সাইকেল নিয়ে শহরের পথে শতঞ্জীব (বাঁ দিকে)। বাইসাইকেল মেয়রের লোগো (উপরে)। নিজস্ব চিত্র
বায়ু দূষণের নিরিখে মাঝেমধ্যেই দেশের দূষণ-রাজধানী দিল্লিকে পিছনে ফেলে দেয় কলকাতা। এ শহরের বাতাসের মান নিয়ে চিন্তিত পরিবেশকর্মী থেকে বিজ্ঞানী, সকলেই। আর শহরে বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস গাড়ি ও মোটরবাইকের ধোঁয়া। এই পরিস্থিতিতে শহরে যাতায়াতের জন্য সাইকেল ব্যবহারের উপযোগিতা নিয়ে কয়েক বছর ধরে লাগাতার প্রচার করে চলেছে ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। এ বার ‘বাইসাইকেল মেয়র’ হিসেবে নির্বাচিত হলেন সেই সংগঠনেরই এক সদস্য শতঞ্জীব গুপ্ত।
সারা পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলিতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষের রোজকার যাতায়াতের মাধ্যম হোক সাইকেল, এই লক্ষ্য নিয়ে আমস্টারডামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (বিওয়াইসিএস) শুরু করেছে ‘ফিফটি বাই থার্টি’ নামে এক উদ্যোগ। সেই উদ্যোগেরই একটি অংশ ‘বাইসাইকেল মেয়র’। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে সাইকেল ব্যবহারের সুফল মানুষের কাছে তুলে ধরা, সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে এ নিয়ে প্রচার চালানো এবং সাইকেল চালানোর পরিকাঠামো গড়ে তোলার পক্ষে সওয়াল করেন প্রতিটি শহরের বাইসাইকেল মেয়র। আগেই ভদোদরা, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, গুয়াহাটি, কোঝিকোড়, জয়পুরের মতো একাধিক শহর যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী এই উদ্যোগের সঙ্গে। এ বার তাতে জুড়ল কলকাতার নামও। বাইসাইকেল মেয়র নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া চলছে হাওড়াতেও।
কী ভাবে নিযুক্ত করা হয় বাইসাইকেল মেয়র? পেশায় চিত্রগ্রাহক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা শতঞ্জীব জানাচ্ছেন, তিনি নিজে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য সাইকেল ব্যবহার করেন। এ ছাড়াও তিনি সাইকেল ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। আমস্টারডামের ওই সংস্থার তরফে বিভিন্ন শহর থেকে এমন কাউকেই বাইসাইকেল মেয়র হিসেবে নিযুক্ত করা হয় জানতে পেরে আবেদন করেন শতঞ্জীব। টেলিফোনে ইন্টারভিউয়ের পরে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
শুধু পরিবেশের পক্ষে উপকারীই নয়, সাইকেল চালানোয় শরীর-মন ভাল থাকে। কমে স্ট্রেস হরমোন, আর্থিক দিক থেকেও সুবিধা হয় চালকের— জানাচ্ছেন শতঞ্জীব। তাঁর আক্ষেপ, ইউরোপ ও চিনের বহু শহরে যখন সাইকেলের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে, তখন কলকাতার ৬২টি রাস্তায় সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ। শতঞ্জীব বলেন, ‘‘পরিবেশ নিয়ে এত আলোচনার মধ্যেও এখানে সাইকেলের সুবিধার দিকটি একেবারেই উপেক্ষিত। সরকারি ভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে খুব ভাল হয়। সম্প্রতি ভারতের বাইসাইকেল মেয়রদের নিয়ে বেঙ্গালুরুতে এক আলোচনাসভায় সেখানকার পুলিশ কমিশনারও সাইকেলের পক্ষে সওয়াল করেছেন।’’
কী ধরনের সহায়তা মিলবে বিওয়াইসিএস-এর তরফে? শতঞ্জীব জানান, শহরের প্রয়োজন মতো সাইকেল সংক্রান্ত কর্মসূচি তৈরি করতে হবে তাঁকে। প্রচার এবং আর্থিক সহায়তার দিক থেকে সাহায্য করবে ওই সংস্থাটি। সাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা তোলার এবং পরিকাঠামো গড়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা ছাড়াও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাতে চান তিনি। স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কাছে গিয়ে সাইকেল নিয়ে কথাও বলতে চান শতঞ্জীব। অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে মানুষ সাইকেলকে ব্রাত্য করে বেছে নেন মোটরবাইক বা গাড়ি— এই ভাবনা থেকেও তরুণ প্রজন্মকে বার করে আনতে চান তিনি।
আরও পড়ুন: ঝড়ে ভাঙল হোর্ডিং, টনক কি নড়ল
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের পক্ষে সাইকেল খুবই ভাল। কিন্তু এ শহরের সঙ্কীর্ণ রাস্তাঘাটে নিরাপদে সাইকেল চালানোর পরিসর খুবই কম। তবে নিউ টাউনের মতো যে জায়গাগুলি পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠছে, সেখানে এই পরিকাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করা যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy