শুরু হয়ে গেল নবম কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব, নন্দনে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আইজাজ় খানের ‘হামিদ’ ছিল উদ্বোধনী ছবি, তাতে হামিদ নামের শিশুটি আর তার মা’র বিপন্ন দিনযাপন। ছবির শিশুশিল্পী তালহা আরশাদ রেশি-ই প্রধান অতিথি, শ্রেষ্ঠ শিশু অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে সে (সঙ্গে তার ছবি)। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিশু কিশোর অকাদেমি আয়োজিত এ-উৎসবের অধিকর্তা অর্পিতা ঘোষ বলছিলেন ‘‘আমরা যে ‘হামিদ’ দিয়ে উৎসব শুরু করলাম, সে-ছবির সবটাই কাশ্মীর। ছোটরা যে সময়টায় বড় হচ্ছে সে সময়টা যাতে তারা চিনতে পারে সে জন্যেই এমন উদ্বোধনী ছবি। এই চেনার সবটা যে মধুর হবে তা তো নয়, কিন্তু এই বয়সেই সেটা চিনতে হয়। আজ সারা ভারতবর্ষের যে ক্ষুব্ধ চেহারা, যে অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা, সেটাই তুলে ধরতে চাইছি এ-রাজ্যের ছোটদের কাছে।’’ ২০১১-য় অকাদেমির সভাপতি হিসাবে অর্পিতার পরিকল্পনা ও উদ্যোগে প্রথম আরম্ভ হয়েছিল ছোটদের ছবির এই আন্তর্জাতিক উৎসব, তিনি চান ‘‘এ-উৎসব যেন এ-রাজ্য ছাপিয়ে সারা দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হয়ে উঠতে পারে। ছোটরা যেন এ-উৎসবে ছবি দেখার ভিতর দিয়ে সামাজিক ভাবে জাগ্রত, এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ববান নাগরিক হয়ে উঠতে পারে।’’ এ বারের উৎসবের থিম: টোয়াইলাইট ফিল্ম। ম্যাজিক, ফ্যান্টাসি, অলৌকিক, ভৌতিক সব মিলেমিশে এক আলো-আঁধারির গা ছমছমে জগৎ। নন্দন চত্বরও সেজে উঠেছে এই থিম-এ, চেনা পরিবেশ বদলে গিয়ে হঠাৎ একদম অচেনা। এই থিম-এই গগনেন্দ্র শিল্পপ্রদর্শশালায় রয়েছে প্রদর্শনীও। দেখানো হচ্ছে ৩৫টি দেশের ২৫০টি ছবি, শহরের ১০টি প্রেক্ষাগৃহে। আছে ক্লাসিকাল ব্লকবাস্টার, রূপকথা, মিউজ়িকাল, কল্পবিজ্ঞান, সাহিত্যভিত্তিক ছবি, অ্যানিমেশন, ওয়ার্ল্ড সিনেমা, ভারতীয় প্যানোরামা। শর্ট ফিল্ম এবং তথ্যচিত্রও। অন্যতম আকর্ষণ স্টিভেন স্পিলবার্গ, তপন সিংহ এবং নাগেশ কুকুনুরের ছোটদের ছবির রেট্রোস্পেকটিভ। ছোটদের বাংলা চলচ্চিত্রের সচিত্র বিবরণ দিয়ে শুভেন্দু দাশমুন্সি এবং দীপান্বিতা রায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হল স্মারক গ্রন্থ ছোটদের ছবির পথের পাঁচালি। রোজই বেরোবে রঙিন বুলেটিন ‘বায়োস্কোপের বাক্স’। রোজই নন্দন চত্বরে ঘুরে ঘুরে ছোটদের সঙ্গে হাত মেলাবে কার্টুনের চরিত্রেরা। খোলা মাঠে, মুক্তমঞ্চে রোজ দেখানো হবে নামকরা সব ক্লাসিক। ২৬ জানুয়ারি, জার্মানির ছবি ‘কাউন্টডাউন টু কেয়স’ দিয়ে শেষ হবে এ বারের উৎসব। যদিও তার আমেজ ছোটদের মনে লেগে থাকবে বছরভর।
অগ্রপথিক
রামমোহন প্রয়াণ শতবর্ষের (১৯৩৩) সময় ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গবেষণার সূত্র ধরে রামমোহনের ব্যক্তিগত জীবন ঘিরে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক রমাপ্রসাদ চন্দ কলম ধরেন মূলত ‘প্রবাসী’তে। তাঁর সেই এত কাল অগ্রন্থিত রচনাগুলি-সহ অন্যত্র প্রকাশিত এ যাবৎ অসঙ্কলিত রামমোহন-বিষয়ক প্রবন্ধগুলি মলাটবদ্ধ হল রাজা রামমোহন রায় (সম্পা. অর্ণব নাগ, পত্রলেখা) বইয়ে। আজ ২০ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে ৬টায় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজে এই বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। উপস্থিত থাকবেন বারিদবরণ ঘোষ, রজত সান্যাল ও সৌমিত্র শ্রীমানী। থাকছে আলোচনাও। অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হবে শিবনাথ শাস্ত্রী-র ধর্মজীবন (প্রথম খণ্ড)-এর পুনর্মুদ্রণও। ২৪ জানুয়ারি সন্ধে ৬টায় প্রকাশিত হবে ব্রহ্মসংগীত-এর সপ্তদশ সংস্করণ, যার পরিশিষ্টে রামমোহন ও সমসাময়িক ব্যক্তিদের রচিত ব্রহ্মসঙ্গীতগুলিও সংযুক্ত হচ্ছে। এটির ভূমিকা লিখেছেন গৌতম নিয়োগী। প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রমিতা মল্লিক ও অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুনীলের কৃত্তিবাস
‘আমরা নূতন যৌবনেরই দূত’— ঘোষণা করে ১৯৫৩-য় এসেছিল অশ্বমেধের ঘোড়া, ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকা। তিন সম্পাদক শুরু করেছিলেন। এক এবং অদ্বিতীয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দ বাগচী ও দীপক মজুমদার। পরে সুনীল সন্তানস্নেহে এ পত্রিকা প্রকাশ করে চলেন। বাংলা কবিতার উজ্জ্বল পঞ্চাশের দশকের সব কবিই এ পত্রিকার পাতাগুলি কালো অক্ষর বর্ষণে সিক্ত করেছেন। সেই ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকা সম্মানিত হল বাংলা আকাদেমি আয়োজিত লিটল ম্যাগাজিন মেলায়। সম্মানিত হতে ৬৭ বছর লেগে গেল। ‘কৃত্তিবাস’-কে কেন্দ্র করেই তো স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় নাম্নী এক তরুণীর সঙ্গে সুনীলের প্রণয় পরিণয়। বর্তমান সম্পাদক স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার ও বাংলা আকাদেমির এই সম্মানে খুব ভাল লাগছে। এক সময় সুনীল-শরৎবাবু-সমরেন্দ্র-সন্দীপনরা মিলে হইহই করে পত্রিকা চালিয়েছেন। মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। ভাস্করের (দত্ত) প্ররোচনায় আবার শুরুও হয়। তখন প্রদীপচন্দ্র বসু, রূপক চক্রবর্তী প্রমুখ সুনীলকে সহায়তা করতেন, পরে শ্রীজাত-অংশুমান।’’ ইতিহাসেরও ইতিহাস ধরা পত্রিকায়। শঙ্খ ঘোষের ‘দিনগুলি রাতগুলি’ অথবা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিতর্কিত ‘সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয়’— প্রথম প্রকাশিত এখানে। সুনীল এখনও তারুণ্যের প্রতীক। এবং চির-তরুণ সুনীলের কৃত্তিবাস।
দামিনীর গান
‘‘বলতে ইচ্ছে করে, ‘মেঘ বলেছে যাব যাব, রাত বলেছে যাই’ গানটি যেন ‘চতুরঙ্গ’রই সমাপ্তিগান, যেন দামিনীর কথা ওতপ্রোত জড়ানো আছে গানটির মধ্যে।’’ লিখেছেন শঙ্খ ঘোষ, তাঁর ‘দামিনীর গান’ লেখায়। আর দামিনীর গান বইটি সম্পর্কে তাঁর কথা, ‘‘এ-বইটিতে যে-লেখাগুলি আছে, তার প্রধান ভর রবীন্দ্রনাথের গান, কোনো কোনো গান।’’ এ বার দামিনীর গান বই ও নিবন্ধের অন্তর্নিহিত নাটক উস্কে দিয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষায়তন ‘গান্ধার’কে। প্রতিষ্ঠাতা কাকলি রায়ের স্মরণে তাঁর প্রয়াণের পর তৃতীয় অনুষ্ঠানে তাঁরা গাইবেন সেই সব গান। সঙ্গে থাকবে অন্যান্য সমার্থক গানও— যেখানে দামিনীর গান-এর নিহিত ছায়াই সক্রিয়। উপন্যাস থেকে গানে, গান থেকে গাওয়ায়, গাওয়া থেকে উপন্যাসে, যেন একটা বৃত্তের আলপনা। আলপনা মুছে গেলেও বৃত্তের কল্পনাটা থেকে যায়। পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘দামিনীর গান’, ৩১ জানুয়ারি সন্ধে সাড়ে ৬টায়, রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে।
নাট্য বিদ্যালয়
থিয়েটারের ক্ষেত্রে স্পেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্টুডিয়ো থিয়েটার হল একটি ইন্টিমেট স্পেসে নাট্য গবেষণা কেন্দ্র। যেখানে থিয়েটার নিয়ে হাতে-কলমে গবেষণামূলক কাজ হয়ে থাকে। এমনকি যেখানে দর্শক এবং অভিনেতাদের মধ্যে খুব একটা দূরত্ব থাকে না। একমাত্র স্টুডিয়ো থিয়েটারই এই স্পেসটা দিতে পারে। গোবরডাঙা নাট্য বিদ্যালয় সে রকমই একটি থিয়েটার স্পেস। যেখানে থিয়েটার এবং তার আঙ্গিক নিয়ে নানা রকম গবেষণামূলক কাজকর্ম হবে। এক জন নির্দেশক তার নিজের মতো করে সৃজনশীল ভাবনা চিন্তা করতে পারবেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম স্টুডিয়ো থিয়েটারের অনুমোদন পেয়েছে গোবরডাঙা শিল্পায়ন। অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। স্টুডিয়ো থিয়েটারের ভাবনায় গোবরডাঙায় গড়ে উঠেছে নাট্য বিদ্যালয়। গোবরডাঙা স্টুডিয়ো থিয়েটারের কর্ণধার আশিস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমাদের এই থিয়েটার স্পেস নিয়ে নানা পরিকল্পনা আছে ভবিষ্যতে। স্টুডিয়ো থিয়েটারকে কেন্দ্র করে একটা পঠন-পাঠন চালু হচ্ছে। এ ছাড়া একটা থিয়েটার আর্কাইভ তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে থিয়েটারের যাবতীয় কিছু সংগ্রহে রাখা থাকবে।’’ নাট্য বিদ্যালয়ের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর থিয়েটার স্টাডিজ় এই উদ্যোগে যুক্ত ।
ইতিহাস উৎসব
ইতিহাসের নানাবিধ উপাদান নিয়ে আয়োজিত হয়েছে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের পঞ্চদশ আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব। বড়িশা সাবর্ণ সংগ্রহশালা, বড়বাড়িতে ২-৫ ফেব্রুয়ারি, সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। এ বছরের থিম দেশ ফ্রান্স। ফরাসি সরকারের সহায়তায় থাকছে ভারত-ফ্রান্স সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী। বিশেষ প্রদর্শনের মধ্যে রয়েছে কালীঘাটের ইতিহাস এবং মা সারদাদেবী। বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য থেকে পাওয়া উপহারের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে বহু প্রাচীন ঘটির সংগ্রহ। রেট্রোস্পেক্টিভ বিভাগে সঙ্গীতশিল্পী শ্যামল মিত্র এবং জন্মশতবর্ষে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে থাকছে প্রদর্শনী। রয়েছে কলকাতা নিয়ে একটি আলোচনা। ৪ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবমঞ্চে প্রকাশ পাবে হাতে লেখা পত্রিকা ‘সপ্তর্ষি’।
একশোয় বারো
সিনেমা পরিচালনা ও লেখালিখির পাশাপাশি সত্যজিতের শিল্পীসত্তাটিও ছিল আন্তর্জাতিক মানের। বইপত্রের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ইলাস্ট্রেশন, ক্যালিগ্রাফি এমনকি নিজের সিনেমার জন্য আঁকা পোস্টার, টাইটেল কার্ড, লোগো ইত্যাদি ডিজ়াইনও তাঁর সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিল। এ বার তাঁর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে তাঁরই ডিজ়াইন করা ফিল্ম পোস্টার, বুকলেট, ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ, বইয়ের প্রচ্ছদ, ডাকটিকিট আরও অনেক কিছু নিয়ে বিশেষ জন্মশতবর্ষ স্মারক ‘একশোয় বারো’ শীর্ষক এক দেওয়াল ক্যালেন্ডার ২২ জানুয়ারি, বিকেল ৪টেয়, আইসিসিআরে সন্দীপ রায়ের উপস্থিতিতে প্রকাশ করবে দ্য ড্রিমার্স। ক্যালেন্ডারটিতে ‘সন্দেশ’ পত্রিকার প্রচ্ছদ, ফেলুদার বইয়ের প্রচ্ছদ যেমন থাকছে, ভারতীয় ডাক বিভাগের জন্য করা রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ডাকটিকিটের ছবিও থাকছে। থাকছে বুকলেটের প্রচ্ছদও। সব মিলিয়ে সত্যজিৎ রায়ের একশো বছরে বারোটি বিশেষ ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ক্যালেন্ডার। ভাবনায় সুদীপ্ত চন্দ। উপরে তারই এক পৃষ্ঠা।
পরিবেশ প্রসঙ্গে
প্রায় সাড়ে ছ’কোটি বছর আগের পঞ্চম গণবিলুপ্তির পর আগামী ষষ্ঠ গণবিলুপ্তিতে প্রথম বিলুপ্ত হবে মানুষ নামক প্রজাতিটি, এমনই মনে করেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী ও মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে গেলে উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন বন্ধ করা জরুরি তা জেনেও বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে কর্পোরেট সেক্টর কিংবা রাজনীতিকেরা নির্বিবেকী শক্তির আস্ফালন ঘটিয়ে চলেছে অনবরত। এ নিয়ে তাই নিরন্তর প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন, সচেতনতা বৃদ্ধির সেই চেষ্টাতেই ‘পরিকথা’-র (সম্পা: দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়) এ বারের বিষয়ক্রম: ‘প্রসঙ্গ: ভবিষ্যৎ পৃথিবী— এক বিপন্ন বিস্ময়’। সমর বাগচী সৌরীন ভট্টাচার্য কল্যাণ রুদ্র আশীষ লাহিড়ী অভ্র ঘোষ তপোধীর ভট্টাচার্য সুগত সিংহ প্রমুখের রচনায় ঋদ্ধ এ-পত্র সম্পর্কে সম্পাদক জানিয়েছেন, ‘‘এ সংখ্যায় যাঁরা লিখেছেন সকলেই বিষয় বিশেষজ্ঞ। তাঁদের তথ্যসমৃদ্ধ বিশ্লেষণ পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমনই বিশ্বাস।’’
শঙ্কু-সন্দেশ
এ বারের সন্দেশ (সম্পা: সন্দীপ রায়) পত্রিকার পাতা ওল্টালেই ভ্রমণের স্বাদ— গিরিডি থেকে ব্রাজিল অবধি প্রোফেসর শঙ্কু-র অ্যাডভেঞ্চারের হাত ধরে। স্বয়ং সম্পাদকই তো সত্যজিতের প্রোফেসর শঙ্কু-র ‘নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো’ কাহিনিটি নিয়ে ছবি করেছেন, সে-ছবি এখন শীতের কলকাতায় রীতিমতো উত্তাপ। ছবিটির গিরিডি ও ব্রাজিল পর্বের নানান দৃশ্য ও শুটিঙের স্থিরচিত্র দিয়ে ‘ক্যাপশন স্টোরি’ সাজিয়েছেন সন্দীপ। একটি ছবিতে শঙ্কু আর বিধুশেখর (শঙ্কুর তৈরি রোবট— শুদ্ধ সাধু বাংলায় কথা বলে যে) সত্যজিতের আঁকা ইলাস্ট্রেশন মনে পড়িয়ে দেবে। ছবিগুলি দেখতে-দেখতে সত্যজিতের শঙ্কুকে ঘিরে আমাদের নস্টালজিয়া জেগে ওঠে যেন। সঙ্গে আছে পরিচালক হিসেবে সন্দীপ রায়ের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, যেখানে তিনি ছবিটি তৈরির গল্প বলেছেন জমিয়ে। ব্রাজিল পর্ব প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘গল্পে যে বর্ণনা আছে সেটা আমরা পেয়েছি। তবে বাবা যে বলেছিলেন নানা রকম পাখি— সেটা কিন্তু নেই। সেটা অনেক দূরে।’’
প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
তখন সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হয়েছে বাংলাদেশ, তত দিনে বার কয়েক যাওয়া হয়ে গিয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের, তবু ১৯৭২-এর জানুয়ারিতে ফের গিয়েছেন, আর সে বারের ভ্রমণে সোৎসাহে বলেই ফেলেছিলেন ‘‘আমি আর কলকাতায় ফিরব না। বাংলাভাষী একটা রাষ্ট্র হল... আমি এখানকারই নাগরিকত্ব নেব।’’ এ বারের জলঘড়ি পত্রিকার (সংখ্যা-সম্পাদক: অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী) ক্রোড়পত্র: ‘প্রসঙ্গ বাংলাদেশ’। এতে যেমন আছে তরুণ সান্যাল শঙ্খ ঘোষ প্রমুখের স্মৃতি, তেমনই দেশ-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে লিখেছেন বিশিষ্ট জনেরা, পরিশিষ্টে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। পবিত্র সরকারের ‘ঢাকার বাংলা একাডেমির ব্যাকরণ: ক্রিয়াকর্ম’ নিয়ে রচনা, বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা তানভীর মোকাম্মেলের সব্যসাচী দেব-কৃত সাক্ষাৎকার, নারী আন্দোলন নিয়ে মালেকা বেগম ও নাট্যব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীন-কে নিয়ে দেবাশিস মজুমদারের লেখা, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ ও আকাশবাণী’ নিয়ে লিখেছেন ভবেশ দাশ। বিভিন্ন দিক থেকে নানান পরিসরের আলোচনাদি— বাংলাদেশ সম্পর্কে পরিব্যাপ্ত একটি সংখ্যা।
কুড়মালিতে
এ বার কুড়মালি ভাষাতেও অনূদিত হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি। কবিগুরুর নোবেলজয়ী ওই কাব্যগ্রন্থের ১০৩টি কবিতা কুড়মালিতে অনুবাদ করেছেন অভিমন্যু মাহাতো। এই কাজে তাঁর সময় লেগেছে চার বছর। গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন শঙ্খ ঘোষ। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার পাশাপাশি ভারতীয় নানা ভাষাতেও গীতাঞ্জলি অনূদিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, ছত্তীসগঢ়, বিহার-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী প্রায় চার কোটি কুড়মি (মাহাতো) কুড়মালি ভাষায় কথা বলেন। এ বার তাঁরাও মাতৃভাষায় গীতাঞ্জলির পাঠ নিতে পারবেন। অভিমন্যুর কুড়মালি ভাষায় রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। নাম ‘জহার’। বাংলা ভাষাতেও কবিতা চর্চা করেন অভিমন্যু। বাংলায় রচিত তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। তার মধ্যে ‘মাটি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ‘যুব সাহিত্য অকাদেমি’ পুরস্কার পেয়েছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
লাটভবন
‘এ যেন কলকাতার উপকণ্ঠে একটুকরো আগরা’, বলছিলেন পুলিশকর্তা সৌমেন মিত্র। ব্যারাকপুরে ট্রেনিং নিতে গিয়ে আগ্রহ জাগে এখানকার লোটাস ফাউন্টেন নিয়ে। পরে ইতিহাস অনুসন্ধান করে জানা যায় মার্কুইস হেস্টিংসের উদ্যোগে আগরা ফোর্ট থেকে পাথরের এই ফোয়ারা এনে স্থাপন করা হয় ব্যারাকপুরে লাটসাহেবের বাড়িতে। অনুসন্ধানের সেই ছিল শুরু। তার পর বিস্তৃত কাজ। এখানে একটি সান-ডায়াল স্থাপন করা হয় ১৮৯৫ সালে। আজকের চিড়িয়ামোড় নামের সঙ্গেই লুকিয়ে রয়েছে এখানকার প্রথম চিড়িয়াখানার কাহিনি। যে সংগ্রহশালার দায়িত্বে ছিলেন ফ্রান্সিস বুকানন। সম্প্রতি এখানকার সৌধ, তোরণ, বাগান সবই সংরক্ষণ করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে একটি সংগ্রহশালা। এই অনুসন্ধানের তথ্য এবং ছবি নিয়েই তৈরি হয়েছে একটি বই আন্ডার দ্য ব্যানিয়ন ট্রি: দ্য ফরগটন স্টোরি অব ব্যারাকপুর পার্ক। বইটির সহলেখক হিসেবে সৌমেনবাবু সঙ্গে পেয়েছেন স্কটিশ চার্চ কলেজের ইংরেজির অধ্যাপিকা মনাবি মিত্রকে। সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিল সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ পেল বইটি। সঙ্গে ছিল বইকেন্দ্রিক আলোচনা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত শোনালেন এখানকার সমৃদ্ধ ইতিহাস। সম্প্রতি তাঁর লেখায় প্রকাশ পেয়েছে রাজভবনগুলি নিয়ে একটি বই। পরে দেবাঞ্জন চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় লাটবাগানের সচিত্র ইতিহাস তুলে ধরেন মনাবি এবং সৌমেন মিত্র। ‘‘কলকাতা থেকে অপসারিত ব্রিটিশ মূর্তির ১৩টি রয়েছে এখানে’’, বলছিলেন মনাবি, ‘‘তার মধ্যে একটি লর্ড ক্যানিং-এর, একটু খেয়াল করলে মনে হবে তিনি যেন তাকিয়ে রয়েছেন তাঁর স্ত্রীর সমাধিক্ষেত্রের দিকে।’’
অন্য অন্বেষণ
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ছবি আঁকছেন শিল্পী গৌতম চৌধুরী। তাঁর ছবিতে কোনও আদর্শের আবরণ চাপানো উচিত হবে না, খুব সরাসরি কথা বলে ড্রয়িং-পেন্টিং, এবং তা যেন একাকিত্ব আর নৈঃশব্দ্যে নিমজ্জিত। তিনি মানব-অবয়ব আঁকেন, তা যেন শূন্য থেকে আবার ঘুরেফিরে সেই শূন্যেই মিলিয়ে যায়। অধিকাংশ ছবিতেই থাকে একটি মানব-আকৃতি— মাথা বা শরীর বা দুটোই, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছাড়াও হতে পারে। তাঁর ছবি সৃজনের প্রক্রিয়াতেও যথাযথ মাধ্যমের মতোই গুরুত্ব পায় ভাষার খোঁজও। এ সব কিছুই এ বার ধরা দিয়েছে ‘এক্লিপসড’ নামে এক প্রদর্শনীতে। কোনও বিষয়কে নতুন করে বুঝতে হলে যে ‘আনএক্লিপসিং’ বা আলোয় ফেরার প্রক্রিয়া খুব জরুরি, বোঝায় ছবিগুলি। ১৮ জানুয়ারি এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়েছে সাউথ সিটি মলের বিপরীতে ‘চারুবাসনা’ গ্যালারিতে। চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি অবধি। সোমবার ও ছুটির দিন বাদে রোজ দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা।
দাদাজির জন্মদিন
শ্রীঅরবিন্দের ভাবশিষ্য ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র, দাদাজি তথা দিলীপকুমার রায়ের ১২৩তম জন্মদিন ২২ জানুয়ারি। দিলীপকুমারের কন্যা-শিষ্যা, মা ইন্দিরা দেবীর জন্মশতবর্ষ এ বার। সুরকাব্য ট্রাস্ট এ বারও আইসিসিআর-এর সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে সন্ধে ৬টায় গানে-কথনে ওই দিনটি পালন করছে। স্মারক ভাষণ দেবেন সুপ্রিয় ভট্টাচার্য। গানে পল্লবী কোনার ও মন্দিরা লাহিড়ী। একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে দাদাজির উপরে। উপস্থাপনায় বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মা ইন্দিরা দেবীর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট অব কালচার।
ছোটদের জন্য
এক স্কুলবালিকা ও তার দিদিমা। দু’জনের খেলা হাসি বন্ধুত্বে সুখেভরা, মধুঝরা দিনগুলো। এমন সময় তাল কাটল। দিদিমাকে কেমন অন্য রকম লাগতে শুরু করল ছোট্ট মেয়েটির। সকলে দিদিমাকে ভুল বুঝছে, বকছে। পরে জানা গেল, বয়স্ক মানুষটির অ্যালঝাইমার্স হয়েছে। তাঁর মস্তিষ্কের কোষগুলি মারা যাচ্ছে। চিকিৎসার সঙ্গে দরকার ভালবাসা আর যত্ন। এর পরই ছোট্ট মেয়েটি দিদিমার ভার নিল। অসুখের সঙ্গে লড়াই করে দিদিমাকে ফিরিয়ে আনল জীবনে। বৈ-চিত্র প্রকাশনের ‘তান্নার দিদিমা’-য় মর্মস্পর্শী এই কাহিনি ছোটদের উপযোগী করে লিখেছেন ইন্দ্রাণী বড়ুয়া। পাতায় পাতায় রঙিন ছবি এঁকে বইটি চিত্তাকর্ষক করেছেন অমৃতা সেন। ছোট নাতি-নাতনিরা যদি দাদু-ঠাম্মাদের পাশে থাকে, তবে অসুখের বাড়বাড়ন্ত অনেকটাই আটকে দেওয়া যায়। সেই পাশে থাকার খুঁটিনাটিগুলোই সুস্বাদু গল্পের আকারে গ্রন্থে পরিবেশিত।
অতিপ্রাকৃত
ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক রাস্কিন বন্ড ( জন্ম ১৯৩৪)-এর শৈশব কেটেছে শৈল শহর মুসৌরিতে আরণ্যক প্রকৃতির কোল ঘেঁষে। শৈশব থেকে প্রকৃতির পাঠ নেওয়ার দৃষ্টি তাঁর ছিল, অসংখ্য গল্পের মধ্যে সেই দৃষ্টি প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়িয়েছে। মূলত ছোটদের জন্য লিখেই তাঁর প্রতিষ্ঠা— ছোটরাই জড়িয়ে আছে তাঁর কাহিনির গতিপ্রকৃতির সঙ্গে। রাস্কিন বন্ডের লেখকসত্তা খুঁজে নিয়েছে প্রকৃতির মধ্যে আধিভৌতিক-আধিদৈবিক অস্তিত্বকে। তাঁর ভৌতিক, অলৌকিক গল্পগুলি সাধারণত আমাদের চেনা ছকের ভৌতিক কাহিনির পরিসীমাকে ছাড়িয়ে যায়। এত দিন বাংলা ভাষায় তাঁর অনুমোদিত অনুবাদ বই প্রকাশিত হয়নি। এই প্রথম বাংলা অনুবাদে রাস্কিন বন্ডের ভৌতিক ও অলৌকিক কাহিনি সঙ্কলন ‘ভয় সমগ্র’ নামে প্রকাশ করল বুক ফার্ম। অনুবাদ করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক পার্থ প্রতিম দাস।
ইহুদিদের নিয়ে
বিশ শতকের চল্লিশের দশকে কলকাতায় ইহুদি জনসংখ্যা চার হাজারে পৌঁছেছিল। ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের অত্যাচারিত ইহুদিদের আশ্রয় দিয়েছিল এই মহানগর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও ইজ়রায়েল গঠিত হওয়ার পর আস্তে আস্তে এই জনসংখ্যা কমতে থাকে। কলকাতার ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতাদের অধিকাংশই নারকেলডাঙার সমাধিক্ষেত্রে শেষ শয্যায় শয়ান (উপরের ছবিতে তারই একটি), আর তাঁদের উত্তরপুরুষেরা ছড়িয়ে পড়েছেন বিশ্ব জুড়ে। ইতিহাসের এই বর্ণময় প্রেক্ষিতে শুভা দাস মল্লিক কলকাতার বাগদাদি ইহুদিদের নিয়ে তৈরি করেছেন তাঁর ৬৯ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘ডোয়েলিং ইন ট্র্যাভেলিং’। ২০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় এটি দেখানো হবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সম্মেলন কক্ষে। পরে আলোচনা পরিচালকের সঙ্গে ছবির প্রধান চরিত্রদের। থাকবেন জায়েল সিলিমান ও ফ্লাওয়ার সিলিমান, ইয়ান জ়্যাকেরিয়া। সঞ্চালনায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক নভরস জাত আফ্রিদি।
বাঙালি সম্মেলন
পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালির কৃতিকে তুলে ধরা, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান ও শিকড় সন্ধান, সেই সঙ্গে পারস্পরিক মত বিনিময়ের ক্ষেত্র তৈরি করার লক্ষ্যে ‘বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’ যাত্রা শুরু করেছিল গত বছর ভাষা দিবসে। আন্তর্জালের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল বাঙালির এই নিজস্ব মঞ্চ। এঁদেরই আয়োজনে ২৩-২৫ জানুয়ারি সল্টলেকের পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (ইজ়েডসিসি) বসছে প্রথম আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলন। অংশ নেবেন দুই বাংলার বাঙালিদের সঙ্গে আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশের প্রবাসী বাঙালিরা। ২৩ জানুয়ারি সকাল ১১টায় উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ। প্রতি দিন ১১-৫টা আলোচনা, সন্ধে সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
গরম ভাত অথবা...
‘‘ইচ্ছে করে রোজের কাস্টমারদের একটু ভাল-মন্দ রান্না করে খাওয়াই। কিন্তু এ বছর বড়ই কঠিন। শীতকাল চলছে। তবু তরকারির ডাল, ফুলকপির পকোড়া খাওয়াতেই পারছি না।’’ আক্ষেপ করলেন টালিগঞ্জ থানার উল্টো দিকের ভাতের হোটেলের কিয়স্কের মালিক অরুণবাবু। আর এক অরুণ একশো বছর বয়সি পাইস হোটেল তরুণ নিকেতনের মালিক। অসহায় ভাবে বললেন, ‘‘আমিষ নিরামিষ কত চাটনি করতাম। সব গুটিয়ে এনেছি। লোক আসছে না খেতে। সকালের রান্না রাতেও শেষ হচ্ছে না। বারো-চোদ্দো রকম মাছ করতাম। সব কমাচ্ছি।’’ রবীন্দ্রসদনের আশপাশের দোকানিদের শুকনো মুখ। ‘‘মাছ বলতে পাতি রুই-কাতলা। পটল, ঝিঙে, ঢেঁড়সের বালাই নেই। একশোর নীচে কিছু নেই যে।’’ বালিগঞ্জের বড় ব্র্যান্ডেড রেস্তরাঁর কর্তাব্যক্তিরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘‘বাজার খারাপ। এত দামের ভেজ আইটেম খাবে কে? বাঙালিরা পনির তেমন পছন্দ করে না।’’ গলি থেকে রাজপথের দক্ষিণী দোকানেরও একই হাল। এঁরা সিংহভাগই নিরামিষাশী। পেঁয়াজের দাম অল্প কমেছে। কিন্তু দক্ষিণী খানায় পেঁয়াজের যা আধিক্য, তাতে সুরাহা কিছু হয়নি। ইডলি-বড়া-দোসার দাম লাফিয়ে বেড়েছে। এসএন ব্যানার্জি রোড ও সূর্য সেন স্ট্রিটের সারিবাঁধা ভাতের হোটেলগুলোও চিন্তায় মলিন। সমরেশ মজুমদার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘পেঁয়াজ বিনা তো আর আমাদের জীবন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে না?’’
শব্দসৈনিক
১৯৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম হিসেবে স্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল আকাশবাণী, তখন প্রণবেশ সেনের (১৯৩৫-২০০০) ‘সংবাদ পরিক্রমা’ হয়ে উঠেছিল মুক্তিসংগ্রামীদের প্রেরণা। প্রণবেশবাবু নিজেও মনে করতেন, তিনি যেন এক ‘শব্দ সৈনিক’। প্রণবেশ সেন স্মারক সমিতি এ বারও আয়োজন করেছে তাঁর নামাঙ্কিত ১৯তম স্মারক বক্তৃতা, দেবেন তরুণ মজুমদার, বিষয়: ‘ছায়াছবির গতিপথ: চিত্রসাংবাদিকতা’। স্বাধীনতাপূর্ব সেই নির্বাক-সবাক যুগ থেকে কী ভাবে চলচ্চিত্রের প্রসারে বিজ্ঞাপন বা সংবাদপত্র ভূমিকা নিত, আস্তে আস্তে তৈরি হল সেই চিত্রসাংবাদিকতা যেখানে ছবির মূল্যমান বিচারও শুরু হল, আজকের পরিস্থিতিতে সে সব উদ্যোগের চেহারাই বা কী দাঁড়িয়েছে— এ সব নিয়েই লিখিত ভাষণ পাঠ করবেন তরুণবাবু। ২২ জানুয়ারি রোটারি সদনে সন্ধে সাড়ে ৬টায়। অন্য দিকে ভেনেজ়ুয়েলার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আইজ়েনস্টাইন সিনে ক্লাব ও ফ্রেন্ডস অব লাতিন আমেরিকা-ইন্ডিয়া’র উদ্যোগে ভেনেজ়ুয়েলার ছবির উৎসব গোর্কি সদনে ২১-২৫ জানুয়ারি।
গানের ভুবন
‘‘আমাদের সংগীত একের গান, একলার গান— কিন্তু তাহা কোণের এক নহে, তাহা বিশ্বব্যাপী এক’’, লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। এ বার বাংলা গানে রবীন্দ্রনাথের অবদান নিয়ে সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের বাংলা বিভাগের আয়োজনে এক দিনের আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রে বলবেন বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ। অপর বক্তা ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্লুমিংটনের অধ্যাপিকা রেবেকা ম্যানরিং, তাঁর বিষয় ‘রূপরামের ধর্মমঙ্গল: অনুবাদের প্রেক্ষিত’। ২১ জানুয়ারি দুপুর ১টায় কলেজের রোহিংটন কাপাডিয়া সভাকক্ষে।
এই শহর এই সময়
৩০ পৌষ, সংক্রান্তির এক দিন আগে পর্যন্ত তিলোত্তমা নিবাসীরা জলকে পাথর জ্ঞানেই ভয় পেতেন। মকর সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে স্বয়ং সূর্যদেব উত্তরায়ণে গেলেই, ‘সোনার কেল্লা’-র কামুর সেই ডায়ালগ বলতে হল, ‘ডক্টর হাজরা ভ্যানিশ!’ মানে শীত গায়েব। হেদুয়া, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, নিউ মার্কেট থেকে কেনা ভুটিয়ার সোয়েটারের কী হবে ভেবে শহরবাসী দুঃখিত। শহরজুড়ে পুণ্যার্থীদের ঢল। বিশেষত কালীঘাটে মাতৃপ্রতিমা দর্শনের হুড়োহুড়ি। খুব আশ্চর্য ভাবে শহর থেকে অদৃশ্য উলের গোলার দোকানগুলো। আলিপুর চিড়িয়াখানার আশপাশ পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখর। শিশুদের কলকলে মুখরিত ত্রিধারা সম্মিলনীর প্রাঙ্গণ। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের আবেগপূর্ণ খুশির গলা, ‘শিশুদের আত্মবিকাশের আয়োজন করতে পেরে বড় তৃপ্ত’। তবে করুণ ছবি বইপাড়ায়। হাতে গোনা দু’এক জন বাদে প্রায় সব প্রকাশক বইমেলার প্রস্তুতির চাপ কমিয়ে দিয়েছেন। বিপদ বাড়ছে গ্যালিফ স্ট্রিটেও। মানুষ প্রয়োজন মেটাবে না কি ‘শখ পুষবে’? বিয়ে পৈতে অন্নপ্রাশনের ধুম লেগেছে। হয়তো আবার ‘কাশ্মীরি’ ঘণ্টা বাজিয়ে শীত ফিরবে— আশায় শহর!
পুষ্যির টানে রোজই আসেন পুরনো পাড়ায়
ভোর ছ’টা। কলকাতা কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে। হিম কেটে ছুটছে দু’একখানা গাড়ি। এমন সময় পাড়ার অতিশয় গ্রাম্ভারি মেজাজের বেড়ালটা ঝুপ করে কার্নিস থেকে নেমে রাস্তার ধারে বসল। চোখ গলির দিকে রেখে ডেকে উঠল, মেউ মেউ। যেন জিজ্ঞেস করছে, ‘কই? কই?’ একটু পরেই কুয়াশার মধ্যে থেকে দেখা দিলেন এক গৃহিণী। দু’হাতে দুটো ঝোলা। বেড়াল তিরবেগে ছুটল তাঁর দিকে। আহ্লাদে গা ঘেঁষে কী সব বলতে বলতে আসতে লাগল। গলির মাঝপথে এসে থামলেন গিন্নি। ঝোলা থেকে বার হল টিফিন ক্যারিয়ার। বেড়ালের ছটফট শুরু। ‘দাঁড়া, দাঁড়া’ বলে তিনি রাস্তার এক ধারে সরে কাগজ বিছোলেন। তাতে পরম মমতায় ঢাললেন সাদা ভাত। পড়ল এইসা বড় বড় দু’খান মাছের টুকরো। মেখে দিয়ে বললেন, খা দেখি। বেড়াল হাপুসহাপুস করে তৃপ্তিতে খেল। গিন্নি তখন সঙ্গে আনা বোতলে পাশের কল থেকে জল ভরছেন। খেয়েদেয়ে বেড়াল যখন থাবা চাটছে, তখন তিনি সমস্ত উচ্ছিষ্ট, এঁটো পাত সঙ্গের কাগজে ভাল করে মুড়ে নিলেন। কোনও ডাস্টবিন দেখে ওই কাগজ ফেলবেন। তিনি ওই খাওয়ার জায়গাও জল দিয়ে ধুয়ে ঝকঝকে করে দিলেন। বেড়ালের গোঁফ ঝেড়ে মুখ মুছিয়ে, ঘুম পাড়িয়ে তিনি হাঁটা দিলেন।
গীতা সেন এক সময় বাঁশদ্রোণীর গ্রিন ভিউ এলাকায় ভাড়া থাকতেন, এখন এক কিলোমিটার দূরে ফ্ল্যাট করে চলে গিয়েছেন। পোষ্য পুঁচকুনির সে ফ্ল্যাট পছন্দ হয়নি। জেদি মেয়ে পুরনো পাড়া ছাড়েনি। তা বলে কি তাকে না খাইয়ে থাকতে পারেন মানুষ-মা? ‘‘যেখানেই খাওয়াই পরিষ্কার করে দিই। বাড়ির কুকুর-বেড়ালদের পরিচ্ছন্ন থাকা, শৌচালয় ব্যবহার শিখিয়েছি। ওরা কেউ ময়লা করে না। আর ওদের খাওয়াতে গিয়ে আমিও রাস্তা নোংরা করি না। পরিবেশ নষ্ট করি না।’’ শহর যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন গীতা সেন নতুন সকাল বিছিয়ে রাখেন কলকাতার শেষ সীমার এক গলিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy