Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কলকাতার কড়চা: পিরানদেল্লো পুনর্বার

পাশাপাশি মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় নাটকটির মনস্তত্ত্ব ও মানুষের মন নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা করে গিয়েছেন অভিনেতাদের সঙ্গে।

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:২১
Share: Save:

পিরানদেল্লো পুনর্বার! গত বছরই দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় পিরানদেল্লো-র ‘সিক্স ক্যারেক্টার্স ইন সার্চ অব অ্যান অথর’-এর বঙ্গীয় রূপান্তর ‘কোথাকার চরিত্র কোথায় রেখেছ’ মঞ্চস্থ করেছে সংসৃতি। তারা এ বারও দেবেশেরই নির্দেশনায় নতুন নাটক হিসেবে মঞ্চস্থ করতে চলেছে পিরানদেল্লো-র ‘হেনরি ফোর’ অবলম্বনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়-কৃত বঙ্গজ রূপান্তরটি: ‘শের আফগান’। ‘‘বিদেশি নাটকের প্রকৃত বঙ্গীকরণ করতেন অজিতেশ-ই, দেশজ মাটির গন্ধে নিয়ে আসতে পারতেন নাটকটাকে, এককথায় যাকে বলে আত্তীকরণ। অতএব আমাদের তাঁর রূপান্তরিত কাঠামোর উপরেই ভর করে এগোতে হচ্ছে।’’ বলছিলেন দেবেশ, ‘‘জটিলতায়, কল্পনা আর বাস্তবের সংঘাতে, বা প্রথাগত থিয়েটারের উপর আঘাতে— অভিনেতা আর দর্শকের পারস্পরিকতাকে এক ক্যালাইডোস্কোপিক চিত্রময়তায় ভরিয়ে তোলেন পিরানদেল্লো। আসলে চূড়ান্ত সত্য যখন খুঁজি আমরা, সত্যের বহুমাত্রিকতা ও বহুস্তরীয় জটিলতা এড়িয়েই খুঁজতে থাকি। কিন্তু সত্য তো আপেক্ষিকতায়, প্রতিটি ব্যক্তির আলাদা আলাদা দর্শনে পাল্টে যায়। পিরানদেল্লো তাঁর নাটকে এই সত্যের আপেক্ষিকতার দ্বন্দ্বের সামনেই আমাদের টেনে এনে দাঁড় করিয়ে দেন।’’ আধুনিক রূপকল্পে এ-নাটক রূপায়িত করতে দেবেশ নাট্যশিবির করেছেন দশ দিনের। প্রথম দিন থেকেই মঞ্চে সেট, লাইট, মিউজ়িক, কস্টিউম, মেক-আপ সহকারে অভিনেতারা হাজির, কিন্তু কোনও সংলাপ তাঁদের দেওয়া হয়নি। কারণ, কোনও মুখস্থ সংলাপ নয়, অভিনেতারা তাঁদের সংলাপ খুঁজে নেবেন নাট্যের যাবতীয় উপাদান থেকে, প্রতি দিনের বারো ঘণ্টার প্রস্তুতিপর্বে তাঁদের মুখে ভাষা জন্ম নিয়েছে অল্প-অল্প করে। পাশাপাশি মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় নাটকটির মনস্তত্ত্ব ও মানুষের মন নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা করে গিয়েছেন অভিনেতাদের সঙ্গে। ‘‘এই পদ্ধতি একেবারেই আমাদের দেশের নিজস্ব পদ্ধতি’’, জানালেন নির্দেশক। আর এ-নাটকের নামচরিত্রের অভিনেতা রজতাভ দত্ত জানালেন ‘‘দেবেশ যেমন স্বাধীনতা দেয়, তেমন নিংড়েও নেয় সবটুকু, আর অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে নাটকের উপকরণাদির সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দেয় অভিনেতার। ও একই সঙ্গে নির্দেশক ও সিনোগ্রাফার।’’ রজতাভ ছাড়াও নাটকটিতে অভিনয় করছেন সুদীপা বসু শৌভিক মজুমদার রণজিৎ চক্রবর্তী রাহুল সেনগুপ্তের মতো অভিজ্ঞ অভিনেতারা, সঙ্গে সংসৃতি-র এক ঝাঁক তরুণ অভিনেতাও। নাটকটির প্রথম অভিনয় অ্যাকাডেমি-তে ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩টেয়। সেখানেই সন্ধে ৬টা ৪৫-এ ‘কোথাকার চরিত্র কোথায় রেখেছ’। গোটা দিনটাই পিরানদেল্লো-র!

অতুল বসু ১২৫

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিকৃতি এঁকে প্রথম হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডনের রয়্যাল অ্যাকাডেমিতে আঁকা শিখতে গেলেন। কালক্রমে ব্রিটিশ সরকার তাঁকেই বেছে নিল রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড আর রানি মেরির পুরনো ছবি থেকে নতুন প্রতিকৃতি এঁকে দেওয়ার জন্য। চিত্রশিল্পী অতুল বসুর ১২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে এ মাসে। রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, রামমোহন, গাঁধী, নেহরু, নন্দলাল বসু— কার প্রতিকৃতি আঁকেননি তিনি! মন্বন্তরের সময় স্কেচ করেছেন অজস্র। ওরিয়েন্টাল স্কুলের বৈভবের মধ্যে পশ্চিমি প্রকৃতিবাদী ঘরানায় বাঙ্‌ময় তাঁর ছবি। ২২ ফেব্রুয়ারি ৭৪কে বন্ডেল রোডে শুরু হচ্ছে অতুল বসুর ছবির প্রদর্শনী। চলবে ২৫ তারিখ পর্যন্ত। সঙ্গের ছবিটি শিল্পীর আত্মপ্রতিকৃতি।

রবিরঞ্জনী

শৈলজারঞ্জন মজুমদার যখন রবীন্দ্রগানের শিক্ষাকেন্দ্র ‘রবিরঞ্জনী’ প্রতিষ্ঠা করেন, নিয়ম প্রচলন করেছিলেন যে কেবল তানপুরা আর এসরাজ সহযোগেই সম্মেলক রবীন্দ্রসঙ্গীত হবে, সেই রীতি আজও অব্যাহত। ইতিমধ্যে ‘রবিরঞ্জনী’ সুবর্ণ জয়ন্তী-তে পদার্পণ করল। ১৯৭০-এ তাঁর দুই ছাত্র, যশস্বী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী আশিস ভট্টাচার্য ও উৎপল দাশগুপ্তের সহায়তায় শৈলজারঞ্জন গড়ে তোলেন এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমে অবশ্য কলকাতায় কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর (রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠা কন্যা মাধুরীলতা-র শ্বশুরালয়) বাড়িতেই শুরু হয় এর কার্যকলাপ।

পরে স্থানান্তরিত হয় গড়িয়াহাট মোড়ের ‘চিত্রভানু’-তে। বর্তমানে কালীঘাটের ‘রবীন্দ্রচর্চা ভবন’-এ সদস্যেরা সঙ্গীতচর্চা করেন আশিস ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে। তাঁরই পরিচালনায় সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রথম অনুষ্ঠান ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন মঞ্চে।

বঙ্গদর্শন

এশিয়াটিক সোসাইটির গর্ভ থেকে ১৮১৪-য় প্রকাশ লাভ করেছিল ভারতীয় জাদুঘর। অন্য দিকে, বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির অধীনে ১৯১০ সালে পূর্ববঙ্গের প্রথম জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তার পর এখন প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নানাবিধ সংগ্রহশালা, দেশের নানা প্রান্তে। কিন্তু আমরা ক’জন সে সবের খোঁজ রাখি! সে দিকেই নজর দিয়েছিল বঙ্কিম ভবনের ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাটি। কলকাতার সংগ্রহশালা কেন্দ্রিক প্রথম সংখ্যাটি (সপ্তদশ ‘বঙ্গদর্শন’) প্রকাশিত হয় ২০১৭-র জুনে। ‘বঙ্গদর্শন: পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার এবং বাংলাদেশের সংগ্রহশালার ইতিহাস ও প্রদর্শন’ শিরোনামে দ্বিতীয় খণ্ডটি প্রকাশ পাবে আজ। নৈহাটি বঙ্কিম সংগ্রহশালার সঞ্জীবচন্দ্র সভাগৃহে আজ বিকেল ৪টেয় এই বইপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে একটি আলোচনা। ‘সংগ্রহশালার বিবর্তনের ইতিহাস’ শীর্ষকে বলবেন অনুপ মতিলাল এবং পিনাকেশ সরকার। এ বারের অষ্টাদশ সংখ্যায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ২৬টি সংগ্রহশালার পরিচয়। সঙ্গে একটি প্রবন্ধ রয়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সংগ্রহশালাগুলি নিয়ে এবং একটি সংগ্রহশালা বিজ্ঞান বিষয়ে।

বিপন্ন সংস্কৃতি

সংস্কৃতি মানে কেবল কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা গানবাজনা নয়— মানুষের সার্বিক জীবনচর্যা তার মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়। এক উজ্জ্বল সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল এই বঙ্গভূমে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ নানা মনীষীর সুচিন্তিত কর্মধারায়, সৃষ্টিশীলতায়। কিন্তু আজ বড় সুখের সময় নয়। এখন সব স্তরেই অবক্ষয় ক্রমবর্ধমান। মধ্যমেধার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাভাবনার দৈন্য প্রকট। সুস্থ মুক্তচিন্তার একান্ত অভাব। এমনই এক পরিস্থিতি আমাদের এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়: ‘বঙ্গ সংস্কৃতি ও বঙ্গভূমি কি আজ বিপন্ন?’ এই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার প্রয়াস থাকবে ২৩ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিতে সন্ধে ৬ টায় ‘হারমোনিকা’ আয়োজিত আলোচনা সভায়। বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, হিরণ মিত্র, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ও অনিল আচার্য।

ও পারের নাটক

দুই বাংলা, তবু এক মন, এক সংস্কৃতি। এবং একই ভাবে পুষ্ট নাট্যচর্চা। এই নাটক যে কত বার মিলিয়ে দিয়েছে গঙ্গা ও পদ্মাকে। সেই কথা মনে রেখে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধার্পণের তাগিদে, দ্বাবিংশ গঙ্গা যমুনা নাট্য উৎসবের সপ্তম ও শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের সাতটি নাট্যদলের নাটক মঞ্চস্থ হবে। থাকবে থিয়েটার ফ্যাক্টরির ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’, স্বপ্নদলের ‘ত্রিংশ শতাব্দী’, দিনাজপুর নাট্য সমিতি-র ‘কনক সরোজিনী’, এম্পটি স্পেস-এর ‘এ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও এন্ড জুলিয়েট’, আরশিনগরের ‘রহু চণ্ডালের হাড়’, তন্নিষ্ঠ নাটুয়ার ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ এবং সময়-এর ‘ভাগের মানুষ’। এর পাঁচটিই নতুন প্রযোজনা। উৎসবের আয়োজনে ‘অনীক’ নাট্যদল। উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ, তপন থিয়েটারে।

পুনর্মিলন

শঙ্খ ঘোষ এক দিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞানের কোনও কোনও বিভাগে পুনর্মিলন উৎসব হয়, যাদবপুরের বাংলা বিভাগে এ রকম একটা অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়! ভাবনাটা তখনই মাথার মধ্যে চারিয়ে গিয়েছিল। এমএ ক্লাসের কিছু ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। সেটি ১৯৮৬ সালের কথা। ঠিক হল এই উপলক্ষে প্রকাশিত হবে একটি স্মারক পত্রিকা। এই বিভাগেরই ছাত্রী ছিলেন লেখক-শিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রীর কন্যা রূপমা পত্রী। অতঃপর ওঁর অনুরোধেই পূর্ণেন্দুবাবু নির্মাণ করেছিলেন প্রচ্ছদ। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে অনেক বছর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টিতে বাংলাই একমাত্র বিভাগ যেখানে ব্যতিক্রমহীন ভাবে উদ্‌যাপিত হচ্ছে এই উৎসব, ৩৩ বছর ধরে। প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান পিনাকেশ সরকারের সহায়তায়, এই বিভাগের ছাত্র সৃজন দে সরকার খুঁজে বার করেছেন এই পুনর্মিলন পত্রিকার ফেলে আসা ইতিহাস এবং প্রচ্ছদ (সঙ্গে তারই একটি)। এগুলি নিয়েই ২৩ ফেব্রুয়ারি গাঁধী ভবনের পুনর্মিলন উৎসবে আয়োজিত হয়েছে একটি প্রদর্শনী, বর্তমান প্রধান বরেন্দু মণ্ডলের উদ্যোগে। এ বারের পুনর্মিলন উৎসব উপলক্ষেও প্রকাশ পাচ্ছে প্রাক্তনী এবং বর্তমানদের লেখা নিয়ে পত্রিকা। অভিনীত হবে শ্যামাকান্ত দাশের লেখা নাটক গুলশন।

অকালপ্রয়াত

‘ময়মনসিংহের মূল্য তুমিই/ রটাও প্রথম বাংলাতে!/ কীর্ত্তি কলাপ কেউ পারেনি/ তোমার মতো বাংলাতে!/ চৌদ্দ বছর লিখ্‌লে যাহা,/ লিখ্‌লে নিজের ‘সৌরভে’!/ প্রথম শ্রেণীর বাংলা ‘মাসিক’/ করতো চয়ন গৌরবে!’— দীর্ঘ একটি শোক-কবিতায় যতীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এ ভাবেই প্রণতি জানিয়েছিলেন অকাল প্রয়াত কেদারনাথ মজুমদার (১২৭৭–১৩৩৩ বঙ্গাব্দ)-এর প্রতি। ময়মনসিংহের ‘সৌরভ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সংগঠক এবং রামায়ণ-চর্চার স্বতন্ত্র ঘরানার গবেষক কেদারনাথ ছোটগল্প-উপন্যাস-পাঠ্যপুস্তক লিখলেও তাঁকে আমরা মনে রাখব ময়মনসিংহের ইতিহাস, ঢাকার বিবরণ বা রামায়ণের সমাজ-এর মতো পরিশ্রমী গবেষণাগ্রন্থগুলির জন্য। তাঁর সাংগঠনিক উদ্যমে পূর্ববঙ্গে এক ঝাঁক লেখক-গবেষক আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সে কালে যাঁদের পরিচিতি ছিল ‘কেদারমণ্ডলী’ নামে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন কেদারনাথের রামায়ণ-আলোচনায় নির্মোহ যুক্তিনিষ্ঠার প্রতি অবিচলতা আজকের ধর্মসঙ্কটের এই আবহে নতুন দিশা দেখাতে পারে। তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষ আসন্ন। সেই উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অশোকনগরে তাঁকে স্মরণের আয়োজন করেছে ‘অহর্নিশ’ পত্রিকা এবং ‘অশোকনগর মানবজমিন’। কেদারনাথের রামায়ণ-চর্চা বিষয়ে বলবেন শুভাশিস চক্রবর্তী এবং সঙ্গীত পরিবেশন করবেন যথার্থ মুখোপাধ্যায় ও দেবার্ঘ্য পাল।

অগ্রণী নেত্রী

স্বাধীনতা-পরবর্তী অর্ধশতাব্দীর বামপন্থী এবং মহিলা আন্দোলনের অগ্রণী নেত্রী, সকলের ইতুদি (ঝর্ণা ভট্টাচার্য ১৯৩০-২০২০) সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে সহধর্মিণী ছিলেন বিগত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের স্বাধীনতাকামী ভারতবর্ষের উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা অন্নদাশঙ্করের। পুত্র সুমন্ত্র ইন্ডিয়ান স্কুল অব মাইনস-এর শিক্ষক গবেষক। ছাত্র নেত্রী হিসেবে প্রথম দায়িত্ব নারায়ণ চৌবের উদ্যোগে খড়্গপুরে ছাত্র ফেডারেশনের শাখা গঠন। সঙ্গে গাইড কমরেড নৃপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। সময় চল্লিশ দশকের শেষ ভাগ। নিখিল ভারত মহিলা ফেডারেশন এবং পশ্চিমবঙ্গ নারী কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরে এক দশক ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিষদের সদস্য ছিলেন। আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধব, লড়াইয়ের সাথি-সহ সবাই মিলে দলমত নির্বিশেষে ইতুদিকে স্মরণ, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টেয় ইতুদির বাড়িতে।

ইতিহাসচর্চা

গ্রিসের ইতিহাসের দেবী ক্লিয়ো। তাঁর নামেই একটি বাৎসরিক সারস্বত উৎসব আয়োজন করে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন কলেজ। ‘ক্লিয়োভেঞ্চার’। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাসচর্চার মঞ্চ রূপেই উৎসবটির পরিকল্পনা। ইতিহাস অনুশীলনের এই অনুষ্ঠানের শুরু ১২ এপ্রিল ২০১৭। সে বার বিষয় ছিল ‘হারস্টোরি’ (নারী-ভাবিত ইতিহাস)। ২০১৮-র বিষয় ‘ইতিহাসে নিবেদিতা’, মহাত্মা গাঁধীর ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৯-এর বিষয় ছিল গাঁধীর সময় আর আমাদের সময়। ক্লিয়োভেঞ্চার ২০২০-র বিষয় সামাজিক অণু আন্দোলন। মূল বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি উপবিষয়েও আলোচনা চলবে। যেমন পরিবেশ আন্দোলন, যৌনকর্মীদের আন্দোলন, প্রতিবন্ধী অধিকার আন্দোলন, এলজিবিটিকিউ আন্দোলন, শিশু নিগ্রহ বিরোধী আন্দোলন, স্লো মুভমেন্ট। এই বিষয়গুলির যে কোনও একটি বিষয়ে পড়ুয়ারা ‘পেপার’ জমা দিতে পারেন। নির্বাচিত পেপারগুলি উপস্থাপনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ বারের মূল ভাষণ দেবেন শোভনলাল দত্তগুপ্ত এবং সমাপ্তি ভাষণে ড. সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। উৎসব উদ্বোধন ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা।

নতুন দিশা

মিলে মিশে করি কাজ... এই আপ্তবাক্যের অনুসারী ওঁরা সকলে, তাই তো ওঁদের উদ্যোগে যাদবপুর ৮৩ রিজেন্ট এস্টেটে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুট জায়গায় প্রতিষ্ঠা পেল প্রবীর কানুনগো সেন্টার ফর চিলড্রেন সোশ্যালাইজ়েশন। বেঙ্গল সার্ভিস সোসাইটি-র নয়া উদ্যোগে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের আশু ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় আলোর দিশা দেখাতে একই ছাদের তলায় বিশেষ ভাবে সক্ষমদের হরেক শিক্ষার পাশাপাশি মূল স্রোতের বাচ্চাদের মিলিত করে আদান প্রদানের মাধ্যমে উন্নীত করার ভাবনায় এই প্রয়াস। প্রয়াত চিত্রশিল্পী ধীরাজ চৌধুরীর কন্যা রেশমী বন্দ্যোপাধ্যায় দিলেন তাঁর বাবা-মা’র বসবাসের সম্পূর্ণ জায়গা, প্রথাগত শিক্ষার বাইরে শিশুদের ইচ্ছাধীন বিষয় শিক্ষাদানে ব্রতী ব্লুমিং ডেল অ্যাকাডেমি (হাই স্কুল)-র কর্ণধার প্রদীপ্তা কানুনগো হরেক মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থার সঙ্গে থেরাপি সামাজিক মেলবন্ধন বিষয়ে শিক্ষার ভার নিলেন। মুম্বইয়ের নিউরোজেন ব্রেন অ্যান্ড স্পাইন ইনস্টিটিউট প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার সামাজিক দায়বদ্ধতায় সহযোগিতার হাত বাড়াল। শহর কলকাতা পেল নতুন কেন্দ্র যেখানে বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুরা তাদের চাওয়াপাওয়া নিয়ে নিজেরাই তুলে ধরতে পারবে ভবিষ্যতের দিশারি হিসেবে।

হেমাঞ্জলি

থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া এবং রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে গেল গত শুক্রবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে। বেঙ্গল সোসাইটি অব হেমাটোলজি তাদের পঞ্চম বার্ষিক অধিবেশনের অংশ হিসেবে আয়োজন করেছিল ‘হেমাঞ্জলি ২০২০’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠান। অধিবেশন অবশ্য চলে আরও দু’দিন শনি এবং রবিবার। সেখানে রক্তের অসুখের চিকিৎসা তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু প্রথম দিন অধিবেশনে ছিলেন রোগী এবং রোগীর পরিজনেরা। কারণ, ওই সংগঠনের সম্পাদক তথা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রাজীব দে-র মতে, রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের মনের কথা জানলে চিকিৎসা করা সহজ হয়। তা ছাড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার মধ্য দিয়ে রক্তের জটিল অসুখে আক্রান্তদের মানসিক ভারও কিঞ্চিৎ লাঘব হওয়ার সুযোগ থাকে।

ফিরে দেখা

আজ যাঁরা প্রবীণ, তাঁদেরও এক দিন শৈশব, কৈশোর, যৌবন ছিল। কথায় বলে, এঁদের তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে। এমনই মহিলা ও পুরুষদের এক মিষ্টিমধুর সমাগমের আয়োজন করেছে প্রবীণদের জন্য প্রকাশিত একমাত্র বাংলা মাসিক পত্রিকা ‘ফিরে দেখা’ (সম্পা: নির্মলেন্দু সরকার)। স্থান ‘ইন্দুমতী সভাঘর’। ২৯ ফেব্রুয়ারি, সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে। এই পত্রিকার উদ্যোগে এটি প্রবীণ-প্রবীণাদের পঞ্চবিংশতি বার্ষিক সম্মেলন। কী থাকছে এতে? গান, আবৃত্তি, ভানুমতীর খেল, চায়ের কাপে জমাটি আড্ডায় স্মৃতিচারণ, এই বয়সে পেটে সয় আর মুখেও রোচে এমন সহজসরল বাঙালি দ্বিপ্রাহরিক ভোজন ছাড়াও আছে কিছু মজার খেলা, যেমন ছোটবেলায় মুখেমুখে শেখা ছড়াগুলো কার কতটা মনে আছে, কিংবা পঞ্চাশ বা ষাট দশকের সাড়া জাগানো গানগুলোকে কে কতটা চিনতে পারেন।

জন্মদিনে

কিছু দিন আগে প্রয়াত হয়েছেন সুন্দরবনের প্রাণপুরুষ পদ্মশ্রী তুষার কাঞ্জিলাল। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে ‘সুন্দরবনের মাস্টারমশাই তুষার কাঞ্জিলাল’ নামে একটি সঙ্কলন গ্রন্থ প্রকাশ করতে চলেছে ‘শুধু সুন্দরবন চর্চা’ পত্রিকা। এতে থাকছে তুষার কাঞ্জিলালের জীবন ও কাজ সম্বন্ধে মহাশ্বেতা দেবী, গোপালকৃষ্ণ গাঁধী, অমিতাভ ঘোষ, তরুণ সান্যাল, কল্যাণ রুদ্র, অনিতা অগ্নিহোত্রী, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিনোদ বেরা, বরেন্দু মণ্ডল, প্রণবেশ সান্যাল প্রমুখের মূল্যায়ন। সঙ্গে থাকছে বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি, বিস্তৃত তথ্যপঞ্জি। সঙ্কলনের সম্পাদক জ্যোতিরিন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী জানিয়েছেন এর আগে ‘শুধু সুন্দরবন চর্চা’-র বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাগুলির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কয়েকটি নতুন লেখা। ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটায় রবীন্দ্র সদনে টেগোর সোসাইটি আয়োজিত তুষারবাবুর স্মরণ অনুষ্ঠানে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হবে। বইটির পরিবেশক দে বুক স্টোর (দীপু)।

অবরোধ

৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪১। লেনিনগ্রাদ (বর্তমানে সেন্ট পিটার্সবার্গ) শহরে যাওয়ার শেষ রাস্তাটাও কেটে দিয়েছিল নাৎসি জার্মানির সশস্ত্র বাহিনী ‘ভেরমাহ্‌ট’। ২৭ জানুয়ারি ১৯৪৪ পর্যন্ত চলা, মোট ৮৭২ দিনের এই অবরোধই বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘতম। বীভৎসতমও বটে। এক দিকে অবিরত বোমাবর্ষণ, অন্য দিকে রসদের জোগান ন্যূনতম। মাথাপিছু দৈনিক বরাদ্দ তখন ১২০ গ্রাম রুটি। ‘৯০০ দিনের অবরোধ’ নামে খ্যাত এই ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হল গোর্কি সদনে। অন্ধকার গ্যালারির তিন দেওয়াল জুড়ে সাজানো সেই দিনগুলোর ছবি, প্রেক্ষাপটে ধারাভাষ্য, সঙ্গে আলো ফেলে ছবিগুলো চিনিয়ে দেওয়া। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, সেই ভ্লাদিমির দিমেনতিয়েভ-এর পরিবার এই অভিজ্ঞতার সাক্ষী ছিল। মাত্র ১৬ বছর বয়সে যুদ্ধক্ষেত্রে চলে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা। অনুষ্ঠানের শেষে কথা বলতে গিয়ে চোখের জল আর চাপতে পারেননি বর্তমানে কলকাতার রাশিয়ান সেন্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড কালচারের ডিরেক্টর ও ভাইস কনসাল দিমেনতিয়েভ। ধারাভাষ্য শেষ হয় বিখ্যাত রুশ সুরকার ও পিয়ানিস্ট দমিত্রি শাস্তাকোভিচ-এর (উপরের ছবি) সিম্ফনিতে। এই অবরোধের ছবি দেখে ভারতবাসীর মনে পড়তে পারে কাশ্মীরের কথা, গত বছরের ৫ অগস্ট থেকে যেখানে ‘লকডাউন’ চলছে, আজও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি।

বাঙালির উৎসব

বাঙালি যখন যে উৎসব পেয়েছে, তাই আত্মস্থ করেছে। এই মুহূর্তে এক মহাউৎসব পেরোনো গেল, ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। কোথাও কোনও অতীতে স্মৃতিদর্পণেও ছিল না, কিন্তু আজ সে তিলোত্তমার ‘আগামী দিনের প্রেমের পরিচায়ক’। তরকারি থেকে হিরের দুল— সবই মিলবে এই অসামান্য আয়োজনে। রেস্তরাঁর বাইরে বাইরে লম্বা লাইন কুহু-কেকাদের। ওই দিনে না খেলে জীবন এবং ভালবাসা ব্যর্থ। পাঠক, কিঞ্চিৎ অতীতে ঘাড় ঘোরান। বাঙালির ‘শ্রীপঞ্চমী’-ই তো ছিল সে দিনের ভ্যালেন্টাইন্স ডে। বাসন্তী শাড়ি আর পাঞ্জাবির চোখাচোখি হলেই দিনের পর দিন নিদ্রাবিহনে কাটিয়ে দেওয়া। তিনি তো লিখেইছিলেন, ‘প্রেম এসেছিল নিঃশব্দ চরণে’। আর এক জন লিখেছিলেন, ‘... তোমার সঙ্গে একটা নির্জন রাস্তায়/ যেতে চাইছি, রাস্তাটার নাম গোধূলি’। বিশ্বায়ন-উষ্ণায়ন, প্রায় সবই বদলে দিয়ে গেল। কল্লোলিনী তিলোত্তমার পঞ্চাশ-ষাটের দশকের লেখকেরা, যাঁরা ‘রোমাঞ্চিত সত্তর’ কাটিয়েছেন তাঁদেরই কথায়— ‘যা গিয়েছে, তা গিয়েছে, ভেবে লাভ কি? ভালোবাসা থাকলেই হল।’

শীতের কথা

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি, মাঘ পেরিয়ে ফাল্গুনে পা। বাংলা বাদ দিয়ে ইংরেজি মাসের আধখানা পেরিয়েও বাতাসে ছিল তার ছোঁয়া। যাঁরা ঠান্ডা জলে স্নান করেন তাঁদের কথায়, ‘এই সময় এমন প্রায় হয় না।’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৌম্যদীপের গবেষণা ‘তিস্তা’-র উৎস হিমবাহ। বললেন, ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি, কল্পনা করাই কঠিন। জলস্তর বেড়েই চলেছে নদীতে নদীতে।’ অর্থাৎ এমনও দিন আসতে পারে যে দিন হিমবাহ শুকিয়ে নদীর মৃত্যু হবে? ‘হতেই পারে, তবে এমন করে হঠাৎ হিমবাহ শুকোয় না।’ জানালেন পরিবেশবিদ কৌশিক চক্রবর্তী। বললেন, ‘‘দ্য ডে আফটার টুমরো’ সিনেমাটা মনে আছে? সে দিন আসছে।’ তবু শহরবাসী খুশি। খুশি ওয়েলিংটন স্কোয়ার থেকে হেদুয়ার গরম জামার ব্যবসায়ীরা। আনন্দে চিড়িয়াখানা, জাদুঘর। কিন্তু কোথাও সাবধানবাণী দুলছে— যেমন বর্ষা পিছিয়েছে, ঠিক তেমনই শীত পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রায় বসন্তের দখল নিতে চলেছে সে। এ কথা মনে রেখেই কি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘শীতের বনে কোন্ সে কঠিন আসবে ব’লে/ শিউলিগুলি ভয়ে মলিন..।’ তবু কলকাতাবাসী গরম জামা কিনে ব্যবহার করছেন, ট্যাঁক খরচ করে। সেটাই বা খারাপ কী?

ঠাকুরবাড়ির গান

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি নিয়ে বাঙালির কৌতূহলের যেন অন্ত নেই। ১৮৮০ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে মেজদা সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে বিলেত থেকে ফিরে এলে ঠাকুরবাড়ির গানের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সুযোগ্য ছোট ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁর নূতন দাদা, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। বলতে গেলে এই সময়ে জ্যোতিদাদার কাছেই তাঁর গান রচনায় দীক্ষা হল। এর পর ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’, ‘কালমৃগয়া’, ‘মায়ার খেলা’ থেকে তাঁর যাত্রাপথের আনন্দগান বয়ে বেড়াতে লাগল। ‘ছেলেবেলা’-য় লিখেছিলেন, ‘‘এইবার ছুটল আমার গানের ফোয়ারা। জ্যোতিদাদা পিয়ানোর উপর হাত চালিয়ে নূতন নূতন ভঙ্গীতে ঝমঝম সুর তৈরি করে যেতেন।... তখনি সেই ছুটে চলা সুরে কথা বসিয়ে রাখবার কাজ ছিল আমার।’’ ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় রাজডাঙা রোডের মায়া আর্ট সেন্টারে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে রবীন্দ্রনাথের গানের বেড়ে ওঠার পারিবারিক কাহিনির নতুন গবেষণা নিয়ে আলোচনা করবেন গবেষক-লেখক পীতম সেনগুপ্ত।‌

বাণী ঠাকুর

ঠাকুর পরিবারের কয়লাঘাটা শাখার কন্যা বাণী ঠাকুর। ঠাকুরবাড়ির মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও কিছুটা লুকিয়েই সঙ্গীতচর্চা চালিয়ে যেতে হয়েছিল। পরবর্তী কালে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, সুদেব গুহঠাকুরতা, মায়া সেন, গীতা সেনের সান্নিধ্য তাঁর সঙ্গীতাকাশকে আলোকিত করে। শান্তিনিকেতনবাসী মোহরদির কলকাতার ঠিকানা ছিল বাণী ঠাকুরের হাজরা রোডের বাড়ি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, সাগর সেন, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, ঋতু গুহ, গীতা ঘটক, সুমিত্রা সেনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল এই বাড়িতে। গড়ে তোলেন নিজস্ব সংস্থা— ‘কিংশুক’। শিক্ষকতা করেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও বেঙ্গল মিউজ়িক কলেজে। বিদুষী এই সঙ্গীতশিল্পী এই বছরের প্রথম দিন, ১ জানুয়ারি চলে গেলেন সুরলোকে। ১১ ফেব্রুয়ারি, নেহরু চিলড্রেন্স প্রেক্ষাগৃহে কথায় গানে কবিতায় তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন বিশিষ্ট শিল্পী, কবি, বন্ধু, পরিবার ও কিংশুক শিল্পীগোষ্ঠী।

স্কুলের ইতিহাস

১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে শ্রীরামপুর থেকে নিজের স্কুলের জন্য ইংরেজির শিক্ষকের সন্ধানে গিয়ে ফিরে আসার সময় গঙ্গাবক্ষে ঝড়ের মুখে পড়ে নৌকাডুবিতে অকাল প্রয়াত হন স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা গৌরমোহন আঢ্য। আজ দু’শো বছরের প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে তাঁর স্কুল ‘দি ওরিয়েন্টাল সেমিনারি’ (প্রতিষ্ঠা ১৮২৯)। এই সুদীর্ঘ যাত্রাকে ঘিরে একটি প্রদর্শনী ‘দ্য ম্যাজিক অব মাই স্কুল’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্কুলে। প্রদর্শনীটির উদ্যোক্তা ‘বিচিত্র পাঠশালা’ সংস্থা। সেখানে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ থেকে স্কুলটির বার্ষিক রিপোর্ট থেকে শুরু করে তার গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য বইপত্র, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্রে প্রকাশিত ওরিয়েন্টাল সেমিনারি সংক্রান্ত নানা খবরাখবর, উনিশ ও বিশ শতকের নানা সময়ে ব্যবহৃত পাঠ্যবই, শিক্ষণ উপকরণ, বাংলার নবজাগরণের যে সব ব্যক্তিত্ব সেমিনারির ছাত্র ছিলেন তাঁদের ছবি, হস্তাক্ষর, আরও বহু নথি ও জিনিসপত্র প্রদর্শিত হয়।

প্রয়াণ

ভারতে জনগণনা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। তার পূর্বের, অর্থাৎ প্রাক্‌শুমারি ভারতের জনসংখ্যা সম্পর্কে জানতে হলে? সেই কাজটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুর্গাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতক এই মেধাবী ছাত্রটি স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েও রোজগারের তাগিদে কাজ শুরু করেন ‘সত্যযুগ’-এ। সাংবাদিকতার পাশাপাশি বাম শিক্ষক সংগঠন ‘এবিটিএ’-র হয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা করেন তিনি। তার মান দেখে প্রশান্তচন্দ্র দুর্গাপ্রসাদকে ডেকে নেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে। শুমারি-পূর্ব জনগণনা বিভাগ তৈরি করেন, অবসরের আগে পর্যন্ত যার প্রধান ছিলেন দুর্গাপ্রসাদ। উনিশ শতক থেকে শুরু করে এক ডজনেরও বেশি খণ্ডে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যার আলোচনা প্রকাশিত হয়, ভারত সম্পর্কে জানার জন্য সেগুলি অত্যন্ত মূল্যবান দলিল। কেন্দ্রীয় সেন্সাস কমিশনের প্রাক্শুমারি গবেষণার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তাও ছিলেন। বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, এমন নানা বিষয়ের ইতিহাসচর্চায় নিযুক্ত বিভিন্ন সরকারি গবেষণা প্রকল্পে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। আগ্রহও ছিল বিচিত্র বিষয়ে। ঔপনিবেশিক আমলে খেতমজুরদের মজুরির হার, বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান থেকে বাংলা ভাষায় অর্থনীতির চর্চা, সবই স্থান পেয়েছে তাঁর লেখার তালিকায়। যুক্তি-তথ্য দিয়ে খণ্ডন করেছেন রাম মন্দিরের ঐতিহাসিকতার দাবিও। সম্প্রতি তিরানব্বই বছর বয়সে প্রয়াত হলেন দুর্গাপ্রসাদ।

বিশেষ প্রদর্শনীতে গণেশ পাইনের অন্য ভুবন

‘‘উদ্বেগ আমার চিরসংগী।... আমার সমগ্র অসহায়তার ছবি এঁকে মোকাবিলা করতে চেয়েছিলুম। এখন প্রার্থনা করি: আমার বিচার তুমি করো নাথ আপন করে। পূজার ঘর চাই। আর কিছু নয়।’’ ১৯৯২ সালে নিজের ডায়েরির পাতায় লিখেছিলেন শিল্পী গণেশ পাইন (১৯৩৭-২০১৩)। এই পূজার ঘর বা স্টুডিয়োতে বিভিন্ন সময় শিল্পী সান্নিধ্যে থেকেছেন বীণা ভার্গব। সেই সময়েই তিনি নিজের ক্যামেরায় ধরেছিলেন শিল্পীর নানা মুহূর্তের অন্তরঙ্গ ছবি। সেটা ১৯৮৪ সালের কথা, যখন গণেশবাবু ক্রমে বিখ্যাত হয়ে উঠছেন। চিত্রবাণীতে বীণাদেবী সেই সময় শিক্ষানবিশ আলোকচিত্রী। তখনই এলা দত্ত একটি ইংরেজি পত্রিকার জন্য তাঁকে শিল্পীর ছবি তোলার কাজ দিয়েছিলেন। এই সমস্ত ছবিতে ধরা পড়েছে গণেশ পাইনের অন্য ভুবন। মাপিন প্রকাশনের সহায়তায় আকার প্রকার গ্যালারির উদ্যোগে গত ১৮ জানুয়ারি শুরু হয়েছে একটি প্রদর্শনী ‘মেমরিয়ালাইজ়িং গণেশ পাইন’ শীর্ষকে। এটি কিউরেট করেছেন এলা দত্ত। প্রদর্শিত আলোকচিত্রে ধরা পড়েছে শিল্পীর স্টুডিয়ো এবং কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের মন্দার মল্লিকের স্টুডিয়ো যেখানে তিনি ইলাস্ট্রেটরের কাজ করতেন, মধ্য কলকাতার কবিরাজ রোডের বাড়ি, ব্যক্তিজীবন, স্বজনদের সঙ্গে, আড্ডায় বা তাঁরই ছবির চরিত্রদের সঙ্গে কোলাজে। রয়েছে ১৯৯৯ বা ২০০৮-এ লেখা দিনলিপি, স্কেচবই, কাজে নিমগ্ন বা একাকী শিল্পী। শৈবাল ঘোষকে লেখা চিত্রিত পোস্টকার্ড চিঠি। দেখা যাবে টেম্পারা, কালি-কলমের স্কেচ, মিশ্রমাধ্যম বা জলরঙের বেশ কিছু অসাধারণ ছবিও। প্রদর্শনী চলবে ৩১ মার্চ, সোম থেকে শনিবার, ২-৭টা পর্যন্ত। জানা গেল বিষয়টি নিয়ে নির্মিত হচ্ছে একটি বই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy