দুর্গার মহাস্নানে লাগে ৩৬ রকমের উপাদান। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
বাংলায় দেবী দুর্গা ঘরের মেয়ে উমা হিসেবে পূজিতা। তাই তাঁকে সাজিয়ে নেওয়ায় কোনও ত্রুটি রাখা হয় না। দুর্গা একই সঙ্গে গিরিরাজের কন্যা, শিবের পত্নি এবং জগন্মাতা। এই ভাবনা থেকেই দেবীর রূপসজ্জার নানা আয়োজন লাগে দুর্গাপুজোয়। দেবীকে স্নান করানোর আয়োজনও বিপুল।
এখন করোনা আবহে চরণামৃত পান কতটা হচ্ছে বা আদৌ হচ্ছে কি না সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। তবে পুজোর আচার মেনে দেবীর মহাস্নান হবেই। সেই প্রতীকী স্নানের জলই চরণামৃত হিসেবে ভক্তেরা ভক্তিভরে পান করেন, মাথায় ছোঁয়ান। ইদানীং রূপসজ্জার জন্য অনেকেই ভেষজ উপাদানে ভরসা রাখেন। আর পুজোয় তো সবই ভেষজ। শুনতে অবাক লাগলেও, দুর্গাপুজোর বিধিতে দেবীর দাঁত মাজানোর কথাও বলা রয়েছে। আট আঙুল পরিমাণ সরু বেলকাঠ দিয়ে দেবী দাঁত পরিষ্কার করেন। কুলকুচি করার জন্য গরম জল নিবেদন করতে হয়। স্নানের আগে গায়ে মাখার জন্য তেল ও কাঁচা হলুদ রাখতে হয়।
গঙ্গার জল ছাড়াও দেবী স্নান করেন শঙ্খ জলে। শঙ্খ অর্থাৎ শামুকের দেহে যে জল থাকে তাকে পরিশ্রুত মনে করা হয়। এ ছাড়াও ঝর্না ওতীর্থের জলও লাগে দেবীর মহাস্নানে। দুধ, দই, ঘিয়ের সঙ্গে সনাতন বিশ্বাসে পবিত্র এবং রোগ বিনাশক মনে করা গোময়, গোমূত্রও লাগে। সব মিলিয়ে এটাকে বলা হয় পঞ্চগব্য। আর লাগে পঞ্চ কষায়। তার মধ্যে রয়েছে জাম, শিমূল, বেড়েলা, বকুল ও টোপাকুল গাছের ছাল ভেজানো জল। আর দেবীর মুখ পরিষ্কারের জন্য চাই হাতির দাঁতে করে উপড়ে তোলা মাটি। এ ছাড়াও বেশ্যাদ্বার, রাজদ্বার-সহ নানা স্থানের মাটিও দরকার হয়। নিয়ম অনুসারে লাগে উইয়ের ঢিবির মাটিও। আর সব শেষে আটটি কলসিতে পূর্ণ বিভিন্ন স্থানের জল দিয়ে হয় দেবীর মহাস্নান। মধু তো থাকেই সেই সঙ্গে দেবীর শরীরের ময়লা তুলতে লাগে চিনি। এই কারণেই চরনামৃতের স্বাদ মিষ্টি হয়।
মহামায়ার মহাস্নানে কী কী এবং কেন প্রয়োজন তার সবিস্তার আলোচনা রয়েছে নবকুমার ভট্টাচার্যের লেখা ‘দুর্গাপুজোর জোগাড়’ বইতে। সেখানে দেবীর মহাস্নানের জন্য ৩৬টি দ্রব্যের ফর্দেরও উল্লেখ রয়েছে।
আর তা থেকেই বোঝা যায়, সব নিয়ম মেনে পুজো হলে চরণামৃতে থাকে ৩৬ রকম উপাদান। তৈল হরিদ্রা, শঙ্খ জল, গঙ্গা জল, উষ্ণোদক (গরম জল), গন্ধোদক, শুদ্ধ জল, পঞ্চগব্য, মধু, কুশোদক, পুষ্পোদক, ফলোদক, ঘৃত, দুগ্ধ, নারিকেলোদক, ইক্ষুরস, দধি, তিলতেল, বিষ্ণুতেল, শিশিরোদক, রাজদ্বারের মৃত্তিকা, চতুস্পথ (চার মাথার মোড়) মৃত্তিকা, বৃষশৃঙ্গ মৃত্তিকা, গজদন্ত মৃত্তিকা, বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা, নদীর উভয় কুল মৃত্তিকা, গঙ্গা মৃত্তিকা, সর্বতীর্থের মৃত্তিকা, সাগরোদক, সর্বৌষধি, মহৌষধি, পঞ্চকষায়, বৃষ্টি জল, সরস্বতী নদীর জল, পদ্মরেণু মিশ্রিত জল, নির্ঝরোদক, সর্বতীর্থের জল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy