সাঁচীতে বুদ্ধের অবিচল আনন্দ ও শান্তিপূর্ণ মুখ দেখে মনে হয়েছিল যে-শিল্পী এ কাজ করতে পারেন, তিনি নিশ্চয় নিজেই বুদ্ধত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।” লিখেছিলেন মীরা মুখোপাধ্যায়। জাপানে চিনেমাটির কারখানায় জেনেছিলেন, কারিগরেরা যখন চাক ঘুরিয়ে মাটির পাত্র গড়া শুরু করেন, তখন সেই কাজই তাঁদের ‘ধ্যান’: “একমনে কাজ করতে-করতে যে-ধ্যানের সৃষ্টি হয়, সেই ধ্যানই কাজ হয়ে প্রকাশিত হয়।” শিল্পকৃতির অন্তঃস্থ এই ধ্যান, সংযোগই তাঁর মতে শিল্পী ও শিল্পের মধ্যে ‘শ্রেষ্ঠতম ঐক্য’। আবার শিল্পী সম্পূর্ণ নিরাসক্তও, কাজ়ার পাহাড়ে নুড়িপাথরের গায়ে বুদ্ধবাণী অতিসূক্ষ্ম শৈলীতে খোদাই করে ফেলে গিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের “হাতুড়ি, ছেনি, শ্রম, ধ্যান, জ্ঞান— সব-ই আসক্তিশূন্য।” বাংলা, ভারত ও নানা দেশ ঘুরে শিল্পের অন্তঃসার খুঁজেছিলেন, বুঝেছিলেন মীরা মুখোপাধ্যায় (ছবিতে), আত্মস্থ করেছিলেন নিজের শিল্পকাজেও।
শিল্পী ভাস্কর মীরা মুখোপাধ্যায়ের (১৯২৩-১৯৯৮) জন্মশতবর্ষের সূচনা হল এ বছর। তারই উদ্যাপনে শেক্সপিয়র সরণির ‘গ্যালারি ৮৮’-এর নিবেদন: বিশিষ্ট আলোকচিত্রী অরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের তোলা মীরা মুখোপাধ্যায়ের ছবির প্রদর্শনী। শুরু হয়েছে গত ১৭ জুন, চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত, রবিবার বাদে সপ্তাহভর দুপুর দুটো থেকে সন্ধে ৭টা।
মীরা মুখোপাধ্যায় ভাস্কর, সঙ্গীতজ্ঞ, সুলেখক। ভারতশিল্পকে তিনি ঋদ্ধ করেছেন শিল্পে, লেখনেও। ভারতের আবহমান কারুশিল্পের ধারায় স্নাত হয়েছেন, সেই সঙ্গে জীবনের অভিজ্ঞতা লিখে রেখেছেন ছাঁচের গভীর থেকে, বিশ্বকর্মার সন্ধানে প্রভৃতি রচনায়। ১৯৯৮ সালে ৭৫ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় এই শিল্পীর, কিন্তু তাঁর সৃষ্টি সন্ধানের বিস্তার থেকে গিয়েছে অজস্র আলোকচিত্রে, লেখায়, স্মৃতিচারণে। বেঁচে থাকার অসংখ্য উপাদান ছড়িয়ে রেখে গিয়েছেন এই শিল্পী, গোটা জীবনটাই ব্যয় করেছেন শিল্পের শিকড় সন্ধানে, তথাকথিত নিম্নকোটি বর্গের শিল্পরচনার প্রবাহকে আশ্রয় করে। তাঁর শিল্পযাপনেই ভারতশিল্পে গভীর সংযোগ খুঁজে পান ডোকরা ঢালাইকারেরা। সেই সব ধাতু ঢালাইকারের অর্জিত অধিকারের স্মারক হয়ে ওঠে মীরা মুখোপাধ্যায়ের ব্রোঞ্জ ঢালাইয়ের কাজগুলি।
শহর কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তিক এলাচি গ্রামে কাটানো তাঁর জীবনের অন্যতম সময়, সঙ্গীতানুরাগ, যৌথশিল্পে উদ্যাপনের অভিজ্ঞান ধরে রেখেছিলেন আলোকচিত্রী অরুণ গঙ্গোপাধ্যায়। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৮ পর্বে, এবং মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে মীরা মুখোপাধ্যায়ের সুবিশাল ‘বুদ্ধ’-এর ঢালাই সমাপন তথা স্থাপনা অবধি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন অরুণবাবু। টুকরো স্মৃতিচারণেও ধরা আছে সহশিল্পীদের প্রতি তাঁর সহমর্মিতার কথা। এই পরম্পরা নির্মাণে ভবিষ্যৎ দিশা পায় শিল্পনির্ভরতার, ইতিহাস ধরে রাখে মহাজীবনের সৃষ্টিসন্ধানের স্পর্শ। দুই কিউরেটর— অদীপ দত্ত ও তপতী গুহঠাকুরতা জরুরি এ কাজ করেছেন পরম যত্নে। তপতী গুহঠাকুরতার তত্ত্বাবধানে মীরা মুখোপাধ্যায়ের শিল্পজীবনের খুঁটিনাটি নিয়ে একটি বইও প্রকাশ পাওয়ার অপেক্ষায়। ছবি সৌজন্য: গ্যালারি ৮৮
স্মরণার্ঘ্য
১৯৪১ সালে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে যোগদান, ১৯৪৫-এ ব্রহ্মচর্য, ১৯৪৯-এ সন্ন্যাসে দীক্ষা। কর্ম ও সেবাপূত তাঁর জীবনের সাক্ষী দেওঘর, মায়াবতী, রাঁচী, তৎকালীন রেঙ্গুন, রাজকোট-সহ মিশনের বহু শাখাকেন্দ্র। উত্তরকালে তিনিই স্বামী আত্মস্থানন্দ (ছবিতে), রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের পঞ্চদশ অধ্যক্ষ। ২০১৯-এ জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে এই অধ্যাত্মপুরুষের, কিন্তু অতিমারিপীড়িত গত দু’বছরে স্মরণ ও উদ্যাপন করা যায়নি আনুষ্ঠানিক ভাবে। তারই উদ্যোগ করেছে ‘স্বামী আত্মস্থানন্দ জন্মশতবর্ষ কমিটি’, আগামী কাল ১০ জুলাই নজরুল মঞ্চে দিনভর বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে। স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ এবং শ্রদ্ধেয় সন্ন্যাসীর জীবনাশ্রয়ী তথ্যচিত্র-সম্বলিত পেন ড্রাইভের উদ্বোধন করবেন বর্তমান সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ, রামকৃষ্ণ ভাবান্দোলন নিয়ে আলোচনা করবেন বিশিষ্ট সন্ন্যাসীরা; হবে স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
অন্য রথ
১ জুলাই বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন, প্রখ্যাত চিকিৎসকের সম্মানে ডক্টরস’ ডে-ও। তাঁরই স্মরণে অন্য ধারার এক সংঘটনের সাক্ষী থাকল শহর। রাজপথে সে দিন বেরিয়েছিল অন্য রকম এক রথ, মানবসেবার রথ— ‘সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশন’-এর আয়োজনে। বিধানচন্দ্র রায়ের আবক্ষ মূর্তি নিয়ে এই রথ পরিক্রমা করল শহরের নানা পথ, রথ থেকেই পথচলতি মানুষ মেপে নিলেন শরীরে শর্করার পরিমাণ, রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাপ। রথের পিছনে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সে ছিল ইসিজি-র ব্যবস্থাও। রথ গেল শহরের কয়েকটি ক্লাবেও। বছরভর থ্যালাসেমিয়া সংক্রান্ত সচেতনতার প্রসার-সহ নানা উদ্যোগ করে থাকেন ফেডারেশন কর্তৃপক্ষ, এ বছর অভিনব আয়োজন। “রথ থেকে প্রসাদ বিতরণ হয়, আমাদের এই রথের প্রসাদ সেবা,” জানালেন সম্পাদক সঞ্জীব আচার্য।
জরুরি কাজ
স্বামী বিবেকানন্দ বিষয়ে প্রকাশিত অমূল্য গ্রন্থমালা শঙ্করীপ্রসাদ বসুর বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ। শতাধিক পত্রপত্রিকা, নথি, অন্যান্য সূত্র থেকে তথ্য ও সংবাদ চয়নে রচিত এই গ্রন্থ; মুম্বই, পুণে, কাশী, আলমোড়া, মাদুরাই, দিল্লি, হরিদ্বার ঘুরে, নানা গ্রন্থাগার ও প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান করে, অগণিত মানুষের সঙ্গে আলাপনে লেখক বুঝতে চেয়েছিলেন ভারত-ইতিহাসে বিধৃত বিবেকানন্দ-চেতনাকে। সাত খণ্ডের গ্রন্থমালা সেই অখণ্ড শ্রমের ফসল, প্রথম প্রকাশিত গত শতকের মধ্য-সত্তর দশকে। ইদানীং কালে দীর্ঘ দিন পাঠকের নাগালের বাইরে থাকা এই গ্রন্থমালাকে পুনঃপ্রকাশের উদ্যোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে প্রথম খণ্ড। ৬ জুলাই ছিল শঙ্করীপ্রসাদ বসুর প্রয়াণদিন, সেই আবহে এ-হেন গবেষণাকৃতির গুরুত্ব অনুভূত আরও।
রবির ছায়ায়
অসুখ, আশঙ্কা, অনিশ্চয়তার বিগত দু’টি বছরে আশ্রয় হয়ে জেগে ছিল রবীন্দ্রনাথের গান। তারই বাণী ও সুরে তৈরি হল এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন, সঙ্গীতপ্রতিষ্ঠান ‘রবিচ্ছায়া’-র বৃহত্তর পরিবার— বারাসত, বাংলাদেশ, আগরতলা, আমেরিকা, মহীশূর, মেলবোর্ন বাঁধা পড়ল রবিগানের মায়ায়। রবিচ্ছায়া-র কুশীলবেরা একত্রিত হচ্ছেন আজ ৯ জুলাই অজিতেশ মঞ্চে বিকেল সাড়ে ৫টায়, রবীন্দ্রময় এক সন্ধ্যার উপহারে। গ্রীষ্ম ও বর্ষার গান গাইবেন ছোট-বড় সকল সদস্য, রয়েছে নাচও। বিশেষ আকর্ষণ রবিচ্ছায়া-র দর্শকধন্য পরিবেশনা ‘নগর গ্রামে ঋতু নামে’; এই অনুষ্ঠানের মুখ্য পরিকল্পক ও পরিচালক সুদেষ্ণা সান্যাল রুদ্র দীর্ঘ দিন কাজ করছেন ট্রান্সজেন্ডার শিল্পীদের নিয়ে, রবীন্দ্রদর্শন আত্মস্থ করে তাঁরা নিবেদন করবেন বঙ্গপ্রকৃতির ঋতুরঙ্গকথা।
নতুন ঠিকানা
কমিক্স ঘিরে কিছু মানুষের আবেগ ও উৎসাহ থেকেই শুরু ‘কলকাতা কমিক্স’ ও ‘কমিক্স মেট্রো’-র পথ চলা। উদ্দেশ্য: সম্মিলিত শ্রমে কমিক্স নির্মাণ; যিনি আঁকায় দড় তিনি আঁকবেন, যিনি লেখায়, তিনি লিখবেন। গোড়ায় ফেসবুক পেজ, পরে ২০২১-এ তৈরি ওয়েবসাইট কলকাতাকমিক্স ডট কম-এর মাধ্যমে চলছিল কমিক্সের বিকিকিনি। অনলাইন কেনার সুযোগ বহাল এখনও, এ বার ৯০এ মহাত্মা গান্ধী রোডের ঠিকানায় খুলল নতুন কমিক্স বিপণি ‘কলকাতা কমিক্স’। রবিবার বাদে হপ্তাভর সেখানে পাওয়া যাবে বেতাল ম্যানড্রেক বাঁটুল নন্টে-ফন্টে অমর চিত্রকথা ইন্দ্রজাল কমিক্স থেকে শুরু করে জাপানি মাঙ্গা, ডিসি ও মার্ভেল কমিক্স, গ্রাফিক নভেল, সব কিছুই। শহরে নতুন কমিক্স-ঠিকানা।
সাঙ্গ হল
রথযাত্রা চলে গেল, পুনর্যাত্রা আজ, লোকমুখে উল্টোরথ। কসমোপলিটান মহানগরে ফেলে আসা সুদূর এক জীবন আর কালখণ্ড নিয়ে জেগে ছিল রথের মেলা, ফুরোতে চলল সেও। রিমোট কন্ট্রোল খেলনার যুগে রথের মেলার কাঁচামাটি পোড়ামাটির পুতুল কেনে কি কেউ আজও? কেনেন— এ রসের রসিকরা, সংগ্রাহকেরা। কসবা নাগেরবাজার হরিনাভি চেতলায় মাঠ গলিপথ ফুটপাতের এ কোণ-সে কোণ আলো করে ছিল বর-বৌ, সাপুড়ে, বাজনদার, কীর্তনিয়া, বাউল পুতুলেরা— গ্রামবাংলার চিরায়ত অভিজ্ঞান। আরতি বা অঞ্জলি পালের মতো মৃৎশিল্পী পরিবারের মহিলাদের হাতে প্রাণ পাওয়া পুতুলগুলি কৃষ্ণনগরের ‘রিয়েলিস্টিক’ ধারার পাশে লোকশিল্পের অন্য এক ঘরানার প্রতিনিধি, আটপৌরে অন্তরঙ্গতা মাখা। আগেকার সহজ-সরল শহুরে জীবনেও ভাল চাহিদা ছিল এই পুতুলদের, একুশ শতকের কার্টুন চরিত্রনির্ভর প্লাস্টিকের তৈরি টেকসই পুতুলের সঙ্গে টক্করে মাটির ঘাড়-নাড়া বুড়ো তো পিছিয়ে পড়বেই, ভুঁড়ো শিবঠাকুরটিই বা পাত্তা পাবেন কেন!
দুই পৃথিবী
শহরের শিল্পপ্রদর্শন-পরিসরগুলি সামনে নিয়ে আসছে একের পর এক অনন্য প্রদর্শনী, চোখ ও মনের রসদ। ইমামি আর্ট-এর বিশালায়তন গ্যালারি ভবনের বিভিন্ন তলে চলছে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী। কে এস রাধাকৃষ্ণন কিউরেট করেছেন সোমনাথ হোরের জন্মশতবর্ষে শিল্পীর বিভিন্ন সময়ের কাজ: ১৯৮৭-৮৮’র শান্তিনিকেতনের জীবন আঁকতেন স্কেচবইয়ে, অপ্রকাশিত সেই খাতার ছবি দেখা যাবে; আবার ১৯৬১-তে দিল্লিতে আঁকা মাস্টারপিস, জাতীয় পুরস্কারজয়ী চিত্রকৃতি দ্য বার্থ অব আ হোয়াইট রোজ় (ছবিতে), আবার প্রথম দিকের উডকাট প্রিন্টও: রাতে খুলি বৈঠক, বুধিয়া বর্মণের মা। প্রদর্শনী ২৪ জুলাই অবধি। বিকাশ ভট্টাচার্যের ছাত্রী, আবার শান্তিনিকেতনের শিল্পধারারও উত্তরাধিকারী চিত্রশিল্পী অরুণিমা চৌধুরীর তিন দশকের বাছাই চিত্রকৃতি দেখা যাবে ‘দ্য ডার্ক এজ অব গ্রিন’ প্রদর্শনীতে, সঙ্গে তাঁর ফ্যাব্রিক, সেরামিক, এনামেলের শিল্পকাজও— কিউরেট করেছেন ন্যান্সি আদজানিয়া। দেখা যাবে ২০ অগস্ট পর্যন্ত।
পাঠশালা
কলকাতাকে তেমন ভাবে পাওয়া যায় না তরুণ মজুমদারের ছবিতে— বলেন কেউ কেউ, তাঁরা নির্ঘাত একটুকু বাসা মন দিয়ে দেখেননি, অথবা কাঁচের স্বর্গ বা ঠগিনী— শহরের নিষ্ঠুরতা ও সহৃদয়তার যুগপৎ ছবি। “কলকাতা থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি,” বলতেন তিনি। চল্লিশের দশকে নিয়মিত হলিউডি ছবি দেখতেন ধর্মতলার হল-এ, মেট্রো-গলিতে স্ক্রিপ্ট বিক্রি হত সে সব ছবির। যে ছবিগুলি আসত, সম্ভবত তাদের প্রিন্টের সঙ্গে একখানা করে স্ক্রিপ্টও আসত হল-এর ম্যানেজারের কাছে, ছবি চলে গেলে ম্যানেজারমশাই সম্ভবত বেচে দিতেন সেই স্ক্রিপ্ট। মেট্রো-গলির ফুটপাত থেকে খুঁজে খুঁজে পছন্দের স্ক্রিপ্ট কিনতেন তরুণবাবু। প্রায় হোমওয়ার্ক-এর মতো করে পড়তেন তা, ছবি দেখার অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে। কলকাতাই তাঁর ছবি দেখার নেশা ধরিয়েছিল, হয়তো বা ছবি তৈরিরও, কে জানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy