—প্রতীকী চিত্র।
অল্প ঝড়-বৃষ্টিতেই শহরে গাছ ভেঙে পড়ার ছবিটা নতুন নয়। চলতি মরসুমেও ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর প্রভাবে প্রায় ৩০০ গাছ ভেঙে পড়েছিল বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। তার কিছু দিন আগে গভীর নিম্নচাপজনিত কারণে প্রায় ২০০ গাছ ভেঙে পড়ে। কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগ জানাচ্ছে, এ বার লক্ষ্যণীয় ভাবে কলকাতা জুড়ে প্রায় ১৫০ বটগাছ ভেঙে পড়েছে। ৫ জুন, পরিবেশ দিবস থেকেই চলতি মরসুমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। চলতি বছরে ৩০ হাজার গাছ লাগানোর লক্ষ্য রয়েছে পুরসভার উদ্যান বিভাগের। ১৪৪টি ওয়ার্ডের কোথায়, কী ভাবে গাছ লাগানো হবে, সে বিষয়ে রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছেন উদ্যানবিদেরা।
পুরসভার উদ্যান বিভাগ জানাচ্ছে, কলকাতায় কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া বেশি ভেঙে পড়ে ঝড়বৃষ্টির কারণে। যার জন্য গত কয়েক বছর ধরে আর এই দুই ধরনের গাছ লাগাচ্ছে না পুরসভা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই দু’রকম গাছ না লাগালে ভবিষ্যতে শহর থেকে সেগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অথচ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার সৌন্দর্য নজর কাড়ে। পুরসভার এক উদ্যানবিদের কথায়, ‘‘শহরে এই দু’টি গাছ না থাকা মানে অনেক কিছু হারিয়ে যাওয়ার শামিল। স্থির হয়েছে, বেশি উচ্চতা হবে না, এমন বিশেষ প্রজাতির কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে থাকবে।’’ ওই উদ্যানবিদের কথায়, ‘‘গত বছর এই ধরনের ২২টি গাছ ব্রেস ব্রিজ, ই এম বাইপাসের ধারে লাগানো হয়েছিল। সেগুলির বেশির ভাগই বেঁচে আছে। এ বার ঠিক হয়েছে, একশোর বেশি এই ধরনের কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া লাগানো হবে।’’
পলাশ, মহুয়া দেখতে অনেকে জঙ্গলমহল পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় যান। উদ্যানবিদেরা শহর ঘুরে দেখেছেন, রাজভবনের আশপাশে কয়েকটি মহুয়া গাছ রয়েছে। এ বছর মহুয়া গাছের ১০০টি চারা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২৩ সালে ই এম বাইপাসে ১০০টি পলাশ গাছ ছিল, যার বেশির ভাগই বেঁচে রয়েছে বলে দাবি পুর উদ্যানবিদদের। এক উদ্যানবিদের কথায়, ‘‘আমরা শহর জুড়ে ঘুরে দেখছি। ১৫০টি মহুয়া এবং ৫০০ পলাশের চারা লাগানো এ বার লক্ষ্য। কোথায় গাছগুলি লাগানো যায়, সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তাঁদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘শহরের ছ’নম্বর বরো (ধর্মতলা, বি বা দী বাগ চত্বর) এলাকায় গাছ লাগানোর জায়গার অভাব রয়েছে। অনেক জায়গায় গাছ লাগাতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকেই দোকান বা বাড়ির সামনে গাছ লাগাতে আপত্তি জানান। কেউ কেউ গাছের উপরে গরম জলও ঢেলে দেন। এমনও হয়েছে আমরা গিয়ে দেখেছি, গাছ তুলে ফেলা হয়েছে। ফের লাগানো হয়েছে। আসলে মানুষ সচেতন না হলে গাছ বাঁচিয়ে রাখাটা চ্যালেঞ্জ হবে।’’
পুরসভার উদ্যান বিভাগ সূত্রের খবর, পথবিভাজিকায় (ডিভাইডার) বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ (ফুরুস, টেকোমা, রক্তকরবী, গোলাপি ও হলুদ করবী এ বার বেশি করে লাগাবে পুরসভা। ফুলের গাছের মধ্যে থাকছে স্বর্ণচাঁপা, কাঠচাঁপা, স্প্যাথোডিয়া, লাল ও কমলা রঙের অশোকগাছ, সাদা ও গোলাপি রঙের কাঞ্চন, অমলতাস। থাকবে গামার (যে গাছের কাঠ দিয়ে দরজা, জানলার ফ্রেম হয়), বকুল, শিশু, জারুল, আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা ও লিচু। পাটুলির দিকের কয়েকটি বাড়িতে লিচুগাছের হদিস মিলেছে। এ ছাড়া শহরের আর কোথাও লিচুগাছ নেই। পুরসভার উদ্যান বিভাগ তাই এ বার বেশ কিছু লিচুগাছ পুর-উদ্যানে লাগাতে চায়। পুরসভার ১৬টি বরোয় ১০০০টিরও বেশি উদ্যান রয়েছে। ওই সব উদ্যানে ফলের গাছ লাগাবে পুরসভা।
পাশাপাশি, ঝড়বৃষ্টিতে বটগাছ ভেঙে পড়ায় ফাঁকা জায়গায় বেশ কিছু বট, অশ্বত্থের চারাও লাগানো হবে। উদ্যান বিভাগের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এ বার তীব্র গরম ও টানা তাপপ্রবাহের জেরে মাটি আলগা হওয়াই বটগাছ ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy