Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

পানীয় জলে গাড়ি ধোয়ার ‘বিরাট-ঘটনা’ চায় না শহর!

পানীয় জল দিয়ে গাড়ি ধোয়ার ওই ‘বিরাট-ঘটনা’র পথে হাঁটতে চাইছে না কলকাতা!

কলের জলে ধোয়া হচ্ছে গাড়ি। ভিআইপি রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ

কলের জলে ধোয়া হচ্ছে গাড়ি। ভিআইপি রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

গত মাসেই গুরুগ্রাম পৌর সংস্থার পাঁচশো টাকার জরিমানার মুখে পড়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। অভিযোগ ছিল, তাঁর বাড়িরই এক কর্মী পানীয় জল দিয়ে গাড়ি ধুচ্ছিলেন। ঘটনাটি দেখা মাত্রই জরিমানা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট পৌর সংস্থার কর্মীরা। সে সময়ে অবশ্য বিশ্বকাপের জন্য ইংল্যান্ডে ছিলেন কোহলি। গুরুগ্রাম পৌর সংস্থা সূত্রের খবর, কোহলি পরিবার জরিমানার টাকা মিটিয়েও দিয়েছিল।

পানীয় জল দিয়ে গাড়ি ধোয়ার ওই ‘বিরাট-ঘটনা’র পথে হাঁটতে চাইছে না কলকাতা! পরিস্রুত জলে যাতে গাড়ি ধোয়া না হয়, তাই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘কার ওয়াশিং পয়েন্ট’ তৈরি করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। কোথায় কোথায় ওই পয়েন্ট করা যায়, ইতিমধ্যে সেই জায়গা চিহ্নিত করা শুরু হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ভবানীপুর, গরচা-সহ একাধিক জায়গায় ওই পয়েন্ট তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। পানীয় জলের অপচয় যাতে না হয়, সে কারণেই এই পদক্ষেপ বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘এক একটি গাড়ি ধুতে প্রায় ৩০-৪০ লিটার জল লাগে। অথচ শহরের বহু জায়গায় সেই পরিস্রুত জলে গাড়ি ধোয়া হচ্ছে। সেটা আমরা বন্ধ করতে চাইছি। সে কারণেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় কার ওয়াশিং পয়েন্ট তৈরি করবে পুরসভা।’’ চলতি সপ্তাহেই মেয়র ফিরহাদ হাকিমের অনুমোদন নিয়ে এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি হতে পারে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

কার ওয়াশিং পয়েন্টগুলিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গঙ্গার অপরিস্রুত জল পৌঁছে যাবে। চৌবাচ্চা ও স্ট্যান্ডপোস্ট করে দেওয়া হবে সেখানে, যাতে নিজেদের গাড়ি ধোয়ার সুযোগ পান মানুষ। যে সব জায়গায় গাড়ির চাপ বেশি, সেখানে এই পয়েন্ট করা যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শহরের কয়েকটি জায়গায় এখনও এমন চৌবাচ্চা ও স্ট্যান্ডপোস্ট দেখা যায়, যেখান থেকে গঙ্গার ঘোলা জল নিয়মিত উপচে পড়ে। কিন্তু সেগুলি ‘কার ওয়াশিং পয়েন্ট’ বলে চিহ্নিত করা নেই। তবে অন্য কাজের পাশাপাশি সেখানে গাড়িও ধোয়া হয় অনেক সময়ে। কিন্তু কার ওয়াশিং পয়েন্টে শুধুই গাড়ি ধোয়া হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

পুরকর্তাদের বক্তব্য, অন্য শহরগুলিতে নদী থাকলেও তা ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। সে দিক থেকে কলকাতা এখনও তুলনামূলক ভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। কারণ, এখানে গঙ্গাজলের সরবরাহে এখনও কোনও ভাটা পড়েনি। কিন্তু যে হারে অহেতুক জল খরচ হচ্ছে শহরে, তাতে ‘ওয়াটার স্ট্রেসড সিটি’-র তালিকায় ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়ে ফেলেছে কলকাতা। তাই জলের ভাঁড়ারের অপচয় ঠেকাতে এখন থেকেই সতর্ক হতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

তাই পরিস্রুত পানীয় জলের অপচয় বন্ধ করতে জারি হতে যাওয়া নির্দেশিকায় কার ওয়াশিং পয়েন্ট ছাড়া আরও কয়েক দফা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হতে পারে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। সেখানে রাস্তার ধারের কলের মুখ ভেঙে অনবরত বেরিয়ে যাওয়া পানীয় জল বন্ধ করার কথা যেমন থাকবে, তেমনই বাগানের জন্য পরিস্রুত জলের ব্যবহারও বন্ধ করার কথা বলা হবে। পানীয় জলের অপচয় বন্ধ করতে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশে বারবার বর্ষার জলের সংরক্ষণ এবং বর্জ্য-জল (ওয়েস্ট ওয়াটার) রিসাইক্লিং করে অন্য কাজে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। পুরসভার উল্লেখিত দফায় সেগুলি থাকতে চলেছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘বড় বড় বহুতলের বাগানে অনেক সময়েই পরিস্রুত জল দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে বর্জ্য-জল পরিশোধন করে সে কাজে ব্যবহার করার কথা বলা হবে। রাস্তার ধারের কলে স্টপ কক লাগানো হবে। জল অপচয় রোধে আর কোন কোন দিকগুলির দিকে নজর দেওয়া যায়, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Water Drinking Water KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy