তাণ্ডব: জয়ের আনন্দে পথে গাড়ি থামিয়েই চলছে দেদার শব্দবাজি ফাটানো। মঙ্গলবার, হরিশ মুখার্জি রোডে। নিজস্ব চিত্র।
জয়ের সম্ভাবনা দেখা দেওয়া মাত্র গণনা কেন্দ্রের সামনে চলে এসেছিল সাইকেলের ক্যারিয়ারে বাঁধা সাউন্ড বক্স। তার কিছু পরেই হাজির তাসা পার্টি, খোল-করতাল। আর জয় নিশ্চিত জানার পরে ছোট মালবাহী গাড়িতে চলে এল বড় বড় ডিজে বক্স। যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের সামনে তখন সাউন্ড বক্স, খোল-করতাল, তাসা পার্টি, ডিজের সম্মিলিত আওয়াজে কান পাতা দায়। তার সঙ্গে ফাটতে থাকে দেদার শব্দবাজিও।
শুধু যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের সামনেই নয়, দক্ষিণের হরিশ মুখার্জি রোড, আলিপুর রোড থেকে শুরু করে উত্তরের তালতলা, বাগবাজার স্ট্রিটে দেদার বাজি ফাটা ও ডিজের আওয়াজে ভোট উৎসবে শব্দবিধি যেন কার্যত উড়ে গেল। যা দেখে এক শহরবাসীর বক্তব্য, ‘‘মাস্ক ছাড়া এই ভিড়ের মধ্যে করোনা-বিধি তো কিছুই মানা হচ্ছে না, তার সঙ্গে শব্দবিধিও উড়ে গেল।’’
যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের সামনে সাইকেলে বক্স বেঁধে নিয়ে এসেছিলেন কয়েক জন যুবক। ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বসুন্ধরা গোস্বামীর জেতা নিশ্চিত হওয়ার পরেই বাজতে শুরু করল সেই বক্স। বক্সে ‘খেলা হবে’ গানের সঙ্গে কয়েক জন নাচ শুরু করতেই এক যুবক পাশ থেকে বলে উঠলেন, ‘‘এখানেই সব এনার্জি শেষ করিস না ভাই। ডিজে বক্সও আসছে।’’
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ যখন ১০ নম্বর বরোর প্রায় সব ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত, তখন দেখা গেল, মালবাহী গাড়িতে করে হাজির হয়ে গিয়েছে ডিজে বক্স। স্কুলের সামনের রাস্তা তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘন ঘন ফাটছে বাজিও।
বাজির আওয়াজ শুনে এলাকার এক বাসিন্দা বলে উঠলেন, ‘‘বাজি ফাটছে না বোমা পড়ার আওয়াজ, তা বোঝা দায়। এ বার কালীপুজোয় যে বাজিগুলো ফাটানো যায়নি, সেগুলোই ফাটিয়ে বোধহয় সব সুদে-আসলে উসুল করা হচ্ছে।’’
বেলা যতই গড়িয়েছে ততই বেড়েছে শব্দবাজি আর ডিজের দাপট। বেলেঘাটায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে এক তৃণমূল বিধায়কের কার্যালয়ের সামনে ফেটেছে দেদার শব্দবাজি। আলিপুর রোডে সেতুর সামনে ডিজে বক্স বাজিয়ে নাচানাচি দেখে এক পথচারী বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে, রাস্তাটাই ক্লাবের ডান্স ফ্লোর।’’
অভিযোগ, দুপুর ২টো নাগাদ হরিশ মুখার্জি রোডের ৭১ নম্বর তৃণমূল ব্লক অফিসের সামনে ফেটেছে দেদার শব্দবাজি। রাস্তার মধ্যে শব্দবাজি ফাটানোর জন্য গাড়িও দাঁড়িয়ে পড়ে। জয়ী প্রার্থী এলাকায় পৌঁছলে শব্দবাজি ফাটিয়ে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে, এই ভেবে কিছু শব্দবাজি রেখে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেন সমর্থকেরা। একগাল হেসে এক যুবককে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ‘‘এত বাজি কোথা থেকে এল?’’
বড়বাজারে যে সব দোকান থেকে বাজি বিক্রি হয়, সেখান থেকে এ দিন বাজি বিক্রি করা হয়নি বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের। এক ব্যবসায়ী সমীরণ পালের দাবি, ‘‘গত কয়েক দিনে সবুজ আবির বিক্রি করেছি অনেক। কিন্তু শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে এখন আর দোকানে রাখি না।’’
কলকাতা পুরসভার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী, তৃণমূলের দেবাশিস কুমার এই শব্দবাজি ও ডিজে বাজানো প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের ফল যখন বেরোলো, তখন করোনা মধ্যগগনে। মানুষ সেই জয় উদ্যাপন করতে পারেনি। এ দিন কিছু বাজি ফেটেছে ঠিকই, তবে ডিজে বাজানোর কোনও খবর আমার কাছে অন্তত নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy