Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কলকাতার কড়চা: আর এক অযান্ত্রিক

ফেলে আসা দিনের এমত অসাধারণ কিছু যন্ত্রের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিতেই এই আয়োজন। প্রদর্শনীটি চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ৬টা।  

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

যন্ত্রের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে কত স্মৃতি! রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ প্রথম রেকর্ডিং হয় ১৯৩২ সালের এপ্রিল মাসে। সে সময় এ কাজে ব্যবহৃত জর্জ নিউম্যান ডিস্ক রেকর্ডিং মেশিনটি কলকাতার স্টুডিয়োর জন্য আনা হয়েছিল সুদূর জার্মানি থেকে। ডিস্কের এক পিঠে রয়েছে, ‘আমি যখন বাবার মতন হব’, অন্য পিঠে ‘তবু মনে রেখ।’ পরে এই মেশিনটি কলকাতার বিড়লা মিউজিয়ামে দান করে দেন হিন্দুস্তান মিউজিক্যাল প্রোডাক্টস লিমিটেড (সঙ্গের ছবিতে)। এই যন্ত্রেই ধরা পড়েছিল অতুলপ্রসাদ এবং শচীন দেব বর্মণের গান। এই সঙ্গে কলকাতার বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহালয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত হয়েছে এমনই সব ইতিহাস সমৃদ্ধ যন্ত্র। যার মধ্যে রয়েছে এইচএমভি-র গ্রামোফোন, ব্রিটিশ সার্ভেয়ারদের ব্যবহৃত থিয়োডোলাইট, রোটারি ডুপ্লিকেটিং মেশিন, সুইডেনে ১৯৬১ সালে তৈরি মেকানিক্যাল ক্যালকুলেটর, বস্টনে তৈরি রেডিয়ো, দেশে তৈরি পুরনো টেলিফোন, বেলের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক টেলিফোন ইত্যাদিও। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিড়লা মিউজিয়ামে শুরু হয়েছে এমত স্মৃতিবিজড়িত যন্ত্রগুলি নিয়ে একটি প্রদর্শনী ‘রেয়ার আর্টিফ্যাক্টস’ শীর্ষকে। এই প্রদর্শনীর সূচনা করেন জহর সরকার এবং জয়ন্ত সেনগুপ্ত। ‘আজ আমাদের সামনে যা রয়েছে সেগুলিই এক দিন হয়ে যাবে কিউরিয়ো’, বলেন জহরবাবু, ‘অতএব এগুলির সংরক্ষণ খুব জরুরি।’ দু’চোখে দেখা একটি ছবি দ্বিমাত্রিক হলেও, সেই একই ছবি পৃথক ভাবে দু’চোখে দেখলে আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা যায় সেই ছবির ত্রিমাত্রিক রূপ। যে যন্ত্রের সাহায্যে এটি সম্ভব তাঁকে বলে ভিউ মাস্টার (এটি অবশ্য ব্যবসায়িক নাম) অথবা স্টিরিয়োস্কোপিক স্লাইড ভিউয়ার। এই নিরীহ যন্ত্রটি এক সময় বিনোদনে নিজের জায়গা বেশ পোক্ত করে নিয়েছিল। এতে দেখা যেত কমিক বা নয়নমনোহর দৃশ্য। সময়ের স্রোতে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গিয়েছে এটি। প্যারিস এবং পোর্টল্যান্ড-এ তৈরি এমত দু’টি বিরল যন্ত্রে চোখ দিয়ে ত্রিমাত্রিক ছবির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা। ‘টাইপরাইটারের আবিষ্কার তৎকালীন অভিজাত সমাজে বেশ বড় মাপের একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল’, বলেন প্রদর্শনীর কিউরেটর রাজীব নাথ, ‘অথচ আজকের দিনে এই মেশিনটি কম্পিউটার কি-বোর্ডের কাছে হেরে গিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে।’ এখানে রয়েছে প্রাচীন টাইপরাইটারও। ফেলে আসা দিনের এমত অসাধারণ কিছু যন্ত্রের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিতেই এই আয়োজন। প্রদর্শনীটি চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ৬টা।

নীরেন্দ্রনাথ

‘‘... কখন চাঁদ উঠবে, কিংবা মলয় সমীর বইবে, তার প্রতীক্ষায় থাকবার দরকার নেই।... অমাবস্যার রাত্রেও কবিতা লেখা যায়, এবং মলয় সমীরের বদলে ফ্যানের হাওয়ায় কবিতা লিখলে তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয় না।’’ এমন মজাদার মন্তব্যের পাশাপাশি লিখেছেন তাঁর গভীর স্বগতোক্তিও: ‘‘কবির কাজ তাঁর নিজস্ব হৃদয়কে উন্মোচিত করে দেখানো। কিন্তু তার মানে কি এই যে শুধু ব্যক্তিগত কিছু দুঃখ-সুখের কথাই তিনি বলবেন?... একই সঙ্গে তাঁর সময় ও তাঁর সমাজের একটা ব্যাখ্যাও কি তিনি শুনিয়ে যাবেন না?... বারবার ব্যর্থ হয়েও চেষ্টা করছি সেই কবিতা লিখবার, নিজস্ব মহিমায় অম্লান থেকেও যা অনেকজনের কাছে পৌঁছতে পারবে।’’ কবিতা, কবিতার আলোচনা, ছোটদের ছড়া-কবিতা-উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, রহস্যকাহিনি, আত্মজীবনী, উপন্যাস, শব্দ-বানানশৈলী নিয়ে রচনা... খুবই বিস্তৃত ছিল কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর (১৯২৪-২০১৮) লেখালিখির পরিধি। তাঁকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করল সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা (পত্রিকাধ্যক্ষ: রমেনকুমার সর)। সেই চল্লিশের দশক থেকে স্বাধীনতা পেরিয়ে এই নতুন শতক পর্যন্ত সাহিত্য-সময়-ইতিহাসের অচ্ছেদ্য গ্রন্থিতে কবিকে ফিরে-দেখার প্রয়াস সংখ্যাটিতে। কৃষ্ণরূপ চক্রবর্তী আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচেত গুপ্ত শ্যামলকান্তি দাশ অভিরূপ সরকার পিনাকেশ সরকার পবিত্র সরকার প্রমুখের রচনায় ঋদ্ধ এ-পত্রে আছে কবির জীবন-গ্রন্থপঞ্জিও।

সম্মাননা

বাংলাদেশের বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এবং কবি-ঔপন্যাসিক তানভীর মোকাম্মেলকে সম্প্রতি সম্মাননা জ্ঞাপন করল ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ, গত একুশে ফেব্রুয়ারি, ভাষাদিবসে। কলকাতার চলচ্চিত্রকার কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় সংবর্ধিত করলেন তাঁকে। নন্দনে দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ চলচ্চিত্রোৎসবের আয়োজন করেছিল ফেডারেশন। তানভীর দেশভাগ নিয়ে এ-পর্যন্ত যে প্রামাণ্য ও কাহিনিচিত্র নির্মাণ করেছেন, তা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বলবেন ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধে ৬টায় গোর্কি সদনে, ছবির প্রয়োজনীয় ক্লিপিং দেখিয়ে। সে সন্ধ্যায় প্রকাশিত হবে সুশীল সাহা সম্পাদিত দেশভাগের সিনেমা (সোপান)। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ— এই উপমহাদেশে নেই নেই করেও দেশভাগভিত্তিক ছবি একেবারে কম তৈরি হয়নি, এরই এক প্রতিফলন বইটি। উদ্বোধন করবেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবেল আনছার। সারা দেশে ধর্মান্ধতা ও বিভেদের রাজনীতি যে ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে, সেখানে এ ধরনের আয়োজন তাৎপর্যপূর্ণ। সোপান-এর সঙ্গে যুগ্ম আয়োজনে আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব।

নাটকের বইমেলা

২৮ ফেব্রুয়ারি গিরিশচন্দ্র ঘোষের জন্মদিন। দিনটির স্মরণে গত দু’বছর ধরে নাটকের বইমেলা ‘পথে প্রাঙ্গণে’ আয়োজন করে আসছে নাট্যদল ‘প্রতিকৃতি’। এ বছরও দক্ষিণ কলকাতার সুজাতা সদনে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ তৃতীয় বইমেলা নিয়ে ফিরছে তারা। প্রতিকৃতি-র সদস্যদের ইচ্ছে, নাট্য-অনুরাগীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও নাটকের বই সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা। কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার বহু নাট্যদল থাকছে তাদের নাট্যপত্রিকা নিয়ে, নাটক সংক্রান্ত বই ও পত্রপত্রিকার সম্ভার নিয়ে যোগ দেবে অনেকগুলি প্রকাশনা সংস্থাও। ২৮ ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধনে থাকবেন ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ও চন্দন সেন, ২৯ ফেব্রুয়ারি মেলার দ্বিতীয় দিনে বিদ্যাসাগরের দুশোতম জন্মবার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত বিশেষ আলোচনাসভায় ‘বাংলা থিয়েটারে ঈশ্বরচন্দ্র’ নিয়ে বলবেন কমল সাহা ও দেবাশিস মজুমদার।

ভীষ্মদেব স্মরণে

‘জাগো আলোক লগনে’, ‘নবারুণ রাগে তুমি সাথী গো’ বা ‘যদি মনে পড়ে সেদিনের কথা’ প্রভৃতি চিরস্মরণীয় গান গেয়ে যিনি একদা বাংলাভাষী শ্রোতার মন জয় করেছিলেন, এমনকি তাঁর অসামান্য হারমোনিয়াম বাদনের জাদুতে যিনি সঙ্গীতরসিকদের মাতিয়ে দিয়েছিলেন, সেই সঙ্গীতাচার্য ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কণ্ঠসঙ্গীত বিভাগে ২০ ফেব্রুয়ারি একটি আর্কাইভ বা সংরক্ষণাগারের সূচনা হল। এই উদ্যোগে সহযোগী ভীষ্মদেব মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সংরক্ষণাগারে রাখা হয়েছে সঙ্গীতাচার্যের প্রিয় হারমোনিয়াম, ১৯৩০-এর দশকের একটি তানপুরা-সহ বেশ কিছু অমূল্য সম্পদ। ভীষ্মদেব বাংলা ও হিন্দি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে সুরারোপও করেছিলেন। ১৯৭২ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি লিট উপাধি অর্পণ করে। সংরক্ষণাগারের সূচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভীষ্মদেব মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সম্পাদক মালবিকা চট্টোপাধ্যায়, শিল্পীপুত্র জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত শ্যামল লাহিড়ী, দেবাশিস বসু ও সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী।

বিপ্লবী-স্মৃতি

১৯৪৭-এর আলোর দিনটি আসার পথে, অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সোপান ছিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। মাস্টারদা সূর্য সেন-সহ অন্য স্বাধীনতা সেনানীদের সেই রক্তঝরা দিনগুলির স্মৃতি যাতে চিরকাল জাগ্রত থাকে ভবিষ্য-প্রজন্মের বুকে, তার জন্য ১৯৭০-এ বিপ্লবী নেতা গণেশ ঘোষের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থা’। শহিদদের স্মৃতি রক্ষায় বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ করে সংস্থা। এ বছর সংস্থার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সঙ্গে উদ্‌যাপিত হচ্ছে মাস্টারদা সূর্য সেনের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীও। উৎসবের সূচনা হয়েছে ২৮ অগস্ট ২০১৯-এ। এ বছরও ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেমিনার, ২০ ফেব্রুয়ারি গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ সভা। ২১ ফেব্রুয়ারি, সংস্থার নিজস্ব ভবনে বিকেল সাড়ে ৪টেয় ছিল উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। আজ, সংস্থার সহায়তায়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ, মরকতকুঞ্জ প্রাঙ্গণের কবি-জননী সারদাকক্ষে বেলা আড়াইটায় আয়োজন করেছে ‘বিপ্লবী গণেশ ঘোষ স্মারক-বক্তৃতা’। বিষয় পরাধীন ভারতে বিপ্লবীদের অন্তর্বিরোধের স্বরূপ সন্ধান। বক্তা পুলিশ বিভাগের প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধান ও গবেষক অমিয়কুমার সামন্ত।

ছাত্র গড়ার কারিগর

সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী থাকাকালীন কলেজ গেটে প্রত্যন্ত কাকদ্বীপ থেকে আসা সহায় সম্বলহীন উদ্‌ভ্রান্ত ছাত্রকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা করেন। সেই ছাত্রই আজ সরকারি আর্ট কলেজে অধ্যাপনারত। যাঁর মধ্যে এই গুণ বর্তমান, তিনি ছাত্র গড়ার কারিগর হবেন এটাই স্বাভাবিক। বরিশালের ছিন্নমূল পরিবারের সুভাষ পালের ছোটবেলা থেকেই শিল্প আঙ্গিকে ঝোঁক। জীবনের চড়াই-উতরাইয়ে বেলুন বিক্রি, ঝুলনের পুতুল তৈরি, ফেব্রিকে শাড়িতে নকশা, গ্রিটিংস কার্ড ও রাখি তৈরি-সহ হরেক কাজে অর্থ উপার্জন করতে হয়েছে। তারই মধ্যে সরকারি আর্ট কলেজে পড়াশোনা। পরে বিভিন্ন সরকারি স্কুল হয়ে বর্তমানে হেয়ার স্কুলে প্রাতঃকালীন বিভাগে শিল্প শিক্ষক। তাঁর দলগত ও একক প্রদর্শনীর সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। এ বারে দশম একক ‘লস্ট হরাইজন’ শীর্ষক প্রদর্শনী রাজডাঙার মায়া আর্ট স্পেসে শুরু ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায়। চিত্র ও ইনস্টলেশনে প্রায় ২৫টি শিল্পসৃজন নিয়ে প্রদর্শনী চলবে ৫ মার্চ পর্যন্ত (২-৮টা)।

ষাট পেরিয়ে

নানা রঙের গানে নিজেকে চিনিয়ে ফেলেছেন তিনি অনেক দিন আগেই। দেশ-বিদেশে পরিচিতি তো বটেই, খ্যাতিও জুটেছে। বিশেষ করে পুরনো দিনের বাংলা গানের অফুরান ভাণ্ডার তাঁর কাছে মজুত। আর আছে অতীত দিনের বহু যশস্বী শিল্পীর সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্কের অজস্র স্মৃতি। এই সব নিয়েই জীবনের ষাটটি বছর পার করলেন অলক রায়চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গীতজীবনের ৪৪ বছর। সেই উপলক্ষে ১ মার্চ তাঁর অনুষ্ঠান রবীন্দ্র সদনে। আয়োজনে অনন্য মিউজিক।

সাঙ্গীতিক

বাংলা সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের সুস্থ চর্চা, প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে ঢাকুরিয়া অভিজ্ঞান-এর নাম সুপরিচিত। সুদীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ও শিক্ষক অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনা, পরিকল্পনা ও পরিচালনায় এই সংস্থা তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ধারা এগিয়ে নিয়ে চলেছে, যার অন্যতম অঙ্গ দু’দিন ব্যাপী সাঙ্গীতিক কর্মশালা ও আলোচনাচক্র। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মশালা ও আলোচনাচক্র এ বারে ষষ্ঠ বর্ষে পা দিল। ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ ত্রিগুণা সেন প্রেক্ষাগৃহে এ বারের কর্মশালা ও আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হবে। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পণ্ডিত নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, আশিস ভট্টাচার্য, প্রভাতী মুখোপাধ্যায়, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, পণ্ডিত বিপ্লব মণ্ডল, লিলি ইসলাম, দেবেশ ঠাকুর, ইন্দ্রাণী সেন ও অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্মরণসভা

বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বিদ্যাসাগর কলেজের কৃতী ছাত্র দিলীপ মুখোপাধ্যায় কলকাতার ছাত্র আন্দোলনের নেতা ছিলেন। সন্তোষ ভট্টাচার্য যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সেই উত্তাল দিনে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনি উপাচার্যের সঙ্গে ছিলেন। অধ্যাপক মুখোপাধ্যায় পরে বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার হয়েছিলেন। অবসর নেওয়ার পর তিনি পশ্চিমবঙ্গ নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি, নদীর সঙ্গে দেখা প্রভৃতি সংগঠনে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। ‘সপ্তাহ’ পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে আমৃত্যু দীর্ঘ ৫৪ বছর এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক মানুষটি ২ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় ‘সপ্তাহ’ দফতরে (৪৬ শশিভূষণ দে স্ট্রিট) তাঁর স্মরণসভা।

দেশভাগ নিয়ে

নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রানস্লেশন অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ়’ ২৯ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করতে চলেছে ‘বেঙ্গল পার্টিশন রিপজ়িটরি’—বাংলার পার্টিশন বিষয়ক একটি ডিজিটাল সংগ্রহশালা। এই উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে দু’দিনের তৃতীয় আন্তর্জাতিক পার্টিশন সেমিনার। ২০১৬ সাল থেকে পরিচালিত বাংলার পার্টিশন বিষয়ক একটি গবেষণা প্রকল্পের সূত্রেই এই ডিজিটাল সংগ্রহশালা। ২৯ ফেব্রুয়ারি এই বেঙ্গল পার্টিশন রিপজ়িটরি উদ্বোধন করবেন নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুভশঙ্কর সরকার। উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক দেবেশ রায়, প্রফুল্ল রায়, অমর মিত্র। সেমিনারে গবেষণা প্রকল্প প্রস্তাবিত ‘পার্টিশন লেকচার সিরিজের’ শেষ তিনটি বক্তৃতা আয়োজিত হবে। ‘কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস’-এর সহায়তায় বক্তৃতাগুলি আয়োজিত হচ্ছে। বলবেন তপোধীর ভট্টাচার্য (প্রাক্তন উপাচার্য, অসম বিশ্ববিদ্যালয়), ফকরুল আলম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ) এবং নন্দিনী ভট্টাচার্য (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়)। এই সেমিনারে একটি বিশেষ বক্তৃতা দেবেন বাংলাদেশের ‘দ্য ডেলি স্টার’ পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

স্মারক বক্তৃতা

তিনি শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের বিভিন্ন গণ আন্দোলনের নেতা ও সংগঠক ছিলেন। ‘মাটির বেহালা’ কাব্যগ্রন্থ দিয়ে এই কবির কাব্যলোকে প্রবেশ। প্রবন্ধ, কাব্যনাটক, কবিতা-সহ তরুণ সান্যালের রচিত বইয়ের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি। রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিক্ষাবিদ একদা ‘পরিচয়’ ও ‘সপ্তাহ’ পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি প্রয়াত হন। ‘শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’-এর উদ্যোগে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবসে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় রামমোহন লাইব্রেরি মঞ্চে ‘তরুণ সান্যাল স্মারক বক্তৃতা ২০২০’ অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়: ‘ভারতবর্ষ: বিপন্ন সময়, বিকল্প ভাবনা’, বক্তা শোভনলাল দত্তগুপ্ত। সভাপতি বিভাস চক্রবর্তী।

জনতার সাহিত্য

দেশে সাম্প্রতিক নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে মানুষের মনে প্রতিনিয়তই জাগছে শঙ্কা। আর এই সন্ধিক্ষণে দ্রোহের উচ্ছ্বাসের মুখে ব্যর্থ লোভ, তিক্ততা, বিদ্বেষের নিপীড়ন, এই বার্তায় ‘বস্তার সলিডারিটি নেটওয়ার্ক’ কলকাতা-র উদ্যোগে ফুলবাগান সুকান্ত মঞ্চে দু’দিনের ‘৩য় কলকাতা জনতার সাহিত্য উৎসব’-এর আয়োজন। সারা ভারত থেকে আসছেন বিশিষ্টজন। ২৮-২৯ ফেব্রুয়ারি, দুপুর ১২-রাত ৮টা সময়কালে সাহিত্য নির্ভর ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন অসমের সুপর্ণা লাহিড়ী বড়ুয়া ও কাজি নীল (মিঞা কবি), কাশ্মীরের মুয়াজ্জম বাট, ওড়িশার সুজাতা শাহানি ও সরোজ মহান্তি, তেলঙ্গানার আল্লম রাজাইয়া ও বেণুগোপাল, দিল্লির সুমিত সামোস, মহারাষ্ট্রের দিশা পিঙ্কি শেখ এবং আরও অনেকে।

হে অনন্ত পুণ্য

রবীন্দ্রকথা উচ্চারণ করবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের মনন বা ভাবনা যখনই উচ্চারিত হয় সৌমিত্রর স্বরে, নতুন মাত্রা পায় যেন। এমনই এক আয়োজন: ‘হে অনন্ত পুণ্য’। মহাত্মা গাঁধীর সার্ধশতবর্ষে, কবিতা উৎসব উপলক্ষে ৩৭ বছরের আবৃত্তিলোক-এর শ্রদ্ধার্ঘ্য। দুই চিন্তানায়কেরই আবির্ভাব উনিশ শতকে... দেশের পূর্ব প্রান্তে বঙ্গদেশে রবীন্দ্রনাথ এবং পশ্চিম প্রান্তে গুজরাতে গাঁধীজি। সত্য পথের অন্বেষণে এই দুই সাধকই দেশকে দিশা দেখিয়েছেন স্ব-স্ব ভাবধারা ও দর্শনে। মতের অনৈক্য যেমন ছিল, ছিল তেমন মতের ঐক্যও। সে সময়ের সেই দলিল কবিতা, গান, চিঠিপত্রের আধারে স্থিত হয়েছে অমর্ত্য মুখোপাধ্যায় সঙ্কলিত ও উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত নাট্যরূপময় ‘হে অনন্ত পুণ্য’ আলেখ্যটিতে। রবীন্দ্রগানের সঙ্গে আছে মহাত্মার প্রিয় সঙ্গীত যা এব্রাহাম মজুমদারের সিম্ফনিতে ধ্বনিত হবে। ভাবনা, বিন্যাস ও নির্দেশনায় সৌমিত্র মিত্র। মধুসূদন মঞ্চে ২৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টায়।

জন্মোৎসব

শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসবের প্রবর্তন ১৮৮১-তে, প্রধান উদ্যোক্তা সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে ছিলেন বলরাম বসু, কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায়, হরিশ মুস্তাফি, মনোমোহন মিত্র, রামচন্দ্র দত্ত প্রমুখ। ঠাকুর নিজেই বলে গিয়েছেন তাঁর জন্মতিথি ‘ফাল্গুন শুক্লা দ্বিতীয়া তিথি’। সূচনা সম্বন্ধে লাটু মহারাজের স্মৃতি: ‘‘তখন দেড়শত দু’শত লোক হতো। ভাল কীর্তন, গান-বাজনা, পদাবলী হতো।... যা জিনিস বাঁচত গরীবদের দেওয়া হতো।’’ এ-সমস্তই পাঠক পাবেন স্বামী চন্দ্রকান্তানন্দের শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসব-বৃত্তান্ত-এ, এর গ্রন্থরূপটি প্রকাশ পাচ্ছে ২৭ ফেব্রুয়ারি। শ্রীরামকৃষ্ণের ১৮৫তম শুভ আবির্ভাব উপলক্ষে সে দিন গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার-এর বিবেকানন্দ হলে অনুধ্যানমূলক কার্যক্রম: ‘শ্রীরামকৃষ্ণ: ভাব-চিন্তন’, দুপুর ৩টে থেকে সন্ধে সাড়ে ৭টা। কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বামী শুদ্ধানন্দ, স্বামী গহনানন্দ, স্বামী প্রভানন্দ প্রমুখের রচিত শ্রীরামকৃষ্ণের স্মৃতি, জীবন-উপদেশ, ভাবান্দোলন এবং শ্রীচৈতন্য ও শ্রীরামকৃষ্ণ বিষয়ক বিবিধ গ্রন্থাদিও প্রকাশ পাবে সে দিন। আলোচকদের মধ্যে থাকবেন প্রব্রাজিকা প্রদীপ্তপ্রাণা মাতাজি, প্রব্রাজিকা ভাস্বরপ্রাণা মাতাজি, স্বামী বলভদ্রানন্দ, স্বামী সুপর্ণানন্দ, রাধারমণ চক্রবর্তী, মিতা মজুমদার প্রমুখ। আয়োজনে রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে প্রকাশনা-প্রতিষ্ঠান সূত্রধর।

তৃতীয় পরিসর

২৫ ফেব্রুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ সভাগৃহে বিকেল সাড়ে ৫টায় তৃতীয় পরিসরের আয়োজনে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সভায় বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘গণতন্ত্র কি পুঁজিবাদের পরিপূরক? ভারতীয় দৃষ্টান্ত কী বলে’ শিরোনামের আলোচনায় অংশ নেবেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যাপক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদ, ধারণার দিক থেকে এই দু’য়ের আন্তঃসম্পর্ক, রসায়ন এবং তার বিবর্তনের প্রকৃতি, বিশেষত ভারতীয় দেশসীমায়, সাম্প্রতিক কালের নিরিখে চিন্তাজগতে যে সব সম্ভাবনার উদ্রেক ঘটায়, তা নিয়েই জানতে চাইবেন সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়, জানাবেন পার্থবাবু। ২০১৫ সালের শুরু থেকে সীমিত সাধ্যে এই ধরনের নানান কাজ করে আসছে তৃতীয় পরিসর।

বসন্ত বিলাপ

‘বসন্তে কি শুধু কেবল ফোটা ফুলের মেলা রে’, অথবা ‘বসন্ত তার গান লিখে যায় ধূলির ’পরে কী আদরে’— জানিয়েছিলেন ‘যুগলসেতু’-র বাবু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘লোকোত্তীর্ণ’ কনিষ্ঠ পুত্রটি। এর বহু বছর পর এক তরুণ কবি লিখলেন, ‘এখন বসন্তকাল/ ক্ষুর তোলা মাস্তানের মতো চমকাচ্ছে পলাশ’। কিন্তু শরীর তো আর নিচ্ছে না! ভোর ভোর গরম জামা লাগছে। ন’টা পেরোলেই তিলোত্তমায় ত্রাহি ত্রাহি রব। ঠান্ডার আমেজ কাটতে না কাটতেই বসন্ত জাগ্রত দ্বারে এবং পাশ থেকে উঁকি দিচ্ছেন স্বয়ং গোটা বৎসরের জ্যৈষ্ঠ। ধীরে ধীরে জেগে উঠছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, আরশোলা, ছারপোকারা। এ শহর এমন জলবায়ু পরিবর্তন সে ভাবে দেখেনি। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ‘জাগুন জাগুন পাড়া আগুন বাড়ে হু হু’। তাই তো ঘটতে চলেছে। কখনও কুয়াশা, কখনও মেঘ, কখনও আলো বা ‘গুগল’-বর্ণিত ‘ক্লাউডি ওয়েদার’! তবু মাঝ ফাল্গুনে‌ও ‘কুহু কুহু কোয়েলিয়া’ প্রায় নেই! তবে কি এ বসন্ত বিলাপ?

জন্মদিনে

শিল্পী যখন ছবি আঁকেন তখন কোনও শব্দ হয় না। যদিও তিনি তখন তাঁর স্টুডিয়োয় মগ্ন হয়ে আঁকেন, তখন হয়তো ক্যানভাসে তাঁর তুলি বোলানোর শব্দ তিনি একাই অনুভব করেন। ‘মগ্নতা’ যাকে বলে! যেমন লিখেছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়— ‘তন্ময়তার মধ্যে চারটে গোলাপায়রার ছানা’। সেই সব মগ্নতা বা তন্ময়তা ভেঙে শিল্পীর জন্মদিন হয় না, বা তিনি চান না। কিন্তু যোগেন চৌধুরীর ৮১তম জন্মদিন উদ্‌যাপিত হল তাঁরই বাসভূমির নিভৃত কক্ষে। উদ্যোক্তা আমেরিকার পড়ে থাকা দেহ আর হৃদয় পড়ে থাকা কলকাতায় গৌতম দত্ত। দেখলে মনে হয় না, তবু বয়স বিচারে যোগেন এ বার ‘অশীতিপর’ মহল্লায়। কেক কাটা, গান গাওয়া হল। অনুষ্ঠানে ছিলেন সুবোধ সরকার, শ্রীজাত, শিবাশিস মুখোপাধ্যায়, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও কত না কত, কে না কে! ফরিদপুরের সন্তান শিল্পী। মনে পড়ে, আরও এক জনও তো ছিলেন ফরিদপুরেরই। তিনি থাকলে হয়তো জন্মদিনটা আরও জমে যেত! তিনি? সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়!

জল-পরব

আগে জলকে ভালবাসা তার পর তো সংরক্ষণ। মানুষ যদি জলের রূপে মুগ্ধ হয়, জল আপনি বাঁচাবে। জলকে বিষয় করে নিসর্গ চিত্র এঁকেছেন দিবাকর দাস। ছবির বিষয় নির্বাচনে নিজের বাড়ির চৌহদ্দি ছেড়ে খুব কমই বেরিয়েছেন শিল্পী। মাইথন ও অজয় নদের মাঝের অংশটাই মূলত ধরা দিয়েছে তাঁর প্যাস্টেলে। এ বার গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় শিল্পীর চতুর্থ একক, কলকাতায় তৃতীয়। প্রথম বার ছিল ২০১৫ সালে, ‘সাঁঝ বিহানের নদী’। দ্বিতীয়, ‘ঈশ্বরের উপত্যকা’ (২০১৮) আর এ বারে ‘জল পরব’। প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন জয়া মিত্র। ফেব্রুয়ারি ২৭-২৯, প্রতি দিন ২-৮টা। সঙ্গে তারই একটি ছবি।

বাংলায় মণিপুরী

রবীন্দ্রনাথ প্রথম মণিপুরী নাচ দেখেন ত্রিপুরায়, ১৮৯৯ সালে। বাংলার কীর্তনের মধ্যে যে ভক্তিরস প্রকাশিত হয় গানে, মণিপুরী নৃত্যে সর্বশরীরে তার শিল্পিত প্রকাশ। ফের ১৯১৯ সালে সিলেটের কাছে মাছিমপুরে রাখাল রাস দেখেন। এ বার তাঁর অনুরোধে ত্রিপুরার রাজপরিবার গুরু বুদ্ধিমন্ত সিংহকে পাঠিয়ে দেয় শান্তিনিকেতনে। খুব অল্প দিনই ছিলেন, তাঁর নাচের ক্লাসকে ‘ছান্দিক ব্যায়াম’ বলা হত। ক্লাসে আসতও পুরুষ ছাত্ররাই বেশি। কিন্তু বাংলায় মণিপুরী নাচের সেই সূত্রপাত। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে বাঙালি ‘ভদ্র’ পরিবারের মেয়েরা শত কুৎসা তুচ্ছ করে নাচ করল মঞ্চে। শান্তিনিকেতন ও কলকাতায় এলেন আরিবাম আমুবি সিংহ, নদিয়া সিংহ, জিতেন সিংহ, বিপিন সিংহের মতো নৃত্যগুরু, গড়ে উঠল নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ বছর বাংলায় মণিপুরী নাচের শতবর্ষ উদ্‌যাপিত হচ্ছে দু’রাজ্যেই। ২৮ ফেব্রুয়ারি সুজাতা সদনে ধ্রুপদী মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করবে শ্রুতি পারফর্মিং ট্রুপ। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনের পরে কলকাতায় এই অনুষ্ঠান শতবর্ষের সূচনা করবে।

উদার প্রকৃতি আর জনজীবনের সৌন্দর্য

ছোটবেলায় লুকিয়ে ছবি আঁকার শখ দেখে বাবা ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলেন শিল্পী ইন্দ্র দুগারের কাছে। সব দেখে ছাত্র হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন অজয় কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সে সময় শনি-রবিবার নিয়ম করেই মট লেনে গুরুর কাছে যেতেন অজয়। ইতিমধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম কম করে সরকারি চাকরিতে। কিন্তু ভাঁটা পড়েনি ছবির চর্চায়। ১৯৮১-তে প্রথম প্রদর্শনী আকাদেমিতে। নাগাল্যান্ড গিয়ে সেখানকার উদার প্রকৃতি আর জনজীবনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। এক বার রাতের কোহিমার ছবি এঁকে নিয়ে এলে গুরু বলেন, ‘হয়নি তো!’ অবাক ছাত্র কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখছো না, রাতের আকাশ কেমন গুমরে রয়েছে। আসলে এই আকাশে একটু ভিরিডিয়ান গ্রিন দাওনি যে।’ ‘পরের ছবিতে সেই রঙের ছোঁয়াতেই রাতের আকাশ যেন হেসে উঠল,’ বলছিলেন অজয়বাবু। এ ভাবেই শিল্পশিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছিল। পেয়েছেন ইন্দ্র দুগার অ্যাওয়ার্ড, বিড়লা অ্যাকাডেমি এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রভৃতি। ভারতীয় শৈলীতে জলরঙে ওয়াশ পদ্ধতিতে আঁকা নাগাল্যান্ডের সেই সমস্ত ছবি (সঙ্গে তারই দু’টি) নিয়েই গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের সংগ্রহশালা গ্যালারিতে সূচনা হয়েছে একটি প্রদর্শনীর। প্রদর্শনী চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১১-৭টা পর্যন্ত।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Korcha কলকাতার কড়চা Kolkata Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy