Advertisement
০৭ জানুয়ারি ২০২৫

ডেঙ্গি নিয়ে অফিসারদের দিকে তোপ পুরকর্তার

এ দিনের বৈঠকে ডেপুটি মেয়র সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোথাও জঞ্জাল জমা হলে সেই জমির মালিককেই তা সরাতে হবে।

 মেট্রোপলিটন এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে জমা জল। নিজস্ব চিত্র

মেট্রোপলিটন এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে জমা জল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৪
Share: Save:

কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পরে নড়েচড়ে বসল পুর প্রশাসন। উদ্বিগ্ন পুরকর্তাদের একাংশের মতে, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী শহরের কয়েকটি বরোর এগজিকিউটিভ হেল্থ অফিসারদের গাফিলতি। সজাগ নন কয়েক জন কাউন্সিলরও। বৃহস্পতিবার পুর ভবনে বর্তমান ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে জানানো হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা যা ছিল, অক্টোবরে তা প্রায় চার গুণ বেড়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে শহরের তিনটি বরো এলাকার ১২টি ওয়ার্ডের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত পুরসভা।

ডেঙ্গির এমন বাড়বাড়ন্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বৈঠকে বলেন, ‘‘কয়েক জন এগজিকিউটিভ হেল্থ অফিসার ঠিক মতো কাজ করছেন না। এ ভাবে চলবে না। প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে।’’ একই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ‘নীরব’ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে বৈঠকে। অতীনবাবুর কথায়, ‘‘ফাঁকা জায়গায় জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। বদ্ধ জলাশয় আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে। তবু হুঁশ নেই স্থানীয় বাসিন্দা থেকে কোনও কোনও জনপ্রতিনিধির। মামলার ভয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তব্যরত অফিসারও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’’

এ দিনের বৈঠকে ডেপুটি মেয়র সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোথাও জঞ্জাল জমা হলে সেই জমির মালিককেই তা সরাতে হবে। পুর আইনে বলা আছে, জমির মালিক জঞ্জাল না সরালে পুরসভার সংশ্লিষ্ট অফিসার তাঁকে নোটিস ধরাবেন। মামলা করবেন। কিন্তু এক শ্রেণির অফিসার আদালতে যাওয়ার ভয়ে মামলা করছেন না। অতীনের সাফ কথা, ‘‘চাকরি করতে হলে এ সব করতে হবে। না হলে অবসর নিন।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের ৭, ১০ এবং ১৪ নম্বর বরো এলাকার ৫৭, ৬৩, ৮১, ৯৩, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৯, ১০০, ১২৯, ১৩১ ও ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। এর মধ্যেই দেখা গেল, মেট্রোপলিটনে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির নীচে চৌবাচ্চায় জল জমে রয়েছে। ওই চৌবাচ্চায় জল জমে থাকা নিয়ে বছর দুয়েক আগে বাড়ির মালিক হিসেবে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নামেই নোটিস করেছিল পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। পরে জানা যায়, সেটি প্রাক্তন মেয়রের আত্মীয়ের বাড়ি। অস্বস্তিতে পড়তে হয় পুরকর্তাদের। ওই বাড়িতে এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। মাঝেমাঝে পরিষ্কার করা হলেও বৃষ্টি পড়লেই আবার জল জমে বলে জানালেন স্থানীয় এক পুর আধিকারিক।

২০১১-’১২ সালে কলকাতার ডেঙ্গি পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও। তার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গি প্রতিরোধে কাজ করে পুর প্রশাসন। গত কয়েক বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেও ছিল। এ বার তা বাড়তে থাকায় এখনই লাগাম টানতে চায় পুর প্রশাসন।

কিন্তু কী ভাবে? এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফাঁকা জমিতে বা বদ্ধ জলাশয়ে জঞ্জাল-আবর্জনা ফেলা হলে মালিককেই তা পরিষ্কার করতে হবে। মালিক তা না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে হাজির ছিলেন জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার, পুর কমিশনার খলিল আহমেদ, বিশেষ পুর কমিশনার তাপস চৌধুরী-সহ ১৬টি বরোর এগজিকিউটিভ হেল্থ অফিসার ও পদস্থ কর্তারা। সেখানে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তোলা হয়েছে। বৈঠকে দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘পুকুরপাড় ব্যবহারযোগ্য না থাকায় এলাকাবাসী পুকুরে নোংরা ফেলেন। তা আটকাতে সরকারি পুকুরগুলির পাশে যাতায়াতের রাস্তা করা হোক।’’ এই কাজে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল ফেলা চললে সেই জমি ঘিরে দিতে হবে মালিকপক্ষকে। অন্যথায় ওই জমিতে পরবর্তী ২৫ বছর কোনও নির্মাণের নকশা অনুমোদন করানো যাবে না। তিন কাঠা বা তার চেয়ে ছোট মাপের পুকুর সাফ করার কাজে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে যুক্ত করার দাবিও তোলা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue ডেঙ্গি Kolkata Municipal Corporation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy