এই পুর-নথিতেই রাজস্ব হারানোর জন্য মূল্যায়ন এবং কর সংগ্রহ দফতরের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। ছবি: পুরসভা সূত্রে প্রাপ্ত
কর আদায়ের দায়িত্ব যাদের, তাদের ‘ভুলে’ই রাজস্ব হারাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। রাজস্বের ক্ষতির জন্য কার্যত ‘নজিরবিহীন’ ভাবে সম্পত্তিকর মূল্যায়ন এবং সংগ্রহ দফতরকে (অ্যাসেসমেন্ট কালেকশন ডিপার্টমেন্ট) কাঠগড়ায় তুললেন পুর কর্তৃপক্ষ। দফতরকে পাঠানো লিখিত নোটে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দফতরের কাজ নিয়ে কর্তৃপক্ষ অসন্তোষ প্রকাশ করেই থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কবে মূল্যায়ন ও কর সংগ্রহের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি দফতরকে এ ভাবে লিখিত নোটে রাজস্বের ক্ষতির জন্য ‘দায়ী’ করা হয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না কেউই।
পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, কোনও রকম রাখঢাক না-করে পুর রাজস্বের ক্ষতির জন্য সরাসরি মূল্যায়ন ও কর সংগ্রহ দফতরের উদ্যোগের ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই অনেক সম্পত্তিকর বকেয়া। তাদের মধ্যে কোনও কোনও ক্ষেত্রে সম্পত্তিকর বকেয়া থাকার যথার্থ কারণ থাকলেও সিংহভাগ ক্ষেত্রেই কর আদায় হচ্ছে না শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দফতরের কর আদায়ে লেগে থাকার উদ্যমের অভাবে। নজরদারিতে এই ঘাটতির কারণে বছরের পর বছর পুরসভার রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে।
আবার অনেক সময়ে এমনও দেখা যাচ্ছে, বকেয়া কর মেটানোর সময়ে সংশ্লিষ্ট করদাতা সম্পত্তিকরের ‘ডিমান্ড’-এ উল্লেখিত তুচ্ছ ভুলের কারণে তা বাতিলের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। ফলস্বরূপ, সুদ ও জরিমানা-সহ বকেয়া করের পুরোটাই বাতিল হচ্ছে। তা আর পুর কোষাগারে জমা পড়ছে না। আবার এমনও হচ্ছে, ‘ডুপ্লিকেট’ বা ভুল ডিমান্ড পাঠানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ রকম নানা কারণে রাজস্ব মার যাচ্ছে পুরসভার।
মূল্যায়ন ও কর সংগ্রহ দফতর সম্পর্কে পুর কর্তৃপক্ষের এই পর্যালোচনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই এক ‘অস্বস্তিকর’ পরিবেশ তৈরি হয়েছে পুর মহলের অন্দরে। দফতরের কর্তাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, বর্তমানে মূল্যায়ন ও কর সংগ্রহ দফতর অনেকটাই সক্রিয়। ২০২১ সালে ওয়েভার স্কিমের মাধ্যমে বকেয়া করের একটা বড় অংশ ‘রেগুলারাইজ’ করা হয়েছে। তার পরেও যাঁরা কর দিচ্ছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ভাড়াটে রয়েছে, এমন সম্পত্তির মালিকদের ক্ষেত্রে ‘রেন্ট অ্যাটাচমেন্ট’ করা হচ্ছে, বা সম্পত্তি ‘অ্যাটাচ’ করে তা বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। এর পাশাপাশি বকেয়া করদাতাদের নিয়মিত নোটিস পাঠানো হচ্ছে। সব সময়েই যে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে তা নয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেও বকেয়া করের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ।
পদক্ষেপ করে থাকলে কেন দফতরকে পুর রাজস্ব ক্ষতির জন্য ‘দায়ী’ করা হচ্ছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে পুর রাজস্ব দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এটা এক-দু’বছরের ঘটনা নয়। দীর্ঘ কয়েক বছরের এক ধারার ভিত্তিতে এই পর্যালোচনা করা হয়েছে। তা ছাড়া, পুরসভার করদাতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-’২০ সালে শহরে করদাতার সংখ্যা ৭.৮৫ লক্ষ থেকে বেড়ে ৮.০৩ লক্ষ হয়েছিল। বর্তমানে তা আরও বেড়েছে। ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘করদাতার সংখ্যা বাড়লেও পুরসভার সেই পরিকাঠামো নেই যে, প্রত্যেক করদাতার বাড়ি গিয়ে বকেয়া কর আদায় করতে পারবে। তবু বর্তমানে একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বকেয়া আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে। তবে পুরোপুরি আদায় হতে সময় লাগবে।’’
যদিও এ ক্ষেত্রে আরও সময় দিতে খুব একটা রাজি নন পুর কর্তৃপক্ষ। সে কারণে সংশ্লিষ্ট দফতরের সমস্ত অফিস ও ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সম্পত্তিকর মেটা পর্যন্ত বিলের কী অবস্থা, তার উপরে নজরদারি চালাতে। কিস্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিকরের বিলের উপরে নজরদারি চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রেও বকেয়া কর মেটা পর্যন্ত লেগে থাকতে হবে দফতরের কর্তা-আধিকারিকদের।কারণ, দফতরের ‘গাফিলতি’র কারণে রাজস্ব আর হারাতে নারাজ পুর কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy