আঁস্তাকুড়: এ ভাবেই আবর্জনায় ভরে রয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের আশপাশ। ছবি: শৌভিক দে
ঘরের পূর্ব দিকের জানলা খুললেই সোজাসুজি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। খুব প্রয়োজন না পড়লে জানলাটি খোলেন না বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সংলগ্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দা নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায়। জানলায় মোটা জাল লাগিয়ে রেখেছেন প্রাক্তন ওই ব্যাঙ্ককর্মী। তাঁর পুত্রবধূ জানালেন, সকাল-সন্ধ্যায় সেই জালের স্বাস্থ্য-পরীক্ষাই নিমাইবাবুর প্রধান কাজ। কোনও বারণই শোনেন না সত্তরোর্ধ্ব।
পরিজনেদের দাবি, বাতিক হয়ে গিয়েছে নিমাইবাবুর। সারা ক্ষণ মশা তাড়ানোর পরিকল্পনা করতে থাকেন। নিমাইবাবু অবশ্য তাঁর মশা-বাতিকের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘একটা মশা কামড়ালেই রক্ষা নেই। ঘরে মশা ঢুকে পড়তে পারে। তাই জাল লাগিয়ে রাখি। বউমা আর নাতির জন্যই যত চিন্তা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গত বছর বানের জলের মতো ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে লোকজন এসেছিলেন আইডি হাসপাতালে। খুব ভয়ে ছিলাম। ওই রোগীদের কামড়ে একটা মশা ঘরে ঢুকলেই সব শেষ। এ বার তাই এখন থেকেই সব ব্যবস্থা করে রাখছি।’’ শুধু জানলার জালই নয়, বৃষ্টি হলেই বারান্দার গাছের টব নিয়ে চিন্তায় পড়েন নিমাইবাবু। সেগুলিতে জমা জল পরিষ্কার করে তবে তাঁর শান্তি!
গত বছর শহরে তো বটেই রাজ্যের নানা প্রান্তে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। জ্বরাক্রান্ত রোগীরা প্রচুর সংখ্যায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। শয্যা না থাকায় রোগীদের হয়রানিরও অভিযোগ ওঠে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাওয়া আইডি হাসপাতালের তরফে এক সময় জানানো হয়, জ্বর হলেই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি হতে চলে আসছেন অনেকে। শীত পড়ার পর থেকে ছবিটা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। সেই সময় আইডি হাসপাতালের ভিতরে এবং হাসপাতাল চত্বর সাফসুতরো রাখা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েন ওই হাসপাতাল সংলগ্ন আবাসন এবং ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।
হাসপাতাল সংলগ্ন সিআইটি রোডের বাসিন্দা খেমরাজ ভট্ট জানালেন, স্ত্রী এবং পাঁচ বছর বয়সী পুত্রকে নিয়ে তাঁর বাস। বললেন, ‘‘হাসপাতালের সামনে বাড়ি। রোগ নিয়ে সারা বছরই চিন্তায় থাকি। গত বছর তা বেড়ে গিয়েছিল। রোজই শুনি এই হাসপাতালে লোক মারা যাচ্ছেন। দিন রাত মশারি খাটিয়ে রাখতাম।’’ জানালেন, গত মাস থেকেই আবার মশারি ব্যবহার শুরু করেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে নিয়মিত বাড়ির সামনের রাস্তাও পরিষ্কার করান।
আশুতোষ শাস্ত্রী রোডের এক বাসিন্দা আবার অভিযোগ করলেন, ‘‘গত বছর সব জায়গায় সচেতনতার প্রচার হয়েছে। আমাদের এখানে কেউ আসেননি। মশার ভয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে বেশ কিছু দিন শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ছিলাম।’’
ওই হাসপাতাল এবং সংলগ্ন এলাকা কলকাতা পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাস অবশ্য দাবি করলেন, গত বছরের মতো এ বারও তাঁদের ডেঙ্গি কর্মসূচি মার্চ মাস থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বার বাড়াবাড়ি হওয়ার আগে নিয়মিত মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে বলে দাবি কাউন্সিলরের। পবিত্র বলেন, ‘‘শুধু হাসপাতাল চত্বর কেন, আমার ওয়ার্ডের সব বাড়িতেই যাচ্ছি। মশারি ব্যবহারের পাশাপাশি জল জমতে না দেওয়ার কথা বলছি। হাসপাতালের সামনের বাড়িগুলিতে প্রয়োজনে মশারি বিলি করব।’’
সব মিলিয়ে মশা-যুদ্ধের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে আইডি হাসপাতাল-পাড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy