বিষাক্ত: শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ গাড়ি থেকে বেরোনো এমনই কালো ধোঁয়া। রবিবার, ধর্মতলা চত্বরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
যাঁরা ধূমপান করেন, এত দিন তাঁদের মধ্যেই ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকত। কিন্তু গত কয়েক বছরের সমীক্ষা বলছে, যাঁরা ধূমপান করেন না তাঁদের মধ্যেও এই প্রবণতা এখন দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসকেদের মতে, কোনও শিশুর হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র থাকলে এমনিতেই তাদের সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র থাকা শিশুদের এমন হারে নিউমোনিয়া হচ্ছে যে, তাদের অনেক ক্ষেত্রেই বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এই স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আমূল পরিবর্তনের পিছনে বায়ুদূষণই দায়ী বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য আরও উদ্বেগজনক। যেখানে বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বে পাঁচ বছরের অনূর্ধ্ব কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শিশু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বায়ুদূষণের কারণে মারা যাচ্ছে। যে তথ্য আজ, সোমবার ‘জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস’-এ চিন্তায় রেখেছে চিকিৎসক-সহ পরিবেশকর্মীদের। কারণ, বায়ুদূষণের নিরিখে কলকাতার মানও যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের ধারণার সপক্ষে প্রমাণ মিলছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য থেকেও।
নভেম্বরের শেষ ১০ দিনের বায়ুসূচক
তারিখ কলকাতা দিল্লি
• ২১ ২০২ (খারাপ) ৩৬৬ (খুব খারাপ)
• ২২ ১৯৫ (মাঝারি) ৩৬০ (খুব খারাপ)
• ২৩ ২৪১ (খারাপ) ৩১২ (খুব খারাপ)
• ২৪ ২৯০ (খারাপ) ২৩৪ (খারাপ)
• ২৫ ২৫৯ (খারাপ) ২৫২ (খারাপ)
• ২৬ ২৬৭ (খারাপ) ২৭০ (খারাপ)
• ২৭ ২৫৩ (খারাপ) ১৩৪ (মাঝারি)
• ২৮ ১৮১ (মাঝারি) ১০৬ (মাঝারি)
• ২৯ ১৯৩ (মাঝারি) ৮৪ (সন্তোষজনক)
• ৩০ ২২৭ (খারাপ) ১৯৩ (মাঝারি)
সূত্র: কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সেই তথ্য বলছে, নভেম্বরের শেষ দশ দিনের মধ্যে সাত দিনই কলকাতার বাতাসের মান ছিল ‘খারাপ’। এ ছাড়া বায়ুসূচকের নিরিখে ছ’দিনই দিল্লির বাতাসের থেকে কলকাতার বাতাসের গুণমান ‘খারাপ’ ছিল। ফলে এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, পরিবেশকর্মীরা যে উদ্বিগ্ন হবেন সেটাই স্বাভাবিক।
বায়ুদূষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা চলছে। নভেম্বরের শুনানিতেই পরিবেশ আদালত রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, শহরে বায়ুদূষণের উৎসগুলি চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়ন্ত্রণের জন্য কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে এবং তার জন্য কত সময় লাগবে, সেটাও নির্দিষ্ট ভাবে আদালতকে জানাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে জরিমানার মুখেও পড়তে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে আদালত। মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘বায়ুদূষণ নিয়ে রাজ্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ করলে পরিস্থিতি এত খারাপ হত না।’’ আর এক পরিবেশকর্মী অজয় মিত্তল বলছেন, ‘‘কলকাতা যাতে দিল্লি না হয়, সে কারণে এখনই সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে।’’
‘জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস’ উপলক্ষে শহরে চিকিৎকদের একটি আলোচনাসভারও আয়োজন করা হয়েছে এ দিন। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট চিকিৎসক সুমন মল্লিকের।
সুমনবাবু শহরের বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন, যে এলাকা দিয়ে যানবাহন বেশি যাতায়াত করে বা নির্মাণের কাজ চলছে, সেখানকার বায়ুর দূষণের মাত্রা দিল্লির থেকেও খারাপ। কারণ, সেখানে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুমনবাবুর কথায়, ‘‘শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা তো বেড়েছেই। কিন্তু পিএম ১০-এর কারণে গলার অসুখ বা শ্বাসনালীর উপরিভাগের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পিএম ২.৫ আরও বেশি বিপজ্জনক। সেগুলি ফুসফুসের প্রান্তিক জায়গায় গিয়ে জমা হচ্ছে বা রক্তেও মিশে যাচ্ছে।’’ শিশু হৃদ্রোগ চিকিৎসক সঞ্জীবন ঘোষ বলছেন, ‘‘দূষণহীন জায়গায় বসবাস করলে বাচ্চাদের হৃৎপিণ্ডে ছিদ্রজনিত সমস্যার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু শহরের বাতাসের মান যেখানে পৌঁছেছে, বাচ্চাদের হৃদ্যন্ত্রে কোনও সমস্যা থাকলে তা বহু গুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই চিন্তার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy