জল জমেছে মেট্রোর মেঝেয়। ফাইল চিত্র
সস্তার ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণিত নয়। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে সংশয়ও কম নেই। তবু ক্ষতির আশঙ্কা সত্ত্বেও সেই ওষুধই খাওয়াতে হচ্ছে রোগীকে। কারণ, শিয়রে শমন রেল বোর্ডের হুকুম। কলকাতা মেট্রোয় চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ)-র রেক নিয়ে নিয়ত সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে একান্তে এ কথাই বলছেন মেট্রো কর্তাদের একাংশ।
মেট্রো সূত্রে খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত আর্থমুভার্স লিমিটেডের তৈরি ছয় কোচের এক একটি রেক-পিছু যেখানে গড়ে ৬৫ কোটি টাকা খরচ পড়ছে, সেখানে কলকাতা মেট্রোর ৮ কোচের রেক আইসিএফ তৈরি করেছে গড়ে মাত্র ৪০ কোটি টাকায়।
এই বিপুল সাশ্রয়ের যুক্তি দেখিয়েই রেলের অধীনে থাকা কলকাতা মেট্রোকে আইসিএফের তৈরি রেক ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু যে কারখানায় বন্দেভারত এক্সপ্রেসের মতো ট্রেন তৈরি হয়েছে, যেখানে তৈরি ডিএমইউ ট্রেন শ্রীলঙ্কায় রফতানি করে বিদেশি মুদ্রা আয় করছে সরকার, সেখানে উন্নত মানের মেট্রোর কোচ তৈরি হয় না কেন ?
মেট্রো কর্তাদের অভিযোগ, সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তিতে ব্যাপক বদল এলেও তার অধিকাংশই আয়ত্ত করতে পারেনি আইসিএফ। ইঞ্জিন দিয়ে টানা ট্রেনের সঙ্গে মেট্রোর ডিস্ট্রিবিউটেড পাওয়ার রোলিং স্টক (ডিপিআরএস) প্রযুক্তির ফারাক বিশাল। মেট্রোর কোচের নীচে বসানো উন্নত প্রযুক্তির মোটর ট্রেন চালানোর পাশাপাশি একাধিক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। জটিল ওই ব্যবস্থার প্রতি পর্বে যন্ত্রই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে চালক বা গার্ডের ভূমিকা থাকলেও তা অনেকটাই গৌণ। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রেনের সব যন্ত্র যাতে পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্ভুল ভাবে কাজ করে, তা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। অথচ আইসিএফে মেট্রোর রেক পরীক্ষার উপযোগী ‘টেস্ট-লাইন’ পর্যন্ত নেই বলে অভিযোগ। ফলে প্রায়ই সফটঅয়্যার-সহ জটিল কারিগরি বিষয় যথেষ্ট পরীক্ষা না-করেই ছেড়ে দিতে হয়। পরে ওই রেক নিয়ে ভোগান্তির শেষ থাকে না। অভিযোগ, খরচ কমাতে গিয়ে অনুসারী সংস্থার কাছ থেকে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ কেনার ফলে জটিলতা আরও বাড়ে।
কলকাতা মেট্রোয় এ পর্যন্ত ৬টি বাতানুকূল রেক এসেছে আইসিএফ থেকে। তাদের মধ্যে দু’টি রেক গত মাসে মেরামতির জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনটি রেক চালানো শুরু হয় গত এপ্রিলে। তার মধ্যে একটিতে গত শনিবার দুর্ঘটনা ঘটে। তার পর থেকে আইসিএফের রেক ব্যবহার আপাতত বন্ধ।
মেট্রো কর্তাদের অভিযোগ, অন্য কোনও শহরেই আইসিএফের তৈরি রেক ব্যবহার করা হয় না। সেখানে চলে অ্যালস্টম, বম্বার্ডিয়ার, চিনা সংস্থা ডালিয়ান বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত আর্থমুভার্স লিমিটেডের তৈরি রেক। সেই সব রেক ঘিরে সমস্যার কথা শোনা যায়নি।
সম্প্রতি উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ৩টি করে রেক তৈরির বরাত
পেয়েছে রায়বরেলীর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরি। কিন্তু তাদের মেট্রোর রেক তৈরির অভিজ্ঞতাই নেই। বার বার কলকাতা মেট্রোকেই কেন নয়া প্রযুক্তি পরীক্ষার গিনিপিগ হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে, প্রশ্ন প্রাক্তন মেট্রো কর্তাদের একাংশের। এর পিছনে রেল বোর্ডের বিমাতৃসুলভ আচরণ দেখছেন তাঁরা।
গত ক’বছরে কলকাতা মেট্রোয় যাত্রীসংখ্যা বহু গুণ বাড়লেও পরিকাঠামোর উন্নতি খাতে বরাদ্দ প্রায় কিছুই বাড়ায়নি রেল বোর্ড। এক প্রাক্তন মেট্রো কর্তা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আয়ে পিছিয়ে থাকায় কলকাতা মেট্রোর দাবিদাওয়া রেল বোর্ডে উপেক্ষিত হয়েছে। টাকার কথা বললেই আয় নিয়ে গঞ্জনা শুনতে হয়। সম্প্রতি আয় অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু সমস্যা সুরাহার ইঙ্গিত এখনও মেলেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy