ফিরে দেখার দরকার সব সময়, বিশেষত বাঙালি ঔপন্যাসিকদের ক্লাসিকগুলিকে। সে দিক থেকেই ব্রাত্য বসুর মনে হয়েছিল শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ নিয়ে নতুন করে ভাবা যাক। উপন্যাসটি এত দিন নানা ভাবে নতুন নির্মাণে ফিরে ফিরে এসেছে, বিশেষত বাংলা ছবিতে, এবং হিন্দি-সহ ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার ছবিতেও। মূল স্রোতের বাংলা ছবির জগতে দেবদাস চরিত্রটাই অসম্ভব জনপ্রিয়, কে-না অভিনয় করেছেন— প্রমথেশ বড়ুয়া থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হয়ে প্রসেনজিৎ পর্যন্ত সকলেই। দিলীপকুমার করেছিলেন হিন্দিতে। ‘‘শুধু বিনোদনধর্মী বাংলা ছবিতেই নয়, বাঙালির মধ্যেও রীতিমতো পপুলার আইকন দেবদাস’’, ব্রাত্য বলতে শুরু করেন ‘‘এই জনপ্রিয়তা নিয়ে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা নানা রকম মজা করে থাকেন। আমরাও তো কেউ প্রেমে বা মদ খেয়ে দিওয়ানা হয়ে গেলে তাকে বলি দেবদাস। এই যে দেবদাসকে নানান নিরিখে দেখা, এরই একটা মঞ্চনির্মাণ করতে চেয়েছিলাম।’’ সম্প্রতি দমদম ব্রাত্যজন থেকে যে নতুন প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ হচ্ছে, ‘দেবদাস’ (সঙ্গে তারই একটি দৃশ্যে চন্দ্রমুখী ও দেবদাস), সেটির মুখ্য কারিগর ব্রাত্য। তাঁর মতে, ‘‘আমি যে সময়ে দাঁড়িয়ে নাটক করছি, স্বাভাবিক ভাবেই সে সময়টার প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা থাকবে। অতএব শরৎচন্দ্রের ক্লাসিককে আমি নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করব, মূল্যবোধেরও অদলবদল ঘটবে তাতে, পুরনো থেকে নতুনে উপনীত হতে চাইব আমরা। এ-প্রযোজনায় আমি যেমন চন্দ্রমুখী ও দেবদাসের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে চেয়েছি। ১৯১৭-র উপন্যাস এখন মঞ্চস্থ হওয়ার সময় ক্রমশই গ্রাম-শহরের দূরত্ব কমে আসছে। গ্রাম-শহরের একটা ডার্ক কমেডির আভাস আছে নাটকটাতে, বিশ্বায়ন-তথ্যপ্রযুক্তিকে পরিপ্রেক্ষিতে রেখে, আর এর বিন্যাসে তাই ইচ্ছে করেই এনে ফেলা হয়েছে বিনোদনধর্মী বাংলা ছবির ধাঁচ, আদ্যোপান্ত গানের ব্যবহার, কোরিয়োগ্রাফিতে কোরাসের মতো দু’টি ছেলেমেয়ে অনর্গল টলিউড-বলিউডের গান গাইতে-গাইতে যেন গোটা আখ্যানটা বলে যেতে থাকে। একটা পালকির আদলে তৈরি মঞ্চ কখনও হয়ে ওঠে পার্বতী-দেবদাসের ঘর, কখনও বদলে যায় চন্দ্রমুখী-চুনীলালের কোঠায়।’’ প্রান্তিক চৌধুরীর নির্দেশনায় এ-নাটকের আলো আর মঞ্চভাবনায় পৃথ্বীশ রানা, তাঁরা দু’জনাই ব্রাত্যর নাট্যভাবনাকে সঙ্গত করেছেন। ‘‘প্রান্তিক পৃথ্বীশ— ওরা অনেক দিন ধরে আমার সঙ্গে কাজ করছে, ওদের মধ্যে যে সৃজনক্ষমতা আছে তারই প্রকাশ এ-নাটক।’’ জানালেন ব্রাত্য। এর পর অ্যাকাডেমিতে ২৯ জানুয়ারি ও ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধে সাড়ে ৬টায়।
স্বদেশব্রতী
‘‘আমি যখন সংবাদপত্র সেবার ব্রত গ্রহণ করি, তখন চাকুরীর টানে তা গ্রহণ করি নাই, দেশসেবার নেশার ঝোঁকেই এপথে পা দিয়েছিলাম।’’ ‘দেশ’ পত্রিকায় ১৯৪৪ সালে ‘প্রফুল্লকুমারের সাধনা’ নিবন্ধে লিখেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র সেন (১৮৯২-১৯৬৮)। ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা গ্রামে তাঁর জন্ম। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সাংবাদিকতার হাতেখড়ি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বেঙ্গলী’ সংবাদপত্রে। জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কড়া সম্পাদকীয় লেখেন তিনি। ১৯২৬ সালে যোগ দেন ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য়। ১৯৩০-৩১’এ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি ‘সাপ্তাহিক দেশ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন ১৯৩৪-৫৬। ‘দেশ’ পত্রিকার ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ বিভাগে বঙ্কিমচন্দ্র নিয়মিত সমসাময়িক ঘটনার বিশ্লেষণ করতেন। নির্ভীক এই সাংবাদিক দীর্ঘদিন ‘আনন্দবাজার’ ও ‘দেশ’ উভয় পত্রিকারই সম্পাদকীয় লিখেছেন। তাঁকে কারাবরণও করতে হয়। ১৯৪৪-এর পর তিনি বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। স্বদেশব্রতী এই সাংবাদিকের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গীকৃত অনুষ্ঠান ‘পঞ্চম বিস্মৃত বাঙালি অগ্রপথিক স্মারক আলোচনাসভা’য় ‘অমৃতের সন্তান তুমি, বিনষ্টি রদ কর’ শীর্ষকে বলবেন রাইকমল দাশগুপ্ত, লোকনাথ চক্রবর্তী ও স্বরূপপ্রসাদ ঘোষ। স্মারক সম্মাননা দেওয়া হবে সাংবাদিক হারাধন চৌধুরীকে। প্রকাশিত হবে বঙ্কিমচন্দ্র সেনের সংবাদপত্র-সেবার অমলিন স্মৃতি বইটি-সহ আরও তিনটি বই।
জন্মদিনে
‘‘সেই মেয়েটা, মেয়ে ভীষণ জেদী/ জেদ ধরেছে, সমুদ্র আকাশে,/ দুই ডানা তার মেলবে দু’জায়গাতেই...’’, যিনি এ-কবিতা লিখেছেন, তিনিই ২০১৩-র জানুয়ারিতে তাঁর পঁচাত্তর পূর্তির জন্মদিনের আগে ডিসেম্বরে ঘটে-যাওয়া নির্ভয়া-কাণ্ডের প্রতিরোধে বলেছিলেন ‘‘জেগে উঠছে অন্ততপক্ষে শহরের তরুণ দল, রাজনীতি, শ্রেণীস্বার্থ, লিঙ্গভেদের দলমত নীতি দুর্নীতি সব উপেক্ষা করে এসে দাঁড়িয়েছে রাস্তায়, মানুষের প্রতি মানুষের অমানুষিক অবিচারের প্রতিবাদে।’’ গত নভেম্বরে আচমকা চলে-না-গেলে জেএনইউ-কাণ্ড নিয়েও নিশ্চয়ই একই ভাবে প্রতিবাদে শামিল হতেন নবনীতা দেব সেন (১৯৩৮-২০১৯)। তাঁর আজ জন্মদিন। তাঁর নামাঙ্কিত প্রথম স্মারক বক্তৃতাটি দেবেন অমর্ত্য সেন। রবীন্দ্রসদনে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায়। বিষয়: বিরোধী যুক্তি। প্রধান অতিথি শঙ্খ ঘোষ। সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রকাশিত হবে নবনীতা দেব সেন রচনাবলি (দ্বিতীয় খণ্ড)। আয়োজনে দে’জ।
মানুষের ছবি
সাত বছরে পা-দেওয়া ‘কলকাতা পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ এখন এ-দেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরিচিত পরিসর। ভারতের পাশাপাশি আছে নেপাল, বাংলাদেশ-সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের ছবি। উল্লেখ্য ছবি: জরুরি অবস্থা-র সময়ে মেয়ে রাজনৈতিক বন্দিদের নিয়ে ‘প্রিজ়ন ডায়েরিজ়’, বাংলাদেশের বীরাঙ্গনাদের নিয়ে ‘রাইজ়িং সায়লেন্স’, বা নেপালের বামপন্থী আন্দোলন নিয়ে ‘টেকিং অন দ্য স্টর্ম’ ইত্যাদি। প্রারম্ভিক বক্তৃতায় অরুন্ধতী রায়, নতুন ছবি ‘বিবেক’ দেখানোর সঙ্গে সাম্প্রতিক সঙ্কট নিয়ে বলবেন আনন্দ পটবর্ধন, সঞ্জয় কাকের ‘কাশ্মীর: দি ইমেজ অ্যাজ় উইটনেস অ্যান্ড মেমরি’। শেষে মৌসুমী ভৌমিক ও আমির আজিজের গান। ২৩-২৬ জানুয়ারি উত্তম মঞ্চে, আয়োজনে পিপলস ফিল্ম কালেক্টিভ। অন্য দিকে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস ও আইসিসিআর-এর যুগ্ম উদ্যোগে পাঁচ মহাদেশের ছবি নিয়ে দশম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রোৎসব শুরু হয়েছে গতকাল, চলবে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। বিভিন্ন দেশের সমাজমনস্ক ছবির সমাহার। উদ্বোধন করলেন সোহিনী দাশগুপ্ত।
ভিন্ন পথে
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা পা দিলেন ১২৫-এ। নিতান্ত অল্প বয়সে অধুনা বাংলাদেশের বাজিতপুরের ওই মানুষটির স্থাপিত প্রতিষ্ঠান ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ শতবর্ষ পেরিয়েছে সদ্য। প্রণবানন্দের ১২৫ উদ্যাপন করার ‘ভিন্ন’ পথে এ বার নেমেছে সঙ্ঘ। পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় সঙ্কটাপন্ন বিদ্যালয়গুলিকে সাহায্য দান। ৫০০ স্কুলে প্রয়োজনীয় চেয়ার-টেবিল, আলো-পাখা, পঠনসামগ্রী দান। প্রয়োজনে পড়ুয়াদের পড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহায্য। বিশেষ সেবা অবদানের জন্য ‘সেবারত্ন’ ও ‘সেবা সম্মান’ দেওয়া হবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। এর আনুষ্ঠানিক সূচনা বড়িশার চণ্ডীমেলায়। চণ্ডীমেলায় কেন? ‘‘মেলা তো মানুষের মিলনের। এই মিলন তো ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য পরম্পরা।’’ জানালেন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মহারাজ।
বারোমাস
বারোমাস নির্বাচিত সংকলন (সম্পা: পার্থ চট্টোপাধ্যায় রুশতী সেন। দে’জ) বেরোচ্ছে। প্রয়াত অশোক সেন সম্পাদিত পত্রিকাটির (১৯৭৮-২০১৫) এই সঙ্কলনের প্রথম খণ্ডটিতে থাকছে মাসিক ও ষাণ্মাসিক পর্ব থেকে প্রথম কুড়ি বছরের নির্বাচিত সমাজ-রাজনীতি-ইতিহাস সংক্রান্ত প্রবন্ধাদি। ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ ও ‘গ্রামগঞ্জ’ শিরোনামে যে বিভাগগুলি মাসিক পর্বে ছিল, তারও নমুনা থাকছে। ফলে আজকের পাঠক ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগেকার রাজনৈতিক বিতর্ক আস্বাদনের সুযোগ পাবেন। তা ছাড়া সম্পাদক-সহ সম্পাদকমণ্ডলীর অনেকেই বামপন্থী হলেও সহমত ছিলেন না, লেখকেরাও অনেকেই বামপন্থী ছিলেন না, সঙ্কলনে সে ছবিটাও দেখতে পাবেন পাঠক। প্রচুর রচনা থেকে যে পঞ্চাশটি প্রবন্ধ গ্রন্থিত হয়েছে, তাতে বাদ পড়েছে বিশিষ্ট লেখকদের সেই সব লেখা যা তাঁদের রচনাসঙ্কলনে ঠাঁই পেয়েছে। ১৯ জানুয়ারি যদুনাথ ভবনে সন্ধে ৬ টায় আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করবেন শঙ্খ ঘোষ। সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে থাকবেন দেবেশ রায় সৌরীন ভট্টাচার্য অধৃষ্য কুমার ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ‘বারোমাস’ প্রসঙ্গে বলবেন অনুরাধা রায় চিরঞ্জীব শূর রত্নাংশু বর্গী।
বাতাসবাড়ি
‘‘সে ভাবে নাটকপাঠ আর করেছি কোথায়, নাটক লিখিই দস্তুরমতো মঞ্চস্থ করার জন্যে... বিলু দত্তের মুখোমুখি-তে কমবয়সিদের একটা উইং আছে, তাদের জন্যে লীলা মজুমদারের ‘বাতাসবাড়ি’ উপন্যাসটার নাট্যরূপ দিয়েছিলাম, সেটাই পাঠ করব সে দিন।’’ সে দিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৮৬তম জন্মদিন— ১৯ জানুয়ারি, সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমিতে তিনি নাটকটি পাঠ করবেন। এর পর কবিতা-গানে শ্রীজাত ও শ্রীকান্ত আচার্য। ‘‘শুধু ‘বাতাসবাড়ি’ নয়, লীলা মজুমদারের লেখা থেকেই নাটক করার ইচ্ছে ছিল, যেমন আমার বহু দিনের ইচ্ছে রবীন্দ্রনাথের নাটক মঞ্চস্থ করার, সাংগঠনিক কারণে আজও করা হয়ে ওঠেনি।’’ কথায়-কাজে এখনও সমান সতেজ-সজীব-সক্রিয় সৌমিত্রকে বয়স বা অসুখ কিছুই কাবু করতে পারে না, তাঁর অমোঘ মন্তব্য: ‘কাজই জীবন’। তাঁরই রচিত ও নির্দেশিত ‘সবজান্তা’ মঞ্চস্থ হবে সে দিন দুপুর আড়াইটেয়, অভিনয়ে সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী ও মেঘনাদ ভট্টাচার্য। আয়োজনে মুখোমুখি।
শতবর্ষে নৃত্যোৎসব
নৃত্যাচার্য শম্ভু ভট্টাচার্য ছিলেন গণনাট্য সঙ্ঘের শিল্পী। ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়ার এবং পরবর্তী কালে ক্যালকাটা কয়ারের নৃত্য পরিচালকও ছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের গুগাবাবা, ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’ ছবির নৃত্য পরিচালনা-সহ অগণিত ছবিতে কাজ করেছেন। নান্দীকার, বহুরূপী, নান্দীপট, পিএলটি-তে নৃত্য পরিচালনা করেছেন। সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার, রবীন্দ্রভারতী থেকে সাম্মানিক ডিলিট ছাড়াও পেয়েছেন উদয়শঙ্কর ও আলাউদ্দিন পুরস্কার। শিল্পীর শততম জন্মবর্ষে আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসবের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছেন তাঁর অন্যতম ছাত্র বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী, কোরিয়োগ্রাফার ও অভিনেতা কবির সেন বরাট। লেক টাউন ঋককথা এবং ইনক্রেডিবল ডান্স রিসার্চ অ্যাকাডেমির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডান্স ফেস্টিভ্যাল ২০২০’। এতে যোগ দিচ্ছেন ৬০০-রও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের এবং তরুণ ও সম্ভাবনাময় নৃত্যশিল্পী। শুরু হয়েছে ১১ জানুয়ারি, আজ শেষ। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দ্বারকানাথ মঞ্চে চলছে এই আন্তর্জাতিক নৃত্যোৎসব।
দেহরহস্য
মাথা থেকে পা। জন্ম থেকে জরা। আর সর্বোপরি চেতনা, যা দিব্যি টের পাওয়া যায়, কিন্তু যাকে বোঝাতে গেলেই গোল বেধে যায়। এদের নিয়ে দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তীর নতুন বই, এ-তনু ভরিয়া: দর্শন আপাদমস্তক। বইটি উদ্বোধন হবে ১৬ জানুয়ারি। সেই দিনই দেহরহস্য নিয়ে থাকবে তাঁর বক্তৃতা ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি/ ব্যাধিমন্দির না বোধিদ্রুম?’ এটিই এ বছরের সমর সেন স্মারক বক্তৃতা, সভাপতিত্ব করবেন অমিয় দেব, আয়োজক অনুষ্টুপ। আমাদের সব রোগ, ভোগ, যোগ যে শরীরে, সেই শরীরটাই কি আমি? না কি শরীর একটা খাঁচা, আর আমি তার মধ্যে এক অচেনা, অদেখা পাখি? সেই আদ্যিকাল থেকে একুশ শতক পর্যন্ত এই সব প্রশ্নের যত উত্তর মেলে, তা নিয়ে এই বক্তৃতা। গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের যুক্তি ও কল্পনাশক্তি-সহ মোট সাতটি বইয়ের উদ্বোধন হবে এ দিন। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে, সন্ধে সাড়ে ৫টায়।
দাবানল
পাকা সোনা বা অন্যান্য সোনা এখন ৪২ হাজার ছুঁই ছুঁই। আর প্রায় স্বর্ণতুল্য সব্জির কী হাল? ‘পঞ্চাশ ভাগ বিক্রি পড়ে গিয়েছে। খদ্দের নেই। দিনে দিনে দেনায় ভুগছি’, সখেদ মন্তব্য লেক মার্কেটের মধুবাবুর। মাছব্যবসায়ী লেক মার্কেটের বাবুলাল ও ল্যান্সডাউনের হারুবাবু বলছেন, ‘সাধারণে তো এমনিই শোল, মাগুর, পাবদা, কই খেতে পায় না। বছরভরই আকাশছোঁয়া দর।’ সোনার কথায় ফেরা যাক। বৌবাজার-গড়িয়াহাটে স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। পৌষ কাটলেই মাঘ, বিয়ের মরসুম। তবু দোকান খাঁ খাঁ। খরিদ্দার কোথায়? নাম গোপন করে জানালেন, ‘মা-ঠাকুমা-দিদিমা পুরনো গয়না ভাঙিয়ে নতুন গয়না গড়িয়ে দিচ্ছেন নববধূকে। উপায় কী!’ ‘দেয়া-নেয়া’র যে কাহিনি সংঘটিত হয়েছিল ‘চতুশ্চক্র যান’-কে কেন্দ্র করে, তার নায়ক আজ এই পেট্রল-ডিজেলের দুর্মূল্য দিনে কী করতেন? শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘আমি সপরিবারে নিরামিষাশী। ঘোর দুশ্চিন্তায় আমরা। ভেজিটেরিয়ানদের না খাওয়ার অবস্থা হবে এ বার।’ সুবোধ সরকারের মতে, ‘ফরাসি বিপ্লবের মতো এ বার বলা হবে ভাত-ডাল নয়, বিরিয়ানি খাও। অদ্ভুত অন্ধকার সময়!’ ‘মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে মা-দিদিমার গয়না বা রুপোর গয়না দেব’। বললেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। এ দাবানল থেকে সাবধান হয়েও লাভ আছে কি কলকাতাবাসীর? জানা নেই।
আলোকচিত্র কথা
সহস্র কবির উক্তি এক ছবিতে মুক্ত করেন যিনি, তিনিই আলোকচিত্রী। এই চিত্রশিল্পী মানুষগুলির ছবিদৃষ্টি আরও শাণিত করে তুলতে ২০১৫ সালে ‘ফটোগ্রাফি ক্লাব অব ইন্ডিয়া’-র যাত্রা শুরু। অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত অমিত দত্তের অনেক স্বপ্ন ছিল এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে। স্বপ্ন সফল। মুষ্টিমেয় উৎসাহীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ ক্লাবের সদস্য দেশ-বিদেশের প্রায় সাতান্ন হাজার আলোকচিত্রী। এখন প্রতিষ্ঠানের ভার নিয়েছেন সব্যসাচী নাথ ও শুভদীপ বিশ্বাস। তাঁদের উদ্যোগে, ১৬-২০ জানুয়ারি অ্যাকাডেমিতে চতুর্থ প্রদর্শনী। গ্রিস, ইজ়রায়েল, পর্তুগাল, বাংলাদেশ থেকে আসছেন আলোকচিত্রীরা। বরিষ্ঠ চিত্র সাংবাদিক সুনীল কুমার দত্ত ও বাংলাদেশের প্রথম মহিলা চিত্র সাংবাদিক সঈদা খানমকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ১৭ জানুয়ারি ছবি তোলার কিস্সা শোনাবেন জুলফিকার আহমেদ। ১৮ জানুয়ারির বক্তা গ্রিসের পল মে। প্রখ্যাত বন্যপ্রাণ আলোকচিত্রী জন এম অ্যান্টনি থাকবেন ১৯ জানুয়ারি। সে দিন আরও থাকছে ‘বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমের নিজস্ব প্রকাশ ও পারস্পরিক প্রভাব’ নিয়ে আলোচনা। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী থেকে।
শীতের উৎসব
এই শহরে আমলকীর ডালে ডালে শীতের হাওয়ার নাচন আমরা কতটুকুই বা টের পাই? টের পাই আর না পাই, আজ শীত। আর শীত মানেই তো উৎসব। শীতের সেই মূর্ছনাই এ বার দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসে। ‘উইন্টার র্যাপসডি’ এই শিরোনামে আবাসের বিভিন্ন কক্ষে শুরু হচ্ছে বিভিন্ন প্রদর্শনী। গত বছর শিল্পী রবীন মণ্ডলের জীবিতাবস্থায় তাঁর শেষ প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল দেবভাষায়। তাঁর মৃত্যুর পর এ বার তাঁর ছবি নিয়ে এই শহরে প্রথম প্রদর্শনী হতে চলেছে। দেবভাষার কেজি সুব্রহ্মণ্যম কক্ষে। গৌরী ধর্মপাল কক্ষে শিল্পী শুভাপ্রসন্নর চিত্রিত পোস্টকার্ডের প্রদর্শনী। মণীন্দ্র গুপ্ত এবং তুষার চৌধুরী কক্ষে নতুন বছরের ক্যালেন্ডার প্রদর্শনী। ক্যালেন্ডারের একটা অংশ ফাঁকা রেখে বাকি অংশে দিন-তারিখ ছাপিয়ে শিল্পীদের হাতে দেওয়া হয়েছিল রং-তুলির ছন্দে ভরিয়ে দিতে। শীতের এই প্রদর্শনীগুচ্ছ ১৮ জানুয়ারি সন্ধে ৬টায় উদ্বোধন করবেন জয় গোস্বামী। চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
বিশেষ সংখ্যা
‘‘এই ঝুলন্ত গঙ্গাঘরে/ ঠিক যখনই সন্ধ্যা ঝরে/ আমরা কজন যাদবপুরের প্রাক্তনী/ গদ্য শুনি পদ্য শুনি/ পান্না-বা কেউ, কেউ-বা চুনি—/ সবাই যেন সবার জন্য যত্ন নিই!’’ শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন বছর পনেরো আগে, পাওয়া গেল পুনশ্চ বাংলা পত্রিকা-র (সম্পাদক: পিনাকেশ সরকার) সাম্প্রতিক ‘শঙ্খ ঘোষ সংখ্যা’য়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সেই প্রাক্তনীদেরই সংসদ এই পুনশ্চ বাংলা, তাঁরাই সদ্য এক অনুষ্ঠানে সংখ্যাটি প্রকাশ করলেন, সংসদের তরফ থেকে সভাপতি পবিত্র সরকার পত্রিকাটি তুলে দিলেন কবির হাতে। উপস্থিত বক্তাদের মধ্যে ছিলেন অমিয় দেব সৌরীন ভট্টাচার্য প্রমুখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পাঠ করা হল সম্প্রতি জেএনইউ-র ছাত্রছাত্রীদের ওপর বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে নিন্দা-প্রস্তাব। সংখ্যাটিতে শঙ্খ ঘোষের বিভিন্ন মুহূর্তের স্থিরচিত্র, গ্রন্থপঞ্জি, জীবনপঞ্জির সঙ্গে আছে তাঁর বিন্যাস-সম্পাদনা-ভাষ্যপাঠ সংবলিত রেকর্ড-ক্যাসেটের পঞ্জি, বিদেশি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় অনূদিত তাঁর রচনাপঞ্জি। আছে ছাত্রছাত্রীদের লেখা তাঁর অপ্রকাশিত চিঠিপত্র। বিপুলাকার এই সংখ্যাটিতে তাঁকে ও তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য নিয়ে লিখেছেন তাঁর ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী, পরিবারের সদস্য, বন্ধুজন— সব্বাই। পত্রিকার প্রারম্ভেই তাঁকে নিয়ে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত জয়দেব বসু শ্রীজাত-র কবিতা, অলোকরঞ্জন লিখেছেন:‘‘চৌরঙ্গীতে বয়ঃসন্ধিক্ষণে/ যুগলবন্দী জাগালো মুক্তধারা/ শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে পথচলনে।’’
দেশের কাজে
এসেক্সে জন্ম থেকে সাড়ে আট বছর কাটানোর পর কলকাতায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ার সময় নজর করেন, বড় স্কুলের বিলাসবহুল পরিবেশে নিজে পড়ার সুযোগ পেলেও, আশপাশের অধিকাংশ শিশুই ন্যূনতম শিক্ষা দূর অস্ত্, খাদ্য বাসস্থান থেকেও বঞ্চিত, শারীরিক ভাবেও দুর্বল। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রোবায়োলজি সম্বন্ধে জানলেন, পরবর্তীতে ব্যাকটেরিয়া বাহিত যক্ষ্মা রোগে ফি বছর বিশ্বে সর্বাধিক আক্রান্ত ও রোগী মৃত্যুর হারে ভারতের অবস্থান দেখে আঁতকে ওঠেন। ‘‘তখনই মনস্থির করি যক্ষ্মা সচেতনতা কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করার’’, বলছিলেন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ সুদীপ বসু ও ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনার ঊর্বশী বসুর কন্যা শ্রেয়সী বসু। স্কুলের পাঠ শেষ করে ২০১৯-এ ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে ‘ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনোলজি’ নিয়ে প্রথম শ্রেণির স্নাতক হওয়ার পরের অবসরে তাই শ্রেয়সী দেশে ফিরে নিজের শহর কলকাতার প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়াদের যক্ষ্মা রোগ নিরাময় ও এর প্রতিকারের প্রয়োজনীয় বার্তা দিতে, তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ‘জয় হোক’ বাস্তবায়ন করতে ব্রতী হলেন। এই জয়, যক্ষ্মা রোগ নিয়ে সচেতনতার বার্তা ও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জয়। তাই পিংলার পটচিত্রী স্বর্ণ চিত্রকরের আঁকা পটচিত্রের সঙ্গে রানাঘাটের শ্রীদুর্গা পুতুলনাচের সম্মিলনে করা স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রে সরল গল্পের আশ্রয় নিলেন। প্রায় পঞ্চাশটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রীকে সচেতনতার পাঠ দেওয়ার মূল লক্ষ্যে উত্তর কলকাতার ‘ক্যালকাটা রেসকিউ’-তে ২৭জন ছাত্রছাত্রীকে প্রথমে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে তথ্যছবিতে দেখালেন যক্ষ্মা কী, কেন, এর প্রতিকারই বা কী। স্বর্ণ চিত্রকরকে দিয়ে জড়ানো পটের ছবির অনুষঙ্গে যক্ষ্মা বিষয়ক তথ্যগান শোনালেন। যক্ষ্মা বিষয়ক হরেক ছবি আঁকা কার্ডের খেলায় মাতালেন ছেলেমেয়েদের। সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জেনে নিলেন তাৎক্ষণিক শিক্ষা থেকে তাদের বোধ উপলব্ধি, যার ফলস্বরূপ রং পেনসিলে পাতায় ফুটে উঠল হরেক যক্ষ্মা সচেতক চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy