ছবি: তথাগত সিকদার।
আজানের সময় এগিয়ে আসছে। ইফতারের আয়োজন গুছিয়ে নেওয়ার ভিড়, তুমুল ব্যস্ততা খাবারের দোকানগুলোয়। পাশেই পোশাক, আতরের পসরা। আর এই সব কিছুর মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে, পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদ। মোগল স্থাপত্য প্রভাবিত নাখোদা মসজিদ।
গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চল থেকে মেমন গোষ্ঠীর বণিকরা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে নৌবাণিজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে এ শহরে আসেন কয়েক শতক আগে। ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধির ফলে নানা জনসেবামূলক কাজ শুরু করেন তাঁরা; মাদ্রাসা, মুসাফিরখানার পাশাপাশি চিৎপুরের এই মসজিদটি গড়ে তোলেন নতুন করে। ১৯২৬-এ শুরু, কাজ শেষ হয় ১৯৩৪ সালে। ফার্সিতে ‘নাখুদা’ শব্দের অর্থে নাবিক। সেই থেকেই নাম নাখোদা মসজিদ। পনেরো লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, আবদুর রহিম ওসমান দান করেছিলেন সর্বাধিক অর্থ। প্রতিষ্ঠানের প্রথম মুত্তাওয়ালি বা কেয়ারটেকার হাজি নূর মহম্মদ জ়াকারিয়ার নামেই রাখা হয় মসজিদের সামনের রাস্তার নাম।
শহরের আরও বহু ঐতিহ্যশালী স্থাপত্যের মতোই, ম্যাকিনটশ বার্ন সংস্থা তৈরি করে এই মসজিদ। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের দু’টি মূল মিনারের উচ্চতা দেড়শো ফুটের বেশি। রমজান মাসে উপবাসের সময় নির্দেশ করতে মিনারের উপরে জ্বলে সবুজ আর লাল বাতি। আছে ২৫টি ছোট মিনার। মসজিদের মূল ফটক মনে করায় বাদশা আকবরের স্মৃতিবিজড়িত ফতেপুর সিক্রির ‘বুলন্দ দরওয়াজা’-র কথা। লাল বেলেপাথর আর সাদা মার্বেলের তৈরি মসজিদে সমবেত হতে পারেন কয়েক হাজার মানুষ। নমাজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ছাড়া, কিছু নিয়ম মেনে ঢুকে দেখতে পারেন অন্য ধর্মাবলম্বীরাও।
আশ্চর্য শহর কলকাতা। নাখোদা সংলগ্ন রাস্তা, মহল্লা মনে করিয়ে দেয়, সাবেক কলকাতায় গড়ে ওঠা পেশাভিত্তিক পল্লিগুলির অন্যতম ছিল কলুটোলা। ঘানি ঘুরিয়ে তেল পেষা আর বিক্রির কাজ করতেন নিম্নবিত্ত শ্রমিকরা। ক্রমে এ পাড়ায় গড়ে ওঠে সম্ভ্রান্ত মানুষের বসতিও। মতিলাল শীল, সাগরলাল দত্ত, বদনচন্দ্র রায়দের ভদ্রাসনও এই পাড়ায়। কেশবচন্দ্র সেনের পরিবারকে বলা হত ‘কলুটোলার সেন’। এই পাড়াতেই পূর্ণচন্দ্র ধরের বাড়ি এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, হরিভক্তি প্রদায়িনী সভায় অংশ নিতে। এখান থেকেই যেমন ‘কুন্তলবৃষ্য’ তেলের আবিষ্কার করেন কবিরাজ বিনোদলাল সেন, তেমনই বক্স ইলাহীর হাত ধরেই শুরু হয় ভারতে উইলস সিগারেটের যাত্রা। আবার সব সময় যে এ অঞ্চলে শান্তি বজায় থেকেছে, তাও নয়। স্বাধীনতা-পূর্ব দাঙ্গা অশান্তির আঁচও লেগেছিল কলুটোলার গায়ে। তবু সব মিলিয়েই কলকাতার মিশ্র সংস্কৃতির অন্যতম পরিচায়ক নাখোদা মসজিদ আর কলুটোলা। রমজান মাসে সন্ধ্যার ইফতার-সময় ঘিরে এ শহরের খাদ্যরসিকদের ঘোরাফেরাও সে কথাই বার বার মনে করিয়ে দেয়। ছবিতে ২০১৬-র নাখোদা মসজিদ ও সংলগ্ন জনজীবন।
সন্ন্যাসীর গীতি
সিমলেপাড়ার নরেন্দ্রনাথ দত্ত স্বামী বিবেকানন্দ রূপে (ছবি) আত্মমুক্তি ও জগৎহিতের নতুন দিশা দিলেন, বিশ্ব ধর্ম মহাসম্মেলনে ভারতের ধর্ম-সভ্যতা-সংস্কৃতির মহিমা তুলে ধরল বহুত্বের মাঝে একত্বের মর্মবাণী। এই বিবেকানন্দ চেনা, কিন্তু এর বাইরেও আর এক সত্তা ছিল তাঁর, সঙ্গীতরসিক ও গায়ক বিবেকানন্দ চর্চিত নন তত। স্বামীজির সঙ্গীতপ্রতিভা স্মরণে, তাঁর রচিত গান নিয়েই ‘রামকৃষ্ণ মিশন স্বামী বিবেকানন্দের বাসভবন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’-তে আগামী কাল, ২ এপ্রিল বিকাল ৫টায় ‘বিবেকানন্দ সঙ্গীত সন্ধ্যা’র আয়োজন করেছে সুতানুটি পরিষদ, চোরবাগান অঞ্চল। অনুষ্ঠানে ‘সঙ্গীত ও স্বামী বিবেকানন্দ’ নিয়ে বলবেন রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্ক-এর সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দ, সঙ্গীত পরিবেশনায় কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মিশন মাল্টিপারপাস স্কুল-এর প্রধান শিক্ষক স্বামী কল্যাণেশানন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, ইটানগরের সম্পাদক স্বামী কৃপাকরানন্দ।
বিজ্ঞান ঘিরে
বিষয়— বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজে মহিলা সম্প্রচারকদের ভূমিকা। সম্প্রতি এক আলোচনাচক্রে জড়িয়ে ছিলেন মহিলারা। আয়োজক ‘ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ় অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএসএনএ), প্রতিষ্ঠা প্রায় নব্বই বছর আগে, প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাত ধরে। দীর্ঘ কাল ধরে এই বিজ্ঞান সংগঠন প্রকাশ করে চলেছে পত্রিকা সায়েন্স অ্যান্ড কালচার, যার প্রথম সম্পাদক ছিলেন মেঘনাদ সাহা। বিজ্ঞান সম্প্রচারে আগ্রহীজনকে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি দিতে স্বল্পমেয়াদি কোর্সও করায় সংগঠন। নবতম প্রচেষ্টা, সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত পত্রিকা সায়েন্টিফিকা কমিউনিকা-রও উদ্বোধন হল, বাংলা পত্রিকা বিজ্ঞান কহন-এরও প্রকাশ আসন্ন, জানা গেল।
পরিবেশ-ভাবনা
ইতিহাসবিদ জনচিন্তক হিসাবে সকলেই চেনেন রামচন্দ্র গুহকে— আধুনিক ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষত মহাত্মা গান্ধীর জীবন নিয়ে তাঁর গ্রন্থগুলি সারস্বত বৃত্তে ও পাঠকসমাজে উদ্যাপিত সমগুরুত্বে। পরিবেশ ও পরিবেশবাদের ইতিহাস বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনাও গভীর; আজকের বৈশ্বিক পরিবেশ-সঙ্কট, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে যে ভাবনাগুলি মন দিয়ে শোনা জরুরি। সেই সুযোগই করে দিচ্ছে গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট-ম্যাক্সমুলার ভবন কলকাতা, আজ ১ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের আয়োজনে রামচন্দ্র গুহ বলবেন ‘হিস্ট্রি অব এনভায়রনমেন্টালিজ়ম ইন ইন্ডিয়া’ নিয়ে। অনুষ্ঠান ইনস্টিটিউটেই, জয়ন্ত বসুর সঞ্চালনায় রামচন্দ্র গুহ যুক্ত হবেন ‘লাইভ’ প্রযুক্তি-ব্যবস্থায়।
গানজীবন
স্বপন গুপ্ত, স্বপ্না ঘোষাল— দু’টি নামই রবীন্দ্রসঙ্গীতের সমৃদ্ধ অতীতকে মনে করায়। প্রথম জন প্রয়াত, কিন্তু সুরস্মৃতিতে অমলিন শ্রোতামনে। দেবব্রত বিশ্বাস ধাঁচের কণ্ঠ নিয়েও ‘তোমার কাছে এ বর মাগি’, ‘আমার শেষ পারানির কড়ি’ ইত্যাদি গানে রেখেছেন নিজস্ব ব্যক্তিত্বের ছাপ। ‘বীরুৎজাতীয় সাহিত্য সম্মিলনী’-র উদ্যোগে আজ, ১ এপ্রিল শিশির মঞ্চে স্বপন গুপ্ত স্মরণসন্ধ্যা, প্রকাশিত হবে স্মরণগ্রন্থ চিরদিনের সেই আমি (প্রকা: বীরুৎজাতীয়), থাকবে ভিডিয়োতে ধরে রাখা ওঁর কণ্ঠ, শিল্পীদের গান। অন্য দিকে রবীন্দ্র সদনে শিল্পী-শিক্ষক স্বপ্না ঘোষালের আশিতম জন্মদিন পালন করল ‘বাণীমাল্য’, শিল্পী শোনালেন ‘জীবন আমার চলছে যেমন’। দেখানো হল ওঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র, পরে ছিল নৃত্যনাট্য শ্যামা।
বই-সেতু
সভ্যতা ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধ বই, এই ভাবনা থেকেই সম্প্রতি শুরু হল ‘বুকস আর ব্রিজেস’ নামে একটি প্রকল্প। কল্যাণমূলক সংস্থা ‘পুকার’-এর উদ্যোগে, কলকাতার তিনটি ও পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি স্কুল নিয়ে। মহাদেবী বিড়লা ওয়র্ল্ড অ্যাকাডেমি, সুশীলা বিড়লা গার্লস স্কুল এবং দ্য বিএসএস স্কুল-এর পড়ুয়ারা তিনটি আলমারি-ভর্তি বাংলা-ইংরেজি গল্পের বই তুলে দিল পূর্ব মেদিনীপুরের ঠাকুরনগর নন্দ মহিলা বিদ্যাপীঠ ও চুঙ্খাবাড়ি শ্রীদুর্গা বালিকা বিদ্যামন্দিরের পড়ুয়াদের হাতে। বই গড়ল বন্ধুত্বের সেতু, শহরের পড়ুয়ারা পেল গ্রাম-জীবনের ধারণা, জানল গ্রামের পড়ুয়াদের শিক্ষালাভে হাজারো বাধাবন্ধের কথা। সংস্থার কর্ণধার স্বাতী গৌতমের আশা, “বই-সেতুই গড়ে তুলবে হৃদ্যতা, ঘোচাবে সব ব্যবধান।”
গোড়াপত্তন
ইউরোপ-আমেরিকায় বড় বড় শিল্পীর কাজ ঘিরে সরকারি উদ্যোগে কত মিউজ়িয়ম, এক জন শিল্পীর সৃষ্টিকেন্দ্রিক অসরকারি সংগ্রহশালাও বহু। ভারতে এ অভাব পদে পদে: পেশাদার অসরকারি আর্ট মিউজ়িয়ম হাতে গোনা, ‘সিঙ্গল-আটিস্ট মিউজ়িয়ম’ তো দূর অস্ত্। সেই শূন্য স্থান পূরণের পথে প্রথম পদক্ষেপটি করল শিল্প প্রতিষ্ঠান ‘ডিএজি’, কলকাতায় শিল্পী যামিনী রায়ের ৭৫ বছরের পুরনো বাড়িটি অধিগ্রহণ করে— উদ্দেশ্য: দেশের প্রথম অসরকারি সিঙ্গল আর্টিস্ট মিউজ়িয়ম তৈরি। ডিএজি-র অধীনে এখন কাজ করছেন কনজ়ার্ভেশন আর্কিটেক্ট ও ডিজ়াইনাররা, আগামী বছর খুলে যাবে যামিনী রায়ের নামাঙ্কিত এই সংগ্রহশালা ও সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র। শিল্পী ও তাঁর সৃষ্টিকে স্রেফ সংগ্রহের মোড়কে কুক্ষিগত করা নয়, সকল শিল্পরসিকের কাছে পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগটি নিবেদিত বাংলা ও বাঙালির প্রতি, সারা ভারতের প্রতি, জানালেন ডিএজি-র মুখ্য আধিকারিক আশীষ আনন্দ। ছবিতে স্টুডিয়োতে কর্মরত যামিনী রায়, ছবি সৌজন্য: ডিএজি
দুই মাধ্যম
ইটালীয় ভাষায় শিকড় ‘টেরাকোটা’ শব্দটির: টেরা অর্থাৎ মাটি, কোটা অর্থাৎ পোড়ানো। প্রচলিত বাংলায় পোড়ামাটির কারুকাজ ও ভাস্কর্যই হল টেরাকোটার কাজ। চলতি বাংলায় ‘সেরামিক্স’ হয়েছে চিনামাটি— যদিও ও শব্দটির মূল গ্রিক ‘কারমাইকস’, অর্থ মাটির তৈরি রোজকার তৈজসপত্র। টেরাকোটা ও সেরামিক্স দু’টি মাধ্যমেরই মূল কথা মাটি, দুইয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও তফাত নির্ণীত হয় মূলত মাটি ও তাপমাত্রার হেরফেরে। মানবসভ্যতার ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি টেরাকোটা; মেসোপটেমিয়া, চৈনিক সভ্যতা-সহ বিশ্বের প্রায় সব প্রাচীন সভ্যতায় তার নিদর্শন মেলে, হরপ্পা সভ্যতায় দেখা যায় টেরাকোটার তৈরি মাতৃমূর্তি, বাংলার মন্দিরে মন্দিরে টেরাকোটার অলঙ্করণ ও ভাস্কর্য বুঝিয়ে দেয় এই শিল্পমাধ্যমের প্রাচীনত্ব। বিশ শতক থেকে শিল্পীরা কাজ করে চলেছেন টেরাকোটা ও সেরামিক্স নিয়ে, এই সময়ের পনেরো জন শিল্পীর কাজ নিয়ে (ছবিতে তারই একটি) প্রদর্শনী চলছে ৫০/১ হিন্দুস্তান পার্কের ‘চারু কারু’-তে। ২ মে পর্যন্ত, দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা।
সংস্কৃতি-বন্ধু
পেশায় কর সংক্রান্ত আইনের বিশেষজ্ঞ, কিন্তু সেই গণ্ডিতে বদ্ধ থাকেননি প্রিয়ব্রত ভরদ্বাজ। ছিলেন সংস্কৃতি আন্দোলন, সিনেমা পরিবেশনার সমবায় সমিতি গঠনেও। ১৯৩৬-এ কুমিল্লায় জন্ম, দেশভাগের পরে ত্রিপুরায়। কলেজে কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক হন, আইন শিক্ষা শেষে কলকাতায় পেশাপ্রবেশ। ’৭৩-এ এ রাজ্যে গড়ে তোলেন ‘ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন কো-অপারেটিভ সোসাইটি’। পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত মালঞ্চ-সহ ১৪টি ছবির পরিবেশনা ও প্রযোজনায় যুক্ত ছিলেন, ছিলেন গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য কমিটির কোষাধ্যক্ষ। গত ২০ মার্চ প্রয়াত হলেন, রেখে গেলেন স্ত্রী, পুত্র বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ, পুত্রবধূ, কন্যা, জামাতা বিচারপতি কৌশিক চন্দ-সহ উত্তরসূরিদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy