Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Municipal Election 2021

Javed Khan: জাভেদ তুষ্টে জগৎ তুষ্ট, কসবার ছয় ওয়ার্ড জয় করাই হল মন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ

কলকাতা পুরভোটে কলকাতা থেকে নির্বাচিত মন্ত্রীদের কেন্দ্রের পুরচিত্র কেমন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

অঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ

অঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ

অমিত রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৪৪
Share: Save:

একই অঙ্গে অনেক রূপ! কসবা বিধানসভার ক্ষেত্রে এই বাক্যটি প্রযোজ্য হতে পারে। যেখানে ঝাঁ চকচকে বহুতল,বিলাসবহুল হোটেলের ঝলমলে আলোর রোশনাইয়ের পাশেই দেখা মিলতে পারে নিকষকালো অন্ধকারে ডুবে থাকা রাশিরাশি গরিব ঝুপড়ির।
ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস দিয়ে গেলে দেখা যাবে, মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে থাকা একের পর এক বেসরকারি হাসপাতাল। গজিয়ে ওঠা ছোট ছোট বার কাম-রেস্তোরাঁ। আর অবশ্যই মাছের ভেড়ি। আবার কেন্দ্রের শেষ প্রান্তে গিয়েদেখা যেতে পারে বিঘার পর বিঘা ফলন। এমনই বৈচিত্র নিয়ে তৈরি হয়েছে কসবা বিধানসভা।

কলকাতা পুরসভার ছ’টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই বিধানসভা। ৬৬, ৬৭, ৯১, ৯২, ১০৭ এবং ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই বিধানসভা আপাতদৃষ্টিতে ছোট বলে মনে হলেও আয়তনে কসবা বিধানসভা বেশ বড়। তপসিয়া থেকে শুরু করে রুবি হাসপাতাল ছাড়িয়ে তার পরিধি। ২০১১ সাল থেকে পরপর তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে কসবায় দু’টি বিষয় ঘটেছে ধারাবাহিকভাবে। প্রথম,তৃতীয়বার জিতে বিধায়ক হয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন জাভেদ আহমেদ খান। আর দ্বিতীয়, তিনবার ভোটে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছেন সিপিএমের যুবনেতা শতরূপ ঘোষ। ২০২১ সালের ভোটে তো তৃতীয় স্থানে শেষ করেছেন সিপিএমের এই প্রার্থী!

আরও একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য— কলকাতা পুরসভা এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন কসবা বিধানসভার অন্তর্গত ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এখনও প্রতিবেশী দুই কেন্দ্র যাদবপুর ও কসবায় বামমনস্ক ভোটারদের বাস রয়েছে যথেষ্ট। এখনও ওই বিধানসভার ৯১ এবং ৯২ নম্বর ওয়ার্ড ধরে রেখেছে বামফ্রন্ট। ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কো-অর্ডিনেটর সিপিএমের অন্নপূর্ণা দাস। আর ৯২ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআইয়ের মধুছন্দা দেব। ৯১ নম্বর ওয়ার্ডে নতুনমুখ সুরজিৎ সেনগুপ্তকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। সেই ওয়ার্ড সিপিএমের থেকে ছিনিয়ে নিতে পাশের ওয়ার্ড ৯০ নম্বর থেকে এসে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের পরিচিত মুখ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। আর ৯২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্ষীয়ান সিপিআই নেত্রী তথা বামপ্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের ‘নতুন মুখ’ অভিষেক মুখোপাধ্যায় (রোহন)। কসবা বিধানসভার এই দুটি ওয়ার্ড ছাড়া বাম বা বিরোধীরা কোনও ওয়ার্ডে লড়াইয়ে নেই বললে অত্যুক্তি হবে না।

৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে শাসকদলের প্রার্থী স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাভেদ খানের পুত্র ফৈয়াজ আহমেদ খান। ১৯৯৫ সাল থেকে পরপর তিনবার এই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হন জাভেদ। ২০১০ সালে ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হলে জাভেদের স্ত্রী রাফাত জাভেদকে মনোনয়ন দেয় তৃণমূল। জাভেদ নিজে ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু হেরে যান বামপ্রার্থী ফরজানা চৌধুরীর কাছে। ৬৬ নম্বরে জেতেন রাফাত। ২০১৫ সালে সেই আসনে জাভেদ-পুত্রকে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। এ বারও তিনিই প্রার্থী।

কসবা বিধানসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড হল মন্ত্রী জাভেদের প্রাণভোমরা। কারণ, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বাকি ওয়ার্ডগুলি জাভেদকে পিছিয়ে দিলেও শুধুমাত্র ৬৬ ওয়ার্ডে ভর করেই ১১,৮৮৪ ভোটে জিতেছিলেন তিনি। ২০২১ সালের ভোটেও জাভেদকে ৬৩,০০০ ভোটে জেতাতে বড় ভুমিকা ছিল ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের। তাই স্বভাবতই সেই ওয়ার্ডের প্রতি মন্ত্রীর নজর বেশি। ঘটনাচক্রে, তপসিয়া সংলগ্ন এই ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডটি সংখ্যালঘু প্রধান। ৬৭, ১০৭ এবং ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে সাংগঠনিক ক্ষমতার জোরে তৃণমূলই এগিয়ে।

১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের ‘প্রভাবশালী’ কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে এ বার যেতে হয়েছে পাশের ওয়ার্ড ১০৮ নম্বরে। ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে গতবারের কাউন্সিলর প্রাক্তন ফুটবলার শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বার আর প্রার্থী করেনি তৃণমূল। বদলে ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডে শাসকদলের নতুন প্রার্থী লিপিকা মান্না। তবে ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্ষীয়ান বিদায়ী কো-অর্ডিনেটর বিজনলাল মুখোপাধ্যায়কেই আবার প্রার্থী করা হয়েছে। শুধু ৬৬ নম্বর নয়, অন্য ওয়ার্ডেও তাঁরা জিতবেন বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী জাভেদ।

রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি কী ভাবছে?

বামেদের পিছনে ফেলে বিধানসভা ভোটে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসাকেই এ বারের পুরভোটে নিজেদের রুপোলি রেখা হিসেবে দেখছে বিজেপি। কসবা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন চিকিৎসক ইন্দ্রনীল খাঁ। তাঁর কথায়, ‘‘বামেদের দু’টি ওয়ার্ড থাকা সত্ত্বেও আমরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিলাম। অতএব আমাদের প্রতি কসবার মানুষের একাংশের আস্থা রয়েছে। তাই আমাদের এই ভোটে ভাল ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

আর বামশিবির? ‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণ’ ভোট হলে তাঁরা ভাল ফল করবেন বলেই দাবি লাল ঝান্ডার। ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তথা সিপিআই নেত্রী মধুছন্দার কথায়, ‘‘কসবার ছ’টি ওয়ার্ডেই আমরা লড়াইয়ে আছি। বামপন্থীদের কাজ লড়াই করা। আমরা সেই লড়াইয়ে আছি। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হলে মানুষ আমাদের পক্ষেই রায় দেবেন।’’ ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের বামপ্রার্থী সুরজিৎ বলছেন, ‘‘শাসকদল ভোটের দিন বাইরে থেকে লোক আনবে আমরা জানি। তাই সংগঠনকেও সেভাবেই তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।’’

ফলে কী দাঁড়াল মন্ত্রী জাভেদের কাছে? দাঁড়াল এই যে— আমি আছি, গিন্নি আছেন, আছেন আমার এক ছেলে! তাঁরা সকলে সফল হলেই ‘মন্ত্রী’ জাভেদের মুখের হাসি আরও চওড়া হবে।

(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় দুটি তথ্যগত ভ্রান্তি ছিল। লেখা হয়েছিল, জাভেদ খানের পুত্র ফৈয়াজ আহমেদ খান ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এই পুরভোটে প্রথম বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা ঠিক নয়। ২০১৫ সালেও ফৈয়াজ এই ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হন। এবং ৩০ হাজারের বেশি ভোটে জেতেন। প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছিল, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা ৯০ শতাংশের বেশি। এটিও ঠিক তথ্য নয়। এই ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু ভোটার ৫০ শতাংশের কিছু বেশি।এমন দুটি গুরুতর তথ্যগত ভ্রান্তির জন্য আমরা পাঠক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আন্তরিক দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE