উধাও: এলাকার নাম লেখা বোর্ডে নেই বাংলার ছোঁয়া। নিজস্ব চিত্র
সমস্ত রাজ্য তাদের নিজস্ব ভাষাকে অগ্রাধিকার দেয়। তা হলে বাংলাকে কেন দেওয়া হবে না? বাংলা ভাষার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হবে। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, সরাসরি এই প্রশ্ন তুলে দিল কলকাতা পুরসভা! যার ফল, পুর পরিষেবা দেওয়ার বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে এ বার ‘ভাষা বিপ্লব’ শুরু করতে চাইছে পুরসভা। এর প্রথম ধাপ হল, রাস্তার নামের ফলকে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রথমে বাংলায় লেখা হবে। তার নীচে থাকবে ইংরেজিতে। রাস্তার নামের জায়গায় এই দুই ভাষাকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
বেশির ভাগ জায়গায় রাস্তার নামের ক্ষেত্রে ভাষার এই ক্রমতালিকাই অনুসরণ করা হয়। সাম্প্রতিক কালে অনেক জায়গায় তাতে ব্যতিক্রম চোখে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। সম্প্রতি পুরসভার নজরে এসেছে, অনেক এলাকায় সেই নামের ফলকে কোনও কোনও কাউন্সিলর নিজেদের নামের পাশাপাশি, রাস্তার নাম হিন্দি বা উর্দুতে লিখে দিচ্ছেন। রাস্তার নামের ক্ষেত্রে এই ‘বিচ্যুতি’ বন্ধ করতে চাইছে পুরসভা। তাই পুরসভার দাবি, নাম লেখা হোক বাংলায়। পুরসভা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই একটি প্রস্তাব পুর কমিশনারের অফিসের তরফে মেয়রের অফিসে জমা পড়েছে।
পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, যে ভাবে শহরে হিন্দিভাষীর সংখ্যা বেড়েছে, তাতে বাংলা ভাষার প্রভাব কোথাও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, প্রাথমিক ভাবে পুর পরিষেবা দেওয়াটাই পুরসভার কাজ, কিন্তু তার পরেও বাড়তি যে ‘সামাজিক দায়িত্ব’ থাকে, তাকে অগ্রাহ্য করা ঠিক নয়। তাই বাংলা ভাষার উপরে এই জোর। এক পুর আধিকারিকের কথায়,
‘‘অন্য সব শহরেই নিজের ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তা হলে কলকাতাতেই বা তা হবে না কেন! বাংলা প্রথমে থাকবে। সকলের বোঝার জন্য পরে থাকবে ইংরেজি। আর অন্য কোনও ভাষা ফলকে থাকলে বিষয়টি ঘিঞ্জি হয়ে যাবে।’’
যদিও এই ‘ভাষা-বিপ্লব’-এর পিছনে অনেকে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন। যেখানে শহরে বিজেপি-র ভোটের শতকরা হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। পুরসভার ওয়ার্ডগুলিতেও জোড়া ফুল ও পদ্মফুলের ভোটের ব্যবধান ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। অ-বাংলাভাষীদের কারণে শহরের অনেক ওয়ার্ডেই পদ্মফুল ফুটেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষণে ধরা পড়েছে। ফলে তারই উল্টো অভিমুখে গিয়ে পুরসভার এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন অনেকে।
বিজেপি কাউন্সিলরদেরও দাবি, ভোটের ফলাফল দেখেই হঠাৎ করে ‘ভাষা-চৈতন্য’ জেগেছে পুরসভার। না হলে এত দিন তো এটা নিয়ে কোনও কথা ওঠেনি! তাঁদের আরও বক্তব্য, এ ভাবে পুরসভা আসলে বিভেদকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতের কথায়, ‘‘হিন্দি তো রাষ্ট্রভাষা। রাষ্ট্রভাষাকে অগ্রাহ্য করে কী ভাবে কাজ করা যাবে? এটা কোনও কথা হল না কি!’’ আর এক বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় ওঝা বলেন, ‘‘যে এলাকায় যে ভাষাভাষী মানুষ বাস করেন, সেই এলাকায় সেই ভাষাতেই লেখা হয়। হঠাৎ করে পুরসভা ভাষা নিয়ে কেন পড়ল, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। এটা নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করতে চাইছে পুরসভা!’’
যদিও পুর প্রশাসনের দাবি, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্কই নেই। পুরোটাই ভাষা-সংস্কৃতির বিষয়। বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘অনেক কাউন্সিলরই নিজেদের নাম লিখে রাস্তার নাম নিজেদের ভাষায় লিখে দিচ্ছেন। এগুলো চলবে না। আমরা ঠিক করেছি, রাস্তার নাম প্রথমে বাংলায় লিখতে হবে। তার পরে ইংরেজিতে লেখা হবে। ফলে সাইনেজ মূলত বাংলা ও ইংরেজিতেই লেখা হবে।’’ পুরসভা সূত্রের এও খবর, রাস্তার নামকরণের ফলক হলুদ বা নীল-সাদা রঙের হবে, এমনটাও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুতই তা চালু করা হবে।
বহু আগে সারা শহরে যে ভাবে ইংরেজিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হত, তা দেখে আক্ষেপ করেছিলেন সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রতি পদে বাংলা উপেক্ষিত বলে অভিযোগ অনেকেরই। পুর কমিশনারের কথায়, ‘‘বাংলা নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের গর্ব করা উচিত। এটাই আমরা চাইছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy