল হালাল, বাংলাদেশের বাঁশি শিল্পী মইনুদ্দিন খান সায়ন্ত, চেন্নাইয়ের তবলিয়া প্রবীণ নারায়ণের। গানের সুরে সীমান্তরেখা মুছছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এক ঝাঁক বাঙালির ‘গ্লোবাল আর্টস অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’ও। সম্প্রতি হয়ে গেল তাঁদের অনলাইন অনুষ্ঠান ‘মাটি’, গান-কবিতা-আড্ডায় মিলে গিয়েছিল মিশিগান থেকে মুম্বই, বীরভূম।

স্বাস্থ্য নিয়ে

জার্মানির উদাহরণ দিচ্ছিলেন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকার। বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা বা হাসপাতালের আধিক্য সত্ত্বেও জার্মান সরকার আলোচনা ও ভারসাম্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্য নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে, তাতেই সম্ভব হচ্ছে করোনা মোকাবিলা। কেবল ওপর থেকে চাপিয়ে দিলেই কল্যাণকর স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়িত করা যায় না, নিজস্ব মত পেশ করলেন অন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা, বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রাক্তন সরকারি আমলারাও। মতের বিভিন্নতাই ঋদ্ধ করেছে অভিজিৎ দাশগুপ্তের হেল্থ কেয়ার—হু কেয়ারস? তথ্যচিত্রকে। ‘কলকাতা সুকৃতি ফাউন্ডেশন’ নিবেদিত ছবিটি ইউটিউবে ইতিমধ্যেই অগণিত দর্শক দেখেছেন, দেখতে পাবেন এখনও। ‘‘স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকার। স্বাধীনতার প্রায় ৭৫ বছর হতে চলল, অথচ এ দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রায় নেই, বা এত নিম্ন মানের কেন?— প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই করোনাকালে ছবিটা করা,’’ জানালেন পরিচালক।

আলাপে, সংলাপে

লকডাউনে উঠে আসা সমস্যাগুলো বলা, শোনা ও বোঝার পরিসর তৈরি করেছে জেন্ডার সমাজ নাগরিকত্ব বিষয়ক কালেক্টিভ ‘এবং আলাপ’-এর অডিও-ভিস্যুয়াল আলাপ সিরিজ় ‘করোনা, লকডাউন ও আমাদের জীবন’। শুরুটা এপ্রিলেই, সমাজমাধ্যমে আলোচনায় উঠে এসেছিল করোনাকে ঘিরে ভয়, রাষ্ট্রের নজরদারির পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকা নানা স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগের কথা, ধরা পড়েছিল সমাজের নানা স্তরে লুকনো বৈষম্যের মুখও। জুলাইয়ে কথা হয়েছে গানের জগতে লকডাউনের প্রভাব, লকডাউনে মনখারাপ ও পড়ুয়াদের সমস্যা নিয়ে। সময়োপযোগী সংলাপ জারি আছে অগস্টেও। ‘থিয়েটার ও সঙ্গীতে আশ্রয় ও শুশ্রূষা’ বিষয়ে সাম্প্রতিক আলাপে মন খুললেন নাট্যগবেষক, নাট্যকর্মী ও সঙ্গীতশিল্পীরা। আর ১৯ অগস্ট বুধবার বিকেল ৫টায় ‘এবং আলাপ’-এর ফেসবুক পেজে লাইভ অনুষ্ঠানে ‘জীবিকার সঙ্কট ও সাধারণ মানুষের জীবন’ নিয়ে কথা বলবেন অনিতা অগ্নিহোত্রী ও কুমার রাণা।

ঊষালগ্ন

সাত বছর বয়স থেকে ভরতনাট্যম নৃত্যশিক্ষার শুরু ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের (১৯৪৫-২০২০)। ১৯৭০-এ ‘সঙ্গীত কলামন্দির’ নাট্যদলে যোগ দিয়ে মৃচ্ছকটিক নাটকে বসন্তসেনার চরিত্রে, ’৭২ থেকে অভিনয় শুরু করেন কলকাতার বিভিন্ন নাট্যদলে। মহাভোজ, হোলি, কোর্ট মার্শাল, রুদালি, মুক্তি, চণ্ডালিকা, সারহাদ পার মান্টো, খেলাগাড়ি— নির্দেশক হিসেবে একের পর এক নাটকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্যক্তির স্বাধীন স্বর ও প্রতিবাদ, পাশাপাশি কলকাতার থিয়েটারকে করে তুলেছিলেন সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক। তাঁর প্রয়াণে বেদনাহত, তবু তাঁর কর্মকাণ্ডকে থেমে যেতে দেয়নি ১৯৭৬ সালে তাঁরই হাতে তৈরি ‘রঙ্গকর্মী’। করোনা-কালে তাঁকে হারানোর পরও সক্রিয় এই নাট্যগোষ্ঠীর সদস্যরা, ১-১০ অগস্ট আয়োজন করেছিলেন অনলাইন থিয়েটার ক্লাস। সেখানে ‘থিয়েটারের বিবর্তন’ পড়াতে এসে নাট্যশিক্ষক-নির্দেশক-অভিনেতা সৌতি চক্রবর্তী বললেন ঊষার নাট্যস্বপ্নের কথা, যা পূরণের দায় আজ রঙ্গকর্মী-র। আমেরিকার ওহায়োর কলম্বাস শহরের পারফর্মিং আর্ট সংস্থা ‘স্পটলাইট’ নিবেদিত ষষ্ঠ সাউথ এশিয়ান থিয়েটার ফেস্টিভ্যালেও (ডিজিটাল রেট্রো) সম্প্রতি দেখানো হল ঊষা নির্দেশিত মান্টোর মেয়েরা। সামনেই ২০ অগস্ট, ঊষার জন্মদিন ও তাঁর পঁচাত্তর-পূর্তি উপলক্ষে রঙ্গকর্মী আয়োজন করেছে এক স্মরণানুষ্ঠান। ছবিতে হাবিব তনভিরের সঙ্গে ঊষা।

নিজের কথা

‘‘উত্তমদা ওঁর অ্যাসিস্ট্যান্টদের বললেন— ‘যে করে হোক লিলিকে রাজি করাও। ভোলা ময়রা-য় ওকে আমার চাই-ই চাই।’ ’’ বম্বেতে শক্তি সামন্তর ছবির অফার ছিল লিলি চক্রবর্তীর, সে সব ছেড়ে ‘‘উত্তমদার সঙ্গে কাজ করতে ছুটে এসেছিলাম...’’ এ ভাবেই বলে গিয়েছেন লিলি, উত্তমকুমার থেকে অমিতাভ বচ্চন পর্যন্ত তাঁর অভিনয়-জীবনের রঙিন স্মৃতি। একেবারে শুরুর পর্বের ছবি বিশ্বাস বা অনুপকুমার-এর কথাও: ‘‘আজ বুঝতে পারি কত মহৎ ছিলেন এই সব মানুষেরা।’’ কিংবা দিলীপ রায়: ‘‘সাদা ফিনফিনে পাজামা পাঞ্জাবিতে দিলীপ যখন এসে হাজির হত— বুকের বাঁ দিকটা কেমন চিনচিন করে উঠত।’’ ঘুরেফিরে আসে তাঁর স্বামীর স্মৃতিও: ‘প্রেম বন্ধুত্বের মাধুর্যে অজিত এমন করে আগলে রেখেছিল...’ স্বচ্ছ সাবলীল গদ্যে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ও অময় দেব রায় লিপিবদ্ধ করেছেন লিলি চক্রবর্তীর আত্মস্মৃতি, তাঁরই বয়ানে: আমি লিলি (সপ্তর্ষি প্রকাশন)। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, অজয় কর, অসিত সেন থেকে হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়, গুলজার-এর মতো পরিচালকদের পর ঋতুপর্ণ ঘোষ, সুমন মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবিতেও তুখড় অভিনয় করেছেন, এখনও করে চলেছেন নিয়মিত। বাংলা ও হিন্দির পাশাপাশি করেছেন দক্ষিণী সিনেমাও। মঞ্চে ও শ্রুতিনাটকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর স্মরণীয় অভিনয়। জরুরি ছিল তাঁর এই যাপনচিত্র। ৮ অগস্ট জন্মদিন ছিল লিলি চক্রবর্তীর, সেই আবহে শিল্পীর আত্মকথার গুরুত্ব অনুভূত আরও।

অগ্নিকিশোর

১৯০৮ সালের ১১ অগস্ট খুব ভোরে স্নান সেরে মন্দিরের চরণামৃত পান করলেন ক্ষুদিরাম বসু। চার জন পুলিশ তাঁকে নিয়ে এল চার ফুট উঁচু ফাঁসির মঞ্চে। বিপ্লবীর ঠোঁটে তখনও চিলতে হাসি। মৃতদেহ বইবার জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘বন্দেমাতরম্’ খোদাই করা বাঁশের খাটিয়া। কর্তৃপক্ষ-নির্দিষ্ট পথে শ্মশানযাত্রার অনুমতি ছিল মাত্র চব্বিশ জনের, তবু নেমেছিল মানুষের ঢল। ক্ষুদিরাম বসুর উকিল উপেন্দ্রনাথ সেনের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায় তাঁর জীবনের শেষ দিনটির কথা। প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের আগে ১১ অগস্টে ফিরে আসে অগ্নিকিশোরের কাহিনি, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’ গান। এই অতিমারি-ধ্বস্ত সময়েও সমাজমাধ্যমে ফিরে এল ক্ষুদিরামের ফাঁসির অর্ডার-শিটের ছবি, নানা স্মৃতি-উপাত্ত। ফিরে এল তাপস দত্তের প্রসঙ্গও, কলকাতা হাইকোর্টের সামনে ক্ষুদিরামের মূর্তির (ছবিতে) ভাস্কর তিনিই।

মিছিলের মুখ

বন্ধুমহলে তাঁর ছেলেমানুষি, ডানপিটেমির কত গল্প। সংবিধান রক্ষার মিছিলে স্লোগান দিতেন মুষ্টিবদ্ধ হাতে। কলকাতার নানা আন্দোলন ও মিছিলের মুখ রায়া দেবনাথ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন আচমকাই। মা আলপনা দত্ত,, বাবা কুশল দেবনাথ গণআন্দোলনের কর্মী। রায়া নারী অধিকার মঞ্চ ‘চিত্রাঙ্গদা’র কাজে সদাব্যস্ত। বিপন্নের পাশে দাঁড়াতে দাঙ্গাধ্বস্ত দিল্লি, ভূমিকম্পের নেপালে। লকডাউনে শ্রমিকদের ফেরানো বা কাজ-হারাদের নিয়েও ছিলেন সক্রিয়। রায়াকে মনে রেখে দুর্গানগরের এক গণহেঁশেলে এক দিনের আয়োজনে শামিল হলেন তাঁর বন্ধুরা। লকডাউনে বেতার উদ্যোগ ‘রেডিয়ো কোয়রান্টিন কলকাতা’-তেও ১১-১২ অগস্ট মুখর স্বজনেরা। চটকল-চা বাগিচার শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গী থেকে পার্ক সার্কাসে সিএএ বিরোধী ধর্নার সঙ্গী, কেউই মানতে পারছেন না বন্ধুর এই বিদায়।

অন্য পুজো

দুর্গাপুজোর বাকি মাস দুই। এ বার পুজো হবে কি না, হলেও কত অল্পে, চিন্তা শহরের পুজো উদ্যোক্তাদের। এরই মধ্যে অন্য রকম ভাবনা ভেবেছে ঠাকুরপুকুর স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক পুজো কমিটি। এ বছর তাদের সুবর্ণ জয়ন্তীতে শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে তারা তৈরি করেছে চার পর্বের তথ্যচিত্র, সোনার আলোয় ফিরে দেখা পুজোর কাজ, দেখা যাচ্ছে ইউটিউবে। দুর্গাপুজো ঘিরে প্রতি বছর চলে যে কর্মযজ্ঞ ও শিল্পকৃতি, পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে তার সংরক্ষণ বা ডকুমেন্টেশনের কথা শোনা যায় না তেমন। ঠাকুরপুকুর এস বি পার্ক পুজো কমিটির তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে তাদের গত সাত বছরের পুজোর কাজ। তিনটি পর্বে আলোচক শিল্পী বিশ্বনাথ দে, ভবতোষ সুতার ও পার্থ দাশগুপ্ত, চতুর্থ পর্বে সার্বিক পর্যালোচনায় শিল্পী বিমল কুণ্ডু, শিল্প গবেষক দেবদত্ত গুপ্ত ও অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার। আলোচনা বিস্তৃত হয়েছে কবীর সুমন, হীরক নন্দী, অবিন চৌধুরি, সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, দিলীপ মিত্র, জয়শ্রী বর্মণের সংযোগে। চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনায় ঋদ্ধিক দত্ত। দুর্গাপুজোর সাংস্কৃতিক ইতিহাস ধরে রাখতে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

বিস্মৃতির হাসি

চ্যাপলিন হওয়ার বাসনা তাঁকে পটনা থেকে এনেছিল কলকাতায়। এ শহরের হয়তো তাঁকে প্রয়োজন নেই আর। বাঙালির সিনেমায় এখন রোমহর্ষ— রহস্য, অবসাদ, যৌনতার উদগার। মনস্ক বাঙালি হাসে না, বাকিরা অকারণ হাসে। যাঁরা সত্যিই হাসাতে পারতেন, তাঁদের চাকরি গিয়েছে কবেই। বাড়ি থেকে পালিয়ে ছবিতে কলকাতা শহরে পৌঁছে বালক কাঞ্চন ছানাবড়া চোখ নিয়ে দেখেছিল কনস্টেবল জহর রায় চিৎকার করে গাইছেন, ‘লতুল গাছে লতুল লতুল ফুল ফুটিয়াছে!’ হাসি-ভোলা বাঙালি কি সেই ‘লতুল’-এর সন্ধানে? শতবর্ষ ছিল বলে গত বছর কিঞ্চিৎ ছলছল, এ বছর যথারীতি তাঁর প্রয়াণদিন বিস্মৃত। স্মৃতির সাধনা হয়, বিস্মৃতিরও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের বারান্দায় ১৯৭৭-এর এক সকালে ট্রলিতে একলা পড়ে ছিল জহর রায়ের মুখঢাকা মৃতদেহ। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ডুকরে উঠেছিলেন, “জহরের কি দেশের কাছে এইটুকুই পাওনা ছিল সৌমিত্র? অন্য দেশ হলে ‘স্যর’ উপাধি পেত।” প্রায় পৌনে তিনশো ছবি, অজস্র নাটক ফাংশন স্কিট। ১ অগস্ট দিনটা এল, চলেও গেল। হাল্লার মন্ত্রী কি ভুরু নাচিয়ে হাসছেন?

কলকাতার কড়চা-য় সংবাদ পাঠানোর জন্য ইউনিকোড বাঞ্ছনীয়। পিডিএফ নয়, ওয়ার্ড ফাইলে পাঠান। ঠিকানা ও ফোন নম্বর থাকা জরুরি।
ইমেল: karcha@abp.in

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Korcha Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy