প্রতীকী ছবি।
ব্যবহারের খরচ বেশি। আদালতে শুনানির সময়ে প্রতিপক্ষের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়। তবু অপরাধের তদন্তে নেমে প্রমাণ হিসেবে ছবি তোলার সময়ে এখনও অ্যানালগ ক্যামেরাই ব্যবহার করে লালবাজার। কলকাতা পুলিশের সায়েন্টিফিক উইংয়ের সদস্য এক পুলিশ চিত্রগ্রাহক বললেন, ‘‘ডিজিটাল ক্যামেরা থাকলেও তার ব্যবহার পুলিশের নানা অনুষ্ঠান বা অন্য কিছু ক্ষেত্রে ছবি তোলাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। প্রমাণ হিসেবে অপরাধস্থলের বা তথ্যপ্রমাণ আদালতে জমা করার জন্য কোনও ছবি তুলতে হলে আমরা অ্যানালগ ক্যামেরাই ব্যবহার করি।’’
কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরার এই রমরমার যুগেও পুলিশ অ্যানালগে পড়ে আছে কেন?
ভুক্তভোগী থেকে আইনজীবীদের বড় অংশের অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই পুলিশের চিত্রগ্রাহকেরা দেরিতে অপরাধস্থলে গিয়ে ছবি তোলেন। সেই দেরি প্রমাণিত হলে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে বলে আদালতে দাবি করতে পারে প্রতিপক্ষ। দাবি প্রমাণিত না হলেও এ নিয়ে পুলিশের মুখ পোড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু অ্যানালগ ক্যামেরায় ছবি তুললে তাতে ছবি তোলার সময় ধরা পড়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। একাধিক ক্ষেত্রে ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ সেই ফাঁকটুকু রাখার জন্যই অ্যানালগ ক্যামেরার ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অনেকের দাবি। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় আবার বললেন, ‘‘এটা আসলে এখানকার পুলিশের সদিচ্ছার অভাব। মুম্বই বা দিল্লির মতো বড় শহরে কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিই ব্যবহার হয়। কোনও মামলার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের সাহায্যে সামান্যতম কোনও পরীক্ষা করাতে হলে এখনও আমাদের অন্য বড় শহরের সাহায্য নিতে হয়।’’
কলকাতা পুলিশের অবশ্য দাবি, অপরাধের তদন্ত সংক্রান্ত যে কোনও ছবি আদালতে পেশ করতে হলে তার সঙ্গে নেগেটিভ রিল দিয়ে দিতে হয়। না হলে সেই ছবি আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য না-ও হতে পারে। ফলে তথ্যপ্রমাণ আইন মেনে কাজ করতে গিয়েই এখনও অ্যানালগ ক্যামেরার ব্যবহার ছাড়তে পারেনি তারা। আইনজীবী দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য যদিও এই দাবি উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘কে বলে ছবির সমর্থনে স্রেফ নেগেটিভ রিল দিতে হয়? মেমরি কার্ড, সিডি, ফ্লপি বা পেন ড্রাইভও তো আদালতে গ্রহণযোগ্য। এ হচ্ছে আসলে পুলিশের সময় লুকোনোর খেলা। অপরাধস্থলে দেরিতে গিয়ে সেই দেরি লুকোনোর চেষ্টা।’’
দিব্যেন্দুবাবুর অভিযোগ, রানিকুঠির এক স্কুলে যৌন নিগ্রহের অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশের চিত্রগ্রাহক ঠিক এই কাজই করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলের যে শৌচাগারে নিগ্রহের ঘটনাটি ঘটেছিল, সেখানকার ছবি বেশ কয়েক দিন পরে তুলেছিলেন পুলিশের চিত্রগ্রাহক। স্কুলের শৌচাগার বেশি দিন বন্ধ করেও রাখা যায়নি। অর্থাৎ, যত দিনে সেখানকার ছবি উঠল, তথ্যপ্রমাণ তত দিনে ধুয়েমুছে সাফ!’’ লালবাজারের কেউই এই অভিযোগ সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। এক কর্তার দাবি, থানার যে কোনও কাজের জন্য ডায়েরি লেখাতে হয়। কোনও ঘটনাস্থলে পুলিশের চিত্রগ্রাহক গেলে তিনি কোন সময়ে থানায় পৌঁছলেন, কখনই বা অপরাধস্থলের ছবি তুলে থানা হয়ে বেরিয়ে গেলেন, সবটাই ডায়েরিতে লেখা থাকে। এ ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই তা করা হয়েছে। দিব্যেন্দুবাবুর দাবি, ‘‘ওই স্কুলের ঘটনায় পুলিশের চিত্রগ্রাহক তো থানায় গিয়ে ডায়েরিই লেখাননি। ভেবেছিলেন, স্কুলের শিক্ষিকা বা অন্য কর্মীদের দাঁড় করিয়ে পরে ছবি তুলে পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু এ ভাবে কাজ করলে অ্যানালগ ক্যামেরায় ছবি তুলেও লাভ হবে না। প্রতিপক্ষ প্রশ্ন তুলবেই।’’
বর্ষীয়ান চিত্রগ্রাহক সুনীল দত্তের কথায়, ‘‘কোনও বিশেষ কারণ ছাড়া এখন আর কেউই অ্যানালগ ক্যামেরায় ছবি তোলেন না। প্রচুর খরচ। আমি নিজে অ্যানালগ ক্যামেরা ছাড়া কাজ করি না, কারণ আমি অ্যানালগে ছবি তুলতে ভালবাসি।’’ শ্যামবাজারের এক স্টুডিয়োর মালিক অরিন্দম বিশ্বাসের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘পুলিশের তো সেই ব্যক্তিগত ভালবাসা থাকার কথা নয়। অ্যানালগ ক্যামেরার রিল কিনতেই এখন প্রায় ৩০০ টাকা দাম পড়ে যায়। তা থেকে মাত্র ৩৬টা ছবি বেরোয়। এর উপরে রয়েছে কোনও স্টুডিয়োয় সেই রিল ডেভেলপ করানোর খরচ। তার পরে কোন মাপের ছবি নেওয়া হবে, সেই হিসেবে পড়ে ছাপানোর খরচ। পুলিশের নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে গোটাটা হলেও সবটাই তো আর নিখরচায় হয় না! সরকারের টাকাই যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy