কলকাতার চিনেপাড়া। ফাইল চিত্র।
কলকাতার চিনা অনুষঙ্গ বলতে মহানগরবাসী কী বোঝেন? ধর্মতলা-বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে সাইনবোর্ডে চিনে নাম ধরে রাখা জুতোর দোকান? ট্যাংরার চিনে রেস্তরাঁ, বড়জোর টেরিটিবাজারের ভোরে চিনে ব্রেকফাস্ট-ঠেকগুলো? খবরকাগজে প্রতি বছর চিনা নববর্ষে বেরোনো খবর একটি-দু’টি? সাংস্কৃতিক বহুত্ব কলকাতার এক স্বতন্ত্র পরিচয়চিহ্ন, এ শহর জুড়ে থাকা বহু চিনে অনুষঙ্গ সেই চিহ্ন গড়েছে নিজস্ব রূপ রং গন্ধ স্বাদ বৈচিত্রে। অথচ শহুরে মানুষ তার সবটুকু জানেন না, বছরের পর বছর একই শহরে থেকেও রয়ে যায় একটা অপরিচয়ের দূরত্ব।
প্রত্যক্ষ সংযোগের বিকল্প নেই, তবে এই দূরত্ব অনেকটা ঘোচাতে পারে বই। তেমনই একটি বই প্রকাশিত হল চলতি বইমেলায়, কলকাতার চিনেপাড়া (প্রকাশক: লা স্ত্রাদা)। লেখা আর ছবি বিজয় চৌধুরীর, সরকারি আর্ট কলেজের ভিস্যুয়াল আর্ট-এর স্নাতক এই আলোকচিত্রীর মূল ক্ষেত্র ডকুমেন্টারি ফোটোগ্রাফি, কাজ করে চলেছেন সাড়ে তিন দশক ধরে। গত দুই দশক ধরে কলকাতার চিনা সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মিশেছেন তিনি, তাঁদের জীবন ধরে রেখেছেন ক্যামেরায়। পৃথিবীর নানা দেশেই আছে ‘চায়নাটাউন’— গোড়ায় অভিবাসী, পরে সে দেশ বা শহরেই মন আর শেকড় বসানো চিনা মানুষের জনপদ; শুধু কলকাতাতেই দেখা যায় ‘ওল্ড’ আর ‘নিউ’ দু’-দুটো চায়নাটাউন, লেখককে বলেছিলেন ট্যাংরানিবাসী বন্ধু জেমস হুয়ে। টেরিটিবাজার আর ট্যাংরার দুই চিনেপাড়ায় ঘুরে ঘুরে, চিনা বন্ধুদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়ে, চিনা ইটিং হাউস-ক্লাব-টেম্পল-চার্চ সব জায়গায় চিনা জীবন দেখার ফাঁকে খাতা ভরে উঠত খসড়া লেখায়, ফুটনোটে— সেই সব লেখাই এ বার দু’মলাটে।
ব্ল্যাকবার্ন লেনের চিনা মহল্লা, চিনে বাড়ির দরজা, চিঠির বাক্স, নামসুন ক্লাব, হিং ক্লাবে মাজং খেলা, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে চিনা জুতোর দোকান, পোদ্দার কোর্টের অনতিদূরে সাতসকালে গাঢ় বাদামি রোস্টেড পর্ক-প্রন পাঁপড়-চুং-মিটবল সুপ-কোকোনাট কেকের আমন্ত্রণ, সরল রানার চায়ের দোকানে চিনা আড্ডা, ‘কমলাপুরি’র দোকান থেকে চিনা কবরস্থান আর মুরগি লড়াই, সবই উঠে এসেছে সাদা-কালো চমৎকার সব ছবিতে। ট্যাংরা ও পার্ক স্ট্রিট মিলিয়ে তিন বিখ্যাত রেস্তরাঁর মালকিন মনিকা লিউ রবি-সকালে চলে আসেন চিনাপাড়ার ফুটপাতে, চিৎপুর রোডে জুতোর দোকানের মালিক লি সুং বলেন একশো বছর আগে জাহাজে চেপে ওঁর বাবার কলকাতা আসার গল্প, টেরিটিবাজারের দোকান হ্যাপ-হিং-কোং’এর মালকিন স্ট্রেলা চেনের মৃত্যুর পরে পড়শিরাই দাহকার্য সারেন সিরিটি শ্মশানে... টুকরো টুকরো ঘটনা ও গল্প এ বইয়ের সম্পদ। এই শহরেই ছাপানো চিনা সংবাদপত্র, দেওয়ালে চিনা ভাষায় ভোটের লেখা কিংবা চিনা নোটিস (ছবিতে) মনে করিয়ে দেয় বহমান এক সংস্কৃতির ইতিহাসকে— কিছুটা চেনা তার, অচেনা অনেকটাই।
কার্টুনে বঙ্গ
ঘরের শিল্পীদের কার্টুন-কথা বাঙালি জানে কি? গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ব্যঙ্গচিত্র-অ্যালবাম, রবীন্দ্রনাথের আঁকা ক্যারিকেচারধর্মী ছবি, সুকুমার রায়ের ছবি তার চেনা, কিন্তু দ্বিজেন্দ্র-গানের কলির সঙ্গে ছবি আঁকা চঞ্চলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বা পরশুরামের গল্পের ব্যঙ্গরসাত্মক চিত্রী যতীন্দ্রনাথ সেনকে চেনেন ক’জন? প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী শৈল চক্রবর্তী রেবতীভূষণ দেবব্রত মুখোপাধ্যায় নারায়ণ দেবনাথ চণ্ডী লাহিড়ী, আরও অগণিত শিল্পীর হাতে পুষ্ট কার্টুন-ব্যঙ্গচিত্র-রসচিত্রের ধারাটি। ৪৬তম বর্ষে কিঞ্জল পত্রিকা (সম্পা: চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়) প্রকাশ করেছে ‘কার্টুন সংখ্যা’, বাংলা কার্টুনের দেড়শো বছরে শ্রদ্ধার্ঘ্য। ১৯৮৫-তে এ পত্রিকার কার্টুন সংখ্যায় লিখেছিলেন বাংলা রসচিত্রের দিকপালরা, সেই অমূল্য লেখাগুলির পুনমুর্দ্রণ, সঙ্গে এ কালের কার্টুন-কথা। ছবিতে ১৮৭৪-এ প্রকাশিত বসন্তক-পত্রিকার ব্যঙ্গচিত্র, প্রচ্ছদ থেকে।
উত্তর সন্ধান
বিশ শতকের ইতিহাস ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ ও রাজনীতির বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী। ব্রিটিশ শাসন ছিন্ন করে ১৯৪৭-এ স্বাধীন ভারতের যাত্রা শুরু, একই সঙ্গে প্রবল রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা ও দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাগ, পাকিস্তানের জন্ম। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের অভ্যুদয় বিশ্বকে শুধু চমকেই দেয়নি, বাঙালির ইতিহাসে জাগিয়েছিল আলোকিত ভবিষ্যতের আশা। সেই মাইলফলকেরও পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত। দু’দেশের সম্পর্ক কত প্রসারিত হয়েছে, কতটা প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে, এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজল গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও ‘কাউন্সিল ফর পলিটিক্যাল স্টাডিজ়’ আয়োজিত আলোচনাচক্র: ‘স্বাধীনতা-উত্তর রাষ্ট্র সমাজ রাজনীতি: ভারত ও বাংলাদেশ’। বললেন মুনতাসীর মামুন সুরঞ্জন দাস ভাস্কর চক্রবর্তী মানস ঘোষ স্নেহাশিস শূর মুরশিদা বিন্তে রহমান জাদ মাহমুদ প্রমুখ।
সুবর্ণজয়ন্তী
পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশাল সায়েন্সেস কলকাতা-র। ১৯৭৩-এ প্রতিষ্ঠা, গত পাঁচ দশকে বিদ্যানুশীলন, গবেষণা ও প্রকাশনা-সহ নানা পরিসরে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে এই প্রতিষ্ঠান, এখনকার বঙ্গে ও বিশ্বে মননশীলতার চর্চায় প্রথম সারির নামগুলির অনেকেই জড়িয়ে তার সঙ্গে। গত ২ ফেব্রুয়ারি হয়ে গেল সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান, প্রাক্তন ও বর্তমান অধ্যাপক ও কর্মীদের নিয়ে। ছিলেন অমিয়কুমার বাগচী নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় সুগত মারজিৎ তপতী গুহঠাকুরতা দীপেশ চক্রবর্তী, বর্তমান অধিকর্তা রোসিঙ্কা চৌধুরী, অনুষ্ঠান আহ্বায়ক শৈবাল কর প্রমুখ। গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ও বিশিষ্টজনের উপস্থিতি, দীপেশ চক্রবর্তীর বক্তৃতা সূচিত করল বর্ষব্যাপী উদ্যাপনের।
দুই কবি
জীবনানন্দ দাশের জন্মদিনটি ‘বাংলা কবিতা দিবস’ হিসাবে পালন করে ‘শান্তিনিকেতন সাহিত্যপথ’, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতা শরৎ সমিতির সহযোগিতায় ২৪ অশ্বিনী দত্ত রোডের শরৎ সমিতি সভাঘরে তাদের অনুষ্ঠান বিকাল ৪টা থেকে, থাকবেন রামকুমার মুখোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্টজন, প্রথম বর্ষের ‘শঙ্করীপ্রসাদ বসু স্মৃতি পুরস্কার’-এ ভূষিত হবেন সৌমিত্রশংকর রায়চৌধুরী। থাকবে কবিতাপাঠ, গান, গ্রন্থপ্রকাশ, কথালাপ। অন্য দিকে, রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত গান-সঙ্কলন রবিচ্ছায়া-র (১৮৮৫) নির্বাচিত কিছু প্রেমের গান শোনাল ‘কালিন্দী পুনশ্চ’, গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিশির মঞ্চে, কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্তের পরিকল্পনায়। তরুণ রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রেমের গান ও তথ্য-সঙ্গতে মেদুর সন্ধ্যা।
বুদ্ধির জোর
গোয়েন্দা সুব্রত শর্মা ঢুকে পড়েছেন কলকাতায়, আন্তর্জাতিক বইমেলায় এবং সিনেমাহলেও। কী বলা যায় একে? সমাপতন না রহস্যভেদীর অন্তর্ঘাত? “সে একটা জিনিসই পারে, তা হল ‘সত্য’টা খুঁজতে। তার গায়ে খুব একটা জোর নেই, ভাল গোয়েন্দাদের গায়ের জোর থাকে না, বুদ্ধি থাকে,” গোয়েন্দা সম্পর্কে মন্তব্য স্রষ্টা অঞ্জন দত্তের। তাকে নিয়ে তিনটি রহস্যকাহিনি লিখেছিলেন, বই হয়ে বেরিয়েছিল গত বইমেলায়। নতুন তিনটি এল এ বার, বইমেলায় প্রকাশিত ড্যানি ডিটেকটিভ ২ (প্রকাশক: দে’জ) নামে। এর থেকেই একটি নিয়ে নতুন ছবি বানিয়ে রিলিজ়ও করে ফেলেছেন, রিভলভার রহস্য। “ট্রিটমেন্টে কিন্তু বিস্তর ফারাক বইয়ের গপ্পো আর বড় পর্দার ছবিতে,” মনে করিয়ে দেন লেখক-পরিচালক।
আবার খগম
“সাপের ভাষা সাপের শিস, ফিস্ ফিস্ ফিস্ ফিস্...” মনে পড়ে ‘খগম’ গল্পে ধূর্জটিবাবুর আওড়ানো লাইনগুলো? ফেলু-কাহিনি, শঙ্কুর আখ্যান বাদে সত্যজিৎ রায়ের অন্য যে গল্পগুলি বাঙালিকে মাতিয়ে রেখেছে এ কালেও, তারই একটি। ভরতপুরের বনবাংলো, ইমলিবাবা, বালকিষণ নামের কেউটে, ‘সাপ’ আর ‘শাপ’ মিলেমিশে ভয়ের শিরশিরানি... এ বার নতুন অবতারে, বাংলা গ্রাফিক নভেলে। গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করা কলকাতার সংস্থা ‘গ্রিনিং ট্রি’র তরফে খগম গ্রাফিক নভেল-এর (প্রকাশক: ‘সিঙ্গল শট’, পরিবেশক: দে’জ়) রূপকার শমীক চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বন্ধুরা, অঙ্কনে শুভব্রত বসু, দৃশ্যনাট্য উৎসব মুখোপাধ্যায়ের। এখনকার শিশু-কিশোররা এই গ্রাফিক নভেল পড়ে মূল গল্পটি ও সত্যজিৎ-সম্ভারের প্রতি আকৃষ্ট হোক, সেটিই লক্ষ্য ওঁদের। কমিক্সে, ইংরেজি অনুবাদে কিছু ফেলুদা-কাহিনি ইদানীং সহজলভ্য, এ বার সত্যজিতের অন্য চমৎকার গল্পগুলিকেও গ্রাফিক নভেলে রূপ দিতে চায় এই প্রকাশনা, শুরুটা হল ‘খগম’ দিয়ে। সন্দীপ রায়-সহ গুণিজন উৎসাহ দিয়েছেন, সম্প্রতি বইপ্রকাশ ঘিরে হয়েছে মনোজ্ঞ আলোচনাও।
ক্যালেন্ডারে টেনিদা
সাহিত্যের কালজয়ী চরিত্র কেবল বইয়ের পাতাতেই থেমে থাকে না, তার নবজন্ম হয় শিল্পের অন্য সব মাধ্যমেও। টেনিদা যেমন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা গল্প-কাহিনি-বই আর বইয়ের প্রচ্ছদ ছাপিয়ে, রুপোলি পর্দা-টিভি-কার্টুন-অলঙ্করণ-কমিক্স, কোথায় না গিয়েছে পটলডাঙার থান্ডার ক্লাবের ‘প্রাণভ্রমরা’ টেনিদা, সঙ্গে তার সাঙাত প্যালা-ক্যাবলা-হাবুলরা! বাঙালির জনসংস্কৃতিতে টেনিদা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গের এই জয়যাত্রাকে নতুন বছরের দেওয়াল-ক্যালেন্ডারে তুলে ধরেছে ‘কার্ট বুড়ো’। সুগত রায় সুশান্ত রায়চৌধুরী প্রীতম চট্টোপাধ্যায় ও বন্ধুদের উদ্যোগ— পাতায় পাতায় সত্যজিৎ রায় শৈল চক্রবর্তী নীতীশ মুখোপাধ্যায়-সহ বাংলার বিশিষ্ট শিল্পীদের টেনিদা-অলঙ্করণ, হেডপিস, প্রচ্ছদচিত্র; সুবোধ দাশগুপ্ত ও হর্ষমোহন চট্টরাজের আঁকা কমিক্স-ছবি; চারমূর্তি ছবিতে চণ্ডী লাহিড়ীর করা নামাঙ্কন ও ছবির টাইটল-দৃশ্যের কার্টুন, টেনি-তথ্য। ছবিতে দেবাশীষ দেবের অলঙ্করণে টেনিদা, ক্যালেন্ডারের জন্যই আঁকা।
শিল্প যাপন
শিল্পীর জন্মদিন হয় কি কোনও? ১৬ ফেব্রুয়ারি যোগেন চৌধুরীর পঁচাশি বছরের জন্মদিন, ‘দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস’ তাকে করে তুলেছে ‘সারা বছরের উৎসব’, শিল্পেরই যাপন। এই উপলক্ষে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে শিল্পীর ১৯৮৬-৮৭’র স্কেচখাতা, কলাভবনে শিক্ষকতায় যোগ দেওয়ার সময়ের। এই ধারাতেই প্রতি মাসে প্রকাশ পাবে শিল্পীর আরও স্কেচখাতা, কবিতার পাণ্ডুলিপি, তাঁর আঁকা শান্তিদেব-হেমন্ত-সুচিত্রা প্রমুখের স্বাক্ষরিত প্রতিকৃতি-সঙ্কলন, মিনিবুকে তাঁর প্যারিসের দিনগুলির কথা। দেবভাষা-র লিটল মিউজ়িয়ম কক্ষে প্রতি মাসে হবে শিল্পীর একক চিত্রপ্রদর্শনী— নানা মাধ্যমের নতুন কাজ। এ মাসের প্রদর্শনী ‘রঙ যেন মোর মর্মে লাগে’, সকলের দেখার সুযোগ ১৩-২৮ ফেব্রুয়ারি, রবিবার বাদে দুপুর দুটো থেকে রাত ৮টা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy