Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ক্ষতিপূরণের দাবিদার নিয়ে বিপাকে মেট্রো

বাড়ি ভেঙে পড়ার বিপর্যয় আপাতত বন্ধ হলেও এখন হাজারো দাবির মুখে ক্ষতিপূরণের টাকা মেটাতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের (কেএমআরসিএল)।

দেখভাল: ভেঙে পড়েছে পাশের বাড়ি। সেখানকার বাসিন্দাদের পোষ্যদের দেখাশোনার ভার নিয়েছেন প্রতিবেশী গৌরী মিত্র। শুক্রবার, দুর্গা পিতুরি লেনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেখভাল: ভেঙে পড়েছে পাশের বাড়ি। সেখানকার বাসিন্দাদের পোষ্যদের দেখাশোনার ভার নিয়েছেন প্রতিবেশী গৌরী মিত্র। শুক্রবার, দুর্গা পিতুরি লেনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২১
Share: Save:

কেউ দাবি করেছেন, একই বাড়িতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী আলাদা ঘরে থাকতেন। ফলে শুধু স্বামীকে ক্ষতিপূরণের টাকা দিলে হবে না, টাকা চাই স্ত্রীরও! কারও আবার প্রশ্ন, একই পরিবারে তাঁদের হাঁড়ি চড়ে তিনটে। একা মেজো ছেলে কেন পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন? এক ব্যক্তি আবার জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগে বৌবাজারের পুরনো পাড়া ছেড়ে তাঁরা উঠে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তিনিও বাড়ির অংশীদার। সুতরাং ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে তাঁকে যেন বঞ্চিত করা না হয়!

বাড়ি ভেঙে পড়ার বিপর্যয় আপাতত বন্ধ হলেও এখন হাজারো দাবির মুখে ক্ষতিপূরণের টাকা মেটাতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের (কেএমআরসিএল)। ঠিক দাবিদার নির্ধারণ করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়া ওই সংস্থা এ বার ক্ষতিপূরণের চেক বাবদ মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূত্রের খবর, চেক হাতে পাওয়ার পরে গ্রাহককে লিখে দিতে হচ্ছে, তিনি যে তথ্য দিয়েছেন তা ঠিক। পরবর্তী সময়ে কোনও তথ্য ভুয়ো প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে পুলিশ এবং স্থানীয় পুর প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলা হয়েছিল। তাদের দেওয়া তালিকা দেখে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই দেখা যায়, একই পরিবার বা বাড়ি থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে একাধিক আবেদন জমা পড়ছে। মেট্রো রেলের এক কর্তার দাবি, ‘‘এমন হলে ক্ষতিপূরণ মেটানোর গোটা প্রক্রিয়াটাই জটিল হয়ে ওঠে। এর ফলে বাড়তি সময়ও লাগতে পারে।’’

গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের হোটেলে ওঠা কিশোর কর্মকার নামে এক ব্যক্তির দাবি, ১ নম্বর সেকরাপাড়া লেনে তাঁদের বাড়ি ছিল। তাঁর দাদা বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে অন্য বাড়িতে উঠে গেলেও স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধা মা এবং অবিবাহিত ভাইকে নিয়ে তিনি ওই বাড়িতেই থাকতেন। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাঁকে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক দিলেও ভাই এবং মাকে দেননি। তাই তাঁরাও ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছেন। কিশোরবাবুর কথায়, ‘‘মেট্রোর লোক হয়তো বিশ্বাস করছেন না। তবে আমাদের তিনটে হাঁড়ি। মা নিজে আলাদা রান্না করে খান। ভাইও তাই। আমি পেলে ওঁরা কেন পাবেন না? তাই আবেদন করিয়েছি।’’ বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাসিন্দা দাদাও নিজের মতো করে আবেদন করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। স্বামীর সঙ্গে আলাদা থাকার কথা জানিয়ে আবেদন করা মহিলা বললেন, ‘‘বাড়ির খাজনা জমা দেওয়ার কাগজ দেখাতে পারি, আমরা আলাদা থাকি।’’

শুক্রবার সকালেই বৌবাজারের সেকরাপাড়া লেনে ঢোকার মুখে ঘিরে দেওয়া অংশে আবার দেখা গেল, এক ব্যক্তি ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বাড়ি ভেঙেছে? প্রশ্ন করায় তিনি বললেন, ‘‘আমরা এ পাড়ায় এখন আর থাকি না, কেষ্টপুরে চলে গিয়েছি। তবে আমাদের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। দাদারা সব টাকা নিচ্ছে, ওই বাড়িতে আমারও তো ভাগ রয়েছে। আমি কেন ছাড়ব?’’ ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেকে বলছে আমায় নাকি দেবে না। আমি দরকার হলে আদালতে যাব।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে বললেন, ‘‘নবান্নে আজই এ নিয়ে বৈঠক হল। মেয়র আমাকেই এই সমস্যা মেটাতে বলেছেন। কেউ যেন বঞ্চিত না হন, সেটাই আমায় দেখতে হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy