Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Dol Yatra

ভুলে যাওয়া দোলের সুর

এ শহরের সাংস্কৃতিক জীবনকে গভীর প্রভাবিত করেন ওয়াজেদ আলি শাহ। তারই একটি দিক ছিল দোলে গানবাজনার জাঁকিয়ে বসা।

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৮
Share: Save:

বাগবাজারের জমিদার নন্দলাল বসু ও পশুপতি বসুর বাড়িতে দোলের রাতে গানের আসর বসেছে। যদিও তিনি সম্মাননীয় অতিথি, তবু গানবাজনার পর সকলের অনুরোধ ঠেলতে পারলেন না। কী ব্যাপার? না, নাচতে হবে! ঘর ভরা আবিরের উপর মসলিন বিছানো হল, তার উপরেই হল নাচ। মসলিন তুলে নেওয়ার পর দেখা গেল, পায়ের আঙুলের ছন্দিত ছোঁয়ায় মসলিনে ফুটে উঠেছে ছবি। এই নাচিয়ে খোদ নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ! পড়ে স্রেফ গপ্পোগাছা মনে হতেই পারে, তবে এই আখ্যানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুরনো কলকাতার দোলের যে উৎসবময়তা, তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই কোনও।

এ শহরের সাংস্কৃতিক জীবনকে গভীর প্রভাবিত করেন ওয়াজেদ আলি শাহ। তারই একটি দিক ছিল দোলে গানবাজনার জাঁকিয়ে বসা। দোল উপলক্ষে গানের আসর বসানোর দস্তুর শহরে আগে থেকেই ছিল, তবে তা কীর্তন ঘিরে। উনিশ শতক থেকে আরও ছড়িয়ে পড়ে দোলের গান। বাগবাজারের বসুবাটী ছাড়াও আজকের ভবানীপুর অঞ্চলের রূপচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের প্রাসাদোপম বাড়ির দোল উৎসবেও এসেছিলেন নবাব। সঙ্গীতরসিক রূপচাঁদবাবুর বাড়ির দোলে নবাবের অনুমতি নিয়ে অংশগ্রহণ করতেন তাঁর দরবারের শিল্পীরাও। মেটিয়াবুরুজেও সাড়ম্বরে পালিত হত হোলি, বেগমদের সঙ্গে রং খেলতেন নবাব। তাঁর রচিত একাধিক ঠুংরিতেও এসেছে হোলির প্রসঙ্গ, ‘পাও লাগাও কর জোড়ি/ মোসে খেলো না হোরি’ ইত্যাদি।

শহরের সঙ্গীতের ইতিহাসে পাথুরিয়াঘাটার ঘোষ বাড়ির কথা বলতেই হয়, দোল উপলক্ষে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও নৃত্যের আসর বসত সেখানে। শোভাবাজারের দেব বাড়ির গৃহদেবতা গোবিন্দজিউ ও গোপীনাথজিউয়ের দোলযাত্রায় পরিবারের সদস্যরা গাইতেন পূর্বপুরুষদের রচিত রাগাশ্রয়ী গান, যেমন কেদারা রাগে একতালে ‘আজি বৃন্দাবনে হোরি খেলা শুনে/ এসেছে গো সব ব্রজাঙ্গনা গণে/ সাধ মনে মনে রাঙ্গাইয়া রঙে/ যুগল চরণ রাখি হৃদাসনে’। মার্বেল প্যালেসে এখনও বসে কীর্তনের আসর। পাশেই চোরবাগানে শীল বাড়িতেও গান হয় দোল উৎসবে। তবে আগে রেকর্ড কোম্পানি থেকে নামী শিল্পীদের দোলের গানের রেকর্ড বেরোত, সেই দস্তুরটি আজ আর নেই।

খেটে খাওয়া মানুষও মেতে উঠতেন হোলির গানে। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দকে বাবুরা যে খুব পাত্তা দিতেন তা নয়। তবু উনিশ শতকে মিসেস বেলনোসের আঁকা ছবি, পুরনো নথি ও স্মৃতিকথায় বিধৃত নগরের উল্লাসচিত্র (ছবি) তুলে ধরে কলকাতার দোল উদ্‌যাপনে সর্বজনের আগ্রহের ইতিহাস। দোল আসছে, পুরনো প্রথার কত কিছুই হারিয়ে ফেলেছে শহর। তবু দোলের দিন কোনও কোনও বাড়ি থেকে ভেসে আসা গানের সুর মনে করিয়ে দেয় বিস্মৃত সেই সময়কথা। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

অনন্য সংগ্রহ

২ মার্চ ছিল কুমার রায়ের জন্মদিন, সে দিনই চমৎকার এক প্রদর্শনী শুরু হল উত্তরপাড়ায় জীবনস্মৃতি আর্কাইভে: ‘বহুরূপী’র ৭৫ বছরে কুমার রায় পরিচালিত নাটকগুলির মূল নাট্যপুস্তিকাগুলি মুখ্য আকর্ষণ। পুস্তিকায় কলাকুশলী-পরিচিতির সঙ্গে নাটকের মূল ভাবনাটি সংক্ষেপে লেখা থাকত, দলের প্রথম যুগ থেকেই শুরু, ১৯৭৯-র পর প্রায় একক ভাবে সামলাতেন কুমার রায়। ‘কুমার কুলায়’ নামে একটি স্থায়ী সংগ্রহশালাও শুরু হল, সেখানে রয়েছে কুমার রায়কে নিয়ে বই, পত্রিকা, সংবাদ-কর্তিকা, তাঁকে লেখা শম্ভু মিত্রের চিঠি, তাঁর অভিনীত পরিচালিত ও লিখিত নাটকের ছবি, আমন্ত্রণপত্র; বেশ ক’টি নাটকের পূর্ণাঙ্গ ভিডিয়ো, তাঁকে নিয়ে বিশিষ্টজনের সাক্ষাৎকার। অরিন্দম সাহা সরদারের ভাবনা ও রূপায়ণে প্রদর্শনীটি দেখা যাবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত, বিকাল ৫টা-রাত ৮টা। আর সংগ্রহশালা খোলা প্রতি সোম বুধ ও শুক্রবার, দুপুর ১২টা-৩টে। কুমার রায়ের ছবিটি সাত্যকি ঘোষের তোলা।

বিজ্ঞান দিবসে

২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখটি জাতীয় বিজ্ঞান দিবস হিসাবে পালিত হয় দেশে, ১৯২৮ সালের এই দিনে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ স্যর সি ভি রামনের ‘রামন এফেক্ট’ আবিষ্কারের প্রতি শ্রদ্ধায়— যে আবিষ্কার দু’বছর পর তাঁকে এনে দিয়েছিল নোবেল পুরস্কার। বিজ্ঞানের নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্‌যাপন করল বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজ়িয়ম (বিআইটিএম)। সকালে পার্ক সার্কাস ময়দান থেকে মিউজ়িয়ম পর্যন্ত ‘বিজ্ঞান পদযাত্রা’ দিয়ে শুরু, বিজ্ঞানীদের নাম-লেখা বেলুন উড়ল শহরের আকাশে। ছিল সায়েন্স শো, কুইজ়, সি ভি রামনকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রের প্রদর্শন, আন্তর্জাল-বক্তৃতা। তাপসকুমার বসুর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে দু’শোরও বেশি পুরনো ঘড়ির সম্ভার নিয়ে শুরু হল একটি প্রদর্শনীও, চলবে ১৫ মার্চ অবধি। এই সবই ছোটদের জন্য, ছোটদের নিয়েই।

ছোট ছবি

পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দাপটে হারিয়ে যায় ছোট ছবির স্বর। তাদের পুঁজি আর উপকরণ অল্প, প্রদর্শন-বিপণনের সুযোগ কম, দর্শকের চোখে পড়ার সুযোগও। এত বাধা পেরিয়েও বহু তরুণ-তরুণী তৈরি করছেন ‘শর্ট ফিল্ম’। তাঁদের কেউ প্রশিক্ষিত, কেউ বা স্বশিক্ষিত, কিন্তু ছবির বিষয় ও ভাষায় ঠিকরে পড়ে অভিনবত্ব। এমনই এক গুচ্ছ ছোট ছবি দেখাবে ‘বই-চিত্র’— ‘ছোটামোটা ফাউন্ডেশন’-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে। গত কয়েক বছর ধরে ছবির জগতে ব্যতিক্রমী প্রতিভার সন্ধান ও সাহায্যই উদ্দেশ্য ওদের, বাছাই ও পুরস্কৃত কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি দেখা যাবে ওদের উদ্যোগে ৪ ও ৫ মার্চ, কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিন তলায় বই-চিত্র সভাগৃহে, বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা। তরুণ পরিচালকেরা থাকবেন দর্শকের সঙ্গে সংলাপে।

আরণ্যক

“শিশুকালে বাবা-মা বাঙালিয়ানার যে বীজ বপন করে দিয়েছিলেন আমাদের মধ্যে তা আজও সমান বিদ্যমান,” লিখেছেন ফেলুদা তথা সব্যসাচী চক্রবর্তী। কলকাতায় জন্ম, দিল্লিতে শৈশব, তাঁর বেড়ে ওঠার গল্প এ বার বাঙালির হাতে: ক্যামেরার সামনে/ ক্যামেরার পিছনে (সম্পা: আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়, প্রকা: আশাদীপ) বই রূপে। ফিল্ম ও নাটকে অভিনয়ের সমান্তরালে তাঁর যে আরণ্যক জীবন, তা তাঁর অভিনয়-জীবনের চেয়েও রোমহর্ষক— দেশ-বিদেশে জঙ্গল পাহাড় নদীতে তাঁর ভ্রমণ ফেলুদার অ্যাডভেঞ্চারের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। পাশাপাশি আছে তাঁর ফোটোগ্রাফির নেশার কাহিনিও। বাড়তি আকর্ষণ তাঁর তোলা অরণ্য অভিযানের স্থিরচিত্রগুলি।

নারী নাটক

১৯৭৩-এ পথ চলা শুরু সায়ক নাট্যদলের, বছরভর তাই ‘সায়ক ৫০ উৎসব’। উৎসবের অঙ্গ গুণিজন সম্মাননাও, যে ধারাটি ওঁরা বয়ে চলেছেন কয়েক দশক ধরে। আগামী কাল ৫ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিনার্ভা থিয়েটারে সম্মানিত হবেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও মাধবী মুখোপাধ্যায়, মঞ্চনির্মাণ শিল্পী অজিত রায়ও। বিভাস চক্রবর্তীর রচনা ও নির্দেশনায় অভিনীত হবে ‘অন্য থিয়েটার’-এর স্বল্পদৈর্ঘ্যের নাটক অন্ধকারের উৎস হতে, অভিনয়ে মেঘনাদ ভট্টাচার্য সীমা মুখোপাধ্যায় ও কৌশিক চক্রবর্তী। অন্য দিকে, বিশ্ব নারী দিবসের আবহে রাজ্যের ছ’টি জেলায় ছ’টি পর্যায়ে ‘উদীয়মান নারীর মঞ্চ নাট্যোৎসব’ করছে ‘মানিকতলা দলছুট’, প্রথম পর্ব কলকাতায় মুক্তাঙ্গন রঙ্গালয়ে ৮ মার্চ। দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেখা যাবে ছ’টি নাটক, নারী নাট্যকার ও পরিচালকদের নিবেদনে।

চিত্রনাট্যশিল্প

“যখনই খবর পেতেন বাংলা সাহিত্য অবলম্বনে কোনও ফিল্ম তৈরি হতে চলেছে, তার একটি খসড়া চিত্রনাট্য লিখে ফেলতেন। শুধু বাংলা কেন, হলিউডের ছবিও বাদ যেত না। তার পর সেসব ছবি মুক্তি পেলে নিজের লেখা চিত্রনাট্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতেন।” লিখেছেন সন্দীপ রায়, চিত্রনাট্য প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় গ্রন্থের ভূমিকায়। সুস্মৃতি প্রকাশনীর নতুন এই বইটির সম্পাদনাও তাঁরই, চিত্রনাট্য নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন ফিল্ম সোসাইটি জার্নাল ও অন্যান্য পত্রপত্রিকায় যে লেখাগুলি লিখেছিলেন সত্যজিৎ রায়, সেগুলিই দু’মলাটে। এখন সত্যজিৎ পত্রিকা (সম্পা: সোমনাথ রায়) বছর পনেরো আগে তাদের ‘চিত্রনাট্য’ সংখ্যায় প্রায় সব লেখাই প্রকাশ করেছিল, এ বার এই বইয়ে যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকটি লেখা, বাড়তি পাওয়া পথের পাঁচালী ও দেবী-র চিত্রনাট্যাংশের ভাষ্য, এব‌ং মূল গল্প-সহ বাক্স বদল ছবির সত্যজিৎ-কৃত পূর্ণাঙ্গ চিত্রনাট্য। ছবিতে নায়ক চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্টের অংশ।

মার্জিন-কথা

বইয়ের পাতায় মন দিয়ে পড়ি ছাপা হরফ, ফাঁকা জায়গাটুকু নজর করি না। অথচ মার্জিনই ‘ধরে রাখে আমাদের সমগ্র পাঠবস্তুকে, হয়ে ওঠে আমাদের পাঠ প্রক্রিয়ার অনিবার্য অঙ্গ’। পাঠকমনের আয়নাও সে, পড়তে পড়তে কত কিছু আমরা লিখে রাখি ওই শূন্য স্থানটুকুতে, তা থেকেই জন্ম হয় ‘মার্জিনালিয়া’-র। বোধশব্দ পত্রিকা (সম্পা: সুস্নাত চৌধুরী) মার্জিনকেই করে তুলেছে একটা গোটা সংখ্যার বিষয়। প্রাচীন পুঁথি, বই, ছবি, কমিক্স, আলোকচিত্র, ই-বুক... মার্জিন পেরিয়ে এসেছে অনেক পথ। প্রায় আড়াইশো পাতার পত্রিকায় ধরা মার্জিনের সেই বিবর্তন। মুদ্রণ সংস্কৃতির বিশেষ দিক হিসাবে মার্জিন নিয়ে বিশদ আলোচনা যেমন রয়েছে, তেমনই স্থান পেয়েছে বিশিষ্ট লেখক-শিল্পীদের ব্যক্তিগত মার্জিন-ভাবনা। রবীন্দ্রনাথ থেকে কমলকুমারের মার্জিন-লেখা, বিদ্যাসাগর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মৃণাল সেন শঙ্খ ঘোষ প্রমুখের মার্জিন-মন্তব্য, মার্জিন নিয়ে কথোপকথন, বিদেশি চিন্তকদের লেখার তরজমায় অতুলন রসদ। ছবিতে খুদ্দুর যাত্রা-য় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মার্জিন-শিল্প’।

জন্মশতবর্ষে

‘ভালোবাসি ভালোবাসি’, ‘আজি যত তারা তব আকাশে’, ‘কোন খেলা যে খেলব কখন’, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে’... গানগুলি পর পর ভাবলে অরবিন্দ বিশ্বাসকে মনে না পড়ে উপায় নেই। হেমন্ত-দেবব্রতর ‘রাজত্ব’কালেও আকাশবাণীর অনুরোধের আসর, রবীন্দ্রসদনের কবিপ্রণাম-সহ নানা অনুষ্ঠানে পরনের ধুতি-পাঞ্জাবির মতোই শুভ্র শোভন স্বতন্ত্র ছিল ওঁর গায়কি। ডাক্তারি পড়া ছেড়ে রবীন্দ্রগান শিখতে শান্তিনিকেতনে আসা, শৈলজারঞ্জন মজুমদারের সাহচর্য। রবীন্দ্রনাথের গানের ‘ট্রেনার’ হিসাবে ছিলেন বহু শিল্পীর ভরসা, অতনু সান্যাল সুব্রত সেনগুপ্ত অচিন মুখোপাধ্যায় রাজকুমার মিত্রেরা ওঁর সুযোগ্য ছাত্র। এ বছর অরবিন্দবাবুর শতবর্ষ, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইন্দুমতী সভাগৃহে তাঁকে স্মরণ করল ‘সুরনন্দন ভারতী’— গান, স্মারকপত্র প্রকাশ, শিল্পীর নামাঙ্কিত সম্মাননা অর্পণের মধ্য দিয়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

Dol Yatra Kolkata Karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy