Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
KMC

KMC: রিপোর্টের হদিস নেই, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে তৈরি হবে সেল

যে ‘রীতি’ বলে, এই পুর প্রশাসনে কাজ শুরু হয়, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা আর শেষ হয় না!

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:৫৬
Share: Save:

নির্ধারিত সময়ের থেকে প্রায় দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞ কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়েনি। কবে সেই রিপোর্ট জমা পড়বে বা আদৌ পড়বে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান পুরকর্তাদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের জন্য পৃথক একটি সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

কারণ, প্রস্তাবিত সেলের ‘ভবিষ্যৎ’ও বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের মতো হবে কি না, অর্থাৎ ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু তো হল, কিন্তু তার সুফল পাওয়া যাবে কি না— সংশয় সেখানেই। পুর প্রশাসনের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, বিশেষজ্ঞ কমিটির দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও জমা না পড়া বা তার কোনও হালহদিস না থাকাই পুরসভার ‘রীতি’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যে ‘রীতি’ বলে, এই পুর প্রশাসনে কাজ শুরু হয়, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা আর শেষ হয় না!

যদিও পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বায়ুদূষণ সংক্রান্ত দৈনন্দিন রিপোর্ট তৈরি, পুরসভার অন্য দফতর বা রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখা, সেই সঙ্গে মূলত ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ (এনসিএপি) কর্মসূচির বাস্তবায়ন ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্বে থাকবে প্রস্তাবিত সেল। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘এনসিএপি কর্মসূচির বাস্তবায়ন করতেই এই সেল তৈরি করা হয়েছে। কারণ, কর্মসূচি যে ভাবে দেশ জুড়ে বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে কেন্দ্র, রাজ্য স্তর ছাড়াও শহরকেন্দ্রিক পুর কমিশনারের তত্ত্বাবধানে পৃথক কমিটি বা সেল তৈরির কথা বলা হয়েছে।’’ কিন্তু বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট পুরকর্তা।

পুরসভা সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত সেলের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে সাতটি পদে লোক নিয়োগ করা হবে— দু’জন করে সিনিয়র প্রজেক্ট অ্যাসোসিয়েট (২ জন), এক জন করে প্রজেক্ট অ্যাসোসিয়েট (টেকনিক্যাল), প্রজেক্ট অ্যাসোসিয়েট (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) এবং প্রজেক্ট অ্যাসোসিয়েট (আইটি) ও দু’জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। উপযুক্ত প্রার্থী নিয়োগের জন্য পুরকর্তা এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য নিয়ে গঠিত একটি নির্বাচক কমিটিও থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের নভেম্বরে কলকাতার বায়ুদূষণ কোন পথে কমানো যাবে, সে ব্যাপারে সঠিক দিক-নির্দেশ পেতে বিশেষজ্ঞ কমিটি (হাই পাওয়ার অ্যাডভাইজ়রি কমিটি) তৈরি করেছিল পুরসভা। আইআইটি খড়্গপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটি বায়ুদূষণ কমানোর জন্য কলকাতা পুরসভাকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জমা দেবে বলে ঘোষণা করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। সেই ঘোষণার দেড় মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা পড়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’বছর পেরোলেও তার কোনও হদিস নেই।

এ বিষয়ে পুরসভার অবশ্য ব্যাখ্যা, তার পরে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে সেই সময়টা পাওয়া গেল কোথায়! যদিও এই যুক্তি অত্যন্ত ‘দুর্বল’ বলে খারিজ করছেন পুরকর্তাদেরই একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভার অন্য সমস্ত কাজকর্ম ঠিকই চলছে, যত বাধা শুধু বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে! তাঁরা এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এর আগে রাজ্যকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের জরিমানার মুখেও পড়তে হয়েছিল। তার পরে প্রত্যাশিত ছিল, এ ব্যাপারে নিয়মরক্ষা না করে রাজ্য তথা পুর প্রশাসনের তরফে আরও সতর্ক পদক্ষেপ করা হবে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘আক্ষেপের বিষয় হল, ইতিহাসই আমাদের শিখিয়েছে যে, আমরা ইতিহাস থেকে কোনও শিক্ষাই গ্রহণ করিনি। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা তার ব্যতিক্রম হয় কী করে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Pollution Control
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy